আমার তুমি ২ #পর্বঃ৫৫ #তানিশা সুলতানা

0
296

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৫৫
#তানিশা সুলতানা

দুই বাড়িতেই পুরো দমে বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। বাড়িঘর সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। সায়ান হাসিব প্রচুর ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হিমু রিলাক্স করছে। বিয়ের আগে ছেলেরা কাজ করে না এটাই নিয়ম।

দুপুরের কড়া রোদে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে সায়ান। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় গা এলিয়ে দেয়। তুলতুল সালমার সাথে রান্না করছিলো। সায়ানকে দেখে চট করে এক গ্লাস লেবুর শরবত গুলে নিয়ে আসে।

“এটা খেয়ে নিন।

সায়ান চোখ খুলে তুলতুলের দিকে তাকায়। তুলতুল সায়ানের মুখের সামনে গ্লাস ধরে। সায়ান খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষে ওড়নার এক কোণা দিয়ে সায়ানের মুখ মুছিয়ে দেয় তুলতুল। সায়ান মুচকি হাসে। তুলতুলের হাত ধরে পাশে বসিয়ে দেয়।

” আরে আরে করছেন কি?

সায়ান তুলতুলের গলার ওপর দিয়ে হাত দিয়ে কাঁধে মাথা রাখে।

“ভীষণ ক্লান্ত আমি।

জড়ানো গলায় বলে সায়ান

” রুমে চলেন।

সায়ানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে তুলতুল।

“আরও ক্লান্ত হয়ে যাবো।

সায়ানের কথার মিনিং বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে যায় তুলতুল। এখানে ফ্যান নেই তাই রুমে যেতে বলেছিলো।

” মা রান্না ঘরে এখুনি এদিকে চলে আসবে।

তুলতুল রিনরিনিয়ে বলে।
সায়ান তুলতুলকে ছেড়ে দেয়।

“ঠিক আছে। তাহলে যাই রুমে।

তুলতুল লাভ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়

” আপনাকে একা রুমে যেতে বলেছি। সারাক্ষণ খালি উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা। নিজের মাইন্ড চেঞ্জ করুন।

তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে বলে।

“আমি তো একাই যেতে চাইলাম। আর কিছু চিন্তা ভাবনাও করলাম না। এখন এমনিতেই টায়ার্ড। তুই তো নিজেই উল্টা পাল্টা ভাবছিস। ছিহহহ তুলা
তোর মাইন্ড এতো বাজে?

সায়ান মিটমিট করে হেসে বলে। তুলতুল বিপাকে পড়ে যায়। নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁসে গেছে। কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না।

” আপনি আস্ত একটা হনুমান

বলেই তুলতুল ভেংচি কেটে চলে যায় রান্না ঘরে। সায়ান হেসে ফেলে।

🥀
বাড়িতে ননদের বিয়ে বলে সুমু থাকতে পারে নি বেশিদিন। দুই দিন থেকেই চলে যেতে হয়েছে তাকে। তাতে একটুখানি মন খারাপ হয়েছিলো সুমুর। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় নি।
ভর দুপুর বেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছে সুমু। রাস্তার ওই পাশে কাঠি আইসক্রিমদের দোকান এসেছে। একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম বিক্রি করছেন উনি। স্কুল কলেজ থেকে বাচ্চারা ফেরার সময় আইসক্রিম কিনে খাচ্ছে।
তো এই আইসক্রিম নিজের রুমের বেলকনি থেকে দেখে সুমু। এখন এটা খাওয়ার লোভ হয়েছে। তার জন্যই যাচ্ছে।

রাস্তা পার হওয়ার সময় সুমুর মনে পড়লো সে টাকা আনে নি। টাকা ছাড়া তো আইসক্রিম দেবে না। এখন?
মন খারাপ করে আইসক্রিমের গাড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যেতে নেয় সুমু। তখন কেউ সুমুর সামনে দুটো আইসক্রিম ধরে। খুশিতে চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণের হাসিটা আরও চওড়া হয়ে ওঠে।

“আপনি এখন?

” আগে বাসায় চলো তারপর বলছি।

তন্ময় সুমুর দুই হাতে দুটো আইসক্রিম ধরিয়ে দেয়। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে চট করে কোলে তুলে নেয় সুমুকে। সুমু চমকে ওঠে। হাত আটকা থাকায় তন্ময়কে ধরতে পারে না।

“আরে আরে কি করছেন? কেউ দেখে ফেলবে।

সুমু উত্তেজিত হয়ে বলে।

” কেউ দেখবে না।

তন্ময় ফট করে সুমুর কপালে চুমু খেয়ে বলে। সুমু আর কথা বলে না। চুপচাপ মুহুর্তটা উপভোগ করতে থাকে। ইদানীং নিজেকে খুব সুখী মনে হয়। গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করে “আমার মতো এতো সুখী নয়ত কারোর জীবন”
আর এই পুরো সুখটা তন্ময়কে ঘিরে। একটা সময় যে মানুষটাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। বাবা মা পরিবার সব ছেড়ে দিয়েছিলো। আজকেই সেই মানুষ বাবা মা পরিবার সব কিছু ভুলিয়ে দিয়েছে তার ভালোবাসা দিয়ে। পূর্ণ করেছে সুমুকে।

🥀
চার ঘন্টা হয়ে গেছে তুলতুল সায়ানকে দেখে না। এই চার ঘন্টাকে চার বছর মনে হচ্ছে ওর। সেই কখন বেরিয়েছে আর এখনো ফিরলো না। তুলতুল বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে শুধু। কিন্তু আসার নাম গন্ধ নেই।

“তুলতুল এসো খেয়ে নাও।

মনি খাবার বারতে বারতে বলে।
তুলতুল সায়ানের সাথে খেতে চাচ্ছে। কিন্তু এটা ওনাকে বলবে কিভাবে? কিভাবে বলবে সায়ান ছাড়া আমার গলা দিয়ে খাবার নামে না?

” তুলতুল খায় নি এখনো? বিকেল হয়ে গেছো তো।

সলমা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এদিকে এসে বলে।

“আমি তো কয়েকবার বললাম খেলো না। তাই এখন এসেছে খাবার বেরে দিতে।

মনি বলে।

” ভালো করেছিস। তুলতুল খেয়ে নাও।

এবার আর তুলতুল থাকতে পারে না। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।

“আপনার ছেলে আসুক।

রিনরিনিয়ে বলে তুলতুল। মুখ টিপে হাসে মনি।

” ঠিক আছে তাহলে খাবার নিয়ে রুমে যাও। তোমার দাদি শাশুড়ী অন্য রকম মানুষ। উনি ভালো চোখে দেখবে না।

তুলতুল মাথা নারিয়ে খাবারের থালা নিয়ে রুমে চলে যায়।

সায়ান আসে আরও ঘন্টা খানিক পরে। শপিং করতে গেছিলো ও হাসিব আর হিমুকে সাথে করে। সবার জন্য কেনাকাটা করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেলো।
হাতের শপিং ব্যাগ গুলো বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সায়ান। তুলতুল বেলকনিতে ছিলো। সায়ানের আওয়াজ পেয়ে রুমে আসে। বিছানার ওর এতো এতো শপিং ব্যাগ দেখে সে গুলো এক পাশে সরিয়ে রেখে খাওয়ার জন্য জায়গা তৈরি করে। তারপর গ্লাসে পানি ঢেলে প্লেটে খাবার নিয়ে নেয়।
তখন সায়ান তোয়ালে দিয়ে মুছ মুছতে মুছতে বের হয়।

“এখনো না খেয়ে আছিস কেনো?

“সখ করে।

সায়ান বুঝে যায় বউ তার রাগ করেছে। তাই আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ তোয়ালে রেখে ভদ্র ছেলের মতো তুলতুলের সামনে বসে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here