হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো #মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা #পর্ব ১৮

0
147

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১৮

“আমি তো সে, যার বিচরণ তোমার মন-মস্তিষ্কে,
আমি তো সে, যার চলাচল তোমার প্রতিটি নিউরনে, আমি এক অমোঘ কালরাত্রি,যেথায় তোমার বিনা শ,
আমি এক তীরভাঙ্গা নদীর কূলহারা ঢেউ,
যার গতিবিধি তোমাতেই সীমাবদ্ধ।
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার বাস,
আশেপাশে করো না আমার খোঁজ,
আমি তোমারই হৃদয়ভাঙ্গা প্রাণপুরুষ।”

মেসেজটা দেখতেই বুকটা ধ্বক করে উঠে।চিনচিনে ব্যাথা হয়।চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসে।প্রতিজ্ঞার বুঝা হয়ে গেছে।আগন্তুক আর কেউ নয় সংকল্প।সংকল্প এসেছিলো তার কাছে।তাকে আদর করে গেছে।মনে পড়তেই গা বেয়ে অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো।অধর জুড়ে হাসির ছাপ।খুশিতে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।পরক্ষণেই হাসি-খুশি চেহারা কাঠিন্যতার আবরণে ঢাকা পড়ে গেলো।সিদ্ধান্ত নিলো সে এতো সহজে গলবে না।এতো সহজে তো ছেড়ে দেওয়া যায় না।
প্রতিজ্ঞা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,

“ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ,মিস্টার আফনান আহমেদ সংকল্প।জা হা ন্নামের একটু ছোঁয়া পাওয়ার জন্য রেডি হোন,প্রাণপুরুষ।”

এতোদিন সব ঠিক থাকলেও বিপত্তি বাঁধে কয়েকমাস আগে।প্রতিজ্ঞা খারাপ সঙ্গের সাথে মিশতে শুরু করে।হুটহাট কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া,রাত করে বাড়ি ফেরা,রাস্তায় ঝামেলা করা।একদিন তো এক ছেলেকে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছিলো।সব জানতে পেরেই সংকল্পের দেশে ফেরা।নিজেকে শাস্তি দিতে গিয়ে মেয়েটাকে খারাপ হতে দেখতে পারে না শেষ।শাস্তিরও শেষ আছে!

প্রতিজ্ঞা এখন তিনজন নতুন সঙ্গি জুটিয়েছে।তাদের মধ্যে দু’জন ছেলে নাহিদ-আকাশ,একজন মেয়ে,রোহিনী।তিনজনই খারাপ প্রকৃতির।বড় লোক বাবা-মার উচ্ছনে যাওয়া সন্তান তারা।সারারাত বারে কা-টানো,ম-দ পান করা,আরো বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল নেওয়া তাদের দৈনন্দিন রুটিনের অন্তর্ভুক্ত।পড়াশোনার নামে গোল্লায় গেছে।গত দেড়-দুই মাস প্রতিজ্ঞা ওদের সাথে থাকলেও ওদের মতো হয়ে উঠতে ওর সময় লাগছে।যতই হোক সে অন্য ধাঁচের মেয়ে। এসবে মানায় নিতে তার সময় লাগছে।তবে সে সংকল্পকে ভুলার জন্য নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চেয়েছিলো।সংকল্পের প্রতি অভিমান থেকেই এই পথ অবলম্বন করা।তবে কিসের কি!যেই সংকল্প মন-মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, প্রতিটা স্নায়ুতে অবস্থান করে,তাকে কি ভুলা যায়!কিন্তু একটু-আধটু শাস্তি তো দেওয়াই যায়।ভাবতেই অধরে দুর্বোধ্য হাসি ফুটলো প্রতিজ্ঞার।

শক্ত কন্ঠে বললো,
“প্রণয়ের দ-হ-নে আপনাকে জ্বালিয়ে-পু*ড়িয়ে অঙ্গারে রূপান্তর করবো।আপনি দ-গ্ধ হবেন,আর আমি পাবো সুখ।”

আজ ছুটির দিন।প্রতিজ্ঞা,রোহিনী,আকাশ,নাহিদ যাবে শপিং-এ।প্রতিজ্ঞার তৈরী হওয়া শেষ।সাদা শার্ট,কালো জিন্স,কোমড় সমান চুল গুলো উঁচু করে ঝুটি বাধা।প্রতিজ্ঞা ড্রয়িংরুম দিয়ে যাওয়ার সময় বাবা-মার সামনে পড়ে।সে পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে তানিম ডেকে উঠে।
“কোথায় যাচ্ছিস?”

প্রতিজ্ঞা দাঁড়িয়ে যায়।পেছন ফেরে স্বাভাবিকভাবে বলে,
“শপিংমলে।”

তানিম রাগ দেখিয়ে বলে,
“নিশ্চয়ই ঐ উচ্ছন্নে যাওয়া বখাটেদের সাথে যাচ্ছিস?”

প্রতিজ্ঞা ঠোঁট গোল করে শ্বাস নিয়ে শক্ত গলায় বলে,
“ওদের একদম বখাটে বলবে না।”

তানিম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।প্রতিজ্ঞার দিকে যেতে যেতে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“বখাটেদের বখাটে বলবো না তো কি বলবো?অবশ্য তুই ওতো বখাটেদের তালিকায় নাম লিখিয়েছিস।”

“ভাইয়া!” প্রতিজ্ঞা চেঁচিয়া উঠে।
কিছু বলতে নিবে তার আগেই তাসলিমা বেগম উঠে আসেন।রাগান্বিত স্বরে বলেন,
“একদম চেঁচাবে না।তানিম ভুলটা কি বলেছে?নিজের যা মন চাচ্ছে তাই করছো।পারমিশন নিয়েছো কোনোদিন?ভালোবাসি ভালোবাসি করে হুট করে বিয়ে করেছো,কথা শোনার প্রয়োজন মনে করো নি।বিয়ের পরেরদিনই ফেলে চলে গেছে।আর যত ভোগান্তি আমাদের পোহাতে হচ্ছে।বাড়াবাড়ির একটা লিমিট থাকে।তুমি সেটাও ক্রস করে ফেলেছো।কিছু বলি না বলে মাথায় উঠে বসেছো।”

আর কিছু বলতে পারলেন না তাসলিমা বেগম।এর আগেই প্রতিজ্ঞা পাশ থেকে একটা ফুলদানি ছুঁড়ে মা-রে।সাথে সাথেই চার টুকরো হয়ে যায়।
প্রতিজ্ঞা মায়ের দিকে এগিয়ে এসে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

“আমি বাবার থেকে পারমিশন নিয়েছি।আর কারোর পারমিশন আমার প্রয়োজন নেই।আর আমার স্বামী চলে যাবে শুনেই আমি বিয়ে করেছি।সেটা আমার আর আমার স্বামীর ব্যাপার।অন্য কেউ একদম নাক গলাবে না।”

আনোয়ার সাহেব প্রতিজ্ঞাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।তবুও প্রতিজ্ঞা বলেই চলেছে,
“ভোগান্তি? আমার থাকার জায়গার অভাব পড়েছে?আমার শাশুড়ী আমাকে রোজ ফোন করে,ঐ বাড়ি যাওয়ার জন্যে আমি যাই না। আমার শ্বশুর শাশুড়ী আসেন নি আমাকে নিতে?কয়েকবারই এসেছেন,আমি যাই নি।একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবে না।”

তাসলিমা বেগম কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আনোয়ার সাহেব মেয়েকে আদুরে স্বরে বললেন,
“প্রতিজ্ঞা মা,তুমি যাও এখন।ওদের কথায় কান দিও না।বাবা তোমার পাশে আছি।তোমার বন্ধুরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছে বাড়ির বাহিরে।যাও তুমি।”

প্রতিজ্ঞা মায়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে দপদপ পা ফেলে চলে যায়।
তাসলিমা বেগম রাগে গিজগিজ করতে করতে স্বামীর উদ্দেশ্যে বলেন,
“তুমি আদর দিয়ে দিয়ে বাঁদর তৈরী করেছো।”

আনোয়ার সাহেব ধমকে উঠলেন।বললেন,
“চুপ করো তুমি।আমার মেয়ের উপর আমার বিশ্বাস আছে।সে লিমিটের বাহিরে আজ অব্ধি যায় নি,আর না তো যাবে।আমার মেয়ে যতক্ষণ বাহিরে থাকে ততক্ষণ ওর উপর আমার নজর থাকে,সব খবর আসে আমার কাছে।আমার মেয়ে তার লিমিট ভালো করেই জানে।”

তাসলিমা বেগম থতমত খেলেন।তবুও খেটখেট করে বললেন,
“সে যাই হোক!আমি ওর আবার বিয়ে দিবো।এই বিয়ে আমি মানি না।”

আনোয়ার সাহেব রাগান্বিত স্বরে বললেন,
“পা গল হয়ে গিয়েছো?”

তানিম এবার মুখ খুললো।স্বাভাবিকভাবে বললো,
“মা একদম ঠিক বলেছে।ঐটা কোনো বিয়েই নয়।আমি তখন অনেকবার নিষেধ করেছিলাম,তুমি শোনো নি।এই বিয়ে আমিও মানি না।ওর আবার বিয়ে দিবো আমরা।আমার অফিসের মালিকের ছেলে প্রতিজ্ঞাকে চেনে।প্রতিজ্ঞাকে তার অনেক পছন্দ।আমাকে অনেকবার বলেছে, কিন্তু আমি কিছু বলতে পারি নি।তবে এবার বলবো,কয়েকদিনের মধ্যেই ওনাদের বাড়িতে আসতে বলবো।”

উপস্থিত সবাই চমকালেও তাসলিমা বেগম চমকান নি।তিনি আগে থেকেই সব জানতেন।আনোয়ার সাহেব বললেন,
“তোমরা মা-ছেলে কি চাইছো?প্রতিজ্ঞা আবার অসুস্থ হয়ে যাক?”

তানিম শান্তস্বরে বললো,
“কিছু হবে না বাবা।আগে ওরা আসুক,তারপর দেখা যাবে।”

উপস্থিত একজন শুরু থেকেই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।সে হলো নাদিয়া।তার ফোনে কল করা ছিলো।ওপাশে বসে থাকা ব্যক্তি সবই শুনতে পেয়েছে।কল কে টে দেয় সে।থম মে-রে বসে থাকে।বিড়বিড়িয়ে বলে,

“আমার বউয়ের আবার বিয়ে! দ -জ্জা-ল শাশুড়ী কোথাকার।দেওয়াচ্ছি বিয়ে!”

নাদিয়ার ফোনের ওপাশের ব্যক্তি সংকল্প।নাদিয়ার কাজিন আর সংকল্প ভালো ফ্রেন্ড।সেভাবেই ওদের পরিচিতি।প্রথমে চিন্তে না পারলেও পরে চিনতে পারে।গত দুই বছর প্রতিজ্ঞার সব খোঁজখবর সংকল্প নাদিয়ার মাধ্যমেই পেয়েছে।

সংকল্প এসব ভাবনা বাদ দিয়ে শপিংমলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।বউ তার শপিংমলে গেছে,তাকে পাহারা দিতে হবে তো।বউ এখন বড্ড ব-দমেজাজি হয়ে গেছে,চোখে চোখে রাখতে হবে তাকে….

#চলবে….

[ছোট হওয়ার জন্যে স্যরি।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।আমার চোখের অবস্থা তো জানেন-ই আপনারা!]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here