#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৫৩
#তানিশা সুলতানা
বিকেলে হিমু সায়ান আর তন্ময়কে বিয়ে একটু ঘুরতে বের হইছে। মূলত নিজের বিয়ের কথা ওদেরকে বলার জন্যই বেরিয়েছে। ওরা ছাড়া তো এই বিষয়ে এগোতে পারবে না।
তিনজনে নদীর পাড়ে এসে বসেছে। জায়গাটা আসলেই দারুণ। তন্ময় মনে মনে ভেবে ফেলে একদিন সুমুকে নিয়ে এখানে ঘুরতে আসবে। নিশ্চয় খুব ভালো লাগবে সুমুর।
“এখন কথা হচ্ছে সিরিয়ালে আমি আগে ছিলাম। কিন্তু কি হলো? ওরা আমার আগে বিয়ে করে নিলি। এখন আবার বাবা হতেও যাচ্ছিস। এদিকে আমি? তোদের জন্য বিয়েটাই করতে পারছি না।
হিমু আফসোস করে বলে।
” এবার তোর সিরিয়াল
সায়ান বলে।
“বললেই হলো? আমি তো ভাবতেই পারি না। বিয়ের কথা ভাবলাম আর হাসিব একটা তুলে আনলো। না মানে প্রথমে ভাবতে গেছি সুমু কান্ড বাঁধালো। দ্বিতীয় বার ভাবতে গেছি তুই তুলতুলকে নিয়ে ভাগলি। এখন বাকি আছে হাসিব।
আল্লাহ জানে কি আছে কপালে।
” আরে ভাই চাপ নিও না। হাসিব এমন করবে না। সায়ান তুই কথা বল বাড়িতে। এই সপ্তাহের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলে ওর।
তন্ময় হেসে বলে। সায়ানও হেসে ফেলে।
“আচ্ছা তাই করবো।
” আজকেই কথা বলবি তুই। আমার আর তর সইছে না।
সায়ান হিমুর পিঠ চাপকে দেয়।
রাস্তায় একটা ফুসকার দোকান দেখে তন্ময়। সুমু ফুসকা খেতে ভীষণ ভালোবাসে। একদিন আবদারও করেছিলো অফিস থেকে ফেরার সময় সুমুর জন্য ফুসকা নিয়ে যেতে। কিন্তু তন্ময় সেটা ভূলে গেছিলো।
“তোরা বস। আমি একটু আসছি।
বলেই তন্ময় উঠে যায়। দুই প্লেট ফুসকা প্যাক করে দিতে বলে। সায়ান আর হিমু বসে বসে তন্ময়ের কান্ড দেখছে।
🥀
তুলতুলের ভালোবাসা অনেক গুণ বেরে গেছে। এই যে একটু পরপর চাচি শাশুড়ী শাশুড়ী দাদিশাশুড়ি সবাই জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে ” কিছু লাগবে না কি? ”
দারুণ এনজয় করছে তুলতুল। সুমুর সাথে বসে বসে মুড়ি মাখা খাচ্ছে। ওদের সামনেই বসে আছে খুকি বেগম। আর তিন জা মিলে রান্না করছে।
“এতো ভালোবাসা দিচ্ছে কেনো বলো তো? আগে তো দুই চোখে সয্য করতে পারতো না।
তুলতুল সুমুর কানে কানে বলে।
” সুর বুদ্ধি এসেছে তো। তাই ভালোবাসা দিচ্ছে।
সুমুর কথা শুনে মুখ টিপে হাসে তুলতুল।
ওদের কথা বলার মধ্যে চলে আসে হিমু তন্ময় আর সায়ান। তন্ময় এক প্যাকেট ফুসকা সুমুর হাতে দেয় আর আরেক প্লেট ফুসকা তুলতুলের হাতে দেয়।
“তুমি হঠাৎ ফুসকা আনলে? দাভাই তোমার কি স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেছে?
তুলতুল অবাক হয়ে বলে।
“তোরা খেতে পছন্দ করিস তাই আনলাম।
রিনরিনিয়ে বলে তন্ময়।
” কই আমি তো পছন্দ করি না। চকলেট পছন্দ করি। জানোই তো তুমি? তাহলে ফুসকা কেনো আনলে?
সুমু মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসছে। সায়ান হিমু পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় পড়ে যায় বিপাকে। সুমু পছন্দ করে বলে এনেছে। এটা বলতেও লজ্জা লাগছে। আবার বোনটাও পাকড়ে ধরেছে।
“ও ও ওই তো সসুমু পছন্দ করে।
বলেই তন্ময় চলে যায়। তুলতুল ফিক করে হেসে ফেলে। সুমুও হাসে।
” একটা ভদ্র ছেলেকে বিয়ে করেছো সুমু। যার একটু লাজ লজ্জা আছে। কিছু কিছু মানুষ হলে তো লোক লজ্জার কথা ভূলে বলেই ফেলতো “আমার বউয়ের জন্য এসেছি। তোর বাপের কি?”
তারা তো লজ্জা চিনে না।
আড়চোখে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে তুলতুল।
“মিনমিনিয়ে কিছু করতে বা বলতে পারি না আমি। যা বলবো একদম সরাসরি। এরকম মিনমিনে স্বাভাবের মানুষকে পছন্দও না আমার।
সায়ান বলে দেয়।
” নাক কা*টা মানুষের আবার নাক ওয়ালা মানুষকে পছন্দ হবে কি করে? নিজের নাক নাই। তাই তার পরের নাক ভালো লাগবে না।
তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে বলে। হেসে ফেলে সুমু। হাসিবও মুখ টিপে হাসছে।
“দিন দিন বিশ্ব কটা হয়ে যাচ্ছিস তুই। কবে জানি এই কটামির জন্য দুই গালে চারটা চ*র খাবি।
সায়ান চোখ পাকিয়ে বলে।
” পারেনই খালি চ*র দিতে। আর কিছু পারেন না কি?
দাঁত কটমট করে চলে যায় তুলতুল।
রাতে খাওয়া টেবিলে হিমু আর তনুর বিয়ের কথা তোলে সায়ান। সবাই রাজি হয়ে যায়। এই সপ্তাহেই হবে বিয়ে। আগের দুটো বিয়েতে কোনো অনুষ্ঠান হয় নি বলে এইবার ধুম ধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবে।
হাসিব অনেকখন যাবত খুশখুশ করছে। খাবার নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে। কিন্তু মুখে তুলছে না। হিমুর গলা শুকিয়ে যায়। ধক ধক করে এক গ্লাস পানি শেষ করে শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয়।
“তুই এখন কিছু বললে ডিরেক্ট খু*ন করবো তোকে আমি। কোনো বাগড়া দিবি না আমার বিয়েতে। তোর পছন্দ থাকলে পরে বলবি। এখন বললে সিরিয়াসলি এই প্লেট ছুঁড়ে মারবো তোকে।
হিমু দাঁতে দাঁত চেপে বলে। উপস্থিত সবাই হতদম্ভ হয়ে যায়। হাসিব শুকনো ঢোক গিলে।
” ওর সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো?
হামিদা হাসিবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
“ও আবার তোর কোন পাকা ধানে মই দিলো?
আনোয়ার গম্ভীর গলায় বলে।
” তোমার ছেলে কিছু বলার জন্য উসখুস করছে। এটা আমি খুব বুঝতে পারছি।
হিমু বলে।
“হ্যাঁ বলতে চাইছে তো বলুক।
আব্দুল্লাহ বলে।
” দাদাভাই কি বলতে চাও বলে ফেলো।
হাসিব সবেই বলতে যাবে তার আগেই হিমু বলে ওঠে।
“ও কেনো কথা বলবে না। আমি আগে বিয়ে করবো।
তুলতুল আর সুমু হাসি কন্ট্রোল করতে না পেরে হেসে ওঠে।
” মা*র খাবি তুই এখন। বাপ দাদার সামনে কি বলছিস এসব? করবি তো বিয়ে।
সালমা কান টেনে দিয়ে বলে।
“হাসিব তুমি বলে ফেলো।
সুলাইমান বলে।
” আসলে আমার ফোনটা ভেঙে গেছে। একটা আইফোন কিনতে চাই।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হিমু।
“এটা কোনো কথা হলো? আমি কালকেই তোকে কিনে দিবো।
হিমু হেসে বলে।
🥀
রাতের বেলায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। দারুণ লাগছে পরিবেশটা। সুমু একটু বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। হাত বাড়িতে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো ধরতে থাকে।
” সুমু তুমি এখানে কেনো? এখন থেকে একদম রাতে, দুপুরে বেলকনিতে আসবা না। এটা ভালো না।
সুমুর হাত ধরে টেনে রুমে আনতে আনতে বলে তন্ময়। সুমুর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে।
সুমুকে খাটে বসিয়ে গামছা নিয়ে আসে তন্ময়। ভালো করে সুমুর হাতে লেগো থাকা পানি মুছে দেয়। সুমু দেখতে থাকে তন্ময়কে।
চলবে