অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৭১।

0
365

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৭১।

“একটুও না। আপনি জানেন, আমি আপনাকে মিস করছি।”

কয়েক শব্দের এই বার্তাটা মৌমি এই নিয়ে বিশ বার পড়ে ফেলেছে। “আমি আপনাকে মিস করছি” ছোট্ট একটা কথা শরীরে শিহরণ জাগাচ্ছে তার, প্রেম প্রেম অনুভূতির জন্ম দিচ্ছে। সে হাসছে আপন মনেই। জবাবে লিখল,

‘আমিও।’

পরক্ষণেই আবার ডিলিট করে লিখল,

‘মিথ্যে বলছেন। আপনি তো আমাকে ঝগড়ুটে বলেন, এই ঝগড়ুটে মেয়েকে আপনি মিস করতেই পারেন না।’

ফোনটা বোধহয় নীহালের হাতেই ছিল। তাই উত্তর এল সাথে সাথে,

‘অবশ্যই করতে পারি। অন্তত আপনার ঝগড়াগুলো আমি কখনোই ভুলব না।’

মৌমি উত্তরে লিখল,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার মাঝে তো ভালো কিছু পাননি। খালি ঝগড়া করি যে সেটাই দেখলেন, আর ঝগড়াটা যে আপনি শুরু করেন সেটা কিছু না।’

একটা হাসির ইমুজি পাঠাল নীহাল। বলল,

‘তা ঠিক বলেছেন, আমিই শুরু করি। তবে একটা কথা না বললেই নয়, আপনি ভীষণ ভালো একটা মেয়ে।’

ওপর পাশে গাল লাল হলো মৌমির। লিখল,

‘আমি বলাতে এখন প্রশংসা করছেন?’

‘না, আসলে আপনি এত ঝগড়া করেন যে আমি আপনার প্রশংসা করার সুযোগ পাই না, আজকে পেয়েছি তাই করলাম।’

মৌমি লজ্জা পাবে না একটু রাগ দেখাবে বুঝতে পারছে না। সে লিখল,

‘আপনি ঝগড়া না করলে আমিও আর ঝগড়া করব না।’

‘কী বলছেন! আমি তো আরো সারাজীবনের জন্য এই ঝগড়াকে পারমানেন্ট এর ব্যবস্থা করছিলাম।’

‘মানে?’

‘মানে বিয়ে।’

মৌমির বুকের ভেতরে ধরাস ধরাস করছে। কী সাংঘাতিক অনুভূতি। সে লিখল,

‘আচ্ছা আম্মি ডাকছে, আবার পরে কথা হবে।’

উত্তর এল,

‘আপনার এই লজ্জায় লাল হয়ে উঠা মুখটা আমার এখন বড্ভ দেখতে ইচ্ছে করছে, মৌমি।’

‘আবার তবে পাকিস্তানে চলে আসুন।’

‘আসব খুব শীঘ্রই। আপনাকে একেবারে নিয়ে যেতেই আসব, অপেক্ষা করুন।’

মৌমি আর লিখবে কী। হাত কাঁপছে তার। তাও কোনোরকমে লিখল,

‘আচ্ছা, অপেক্ষায় রইলাম।’
________________

‘এবার নিচে যাব আমি।’

‘সবে দশ মিনিট হয়েছে, প্রিয়তা।’

‘কী বলেন! আধ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে।’

‘হাতে ব্যথা করছে?’

‘না।’

‘তবে নিচে যাওয়ার জন্য এত অস্থির কেন?’

‘আপনার জন্য। এত নড়াচড়া করলে আমি বিলি কেটে দিতে পারব না।’

‘কই নড়ছি? আমি তো চুপচাপ শুয়ে আছি।’

‘মোটেও না। আপনি ইচ্ছে করে এমন করছেন, আমি বেশ বুঝতে পারছি।’

ফারজাদ হাসল অতি সন্তর্পনে। বলল,

‘আমি ইচ্ছে করে কী করছি?’

প্রিয়তা কিছু বলতে নিয়েও থামল। ফারজাদের লুকানো হাসি দেখল সে। তাকে ইচ্ছে করে লজ্জায় ফেলার ধান্ধা। মাথা ব্যথা করছে দেখে প্রিয়তার কোলে শুয়ে বলেছে বিলি কেটে দিতে। প্রিয়তাও দিচ্ছিল বেশ। কিন্তু সে প্রিয়তার দিকে মুখ করে শুতেই প্রিয়তার হাত বন্ধ হয়ে গেল। ফারজাদের মুখ তার উদরে স্পর্শ করছে বারংবার। প্রথমবার এমনিতে করলেও পরেরবার থেকে ফারজাদ ইচ্ছে করেই করছে। প্রিয়তা শক্ত হয়ে বসে আছে। একটু পরপর শ্বাস টেনে ধরছে। ফারজাদ মজা পাচ্ছে বেশ। শ্বাস ছাড়লেই প্রিয়তার পেট এসে লাগছে ফারজাদের মুখে। সে এবার বিরক্ত। বলল,

‘ফারজাদ, আপনি মাথাটা একটু পিছিয়ে নিন।’

‘কেন?’

‘আমার অসুবিধা হচ্ছে।’

‘কিন্তু আমার তো হচ্ছে না।’

প্রিয়তা বিড়বিড় করে বলল,

‘আপনার হবে কীভাবে, আপনি তো এটাই চান।’

‘কিছু বললে, প্রিয়তা?’

‘না।’

‘আচ্ছা আর কিছুক্ষণ বিলি কেটে দাও, তারপর উঠে যাচ্ছি।’

প্রিয়তা বিলি কেটে দিল আরো কিছুক্ষণ। বলল,

‘আপনার চুলগুলো অনেক সুন্দর।’

‘মেয়ে হয়ে ছেলেদের চুলের প্রশংসা করছো?’

‘কেন, করা যায় না?’

‘না, এটা তো নিয়মের বাইরে। প্রশংসা তো ছেলেরা মেয়েদের করে, এখন উল্টো হয়ে গেল না।’

‘একেবারেই না, মেয়েরাও তাদের প্রিয় পুরুষের প্রশংসা করতে পছন্দ করে।’

ফারজাদ মাথা তুলে চাইল প্রিয়তার দিকে। হেসে বলল,

‘প্রিয় পুরুষ, বাহ!’

প্রিয়তা হাসল ক্ষীণ। উঠে বসল ফারজাদ। বলল,

‘বাসর রাতের উপহার তো এখনো তোমাকে দেওয়া হয়নি। দাঁড়াও, আনছি।’

ফারজাদ উঠে গিয়ে আলমারি খুলল। একটা প্যাকেট বের করে আবার এসে বসল পূর্বের স্থানে। প্রিয়তা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে বলল,

‘কী আছে এটাতে?’

ফারজাদ প্যাকেট খুলে একটা ছোট্ট বক্স বের করল। তারপর বক্সটা মেলে ধরল প্রিয়তার দিকে। অবাক হলো প্রিয়তা। বলল,

‘এই চাকরিটা তো নতুন হয়েছে, এর মাঝেই এত খরচ…’

‘প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার সময় খরচের কথা মাথায় আসে না, প্রিয়তা। আর সেই প্রিয়জন যদি হয় নিজের বিবি তাহলে তো আরো আগে না।’

সে আলতো হাতে প্রিয়তার হাতটা নিজের হাতে তুলল। অন্য হাতে আংটি’টি তুলে পরিয়ে দিল প্রিয়তার অনামিকা আঙ্গুলে। ডায়মন্ডের বড়ো পাথরটা যেন চিকচিক করছে। ফারজাদ হাতটা একটু উঁচু করে তার ঠোঁটের কাছে নিয়ে চুম্বন করল। ঢোক গিলল প্রিয়তা। একটু আগের অস্থিরতা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ফারজাদ দুহাতে আগলে নিল তার বিবির হাত যুগল। বলল,

‘আরো একবার ওয়াদা করো, আমায় ছেড়ে যাবে না।’

‘হ্যাঁ, ওয়াদা, কখনো যাব না। আমার পুরো জীবন আমি আপনার হাতে সঁপে দিলাম।’

ফারজাদ তৃপ্ত বোধ করল। মায়ের অতীত এখনো তাকে ভীত করে, তাই তো এত ওয়াদা নিচ্ছে সে।

প্রিয়তা বলল,

‘আমি যে কিছু দেইনি।’

ফারজাদ কিঞ্চিৎ হাসল। বলল,

‘চাইলেই তো দিতে পারো।’

প্রিয়তা মুখ ভার করে বলল,

‘আমার কাছে এখন দেওয়ার মতো কিছু নেই, আমি কিছু কেনার সুযোগও পাইনি।’

ফারজাদের ঠোঁটে হাস্যরেখা চওড়া হলো। বলল,

‘না কিনেই তো অনেক কিছু দেওয়া যায়।’

‘কী?’

খানিকটা এগিয়ে এল ফারজাদ। ক্ষীণ সুরে বলল,

‘ভালোবাসা, যেটা কোনো কিছুর বিনিময়ে তুমি কিনতে পারবে না। অনেক সম্পদ ব্যয় করেও যেটা হাসিল করা যায় না, সেই সবথেকে মহা মূল্যবান জিনিসটা আমার তোমার থেকে চাই প্রিয়তা, দিবে না?’

‘এভাবে চাইলে কি আর কেউ না দিয়ে থাকতে পারে? এটা যতই দামি জিনিস হোক না কেন, আমি আপনাকে দিতে একটুও কৃপণতা করব না।’

ফারজাদের চোখ মুখ উজ্জ্বল। ভালোবাসা সুখের, আজ প্রমাণ পেল বোধ হয়। সে এগিয়ে এসে প্রিয়তার কপালে নিজের ভালোবাসা জাহির করল। কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

‘আমিও না, একটুও না।’

________________

রাতের খাবারের পর মৌমি নিজের ঘরে গিয়ে শুয়েছে। রান্নাঘরে টুকটাক শাশুড়িকে সাহায্য করছে প্রিয়তা। যদিও দিলরুবা বেগমের তাতে ঘোর আপত্তি, তবে প্রিয়তাও শুনতে নারাজ। সে কাজ করার ফাঁকেই বলল,

‘মা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?’

‘কী কথা, বলো?’

‘আপনি আবার রেগে যাবেন না তো?’

দিলরুবা বেগম তার দিকে চেয়ে প্রসন্ন হাসলেন। বললেন,

‘না, রাগব না, বলো।’

প্রিয়তা তাকাল। ইতস্তত সুরে বলল,

‘মা, বাবা কোথায়?’

দিলরুবা বেগমের কর্মরত হাত যুগল থমকাল। প্রিয়তার দিকে চাইলেন তিনি। জিজ্ঞেস করলেন,

‘হঠাৎ এই প্রশ্ন?’

‘আসলে এই বাড়িতে আসার পর থেকেই মাথায় প্রশ্নটা ঘুরছিল। আর এই বাড়ির কোথাও বাবার তেমন কোনো স্মৃতি দেখলাম না, তাই জানতে ইচ্ছে হলো আরকি।’

‘মানুষ মারা গেলে স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকে, আর হারিয়ে গেল হয়ে যায় বিলিন। উনি হারিয়ে গিয়েছেন, তাই উনার সমস্ত স্মৃতিও বিলিন হয়ে গিয়েছে।’

থমথমে শোনাল দিলরুবা বেগমের স্বর। প্রিয়তার আগ্রহ কমছে না। সে সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কীভাবে হারাল, মা?’

দিলরুবা বেগম তার দিকে তাকাতেই প্রিয়তা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,

‘আপনি বলতে না চাইলে আমি জোর করব না।’

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন দিলরুবা বেগম। বললেন,

‘আমি বলতে চাইছি না।’

প্রিয়তা বলল,

‘সমস্যা নেই। যতটুকু বলেছেন ততটুকুই যথেষ্ঠ।’

সে আবার মনোযোগ দিল নিজের কাজে। দিলরুবা বেগম ভাবছেন অন্য কথা। আর কতদিন ঐ লোকটার পরিচয় লুকিয়ে রাখবেন তিনি। নিজের মেয়েটার কাছেও লুকিয়ে এসেছেন এতদিন আর এখন প্রিয়তার কাছেও। এভাবেই কি আজীবন চলবে? নাকি হুট করেই একদিন বদলে যাবে সবকিছু? যদি সত্যিই বদলে যায়, তবে আবার নতুন করে কী করে সামলাবেন নিজেকে?

চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here