আমার তুমি ২ #পর্বঃ ৫৬ #তানিশা সুলতানা

0
279

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ ৫৬
#তানিশা সুলতানা

কেটে গেছে অনেক গুলো দিন। পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেক কিছু। তুলতুল এখন অনার্সে পড়ছে। সায়ান রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে। এখন সে একটা ব্যাংকে জব করছে। ঢাকার সেই ছোট্ট বাড়িটা অনেকটা বড় করে ফেলেছে। গ্রাম ছেড়েছে বছর খানিক হলো। এখানে সংসার পেতেছে দুজন। মাঝেমধ্যে যাওয়া হয় গ্রামে ঘুরতে। এখন আর কথায় কথায় ঝগড়া লাগে না সায়ান আর তুলতুলের। দুজন দুজনকে খুব ভালো বুঝতে পারে। একজন আরেকজনকে ছাড়া চলতেই পারে না। অফিসে গেলে রোজ চার পাঁচবার কল করে তুলতুলকে।

আজকে সুমুর ডেলিভারির ডেইট। তাই সকাল সকাল তুলতুল রেডি হয়ে নিয়েছে। কালো জামদানী শাড়ি পড়েছে। এটা কিছুদিন আগে সায়ান এনে দিয়েছিলো। পড়া হয় নি। আজকে ভাবলো পড়েই ফেলি।
সায়ান এখনো ঘুমচ্ছে। বেচারা কাল অনেক রাত জেগে অফিসের কাজ করেছে।

তুলতুল ঠোঁটে গাড়ো লিপস্টিক লাগিয়ে সাজ কম্পেলেট করে সায়ানকে ডাকতে থাকে।

“এই যে মিস্টার দ্রুত উঠুন। আমি রেডি হয়ে গেছি। এখন আপনি লেট করলে আপনাকে রেখেই চলে যাবো আমি। ভাইবেন না একা যাইতে পারবো না। তুলতুল সব পারে। রাস্তাঘাট একদম চেনা। খুব সহজেই চলে যেতে পারবো। না পারলে বাবাকে কল করে নিবো। তবুও আমি একাই যাবো।
আপনার জন্য অপেক্ষা করত

বাকিটা শেষ করতে পারে না তুলতুল। সায়ান চোখ বন্ধ করেই তুলতুলের হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। তুলতুল সায়ানের বুকের ওপর পড়ে যায়।

” কককি করছেন আপনি?

তুলতুল ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে।

সায়ান তুলতুলকে নিচে শুয়িয়ে দিয়ে তুলতুলের ওপর নিজের ভর ছেড়ে দেয়।
তুলতুল দাঁতে দাঁত চেপে সায়ানের চুল মুঠ করে ধরে।

“ম*রে গেলাম আমি। নিজের ওজনের দিকে খেয়াল আছে আপনার? ছোটমট একটা হাতি কোথাকার। সরুন আমার ওপর থেকে। হাড্ডি ভেঙে গুড়িয়ে গেলো।

সায়ান তুলতুলের গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।

: এতো সেজেছো কেনো? কাকে পাগল করার ধান্দা।

সায়ান ঘোর লাগা গলায় বলে। তুলতুল সায়ানের চুল খাঁমচে ধরে।

” এক পাগলকেই সামলাতে পারি না। আবার কাকে পাগল করবো?সরুন আপনি। যেতে হবে।

রিনরিনিয়ে বলে তুলতুল।

“ছুঁয়ে প্রমিস করো। ওইখানে যাওয়ার পরে তিরিং বিরিং করে এদিক ওদিক ছুটবে না। রাতে শাশুড়ীর কাছে ঘুমানোর বায়না করবে না। আমার সাথে ঘুমাবে। মাঝেমধ্যে রুমে আসবে। আমার চোখে চোখে থাকবে।

” যাবো একটু ঘুরতে। ওদের দেখতে। তাও আপনার গা ঘেসে থাকতে হবে?

“হুমম হবে। তোমাকে ছাড়া পাঁচ মিনিটেই পাগলপাগল হয়ে যাই।

তুলতুল মুচকি হেসে সায়ানের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ায়।

” ঢং

“ঢং না ভালোবাসি।

ঠোঁটের হাসি চওড়া হয় তুলতুলের। তুই থেকে তুমিতে এসেছে আরও কয়েকমাস আগে থেকে। তুলতুলের তুই ডাকটা পছন্দ না। সে সাফ সাফ বলে দেয় তুমি করে না বললে কথাই বলবে না।

🥀
সুমুকে অটিতে ঢোকানো হয়েছে। পুরো এমপি বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য অপেক্ষা করছে ফুটফুটে নতুন সদস্যের জন্য। তন্ময় মায়ের হাত ধরে এক পাশে বসে আছে। ভীষণ চিন্তা হচ্ছে তার। সুমু তো সামান্য একটু হাত কেটে গেলেই কেঁদে ভাসিয়ে দেয়। সে কি করে সিজারের যন্ত্রণা সয্য করবে? এই তো কয়দিন আগে। বেবি পেটের মধ্যে লাথি মেরেছিলো। সুমুর সে কি কান্না। সে না কি ব্যাথা পেয়েছে।
সেই ভীতু মেয়েটার এখন সিজারিং হচ্ছে।

হিমু আর তনু একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে একটু পর পর। তাদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা টেনশনে আছে।

একটু পরেই ভেতর থেকে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসে। প্রত্যেকটা মানুষ কেঁপে ওঠে।

” ও কাঁদছে কেনো?

তন্ময় লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে৷

“বাচ্চাটা একটু কাঁদেই

তখনই নার্স সাদা তোয়ালেতে মুরিয়ে একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে বাইরে আসে।

” ছেলে হয়েছে।

সালমান নাতিকে কোলে তুলে নেয় হাসিমুখে

“আমার সুমু কেমন আছে?

তন্ময় জিজ্ঞেস করে।

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। একটু পরেই তাকে কেবিনে সিফট করা হবে৷
সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
পাপন বাচ্চা নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগিয়ে দেয়। সে কোলে নিতে চাচ্ছে কিন্তু সালমান দেবে না।

“আপনি পাঁচ মিনিট কোলে রেখেছেন। এখন আমি রাখবো।

” আমিই রাখবো। আপনি পারবেন না। বুড়ো হয়ে গেছেন।

সালমান বলে৷

ওনাদের খুনশুটি দেখে সবাই হেসে ফেলে।

এমনিতে তুলতুলের জার্নিতে কখনো বমি হয় না। কিন্তু আজকে গাড়ি থেকে নামতেই গরগর করে বমি করে দেয়। সায়ান চিন্তায় পড়ে যায়। তুলতুলকে ধরে একটা চায়ের দোকানে বসায়

“আর ইউ ওকে তুলতুল? কি হয়েছে তোমার?

তুলতুল বড়বড় দুটো শ্বাস টানে

” ঠিক আছি আমি। মাথাটা ঘুরছিলো।

সায়ান এক বোতল পানি এগিয়ে দেয় তুলতুলের দিকে। পানি খেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয় তুলতুল।

“এখন যেতে পারবো চলুন।

তুলতুল দাঁড়িয়ে বলে।

” ডাক্তার দেখাবো কিন্তু

“আবার বমি করলে দেখিয়েন। এখন চলুন

সায়ান তুলতুলের হাত ধরে যায়।

ওখানে গিয়েই তুলতুল বাবু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে পুতুলটাকে কাউকে দেবে না। বাচ্চাটাও কি সুন্দর ছোট ছোট চোখ দুটো দিয়ে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে।

সুমুকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে।
তন্ময় সুমুকে দেখতে যায়। সথে বড়ির সবাই যায়। শুধু রয়ে যায় তনু আর তুলতুল। দুই বোন বাবুটাে নিয়ে খেলছে।

🥀
হাসপাতালে তিন দিন থাকতে হবে সুমুকে। সুমুর সাথে রয়েছে সালমা আছিয়া পাপন আর সালমান। আর বাকি সবাই চলে এসেছে।

রাতে খাবার টেবিলে সবাই মিলে খাচ্ছে । হঠাৎ করে মাছ দেখে তুলতুলের গা গুলিয়ে ওঠে।

” তুলতুল খাচ্ছো না কেনো? বোয়াল মাছ তো তোমার খুব প্রিয়। খাও।

হামিদা তুলতুলের পাতে দুই টুকরো মাছ দিয়ে বলে। তুলতুল একটু হেসে খাওয়া শুরু করে। জোর করে একবার গা দিতেই বমি পেয়ে যায়।
দুই হাতে মুখ চেপে বেসিনের দিকে দৌড় দেয়। সবাই অবাক হয়ে যায়।
তনু তুলতুলের পেছন পেছন যায়।
বমি করতে করতে অস্থির হয়ে পড়ে তুলতুল। সায়ানও আসে।
তনু ধরে রেখেছে তুলতুলকে।

“সব কিছুতেই তোমার পাকনামি। বললাৃ ডাক্তার দেখানোর কথা। তুমি কি করলে? আমার কথাই শুনলে না। ইচ্ছে করে থা*প্প*ড়ে গাল ফাটিয়ে দেই।

সায়ান তুলতুলকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলে৷

” তুলতুল ঠিক আছো তুমি?

মনি পানি নিয়ে দৌড়ে এসে বলে৷।

“ঠিক থাকবে? পাকনামি করবে যে।

তুলতুল পানি খায়। কথায় বলার শক্তি পাচ্ছে না।
” বকিস না। রুমে নিয়ে যা।

সায়ান কোলে নিতে যায় তুলতুলকে।

“আমি হেঁটে যেতে পারবো।

তুলতুল রিনরিনিয়ে বলে।

“বকবো না ওকে? সারাক্ষণ থা*প*ড়ানো উচিৎ। কটা একটা।

ধমক দিয়ে কোলে তুলে নেয় সায়ান।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here