#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৫০
#তানিশা সুলতানা
“হেলো কে বলছেন?
তুলতুল কল রিসিভ করে বলে।
” আমি তোর বর বলছি। নিশ্চয় শাড়ি হাতে বসে আছিস? কিভাবে পড়বি বুঝতে পারছিস না? তুই পারবিও না।আমড়া কাঠের ঢেকি না তুই।
“একদম কথা শোনাবেন না। বলে দিলাম। এতো যে পকপক করছেন। আপনি পারেন শাড়ি পড়তে? নিজে পারে না আবার অন্যকে বলতে আসে। হুহহহ।
তুলতুল সব পারে। শাড়িও পড়তে পারবে। একটু সময় লাগবে এই যা।
কোনো কাজই অসম্ভব না তুলতুলের কাছে।
বেশ ভাব নিয়ে বলে তুলতুল।
” সেটাই তো। তুই সব পারিস। এবার শাড়িও পড়তে পারবি। আমি জাস্ট তোকে এডভাইস দিতে কল করেছি। জানি তুই পারিস। তবুও বলছি একটুখানি ইউটিউবে হেল্প নিতেই পারিস। এতে কি হবে বল তো? বেশ গর্জিয়াস করে শাড়ি পড়তে পারবি। দেখতেও ভাল্লাগবে।
সায়ান বলে।
“ওহহহহ তার মানে এমনিতে আমাকে দেখতে ভাল্লাগে না? পেতনী পেতনী লাগে? ডাইনি ডাইনি লাগে? সুইট কিউট লাগে না? জানি তো আমি। আমাকে তো ভালে লাগবেই না। ভালো না লাগলে বিয়ে কেনো করেছিলেন? আহহহা এখন নিশ্চয় আফসোস করছেন? জানি জানি সব জানি আমি।
পড়বো না শাড়ি। যাকে দেখতে ভালো লাগে তাকেই পড়তে বলেন গিয়ে।
তুলতুল রাগে ফুঁস ফুঁস করতে করতে বলে। সায়ান নিজের কপাল নিজে চাপকায়। এটা কি সিরিয়াসলি মেয়ে? না কি অন্য কিছু?
” তুলা সোজা কথা সোজা ভাবে বুঝ। কথা পেঁচাবি না একদম। কটামি করবি না।
সায়ান ধমক দিয়ে বলে।
“ওহহহ হো এখন আবার ধমক দেওয়াও হচ্ছে? যাও একটু শাড়ি পড়তে চাইছিলাম। এখন ধমক দেওয়ার জন্য আরও পড়বো না। একা একা বাসর করেন গা আপনি। তুলতুল আগেও নাই পেছনেও নাই।
সায়ান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। একে মানানো জাস্ট ইম্পসিবল।
” সরি জান ভূল হয়ে গেছে। আমি তুই ছাড়া কোনো মেয়ের দিকে তাকালে যেনো তোর চুল পড়ে যায়। আর আবার আমি ধমক দিলে যেনো তএই হোঁচট খাস।
“হুম হুম ঠিক আছে। এতো কথা বলতে হবে না। তুলতুল বেশি কথা পছন্দ করে না। ফোন রাখুন। তুলতুল এবার রেডি হবে।
” ওকে সোনা। শোন রুম থেকে একদম বের হবি না।
তুলতুল কল কেটে দেয়। সায়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
এবার তুলতুল সাজুগুজুতে লেগে পড়ে। কালো শাড়ি এমনিতেই ভীষণ পছন্দ তুলতুলের। সাথে মেচিং জুয়েলারি। তুলতুল ইউটিউব থেকে শাড়ি পড়ার ভিডিও সার্চ দিয়ে শাড়ি পড়তে লেগে পড়ে। মিহি সুতোর শাড়ি হওয়াতে পড়তে বেগ পেতে হয় না। সহজেই পড়তে পারে।
তারপর সাজুগুজু করে দেয়। এমনিতে সাজুগুজু খুব একটা করতে পারে না তুলতুল৷ করেও নি কখনো। কিন্তু আজকে তো সাজতে হবেই।
সাজ যখন প্রায় শেষ তখন কলিং বেল বেজে ওঠে। বুকটা ধক করে ওঠে তুলতুলের। ফোনের স্কিনে তাকায়। সবে বিকেলে পাঁচটা বাজে।
এতো আগে কেনো আসলো সায়ান?
এবার তুলতুলের লিপস্টিক নেওয়া বাকি। তুলতুল তারাহুরো করে লিপস্টিক লাগাতে থাকে।
তারপর নিজেকে একবার ভালো করে আয়নায় চেক করে নেয়। নাহহ ঠিকই লাগছে।
“দরজা খুলো জান।
তুলতুল চোখ বড়বড় করে ফেলে। হঠাৎ এতো মধু মিশিয়ে ডাকছে কেনো? আবার তুমি।
” আআআপনি ঢং করে ডাকছেন কেনো? আর ততুমি ততুমি কাকে বলছেন?
তুলতুল থেমে থেমে বলে।
“তোমাকে বলছি সোনা। দরজাটা খোলো।
তুলতুল ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। লোকটা হঠাৎ করে এমন রোমান্টিক হয়ে গেলো কি করে?
” ততুই করল না বললে দরজা খুলবো না।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে তুলতুল।
“ওই তুলার বাচ্চা দরজা খোল।
সায়ান ধমক দিয়ে বলে। তুলতুলের কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদল?
” আবার ধমক দিচ্ছেন আমায়। আমি কিন্তু শাড়ি খুলে ফেলবো।
তুলতুল রেগে বলে।
“আরে বাবা ভালো করে বললেও পবলেম খারাপ করে বললেও পবলেম। যাবো কোথায় আমি?
” ঢং
তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে দরজা খুলে দেয়।
সায়ান এক পলক তুলতুলের দিকে তাকিয়ে হাতে খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দেয়।
“খাটের মাঝখানে বসে ঘোমটা টেনে বসে থাকবি। আমি চলে আসবো সময় মতো।
বলেই আবার চলে যায় সায়ান। তুলতুল তাকিয়ে থাকে।
🥀
সুমুর ভীষণ শরীর খারাপ। ঘন ঘন বমি হচ্ছে। কিচ্ছু মুখে দিতে পারছে না। মাথা ঘোরাচ্ছে। অস্থির লাগছে।
তন্ময় অফিসে গেছে একটা ইমপটেন্ট মিটিং আছে আজকে ফিরবে না বলেছিলো কিন্তু নাজমা বেগম কল করে বাড়িতে আনে। পাপন ঢাকা গেছে স্কুলের মিটিং এ। তন্ময় সালমা বেগমকেও কল করে।
তন্ময় বাড়ি ফিরে দেখে সুমু বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে মেয়েটার। নাজমা আছিয়া আর তনু পাশে বসে আছে।
“মা এখন কি অবস্থা?
তন্ময় অফিসের ব্যাগ রেখে সুমুর পাশে বসে বলে।
” একটু আগেও বমি করেছে। কিচ্ছু খাই নি সকাল থেকে। কি হলো বল তো মেয়েটার?
“ডাক্তার ডাকা উচিত ছিলো ভাইয়া। কিন্তু কাকিমা ডাকতে দিচ্ছে না। বলছে এই সময় বাড়িতে ডাক্তার ডাকা ঠিক হবেনা।
তনু বলে।
” এই সময় আবার কি মা? অসুস্থ ও। ডাক্তার ডাকাই উচিৎ ছিলো।
“তুই চুপ থাক। সব ডাক্তার দেখানো যাবে না। বলা তো যায় না যদি পোয়াতি হয়? ডাক্তার এসেই তো আগে ইনজেকশন দেবে।
তন্ময়ের চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।
” ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। এভাবে তো চলবে না।
তন্ময় জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে। সুমু পিটপিট করে চোখ খুলে।
“মা খাবো। একটু নুডলস বানিয়ে দিবেন?
সুমু নাজমার দিকে তাকিয়ে বলে।
” আমি আনছি মা। এখুনি আসছি। তোমার শাশুড়ী তোমার পাশে বসুক।
আছিয়া দৌড়ে চলে যায় নুডলস বানাতে। সুমুকে ধরে আধশোয়া করে বসিয়ে দেয় তনু। তন্ময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুমুর দিকে। সত্যিই কি এই মেয়েটার মধ্যে তার সন্তান এসেছে? ছোট্ট একটা পুতুল।
🥀
পুরো রুমটা ফুলে ফুলে সাজিয়ে দিয়ে গেছে সায়ানের বন্ধুরা। তুলতুল দরজা খুলতেই হা হয়ে যায়। এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে। গাঁদা গোলাপ রজনীগন্ধা।
সায়ান তুলতুলকে বলে দিয়েছে ঘোমটা টেনে খাটের মাঝখানে বসে থাকতে।
তুলতুল পুরো রুমে চোখ বুলাতে বুলাতে খাটের মাঝখানে বসে।
তারপর ঘোমটা টেনে নেয়।
“ইসসস নিজেকে একদম হিরোইন হিরোইন লাগছে। আহহা
তুলতুল বিরবির করে বলে।
তার খানিক পরেই ধক করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সায়ান। তুলতুল কাঁচুমাচু হয়ে বসে।
বুকটা টিপটিপ করছে। গলা শুকিয়ে আসছে।
সায়ান দরজা আটকে খাটের দিকে এগিয়ে আসে।
তুলতুল ঘোমটা খুলতে যায়
” ওই ওই একদম না। আমি খুলবো গাধা।
সায়ান বলে ওঠে। তুলতুল থেমে যায়।
সায়ান গিয়ে তুলতুলের পাশে বসে। আলতো হেসে দুই হাতে তুলতুলের ঘোমটা খানিকটা সরিয়ে দেয়। তুলতুল লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।
“এই তোকে বউ সাজতে বলেছিলাম। তুই দেখি পেতনী সেজে বসে আছিস।
সায়ান বলে ওঠে। তুলতুল রেগে যায়। ধপ করে চোখ খুলে সায়ানের দিকে গাল ফুলিয়ে তাকায়।
” এখুনি শাড়ি খুলে ফেলবো আমি। কারো জন্য শাড়ি পড়ে বসে থাকার একদম ইন্টারেস্ট নেই আমার।
বলেই তুলতুল হুরমুরিয়ে শাড়ি খুলতে থাকে। সায়ান আধশোয়া হয়ে ঠোঁটে আঙুল বোলাতে বোলাতে হাসতে থাকে।
খানিকটা খোলার পরেই তুলতুলের খেয়াল হয় কি করছে ও। শুকনো ঢোক গিলে দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।
“থেমে গেলি কেনো? একটুখানি মানুষের মতো লাগছে। পুরোটা খুলে ফেল। একদম পুরো মানুষের মতো লাগবে।
সায়ান দুষ্টুমি করে বলে।
” আপনি একটা চরম লেভেলের অসব্ভ।
বলেই তুলতুল যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে ফেলে। আর এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
“আজকে বলদ থেকে মানুষ বানিয়ে থাকবো ছাড়বো তোকে।
ফিসফিস করে বলে তুলতুলের ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠ দ্বারা আঁকড়ে ধরে সায়ান।
চলবে