#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৫১
#তানিশা সুলতানা
“আপনি আমাকে এভাবে ছোঁবেন না। আপনি একটা খারাপ মানুষ। এভাবে ধরাধরি করা আমার পছন্দ না।
তুলতুল রিনরিনিয়ে বলে। সায়ান কোলে তুলে নেয় তুলতুলকে। তুলতুল চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।
” শুধু ধরাধরি না। আরও কিছু করবো।
সায়ান ঠাস করে ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে সায়ান। তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায়।
“এভাবে তাকিও না জান। খু*ন হয়ে যাবো আমি।
তুলতুলের নাকে নাক ঘসে বলে সায়ান। তুলতুল চুল টেনে দেয় সায়ানের।
” আপনার নামে আমি কেচ করবো। আপনি একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে বাজে বিহেব করছেন। ইটস নট ফেয়ার।
“এখন তো রাত হয়ে গেছে। থানা মেবি বন্ধ। সকালে যাস। আমিও এগিয়ে দিয়ে আসবো।
🥀
সুমু প্রেগন্যান্ট। এটা শুনে ভীষণ ভয় পেয়ে যায় সুমু। সম্পর্কটাই এখনো জোরা লাগলো না আর এখনই সম্পর্কে নতুন মোর চলে আসলো? এই রকম সম্পর্কে এটা বাচ্চার আগমন একদম ভালো হবে না।
এমপি বাড়ির সকল সদস্য হাজির হয়েছে। তিন ভাই গেছে মিষ্টি আনতে। রান্না বান্না চড়িয়েছে আছিয়া আর নাজমা। আর ওনাদের হাতে হাতে সাহায্য করতে লেগে গেছে মনি আর সালমা।
সুমুর ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সুমুর পাশে বসে আছে তন্ময়। তার মুখেও কোনো কথা।
” সুমু তুমি থাকো। আমি জাস্ট ফ্রেশ হয়ে আসছি।
তনু ওদের স্পেস দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় দরজা লাগিয়ে দিয়ে যায় তনু।
“সুমু
তন্ময় সুমুর দিকে তাকিয়ে বলে।
সুমু মাথা উঁচু করে তাকায় তন্ময়ের দিকে। মেয়েটার চোখে পানি চিকচিক করছে।
” ভূল হয়ে গেলো না তন্ময়? একটু সাবধানে থাকতে পারলাম না আমরা? এবার কি হবে? আমাদের সম্পর্কটাই তো স্বাভাবিক না। এই টানাপোড়নের সম্পর্ক এই বাচ্চার জায়গাটা ঠিক থাকবে না। ওর বাবা মায়ের বন্ডিংটাই তো ঠিক নেই। ও কিভাবে বেড়ে উঠবে এখানে?
আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না কি হবে?
বলতে বলতে সুমু কেঁদে ফেলে। তন্ময় শান্তনা দিতে পারছে না সুমুকে।
গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
“আপনি নিশ্চয় আফসোস করছেন? বিরক্ত হচ্ছেন? আমি আমার সন্তানকে বিরক্তির কারণ হতে দিতে পারি না। আমি নাহয় বাবা মায়ের সাথে চলে যাবো।
সুমু চোখের পানি মুছে বলে।
” সুমু তুমি সব সময় বেশি বুঝো। ও আমাদের সন্তান। আমি কেনো বিরক্ত হবো? আমি খুব খুশি। আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার জন্য ওর আগমন খুব জরুরি ছিলো। বিশ্বাস রাখো। মাথায় করে রাখবো তোমাদের আমি।
সুমুর হাতের ওপর হাত রেখে বলে তন্ময়।
“আমরা খুব ভালো থাকবো সুমু। আমাদের সন্তানকে দুজন মিলে আগলে রাখবো। কখনো বকবো না তোমায়। এই প্রমিজ।
সুমু আহ্লাদী হয়ে ওঠে। ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ওঠে।
” আহহহ আর কখনো কাঁদবে না। আমাদের প্রিন্সেস কান্না কাটি পছন্দ করে না।
সুমুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে তন্ময়। সুমু মুচকি হাসে।
“আমাকে আর কখনো যদি বকেন তাহলে আমি চলে যাবো বলে দিলাম। আর ফিরবো না।
তন্ময় সুমুর মাথাটা নিজের বুকের ওপর রাখে।
” কখনো বকবো না। অভিযোগ করার সুযোগও দিবো না। প্রমিজ
🥀
তনু সবেই নিজের রুমে একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য ঢুকেছে।
রুমে ঢুকতেই দেখে হিমু খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে পায়ের ওপর পা তুলে। তনু রেগে যায়।
“এখানে সাহেবের মতো শুয়ে আছেন কেনো? দেখুন দেখুন আমাদের বিয়েটা আগে ঠিক হয়েছিলো। সেই আমাদেরই বিয়ে হলো না। ওই দিকে দাভাই প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো। তুলতুলও দুইদিন পর প্রেগন্যান্ট হবে। আমি হইলাম বড়। আর আমার হইলো আগে বিয়ে ঠিক হইছে। সেই আমিই কি না প্রেগন্যান্ট হলে দেরি করে ফেললাম। সেই আমার বাচ্চাই কি না দেরিতে আসবে।
তনু কোমরে হাত দেরে রেগে বলে।
হিমু এক লাফে উঠে বসে।
” সুমু প্রেগন্যান্ট
তন্ময় কি করে হব
বাকিটা শেষ করতে পারে না হিমু
“ওই একই হলো। কটামি করবেন না একদম। এক সপ্তাহ সময় দিলাম এর মধ্যে বিয়ে করতে না পারলে আর বিয়েই করবো না আমি সাফ সাফ বলে দিলাম।
এই সপ্তাহে বিয়ে পরের সপ্তাহে প্রেগন্যান্ট। তাহলে যদি তুলতুলকে ধরতে পারি।
” বুঝলাম না। এটাতে পাল্লা নেওয়ার কি আছে? দেরিতে হলে সমস্যা কি?
“অনেক সমস্যা আপনার মোটা মাথায় এসব ঢুকবে না। আমি যা বলেছি তার হবে। এখন বের হন আমার রুম থেকে। আহহহা বলা নেই কওয়া নেই একটু যুবতী মেয়ের রুমে ঢুকে পড়েছে। পুলিশে দেওয়া উচিৎ আপনাকে। নেহাৎ আমি আপনাকে ভালোবাসি। নাহলে এতোখনে পুলিশ ডাকতাম।
তনু মুখ বাঁকিয়ে বলে। হিমু শুকনো ঢোক গিলে। মেয়ে মানুষরা ভয়ংকর হয়। এটা শুনেছিলো। এখন ফিল করতে পারছে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে কি করে বিয়ে করবে?
🥀
তুলতুলের কান্না পাচ্ছে। সায়ান একটা প্রচন্ড লেভেলের খারাপ মানুষ। আজকে প্রমাণ পেয়ে গেছে। ছি ছি ভাবতেই তুলতুলের গা শিওরে উঠছে।
” ওই ফকিন্নি ওঠ। গুড নিউজ আছে।
সায়ান মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বলে। তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে কম্বল দিয়ে মাথা ঠেকে ফেলে। আসছে গুড নিউজ দিতে। ওয়াশরুমে আবার গুড নিউজ থাকে না কি? আজাইরা লোক।
“তুই কি উঠবি? না কি আমি উঠাবো?
চেঞ্জ করে এসে বলে সায়ান।
” উঠবো না। আমি আদোও বেঁ*চে আছি তো? আবার আসছে কথা বলতে। লজ্জা করে না আপনার? কিভাবে পারেন ওই মুখ আমাকে দেখাতে আমি তো ভেবেছিলাম লজ্জায় আপনি দুই দিন কথাই বলবেন না আমার সাথে। কিন্তু নাহহহ
লজ্জাহীন কি না আপনি।
তাই তো দাঁত কেলাতে কেলাতে চলে এসেছেন নিকনিক করতে।
রাগে গজগজ করতে করতে বলে তুলতুল। সায়ান তুলতুলের পাশে বসে।
“পক পক বাদ দিয়ে উঠবি কি? গুড নিউজ শুনবি না?
” আহহহা কি গুড নিউজ দিবেন জানা আছে আমার। ওয়াশরুম থেকে গুড নিউজ আনছেন সেটা ভালো হবে?
“মাথা মোটা
দুই মিনিটের মধ্যে না উঠলে তোকে রেখেই আমি চলে যাবো। সুমু প্রেগন্যান্ট।
তুলতুল মুখের ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে ফেলে। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গেছে।
” ওয়াশরুমে বসে বসে স্বপ্ন দেখেছেন?
সায়ান তুলতুলের মাথায় ছোট্ট করে চাটি মারে।
“শয়তানের নানি তোর যাওয়া লাগবে না। যাচ্ছি আমি।
বলেই সায়ান রুম থেকে চলে যায়। তুলতুল লাফ দিয়ে উঠে বসে।
” শয়তানের নানা পাঁচ মিনিট ওয়েট করেন। আমিও আসছি।
তুলতুল ওয়াশরুমে ঢুকে যায় এক দৌড়ে।
সায়ান খাবার সাজাতে থাকে। রান্না করেছে অনেক আগেই। রান্না শেষেই বউকে ডাকতে গেছিলো।
তুলতুল জলদি ফ্রেশ হয়ে আসে। মেয়েটাকে আজকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। আগে কখনো এরকম লাগে নি। এক রাতেই সৌন্দর্য বেরে গেছে যেনো।
ডান গালে লাল হয়ে বড় একটা ব্রণ উঠেছে। যেটা মেয়েটাকে অপূর্ব করে তুলেছে।
সায়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে। তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে সায়ানের পাশে বসে।
“সত্যিই কি সুমু প্রেগন্যান্ট? না কি ঢপ দিয়ে ওঠালেন আমায়?
প্লেটে রুটি আর ডিম নিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান তুলতুলের থেকে দৃষ্টি সরায়।
” পকপক বন্ধ করে খেতে থাক।
“রসকষহীন বেডা মানুষ।
তুলতুল বিরবির করে বলে।
” রাতের কথা ভূলে গেলি?
সায়ান বাঁকা হেসে বলে।
“আপনার সাথে খাবোই না আমি।
তুলতুল নিজের প্লেট নিয়ে চলে যায়। সায়ান মুচকি হাসে।
চলবে