আমার তুমি ২ #পর্বঃ৪৫ #তানিশা সুলতানা

0
260

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৪৫
#তানিশা সুলতানা

সুখ দুঃখ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। মানুষ কখনোই সারাজীবন সুখে থাকতে পারে না। দুঃখ আসবেই কাবাব মে হাড্ডি হতে। ঠিক সেইভাবে তুলতুলের জীবনে দুঃখ চলে এসেছে। আজকে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী। আজকের দিন টাকে একটু স্পেশাল ভাবে চেয়েছিলো তুলতুল। ভেবেছিলো কিছু একটা করবে সায়ানের জন্য। মনের কথা গুলো উগড়ে দেবে। আপন করে নেবে সায়ানকে। লুকোচুরি খেলা বন্ধ করে দেবে। দুজন কাছাকাছি আসবে। একটা স্বাভাবিক সম্পর্কে গড়ে তুলবে। যেখানে কোনো অভিমান রাগ কষ্ট থাকবে না।

কিন্তু সেটা আর হলো কই? সকাল সকাল বাগান থেকে একটা লাল টুকটুকে গোলাপ ফুল নিয়ে সায়ানের কাছে এসেছিলো। গোলাপটা সায়ানকে দিয়ে বলেছিলো “Happy Valentine Day” কিন্তু সায়ান কি করলো? ফুলটা দেখলো না। দেখলো ফুল ছিঁড়তে গিয়ে কেটে যাওয়া তুলতুলের নরম তুলতুলে হাতটা।

“আমি ফুল চেয়েছি তোর কাছে? কে বলেছিলো ফুল আনতে? তোকে তো আগেই বলেছি এসব ভালো লাগে না আমার। ফুল ফেলে দিয়ে ফাস্ট এইচ বক্স নিয়ে আয়।

ধমক খেয়ে চোখে পানি চলে আসে তুলতুলের। ফুলটা ফেলে দিয়েছে সত্যি সত্যিই। কিন্তু সায়ানের কাছে যায় নি। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে।

সব সময় নিজের ভালো লাগা নিয়ে ভাবে কেনো মানুষ? কখনো তো চারপাশে থাকা মানুষ গুলোর কথা চিন্তা করতে পারে। কখনো তো চারপাশের মানুষদের একটু গুরুত্ব দিতে পারে। তাদের কথা ভেবে নিজের ভালো লাগাটাকে এক পাশে সরিয়ে তাদের তালে তাল মেলাতে পারে। কেনো করে না এমন? মানুষ এতোটা স্বার্থঃপর কেনো?

” তুলা তোকে আমি এখানে আসতে বলেছি।

সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে। তুলতুল বেলকানির দরজা বন্ধ করে দেয় ঠাস করে। রাগ বেরে যায় সায়ানের। তুলতুল সেদিকে পাত্তা দেয় না। কাঠফাটা রোদে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি। এখন রাতের দিকে ঠান্ডা থাকলেও দুপুরের কাঠফাঁটা রোদে বেশ গরম লাগে। তুলতুলেরও গরম লাগছে। ঘেমে যাচ্ছে।
তবুও এখান থেকে সরবে না। ভীষণ রেগে গেছে তুলতুল। হাতের রক্ত শুকিয়ে গেছে।

হাতের কাছে থাকা টেবিল লাইটটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সায়ান। মুহুর্তেউ বিকট শব্দে ভেঙে গুড়িয়ে যায় লাইট। তুলতুল কেঁপে ওঠে। তারাহুরো করে দরজা খুলে দেয়। সায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান নিজে নিজে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তুলতুল আতঙ্কে দৌড়ে যায় সায়ানের কাছে। দুই হাতে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। ইতিমধ্যে সায়ান দাঁড়িয়েও গেছে।

“কিকি করছেন আপনি। ব্যাথা পাবেন তো।

ভয় পেয়ে তুঁতলিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান তুলতুলকে নিয়ের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। কষিয়ে থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয় তুলতুলের নরম গালে। খানিকটা পিছিয়ে যায় তুলতুল।

” খুব সাহস বেরে গেছে তোর তাই না? ভালোবাসা উতলে পড়ছে? একটা কথা বললে কানেও ঢুকছে না। কি ভেবেছিস? সায়ান খোড়া হয়ে গেছে। সে আর হাঁটতে পারবে না। তোর যা খুশি করবি?

রেগে চিৎকার করে বলে সায়ান। তুলতুল গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
সায়ানের চিৎকারে হামিদা সালমা সালমান খুকি আর আব্দুল্লাহ এগিয়ে আসে।

“আব্বা কি হয়েছে? চিৎকার করছিস কেনো?

সালমা ছেলের কাছে এসে বলে।

” কি আর হবে? এই মেয়ে কিছু করেছে। এই মেয়ে তো আকাশে উড়ছে। তার যা ভালো লাগবে তাই করছে। আর তোমরা লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছো। এখন ঠেলা সামলাও।

খুকি মুখ বাঁকিয়ে বলে।

“আহহহ মা থামুন তো। দেখছেন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।

সালমান বলে।

” থামবে কেনো? এই বাড়িতে এসেছে থেকেই ঝামেলা পাকিয়ে যাচ্ছে।

হামিদা খোঁচা মেরে বলে।

“তোমরা কেনো এসেছো এখানে? কেউ ডেকেছো তোমাদের? একটুও কি প্রাইভেসি নেই আমাদের। একটু শব্দ করলে তোমরা দৌড়ে আসবে। বিয়ে করেছি আমি। আমার ঘরে বউ আছে। এভাবে হুটহাট কেনো ঢুকে পড়বে? মেনার্স শেখাতে হবে এখন?

সায়ান রেগে বলে। দমে যায় হামিদা আর খুকি। তুলতুল লজ্জায় থমথমে খেয়ে গেছে। এভাবে নিজেদের পবলেম সবার সামনে চলে আসবে ভাবতে পারে নি।

” তোমরা যাও। আমি তুলতুলের সাথে কথা বলছি।

সায়ান বসে বলে। একে একে সবাই চলে যায়। সালমা দরজা বন্ধ করে দিয়ে যায়। এবার তুলতুল মুখ খুলে।

“আমাকে মানুষ মনে হয় না? আমার মন নেই? আমার আত্মসম্মান নেই? কথায় কথায় গায়ে হাত তোলার শিক্ষা কোথায় পেয়েছেন আপনি? আপনার কাছে সব সময় আপনি যেটা বলবেন সেটাই ঠিক। বাকিরা ভূল। আপনার ইচ্ছেটাই ইচ্ছে। বাকিদের ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে। কেনো?
দুনিয়াতে আপনি একাই মানুষ?

থামে তুলতুল। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।

” আমি কি করবো বলে দিন আমায়? আমি শান্তি চাই। নিজের মতো করে বাঁচতে চাই। একটু স্বাধীনতা চাই। থা*প্প*ড় খেতে চাই না আমি। এভাবে একটা সম্পর্ক এগোতে পারে না। আমার মনে হয় আমাদের এখানেই

বাকিটা শেষ করতে পারে না তুলতুল। তার আগেই সায়ান তার নিজের হাতের কাছে থাকা ফোনটা দেয়ালে ছুঁড়ে মারে। মুহুর্তেই ফোনটা ভেঙে যায়। তুলতুল দুই হাতে কান আটকে চোখ মুখ খিঁচে ফেলে।

“তুই আমার কথা কেনো শুনিস না? আমি তোকে স্বাধীনতা দেই না? এসব কিচ্ছু হতো না যদি তুই ফাস্ট এইচ বক্স নিয়ে আমার কাছে আসতিস। আমি ফুল চাই নি তো কখনোই তোর থেকে।

সায়ান বলে।

” এটাই তো পবলেম। আপনি ফুল চান নি। কিন্তু আমি আপনাকে খুশি করার জন্য ফুল এনেছিলাম। আমার হাতে কাঁটা ফুঁটে গেছিলো তবুও আমিও এনেছি ফুলটা। যাতে আপনি খুশি হন। আজকে একটা স্পেশাল ডেকে। যেটা আমি মানি। আমি দিনটা একটু অন্য রকম ভাবে চেয়েছিলাম। অন্য ভাবে শুরু করতে চেয়েছিলাম। যেটা আপনি বুঝবেন না। কারণ আপনি সব সময় নিজের টা ভাবেন। অন্যদের খুশি নিয়ে ভাবেন না।

তুলতুল চিৎকার করে বলে।
সায়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। দুই হাতে চুল খাঁমচে ধরে।

🥀🥀
আজ দুই দিন যাবৎ অনবরত তনুকে কল করে যাচ্ছে হিমু। কিন্তু মেয়েটা কল রিসিভ করছে না। টেক্সট করছে কিন্তু রিপ্লাই দিচ্ছে না। রাগ অভিমান আমাদের সবারই হয়। কিন্তু সেটার সমাধানও তো করতে হয় তাই না। অপরাধীকে ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ করে দিতে হয়।
কিন্তু তনু সেটা দিচ্ছে না। টোটালি নিজেকেই সরিয়ে ফেলেছে। কোথায় কোথায় না খুঁজেছে হিমু। সকাল থেকে সন্ধা ওবদি ভার্সিটির সামনে ওবদি বসে থেকেছে। কিন্তু তনুর দেখা মেলে নি। বাড়িতেও কল করেছিলো কিন্তু কেউ রিসিভ করে নি।
আজকে হিমু আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে তনুর রাগ ভাঙিয়েই ছাড়বে। খুঁজে বের করবে তনুকে। সে গর্তেই লুকাক না কেনো?
ঠিক করে ফেলেছে প্রথমে যাবে তনুদের বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে কলেজ। আর তারপর সব বন্ধুদের বাড়িতে। কোথায় লুকাবে মেয়েটা?

কিন্তু হিমুকে বেশি কষ্ট করতে হয় না। কারণ তনুর দেখা শিশু পার্কে মিলে। শিশু পার্ক কর্স করে যেতে হয় তনুদের বাড়িতে।
হাতে একটা ফুল নিয়ে বসে আছে। কাঁধে ব্যাগ। হিমু এক দৌড়ে তনুর কাছে যায়।

“কোথায় ছিলে তুমি? কোথায় কোথায় না খুঁজেছি? কল কেনো রিসিভ করছো না? এক্সকিউজ তো শুনবা না কি?

হিমু তনুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে। তনু হিমুর দিকে তাকায়।

” আপনি এখানে কেনো?

“তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি।(তনুর পাশে বসে বলে)

“আমার এখন কথা বলার মুড নেই। আপনি আসতে পারেন

” কথা তোমাকে বলতেই হবে।

তখনই একটা ছেলে এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে।

“তনু ইনি কে?

ছেলেটা তনুকে জিজ্ঞেস করে।

” তুলতুলের দেবর। বিয়াই লাগে আমার।

হিমুর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে তনু।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here