অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৬৫।

0
357

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৬৫।

প্রিয়তা খুশি হয়ে বলল,

‘আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো দারুণ খবর। তুমি রাজি তো?’

মৌমি ইতস্তত সুরে বলল,

‘তোমার ভাইয়া কি আমাকে পছন্দ করবেন?’

প্রিয়তা হেসে বলল,

‘তোমার মতো একটা মেয়েকে কেউ পছন্দ না করে থাকতে পারে?’

‘তবে এত ঝগড়া করেন কেন?’

‘আরে বোকা, ঐটা তো প্রেম শুরুর প্রথম পর্যায়। ঝগড়া থেকে শুরু হওয়া সম্পর্কগুলোই শেষে এক চমৎকার পূর্ণতা পায়। সিনেমাতে দেখো না।’

প্রিয়তার কথায় লজ্জা বাড়ল মৌমির। বলল,

‘হয়েছে হয়েছে, তুমি একটু বেশিই বলে ফেলছো।’

প্রিয়তার তার গাল টেনে দিয়ে বলল,

‘মোটেও বাড়িয়ে বলছি না। আর আমি খুশি হয়েছি অনেক। তুমি আমার ভাই আর আমার পরিবারের জন্য দূর্দান্ত পছন্দ।’

মৌমি মাথা নোয়াল। এত প্রশংসা একসাথে সে হজম করতে পারছে না ঠিক। আবার লজ্জাও পাচ্ছে। এই কঠিন অবস্থায় প্রসঙ্গ পাল্টাতে সে বলল,

‘আচ্ছা আমাদেরটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আগে তোমাদের বিয়ে, তাই সেটা নিয়েই আগে ভাবা উচিত। তো বিয়েতে কী কালারের শাড়ি পরবে বলো?’

প্রিয়তা ভাবল কিছুক্ষণ। বলল,

‘সাদা।’

মৌমি হেসে বলল,

‘বাহ, ভিন্ন বেশ। তাহলে ভাইয়াকেও বলব সাদা পাঞ্জাবী পরতে, ম্যাচিং ম্যাচিং।’

প্রিয়তা লজ্জা সুলভ হাসি দিল। বলল,

‘আচ্ছা।’

তারপর আরো কিছুক্ষণ গল্প করল দুজন।

রাত এগারোটা। খাবার টেবিলে সবাই। সবার মধ্যে খুশি খুশি ভাব। মৌমি লজ্জা লজ্জা একটা মুখ নিয়ে বসে আছে। যেন পরশু বিয়েটা প্রিয়তার না তার’ই। ফাঁকে ফাঁকে একটু আবার আড়চোখে নীহালকেও দেখছে। অলিউল সাহেব বললেন,

‘আমার কাজী সাহেবের সাথে কথা হয়েছে, আপা। শুক্রবারে জুম্মার পরপরই বিয়েটা পড়ানো হবে।’

দিলরুবা বেগম তৃপ্ত হেসে বললেন,

‘আলহামদুলিল্লাহ।’

প্রিয়তা আর ফারজাদ বোধ হয় নতুন বর বউয়ের মতো একটু বেশিই লজ্জা পাচ্ছে। খাবারের প্লেট থেকে চোখ’ই সরছে না তাদের।

বিয়ে নিয়ে ছোট খাটো আলোচনার মাঝেই খাবার শেষ হলো সবার। প্রিয়তা লুৎফা বেগমকে সাহায্য করছে সব গুছিয়ে রাখতে। বেসিনে হাত ধুচ্ছে নীহাল। তার পেছনেই মৌমি। একটু সংকোচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। নীহাল হাত ধুয়ে সরে এল। মৌমি একপলক তাকাল তার দিকে। তাও সেই এক পলকের একটু চাহনিতেও যেন এক বিস্তর লজ্জা উপচে পড়ছে তার। নীহালেরও চোখে পড়ে সেটা। এই মেয়ের আচানক তাকে দেখে এত লজ্জা পাওয়ার কারণ সে বুঝতে পারে না। সে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে নিজের রুমে চলে যায়।

পরদিন সকাল। নাস্তার পাঠ চুকিয়েই তৈরি হয়ে নিল প্রিয়তা আর মৌমি। দিলরুবা বেগম আর লুৎফা বেগমকে নিয়ে শপিং এ বের হবে দুজন। সাথে ফারজাদ আর নীহালও যাবে। অলিউল সাহেব অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছেন। তাই ঘরে তালা ঝুলিয়েই বেরিয়েছে সবাই।

শাড়ির দোকানে ঢুকে একগাদা শাড়ি দেখা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু তাও কিছু পছন্দ হচ্ছে না। নীহাল আর ফারজাদ বসে আছে অসহায় ভাবে। এই তিন মহিলার চক্করে পড়ে তাদের মাথা এখন ঘুরাচ্ছে। একটা শাড়ি কিনতেই দুই ঘন্টা খুইয়ে ফেলেছে, বাকি শপিং কখন করবে কে জানে। ফারজাদ অনুচ্চ স্বরে বলল,

‘আম্মি, এতগুলো শাড়ির মাঝে একটাও কি পছন্দ হয়নি? আর কত দেখবেন?’

‘হয়েছে, কিন্তু ঐরকম ভাবে না।’

‘ঐরকম ভাবে’টা কবে হবে, আম্মি?’

‘আরেকটু দেখে নেই।’

ফারজাদ হতাশ মুখে নীহালের দিকে চাইল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল নীহাল। এই মহিলাপার্টি আজ তাদের বারোটা না বাজিয়ে ছাড়বে না। অবশেষে অনেক ঘাটাঘাটির পর একটা সাদা শাড়ি পছন্দ হলো প্রিয়তার। সাদা সিল্ক শাড়ির উপর গোল্ডেন সুতার কাজ। পাড়ের কাছটা চিকন ফুলের কারুকার্য। বেশ সুন্দর। প্রিয়তা গায়ে লাগাল সেটা। আয়নার কাছটাতে গিয়ে দাঁড়াল। পেছন থেকে আয়নায় ফুটে উঠল ফারজাদের মুখটাও। প্রিয়তা ইশারায় জিজ্ঞেস করল, “কেমন?” ক্ষীণ হেসে ফারজাদ ইশারায় বোঝাল, “চমৎকার।” ব্যস, সে নিয়ে নিল সেটা। আর তারপর বিয়ের আরো সব প্রাসঙ্গিক কেনাকাটা করল সবাই। প্রিয়তার সব কেনাকাটা শেষ হলো। এবার ফারজাদের পালা। মৌমির কথা মতো ফারজাদ প্রিয়তার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে একটা সাদা পাঞ্জাবী কিনল। ছেলেদের শপিং আহামরি কোনো ব্যাপার নয়, তাই এক ঘন্টার ভেতরেই ফারজাদও ইতি টানল তার শপিং-এ। বিরাট এক পরিশ্রমের কাজ সেরে সবাই গিয়ে বসল একটা রেস্টুরেন্টে, দুপুরের খাবারটা এখানেই খাবে সবাই।

সন্ধ্যার কিছু আগে সবাই বাড়ি ফিরে। একসাথে অনেক হৈ হুল্লোর হয়েছে আজ। সবার মন’ই বেশ ফুরফুরে। বাসায় গিয়েই প্রিয়তা চা বানায় সবার জন্য। তার হাতের চা খেয়ে সবার সন্ধ্যাটা যেন আরো জমে উঠে।

___________________

‘মা, আমি কেন? ভাইয়া যদি রেগে যায়?’

‘উঁহু, তোর উপর রাগ দেখাবে না। তুই একবার বলেই দেখ না।’

প্রিয়তা পড়েছে বিপদে, ভাইয়ের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলা কি চারটে খানি কথা? মায়ের আদেশ অমান্য করতে পারবে না বলে নিরুপায় হয়ে রাজি হতে হলো তাকে। নীহাল তখন নিজের ঘরে। লেপটপে কিছু একটা করছে। প্রিয়তা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

‘আসব, ভাইয়া?’

নীহাল চাইল তার দিকে। বলল,

‘আয়।’

ভেতরে প্রবেশ করল প্রিয়তা। বিছানার একপাশে বসল। জিজ্ঞেস করল,

‘জরুরি কাজ করছো?’

নীহাল লেপটপটা বন্ধ করে বলল,

‘না, তেমন কিছু না। কিছু বলবি?’

প্রিয়তা কিঞ্চিৎ হেসে মাথা নাড়াল।

‘কী বলবি, বল।’

প্রিয়তা হাসফাস করছে। কীভাবে যে বলবে কথাটা বুঝতে পারছে না। এক মিনিট সমানে হাত কচলে অবশেষে বলল,

‘ভাইয়া, মৌমিকে তোমার কেমন লাগে?’

নীহাল ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘কেমন লাগে মানে?’

‘না মানে, ভালো লাগে কি-না জানতে চাইছি?’

নীহালের ভ্রু জোড়ার ভাঁজ দৃঢ় হলো আরো। জিজ্ঞেস করল,

‘কেন? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?’

প্রিয়তা ইতস্তত সুরে বলল,

‘আসলে মা চাইছিলেন যে, মানে চাইছিলেন, তুমি যেন মৌমিকে বিয়ে করো।’

নীহাল নাক মুখ কুঁচকে নিল। প্রিয়তা ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছেও না। ভয় পাচ্ছে সে। নীহাল বলল,

‘মৌমি কেন? দুনিয়াতে কি আর মেয়ে নেই?’

প্রিয়তা সাহস পেল খানিক। বলল,

‘মেয়ে আছে, কিন্তু মৌমির মতো ভালো মেয়ে নেই।’

নীহাল লেপটপটা খুলল আবার। বলল,

‘উনি নিত্যান্ত’ই একটা বাচ্চা মেয়ে। আর যায় হোক, সংসার সামলানোর মতো বয়স উনার এখনো হয়নি।’

‘ভাইয়া, এখন হয়নি তো কী হয়েছে; বিয়ের পর হয়ে যাবে। আর কত’ই বা ছোট ও, আমার থেকে এক কী দেড় বছরের ছোট। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, ওর মতো সরল সোজা মেয়ে আজকাল হয় না। একবার ভেবে দেখো, প্লিজ।’

‘আচ্ছা দেখব ভেবে, এখন যা তুই।’

প্রিয়তা বুঝল না, তার ভাই এটা রেগে বলল না-কি স্বাভাবিক ভাবেই। সে উঠে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করল,

‘সত্যিই ভেবে দেখবে তো? দিলরুবা আন্টি আর মৌমিও কিন্তু রাজি।’

নীহাল ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ঐ মেয়েটাকেও জানিয়ে ফেলেছিস?’

‘মা জানিয়েছে।’

নীহাল মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘মায়ের দেখছি আর তর সইছে না।’

‘তুমি না করো না প্লিজ। মৌমি ভীষণ ভালো মেয়ে।’

প্রিয়তা অনুরোধ জানাল। নীহাল বলল,

‘ভীষণ ঝগড়ুটে মেয়ে।’

‘তুমিও তো কম নও।’

নীহাল ক্ষুব্ধ হয়ে বলল,

‘বাহ, ঐ মেয়ের জন্য তুই তোর ভাইয়ের বিপক্ষে যাচ্ছিস?’

‘হ্যাঁ, যাচ্ছি। আমার মৌমিকেই আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে চাই। তুমি রাজি না হলে একদম জোর করে বিয়ে দিয়ে দিব।’

প্রিয়তা দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর বকা শোনার ইচ্ছে নেই তার। নীহাল মুচকি হাসল অতঃপর। মনোযোগ দিল তার লেপটপের স্ক্রিনে।

বাইরে বের হয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে প্রিয়তা। মনে মনে দোয়া করে, ভাই যেন রাজি হয়ে যায়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here