#আমার তুমি ২
#পর্বঃ ৫২
#তানিশা সুলতানা
সব কিছু যেনো নতুন হয়ে গেছে। চারিপাশের মানুষজনদের মধ্যে এসেছে অনেক পরিবর্তন। যারা কিছুদিন আগেও মুখ বাঁকিয়ে চলতো তারাই এখন হেসে হেসে কথা বলছে। তাদের মনের মধ্যে কোনোরকমের হিংসা বা রাগ নেই। আছে শুধু দুচোখ ভর্তি ভালোবাসা।
মানুষগুলোর পরিবর্তনের কারণ কি শুধুই নতুন প্রাণের আগমন? না কি অন্য কিছু? এই পরিবর্তনে যে স্বার্থ নেই সেটা যে কেউ বলবে পারবে।
খুকি বেগমের দুই পাশে বসে আছে সায়ান আর সুমু। ওনার পায়ের কাছে হিমু আর হাসিব। সালমা বেগম ছেলের চুল টেনে দিচ্ছে। সালমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সুমুর পাশে সোফার হাতের ওপর বসে আছে মনি। সে এক সেকেন্ডের জন্যও সুমুকে চোখের আড়াল করবে না এটাই তার পণ।
ওনাদের সামনা সামনি বসে আছে সুলাইমান আনোয়ার আর আব্দুল্লাহ। হামিদা বেগম আছিয়া আর নাজমার সাথে রান্না করছে।
তুলতুল আর তনু হাতে হাতে সাহায্য করছে ওনাদের।
তন্ময় আর পাপন বাজারে চলে গেছে। সালাদ আনা নয় নি। সফট ড্রিংকস ও প্রয়োজন।
“বলছিলাম বাবা আপনি বেয়াই মশাইয়ের সাথে কথা বলুন। আমরা সুমুকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাই। কিছুদিন আমাদের বাড়িতে থেকে আসবে। অনেক দিন যায় না।
মনি বলে ওঠে। সুমু চোখ বড়বড় করে মনির দিকে তাকায়। ওই বাড়িতে যাওয়া মানেই তো তন্ময়ের থেকে আলাদা হওয়া। কিছুদিন তন্ময়কে দেখতে পারবে না।
” হ্যাঁ বাবা আমিও তাই ভাবছিলাম।
আব্বা তুই বাড়ি যাবি তো? তোর বউকে তো আমি নিয়েই যাবো। এখন তোর ইচ্ছে হলে তুই ও যেতে পারিস।
সালমা বলে।
সায়ান মুচকি হাসে। মায়ের অভিমান বুঝতে পারে।
“এ আবার কেমন কথা বউমা? ও যাবে না কি? ওকেও যেতে হবে। অনেক হয়ে গেছে। আর না। বাঁ*চ*বোই আর কয় দিন? নাতি নাতনি সাথে নিয়েই থাকবো আমি।
সায়ানের হাত শক্ত করে ধরে বলে খুকি।
” তোমার কথায় তো আর হবে না গিন্নি। তোমার নাতীর তো তেজ একদম আকাশ ছোঁয়া। কিছু বলার আগেই সে বাড়ি ছেড়ে দেয়। পড়ালেখা শিখিয়ে বড় করা হয়েছে কি না? টাকা কামাতে শিখে গেছে। এবার তো তার তেজ হবেই।
আব্দুল্লাহ বলে।
“আব্বা থাক না। এখানে এসব বলতে হবে না। সায়ান বাড়িতেই ফিরবে।
সুলাইমান বলে।
এরই মধ্যে পাপন আর তন্ময় দুই হাত ভর্তি বাজার নিয়ে চলে আসে। সে গুলো আছিয়াকে ডেকে দিয়ে দেয়। সুমু তারাহুরো করো উঠে গিয়ে ফ্যান চালিয়ে দিয়ে দুটো চেয়ার এনে দেয় শশুড় আর বরকে।
অবাক হয় উপস্থিত সবাই। যে মেয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতো না সে এখন কতো দায়িত্ববান হয়েছে।
” মা তোমাকে আবার কষ্ট করতে হবে কেনো?
পাপন সুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
“আপনি আগে বসুন বাবা। আমি শরবত নিয়ে আসি।
পাপন কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুলতুল ট্রে তে করে দুই গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে আসে।
” আমি এনেছি।
পাপন তার পকেট থেকে তিনটে চকলেট বের করে। একটা সুমুর হাতে দেয়। আর দুইটা তুলতুলের হাতে।
সবাই মুগ্ধ হয়। বুঝতে পারে সুমু কেনো এখান থেকে যেতে চায় না। এই বাড়ির প্রতিটি মানুষ ভীষণ ভালোবাসে সুমুকে।
তুলতুল চকলেট দুটো নিয়ে ট্রে হাতে চলে যায়।
“তুলতুলকে দুটো কেনো দিলো?
খুকি প্রশ্ন করে বসে।
” ও একটা তনুকে দেবে তাই। এতো মাথা মোটা কেনো তুমি?
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে আস্তে করে বলে। খুকি বেগম নিজের ভূল বুঝতে পেরে চুপ হয়ে যায়।
পাপন আর তন্ময় বসে। সুমু আগের জায়গায় এসে বসে পড়ে। তুলতুল আবার রান্না ঘরে চলে যায়।
“ভাবছিলাম সুমুকে কিছুদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। তো আপনি কি অনুমতি দেবেন?
সালমান গলা খাঁকরে বলে।
” এতে আবার অনুমতির কি আছে? আপনাদের মেয়ে আপনারা নিয়ে যাবেন। তাছাড়া মামনিও অনেকদিন আপনাদের বাড়িতে যায় না। যাক ঘুরে আসুক
পাপন হেসে বলে। সুমু অসহায় চোখে তাকায় তন্ময়ের দিকে। তন্ময়ও তাকায়।
“কথা তো মিটেই গেলো তাহলে। মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে তাহলে নিয়ে যাবো। তন্ময়কেও কখনো আমরা জামাই আদর করার সুযোগ পাই নি। এবার সব ঝামেলা মিটিয়ে নিবো।
সুলাইমান বলে। এতোখন পরাণে পানি আসে সুমুর। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” আমি যেতে পারবো না। অফিসের কাজ আছে।
তন্ময় বলে ওঠে। সুমুর মুখটা আবার কালো হয়ে যায়। বোনের মনের অবস্থা বুঝতে পারে সায়ান।
“তোর অফিস আমাদের বাড়ি থেকে বেশি কাছে। নাটক করিস না। চুপচাপ যাবি।
সায়ান শক্ত গলায় বলে। তন্ময়ের আর কিছু বলার থাকে না।
🥀🥀
জোহরের নামাজের পরে তুলতুল ফ্রী হয়
নামাজ আদায় করে খাটে বসে পড়ে। তখন সায়ান রুমে ঢুকে।
” আগে যদি জানতাম এখানে আসলে তোর পাখনা গজাবে তাহলে কখনোই আসতাম না।
রাগে গজগজ করতে করতে তুলতুলের পাশে বসে বলে সায়ান।
“আজিব আমার আবার পাখনা কখন গজালো? এই দেখেন পেছনে পাখনা নেই।
তুলতুল তার পেছন দেখিয়ে বলে।
সায়ান ঠাস করে তুলতুলের মাথায় গা*ট্টা মারে। তুলতুল আহহ করে খানিকটা সরে বসে।
” আজাইরা মানুষ আপনি একটা। ভেবেছিলাম আমার একটা পুচকে হবে। কিন্তু এখন দেখছি একদম না। বাচ্চার বাবা সারাক্ষণ জ্বালিয়ে মারে। কথায় কথায় মা*ইর দেয়। বেবি হলে তো দুজন মিলে মারবে। না ভাই আমার এতো মাইর খাওয়ার শখ নাই।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তুলতুল।
“আমারও একই কথা। নিজেই এখনো বাচ্চা। নাক টিপলে দুধ বের হয়। সে আসছে বড়বড় কথা বলতে। সর এখান থেকে।
তুলতুল সায়ানের দিকে চেপে বসে।
” আমার বাড়ি। আমার ঘর। আর আমাকে বলে সর। সরবো না। বজ্জাত লোক।
“সরবি না?
” একটুও না
তুলতুল আরও চেপে বসে বলে।
“ওকে
বলেই সায়ান তুলতুলকে ধরে শুয়ে পড়ে। তুলতুল অবাক হয়ে যায়। চোখ বড়বড় করে কিছু একটা বলতে যায় তার আগেই সায়ান ঠোঁট জোড়া বন্ধ করে দেয়।
🥀
সন্ধার দিকেই এমপি বাড়ির সবাই চলে এসেছে। সাথে এসেছে তন্ময় সায়ান তুলতুল আর সুমু। আজকে বাড়ির পরিবেশ একদম আলাদা।
চার দিকে হইচই, আনন্দ, ভালো ভালো খাবারের গন্ধ।
চলবে