অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ #অবন্তিকা_তৃপ্তি #পর্ব_৩১

0
331

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_৩১

সকালটা আজ বড্ড মিষ্টি ছিলো। এক ছটাক শান্ত রোদ গায়ে লেপ্টে আছে শুভ্র-তুলির। শুভ্রর ঘুমটা আগেই ভাঙলো। শুভ্রর বুকে ঘুমিয়ে আছে তুলি। ফোলা ফোলা গাল, গায়ে শুভ্রর রাতের সেই সাদা শার্ট। মারাত্মক একটা দৃশ্য সাতসকালে দেখে শুভ্রর রক্ত পুনরায় গরম হয়ে গেলো। শুভ্র আলগোছে তুলিকে বুক থেকে সরিয়ে বিছানায় শোয়ালো। পর্দা ডিঙিয়ে রোদ সোজা তুলির চোখে পরছে। শুভ্র জানালার দিকে একবার চেয়ে তুলির চোখটা হাতের পিঠ দিয়ে ঢেকে দিল। তুলি রোদের জন্যে ঘুমাতে পারছে না। চোখ-মুখ কুঁচকে পাশ ফিরে বললো- ‘জানালাটা লাগান না। আমি ঘুমে মারা যাচ্ছি, উফ।’

শুভ্র হেসে উঠে। তুলির ফোলা গালটা নিজেকে বড্ড টানছে।শুভ্র সেই গালে চুমু খেয়ে বিছানা থেকে উঠলো। মেঝেময় এলোমেলো হয়ে তুলির শাড়ি, চুলে পেঁচানোর গামছা পরে আছে। শুভ্র উঠে শাড়ি, গামছা বাথরুমের ওয়াশিংমেশিনে রেখে আসলো। তারপর জানালার পর্দা লাগিয়ে দিল। তুলি ঘুমাক আরো কিছুসময়। এমনিতেই গতকাল রাতে মেয়েটাকে কম জ্বালায় নি সে। তুলির ঘুমন্ত চেহারার দিকে চেয়ে শুভ্র হেসে টাওয়াল নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো।

শাওয়ার নিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে তুলি কাবার্ড থেকে শাড়ি বের করছে। গায়ে এখনো শুভ্রর শার্ট। শুভ্র স্বীয় স্ত্রীর এমন আবেদনময়ী দৃশ্যে কাবু হলো বরাবরের ন্যায়। টাওয়াল বিছানার উপর ফেলেই সোজা তুলিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে তুলি নিজের মতো করে ড্রয়ার লাগিয়ে ওপাশে সরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়। আচমকা সরে যাওয়ায শুভ্র থতমত খেয়ে তুলির দিকে তাকায়। তুলির সেসবে মন নেই। সে তার নিজের কাজে ব্যস্ত। ব্যস্ততা দেখিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে নতুন শ্যাম্পু বের করে হাতে নেয়। শাড়ি-টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে যাবে তখন চোখ যায় বিছানার দিকে। শুভ্রর ভিজে টাওয়াল বিছানায় ফেলে রাখা দেখে মুহূর্তেই মেজাজ চড়ে যায় তুলির। বিছানা থেকে টাওয়াল হাতে নিয়ে শুভ্রর দিকে চেয়ে গরম চোখ নিয়ে বলে- ‘এটা বিছানায় কেন? হু?’

শুভ্র দেখে বিছানা বেশ ভিজে গেছে টাওয়ালে। শুভ্র বোকা বোকা গলায় বললো -‘সরি। তোমাকে ওভাবে দেখে-‘

তুলি ভিজে টাওয়াল নিয়ে বারান্দায় যেতে যেতে বললো- ‘দাঁড়ান, নতুন বিছানা আমি আপনাকে দিয়ে বিছাবো। সবসময় খামখেয়ালি আপনার।’

তুলি এ কথা বলে বারান্দার দরজা পাড় করার আগেই শুভ্র পেছন থেকে তুলির হাত টেনে ধরলো। তুলি অবাক হয়ে তাকাল। শুভ্র বললো- ‘বারান্দায় যাচ্ছো কেন?’

তুলি হাতের টাওয়াল দেখিয়ে বললো -‘মেলে দিয়ে আসি এটা?’

শুভ্র তুলিকে আপাদমস্তক দেখে বললো -‘এই কাপড়ে? পাগল তুমি?’

তুলি শুভ্রর ইশারা দেখে নিজের দিকে তাকাল। নিজেকে শুধুমাত্র শুভ্রর একটা শার্টে দেখে তুলির রীতিমতো মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়। সঙ্গেসঙ্গে হাতের টাওয়াল দিয়ে তুলি হাঁটু ঢাকল। শার্ট এটা কখন পড়েছে তুলি? রাতে? তার তো মনে পড়ছে না। আচমকা এলার্মে ঘুম থেকে উঠায় তুলির মস্তিষ্ক হ্যাং ছিল। সকালের নাস্তার চিন্তা মাথায় এতটা ঝেঁকে ছিল খেয়ালই ছিল না নিজের দিকে। মনে হচ্ছিল- সে শাড়ি পরেই আছে। অথচ সে কিনা হাফ জামা কাপড় পরে ঘুরছে? ছিঃ: ছিঃ। তুলির মাথা নিচু করে হাশফাঁস করে বললো -‘আসলে আমি- আমি এভাবে-‘

শুভ্র গাঢ় চোখে তাকালো। লজ্জায় তুলি নীল হয়ে গেছে। লজ্জার চেয়ে বেশি অপ্রস্তুত হয়েছে। শুভ্র তুলির কাঁধে হাত রাখলো। বললো -‘লজ্জা রাখো। আমি ছাড়া আর কেউই দেখেনি কিছু। গোসল সেরে আসো। আমার কাছে টাওয়াল দাও, আমি মেলে আসছি।’

কথাটা বলে শুভ্র হাত বাড়িয়ে দেয় টাওয়াল নিতে। তুলি টাওয়ালটা দু-আঙুলে আরও চেপে ধরে বললো -‘না।’

শুভ্র ভ্রূ বাঁকালো। তুলি ওভাবেই হাঁটু টাওয়াল দিয়ে ঢেকে শাড়ি নিলো বিছানার উপর থেকে। তারপর টাওয়াল-সমেত সোজা বাথরুমে চলে গেল। শুভ্র এতক্ষণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তুলির কাজকারবার দেখছিল। তুলির ঠাস করে দরজা বন্ধ করায় শুভ্র প্রথমে হা হয়ে দরজার দিকে চেয়ে পরপরই হেসে চেচিয়ে বললো -‘ওমা তুলি? লজ্জা পেলে? আমাকে? ভুলে গেছো আমি তোমার হাস-‘

‘চুপ একদম নির্লজ্জ পুরুষ।’

তুলি বাথরুম থেকেই ধমকাল। শুভ্র শব্দ করে হেসে ফেললো।

শাড়ি গায়েই ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছে তুলি। ওয়াশরুমে চেঞ্জিং এরিয়া থাকায় লাভ হয়েছে। শাড়ি ভেজার চান্স নেই। তুলি মাথার চুল গামছায় ঝাড়তে ঝাড়তে আয়নার সামনে দাঁড়াল। শুভ্র তখন তুলির পেছনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে। তুলি ফেইসক্রিম মেখে সাজ হিসেবে টিপ দিল কপালে, কাজল দিল চোখে। কাজল চোখ শুভ্রর ভীষণ পছন্দ। কপালের টিপটাও তেমনি ভালো লাগে শুভ্রর। শুভ্র আর তুলির কদিন ছুটি হাতে আছে। এ কদিন তুলি সারাক্ষণ শুভ্রর মনমতো সেজে থাকবে। এমনটাই ভেবে রেখেছে তুলি। তুলি সাজ শেষ করে শুভ্রর দিকে ফিরল। কোমরে হাত রেখে চোখ টিপটিপ করে কাজল দেখিয়ে শুভ্রকে জিজ্ঞেস করল -‘আমায় কেমন লাগছে বলুন তো।’

শুভ্র তুলিকে দেখল। শার্টের শেষ বোতামটুকু লাগিয়ে তুলির চোখের কোণা থেকে কাজল নিয়ে কানের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে হেসে বললো -‘শুভ্রর বৌকে বরাবরই অস্থির লাগে।’

তুলি লাজুক হাসলো। শুভ্র তুলির কপালের টিপ সোজা করে দিয়ে ছোট্ট করে বললো -‘কন্ট্রাসেপটিভ আজ থেকে বন্ধ, হু?’

শুভ্রর এ কথা শুনে তুলি অবাক হয়ে প্রথমে শুভ্রর দিকে চাইলো, পরপর লাজুক হেসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। মিহি গলায় বললো -‘হু।’
_________________________

তুলির ক্লিনিকের ছুটি শেষ হয়ে গেছে প্রায় দুমাস। বিয়ের পর প্রায় দশদিনের মতো ছুটি ছিল। এক সপ্তাহ ছিলো শুভ্রর ছুটি। শুভ্র চেয়েছিল, পনেরো দিনের ছুটি নিবে, সাজেক যাবে দুজন। শুভ্র ছুটি পেলেও, নতুন জয়েন করায় তুলি সেই ছুটি পায়নি। তাই দুজন সিদ্ধান্ত নিয়েছে- ওরা ঈদের বন্ধে সাজেক যাবে। তবে- দুজন মিলে এই দশ-সাত দিনের ছুটিগুলো বেশ আনন্দ নিয়ে কাটিয়েছে। তবে এখন আবার শুরু হয়েছে গদবাঁধা সেই একই জীবন। সকালে নাস্তা করে শুভ্র-তুলি একসঙ্গে বেরিয়েছে চাকরিতে। তুলিকে ক্লিনিকে ছেড়ে শুভ্র নিজের হাসপাতালে চলে গেছে। তুলি নিজের রুমে বসলো। এখানে আরও কজন নতুন ডাক্তার বসে। তুলি সবার আগে ওদের সঙ্গে এক কাপ চা খেলো। তুলির ফ্রেন্ড-ঊষা বললো- ‘তুলি? কেমন কাটল দিন? আহা শুভ্র স্যার কে রেখে ক্লিনিকে আসতে বড্ড কষ্ট হয়েছে না?’

তুলি হাসি চেপে গম্ভীর স্বরে বললো- ‘জামাইর কোলে সারাদিন বসে থাকার জন্যে ডাক্তার হইনি।’

ওপাশ থেকে ঊর্মি বললো- ‘কোলেই তো ছিলি এতদিন। কোল থেকে নেমে আসলি কাজে।’

তুলি মেকি রাগ দেখিয়ে বললো- ‘যার কোলে বসার কথা বলছিস- সে তোদের এককালে স্যার হতো। স্যারকে নিয়ে এমন অশ্লীল কথা বলিস?’

ঊষা যেন এ কথায় মজা পেয়ে গেলো। বললো-‘তুমি সেই স্যারেরই কোলে বসবা, চুমু খাবা সব অশ্লীল কাজ করবা। আর আমরা বললেও দোষ? স্যার তো তোরও হয়।’

তুলি জবাব দিলো- ‘উহু, সে এখন শুধুই আমার বর। আমার অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের বর।’

ঊষা-ঊর্মি দুজনেই ‘ওহো’ করে উঠল। তুলি লজ্জা পেয়ে চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়াল চেয়ার থেকে। স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো- ‘কাজে লাগ দ্রুত। নাহলে সিনিয়র অফিসার ধরবে একেকজনকে, স্যালারির উপর বাজ পড়বে।’

——-
আজ তুলি ভেবেছে, কাজ শেষ করে সোজা বাবার বাসায় যাবে। অনেকদিন ওদিকে যাওয়া হয়নি। ইয়াসমিন বারবার করে বলছেন। ইয়াজিদও আর পনেরো দিন পর সৌদি চলে যাবেন। বাবার সঙ্গে বিয়ের পর তেমন সময়ও কাটানো হয়নি। তাই যেই ভাবা সেই কাজ। দ্রুত ক্লিনিকের কাজ সামলে রওনা দিলো বাবর বাসার উদ্দেশ্যে। রিকশায় বসে কল করল শুভ্রকে।

‘হ্যালো।’
‘হু ,বলো। কাজ শেষ?’
‘হ্যাঁ। আমি বাসায় ফিরব না এখন। বাবার বাসায় যাচ্ছি। আম্মুকে বলে এসেছি। বাসায় রাধা আঁছে, খেয়ে নিও।’

‘ঠিকাছে। রাতে থাকবে নাকি?’
‘চাইলে দিবে নাকি?’

তুলির পাল্টা প্রশ্ন। শুভ্র হেসে বললো -‘আমি দেওয়ার কথা পরে। তুমি নিজেই তো চাইবে না।’

তুলি লজ্জা পেয়ে হেসে বললো -‘সন্ধ্যার পর ফিরছি।’
শুভ্র হেসে বলল- ‘ঠিকাছে, ঘুরে আসো।’

তুলি কল কেটে মোবাইল আবার ব্যাগে ভরলো। আজ মাথাটা বড্ড ঘুরাচ্ছে। রিকশার ঝাঁকুনি অনেক খেয়েছে, অথচ আজ এই ঝাঁকুনিতেই পেটের সব যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কাজে তো তেমন কিছুই খায়নি। দুকাপ চা খেয়েছিলো, আর ক্যান্টিনে রুটি-ভাজি খেয়েছে। এসব তো রোজই খায়। তাহলে আজকে এমন অদ্ভুত লাগছে কেন শরীর। চিন্তা করার মধ্যে হঠাৎ তুলির কিছু একটা মনে পড়ল। দ্রুত মোবাইল আবার ব্যাগ থেকে বের করে আজকের তারিখ দেখল। ক্যালেন্ডার দেখে সন্দেহ তখনই গাঢ় হলো আরও। তুলি ভ্রু কুঁচকে পেটে হাত রাখল। অশান্ত একেকটা নিঃশ্বাস ফেলছে তুলি। খুশি-অনুভুতি সব ঝট পাকিয়ে যাচ্ছে। তুলি কী শেষ অব্দি শুভ্রর এতদিনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারছে? পেটে হাত রেখে আনমনে ফিসফিস করে বললো তুলি বললো -‘তু-তুমি এসে গেছো?’

#চলবে
কে এলো? জানেন কেউ?❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here