আমার তুমি ২ #অন্তিম পর্ব #তানিশা সুলতানা

0
416

#আমার তুমি ২
#অন্তিম পর্ব
#তানিশা সুলতানা

প্রেগন্যান্ট তুলতুল। স্তব্ধ হয়ে গেছে সবাই। বিশেষ করে সায়ান। বিশ্বাসই করতে পারছে না। এই ছোট্ট তুলতুলের পেটেআরও একটা মানুষ আছে?
তুলতুল সায়ানকে এমন থ মেরে বসে থাকতে দেখে মুখ বাঁকায়। সালমা তুলতুল মাথার কাছে বসে আছে। ছেলেরা গেছে মিষ্টি আনতে। তনু তুলতুলের জন্য সুপ বানাতে গেছে।
আপাতত তুলতুলের কাছে সায়ান সালমা আর মনি বসে আছে।

তুলতুল উঠে বসতে যায়। সাহায্য করে সালমা।

“দেখেন মা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো গিলে খাবে আমায়। ঢং দেখে বাঁচি না।
কেনো রেগে আছে বলেন তো? এখন তো ঠাস ঠাস চর বসাতে পারবে না। তাই ওনার হাত উসখুস করছে।

তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে বলে।

” কেনো চর বসাতে পারবো না? বেশি কথা বলে দেইখো একদম থা*প্প*ড় গাল লাল করে দিবো।

সায়ান চোয়াল শক্ত করে বলে।

“আর একবার থাপ্পড় দিলে ডিরেক্ট বাবার বাড়ি চলে যাবো। আর বেবি পৃথিবীতে চলে আসলে তাকে আপনাকে দেখিয়ে বলবে! সোনামনি এটা তোমার মামা হয়। আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড ”

তুলতুলের কথা শুনে ফিক করে হেসে ওঠে মনি। সালমা মুখ টিপে হাসছে।
সায়ান কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। এর সাথে কথা বলে লাভ আছে?

তিনদিন পরে আজকে সুমুকে বাড়িতে আনা হয়। পাপন তার বাড়িতে নিয়ে এসেছে। তার কথা আমার নাতনী আমি দিবো না। সালমান অনেক জোর করেও নিতপ পারলো না।

তুলতুল সকালেই চলে এসেছে। বাবুর জন্য খাট সাজিয়েছে তুলতুল আর তনু। সায়ান আর হিমু গেছে বাবুর জন্য ছোট্ট খাট কিনতে৷

বিকেলে সুমু তার রাজপুত্রকে নিয়ে চলে আসে বাড়িতে। ছেলেটা সালমানের কোলে। সালমা সালমানের পাশে পাশে হাঁটছে। আবার ফেলে টেলে দিবে না কি?
পাপন মিষ্টি বিলাচ্ছে। তন্ময় অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুমুর দিকে। আজকে তিনটে দিন হয়ে গেলো তার ছেলে হয়েছে। অথচ পাঁচ মিনিটের জন্যও ছেলেকে কোলে করে রাখতে পারে নি।

তুলতুল এক দৌড়ে চলপ আসে সালমানের কাছে।

“বাবা আমার কোলে দিন।

হাত বাড়িয়ে বলে তুলতুল।

” আরে তুলতুল। তুমি বাচ্চা একটা মেয়ে। আমার নাতীকে তুমি কোলে নিতে পারবে না।

“আমি খুব পারবো। দিন না বাবা।

তুলতুল জোর করেই নিয়ে নেয়।

” তুলতুল কিছু খেয়েছিস তুই? তোকে দেখেই মনে হচ্ছে দুপুরের খাবার খাস নি এখনো?

তন্ময় বলে ওঠে। তুলতুল দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।

“কিহহহ তুমি খাও নি? কেনো খাও নি? শেষমেশ রোগা পাতলা নাতনী হলে তোমার বাবা তো আমাকে কথা শোনাবে।

সালমান বলে।

” কথা শোনাবোই তো।

পাপন এক প্লেট খাবার নিয়ে সোফায় বসে বসতে বলে।

“হ্যাঁ শোনাবেনই তো।

” আহহহ তোমরা কি দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো? ছোট্ট বাচ্চাদের মতো সারাক্ষণ ঝগড়া করেই যাও। এটা ঠিক না।

তুলতুল বলে।

“আচ্ছা কর করছি না। তুমি এসো আমার কাছে। খাবারটা জলদি শেষ করো।

তুলতুল বাবার পাশে বসে। পাপন খাইয়ে দেয় তুলতুলকে।

এভাবে সাতটা মাস কেটে যায়। সাত মাসে সায়ান একবারও বকে নি তুলতুলকে। সারাক্ষণ চোখো হারায়। যখন যা চাইবে তাই এনে দিবে।

এখন বাজে রাত দশটা। তুলতুল আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে। এই সাত মাসে। কতোটা পরিবর্তন হয়ে গেছে তুলতুল। আগের চেয়ে গলুমলু হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি জমেছে। পেটটা ফুলপ গেছে। ঢিলেঢালা মেক্সি পড়ার পরেও পেটটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

” তুলতুল রাতে আয়না দেখা ভালো না। কতোবার বলবো তোমায়? একটা কথাও শুনো না তুমি আমার। আর কতো জ্বালাবে?

সায়ান খাবারের প্লেট বিছানার ওপর রেখে বলে।
তুলতুল সায়ানের দিকে তাকায়।

“আমি দেখতে বাজে হয়ে গেছি তাই না?

সায়ান ভ্রু কুচকে তাকায় তুলতুলের দিকে।
তুলতুলের হাত ধরে বিছানায় বসায়।

” বাজে কেনে হবে? আরও কিউট হয়েছো। অন্য রকম সুন্দর। এই সুন্দরের বিবরণ করা যাবে না।
আমার আকাশের চাঁদ তুমি তুলতুল।

তুলতুলকে খাইয়ে দিতে দিতে বলে সায়ান। তুলতুল মুচকি হেসে গলা জড়িয়ে ধরে সায়ানের।

“ভালোবাসি বলে।

সায়ান তুলতুলের পেটে চুমু খায়। তারপর তুলতুলের কপালে।

” ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।

“আমিও আপনাকে আর আমাদের প্রিন্সেসকে ভীষণ ভালোবাসি।

পাঁচ বছর পরে

“আমি পাপা আমাকে বেশি ভালোবাসে।

তন্ময় আর সুমুর ছেলে অভি বলে।

” আমার মামা আমাকে বেশি ভালোবাসে। তোকে একটুও ভালোবাসে না। তুই একটদ পঁচা ছেলে।

পরি ধাক্কা দিয়ে অভিকে ফেলে দিয়ে বলে। অভি পড়ে যায়। পরি খিলখিল করে হাসতে থাকে।
সায়ান দৌড়ে আসে।

“আরে আরে বাবা তুমি পারলে কিভাবে?

অভিকে টেনে তুলে ময়লা ঝাড়তপ ঝাড়তে জিজ্ঞেস করে সায়ান।

” পাপা ও তো এমনই। শুধু খালি পড়ে যায়।

বলেই পরি হাসতে থাকে। অভি চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তাকায় পরির দিকে। পরি ভেংচি কেটে দেয়।

“মায়ের থেকেও এক কাঠি উপরে এই মেয়ে। একদম মায়ের মতো বজ্জাত।

বিরবির করে বলে সায়ান।

” অভি বাবু কাঁদছো কেনো তুমি?

তুলতুল শাড়ি ঠিক করতে করতে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলে।

“মাম্মা ও পড়ে গেছে।

পরি তুলতুলের হাত ধরে বলে।

” ও আমায় ফেলে দিছে।

অভি পরির দিকে আগুল তুলে বলে।পরি চোখ পাকিয়ে তাকায় অভির দিকে। অভি চুপসে যায়।

“নানা আমি একাই পড়েছি।

তুলতুল বিষয়টা বুঝতে না পারলেও সায়ান বুঝতে পারে।

” ওলে বাবারে। কিভাবে পড়েছো তুমি? ব্যাথা পাইছো?

তুলতুল অভিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে। অভি পরির দিকে তাকিয়ে থাকে।

সায়ান পরিকে কোলে তুলে নেয়।

“মা অভি তোমার ভাইয়া হয়।ওকে কখনো ব্যাথা দিবা না ওকে?

” ও ব্যাথা পেলে আমি কি করবো পাপা? আমার দোষ নেই

____ সমাপ্ত___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here