হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪০

0
323

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪০

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]

বৃষ্টি ভেজা রাত। বৃষ্টির গোলাকার ফোঁটা টুপটাপ শব্দ করে নীল রঙের থাই গ্লাসের উপরে এসে পড়ছে। নিস্তব্ধ রাতে বৃষ্টির শব্দে চারদিক মুখরিত হয়ে আছে। থাই গ্লাসের উপরে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে তার পানি ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ছে নিচে তার দিকেই স্থির চোখে তাকিয়ে আছে জারা। বাহিরে ঝড় না বইলেও জারার মনের ভেতের ঝড় বইছে। যে ঝড় কেউ দেখছে না শুধু সেই ঝড়ের অসহনীয় ব্যথা অুনভব করছে জারা। বার বার দীর্ঘ শ্বাস ফেলছে এটা ভেবে নুহাশের মনে অন্য কেউ আছে, অন্য কোনো নারী আছে। কে সেই নারী, কে সেই ভাগ্যবতী যে নুহাশের হৃদয়ে তার নাম লিখে নিতে সক্ষম হয়েছে। জারা নিচের অধর কামড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনা জল। বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার এত কষ্ট কেন এক তরফা ভালোবাসায়। জারা হাঁটু ভেঙ্গে নিচে বসে ডান হাত দিয়ে বুকের বা পাশটা শক্ত করে চেপে ধরে। কেন নুহাশের প্রতি সে আসক্তি হয়েছে অবুঝের মতো? আজ যদি নুহাশের প্রতি আসক্তি না হত তাহলে হয়ত এতটা যন্ত্রণা সইতে হত না তাকে। কিন্তু নুহাশের দু চোখে সে স্পষ্ট দেখেছে তার জন্য গভীর ভালোবাসা তাহলে কি সেই ভালবাসা নিছকেই মিথ্যে ছিল সে ভুল দেখেছে।

চার দিন আগের ঘটনা…..

জারার একটা ফেইক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। এটা প্রায় ছয় আগে সে খুলে ছিল বান্ধবীদের দেখাদেখি। বান্ধবীরা সকলে মিলে তাদের বয়ঃফ্রেন্ডকে ফেইক অ্যাকাউন্ট দিয়ে চেক করে দেখবে তাদের মনে অন্য কেউ আছে কিনা! সেই সুবাধে জারাও খুলে একাউন্ট কিন্তু কাউকে চেক করার জন্য নয়। ওই যে কথায় আছে না, দেখা দেখি রঙে ঘরদোর ভাঙ্গে। তেমনটা জারার হয়েছিল। কিন্তু এই ফেইক অ্যাকাউন্ট যে এভাবে কাজে লাগবে সেটা সে ভাবে নি। পড়ালেখা করার সময় হঠাৎ করেই মনে হল জারার নুহাশকে এই ফেইক অ্যাকাউন্ট দিয়ে একটু বাজিয়ে দেখা যাক। নুহাশ বাড়িতেই আছে তাই এতটাও ব্যস্ত নেই আপতত। জারা নুহাশকে মেসেজ রিকোয়েস্ট দিল সাথে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও। জারা ভেবেছিল নুহাশ হয়ত রেসপন্স করবে না। আধ ঘন্টাও পেরিয়ে গেছে নুহাশ রেসপন্স করে নি তার মানে নুহাশ আর রেসপন্স করবেই না। জারা ফোনটা রেখে দুটা অংক শেষ করতে টুং করে উঠে ফোন। জারা ফোনটা নিয়ে যা দেখে তাতে জারা হতবাক হয়ে যায়। জারার ভাবনাকে নুহাশ মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে মেসেজ করছে তাকে আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্টও করেছে কত্ত বড় সাহস। জারা চোখ ছোট ছোট করে বলে।

“উমমম ছেলের ভাব দেখো টাস করে মেসেজ দিয়ে ফেলল আবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করছে। মেয়েদের আইডি দেখলেই প্রেম উতলে পড়ে না। দাঁড়া হচ্ছে তোর।”

জারা নুহাশকে নানা ধরণের মেসেজ করল নুহাশও সেই সকল মেসেজের অ্যানসার দিল অবলীলায়। জারা কাঁদো কাঁদো ফেইস করে বলে।

“ইয়া আল্লাহ এই ছেলে আমার সাথেই রসিয়ে রসিয়ে কথা বলছে না জানি অন্যান্য মেয়েদের সাথে কি ভাবে কথা বলে?”

পরক্ষণে নিজের মুখ স্বাভাবিক করে মোক্ষম‌ প্রশ্নটা করল জারা নুহাশকে, “বলচ্ছিলাম আপনার কি প্রেমিকা আছে। না মানে বলতে ইচ্ছে হলে বলবেন না হলে বলার কোনো দরকার নেই। আসলে আমাদে বন্ধু মহলে তা নিয়ে কথা হয় এই আর কি।”

কেটে যায় দশ মিনিট নুহাশের রিপ্লাই‌ আসে না। জারা বার বার নিজের ফোন চেক করছে আর রিফ্রেশ করছে মেসেঞ্জার। জারার অপেক্ষার অবসান ঘটল নুহাশ মেসেজ দিয়েছে। নুহাশের মেসেজটা দেখার সাথে সাথে জারার হাত থেকে ফোনটা টাস করে নিচে পড়ে যায়। ঠোঁটের কোণে হাসি টুকু বিলিন হয়ে যায় নিমিষেই। জারা ভেবেছিল‌ নুহাশ হয়ত বলবে, না তার কোনো প্রেমিকা নেই। কিন্তু নুহাশ বলেছে, তার প্রেয়সী আছে আর তাকে সে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। জারার চোখে মুখে বিস্ময় আর অবিশ্বাসের ছাপ ফুটে উঠেছে। ঠাঁই বসে রইল চেয়ারে। নুহাশের করা মেসেজটা যেন বিশ্বাস করতে চাইছে না। নুহাশ কি সত্য বলেছে নাকি তার সাথে মজা করেছে। কিন্তু একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কেন মজা করবে? তার মানে এই কারণটার জন্য নুহাশ তাকে এত অবহেলা করে।

বর্তমান…..

জারা উঠে দাঁড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সাড়ে এগারোটা বাজে। তার প্রমাণ চাই নুহাশ যে সত্য বলছে সেটার প্রমাণ চাই তার। আর সেটার প্রমাণ একমাত্র পাওয়ার উপায় হলো নুহাশের ফোন। নুহাশের ফোনে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো প্রমাণ থাকবে। তার জন্য নুহাশের ফোনটা আগে হাতে পেতে হবে। আর সেটা আজ রাতের মাঝেই সে হাতে পাবে। যতক্ষণ না এটা সত্য না মিথ্যা জানতে পারছে ততক্ষণ সে মানসিক শান্তি পাচ্ছে না। মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য তাকে একটা রিস্ক নিতেই হবে।

________

জাহিনের আকুতি ভরা কন্ঠ শুনে অয়ন্তি থমকে গেছে। এতোটা আকুতি ভরা কন্ঠ নিয়ে কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে পারে তা জানা ছিল না তার। এক জন আরেক জনের মুখে নিজেদের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে। জাহিন অপেক্ষায় রয়েছে অয়ন্তির অনুমতি পাওয়ার। অয়ন্তির দম বন্ধ হয়ে আসছে। হাঁসফাঁস লাগছে। সারা সর্বাঙ্গে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। অয়ন্তি চোখ তুলে জাহিনের পানে তাকাল। দুজনের চোখের মিলন ঘটল। জাহিন নেশাক্ত চোখে অয়ন্তির পানে তাকিয়ে আছে, অপেক্ষায় আছে এক অমৃত সুধা পান করার জন্য। অয়ন্তি প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে নিজের লাজ লজ্জা কাটিয়ে চোখের পাতা বদ্ধ করে পায়ের সামনের পাতা উঁচু করে জাহিনের ঠোঁট স্পর্শ করল। জাহিন যেন নিজের দেহে প্রাণ ফিরে ফেলো। নিজের বা হাত অয়ন্তির গালে আর ডান হাত কোমরে রেখে নিজেরে ধারে এনে ডুবে গেল অয়ন্তির ঠোঁটের মাঝে। দীর্ঘ এক চুম্বনে আবদ্ধ হল দুজনে। জাহিন ঠোঁট ছেড়ে নিজের ঠোঁট নিয়ে যায় অয়ন্তির ঘাড়ে, চিবুকে। অয়ন্তি খামছে ধরে জাহিনের শার্ট। জাহিন অয়ন্তির আরো গভীরে যেতে নিবে সাথে সাথে অয়ন্তি জাহিনের বুকে দু হাত রেখে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। লজ্জায় আর এক মুহূর্ত বেলকনিতে না থেকে যত দ্রুত পায়ে সম্ভব রুমের ভেতরে চলে আসে। জাহিন মুচকি হেসে তর্জনী দ্বারা নিজের ঠোঁট মুছে বেলকনির দরজা লাগিয়ে রুমে আসে।

অয়ন্তি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বুকে হাত রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। জাহিন ধীর পায়ে হেঁটে এসে অয়ন্তির পেছনে ছুঁই ছুঁই হয়ে দাঁড়াল। অয়ন্তির অর্ধ ভেজা চুল গুলা উন্মুক্ত পিঠ থেকে সরিয়ে দেয়। মোচর উঠল অয়ন্তির তল পেট। জাহিনের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া নিজের পিঠে পেতেই শিউরে উঠল অয়ন্তির সমস্ত কায়া। খামছে ধরল নিজের পরিহিত শাড়ি। জাহিন অয়ন্তির দু বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরাল। অয়ন্তির চোখ বন্ধ। জাহিন অয়ন্তির বন্ধ দু চোখের পাতায় শব্দ করে চুমু বসিয়ে মোহগ্রস্ত গলায় বলে।

“অসম্পূর্ণ হয়ে থাকা কাজটা না হয় আজ এই‌ বৃষ্টিমুখর রাতে সম্পূর্ণ করি।”

অয়ন্তি কিছু বুঝে উঠার আগেই জাহিন তাকে পাজাকোলা তুলে নেয়। অয়ন্তি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জাহিনের পানে। জাহিন কোণে মৃদু হাসি। জাহিন অয়ন্তির দিকে তাকাতেই অয়ন্তি দৃষ্টি নত করে নেয়। জাহিন অয়ন্তিকে বেডে বসিয়ে রেখে সুইচবোর্ডের কাছে এসে লাইট নিভিয়ে দেয়। অয়ন্তি ঢোক গিলল। সম্পূর্ণ রুম অন্ধকারে ডুবে গেছে। জাহিনের কোনো সাড়াশব্দ নেই। গেল কোথায় মানুষটা? আকস্মিক নিজের গালে ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পেতেই অয়ন্তি কেঁপে উঠে। বুঝতে পারে জাহিন তার পাশেই। অয়ন্তি অনুভব করছে তার কানের কাছে জাহিনের গরম নিঃশ্বাস। কিয়ৎক্ষণ পরেই জাহিনের কোমল কন্ঠের গাঢ় স্বর ভেসে আসে।

“আই লাভ ইউ অয়ন্তি। ভালোবাসি তোমায় খুব ভালোবাসি।”

অয়ন্তি জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ল। জাহিন তাকে ভালোবাসি কথাটা বলেছে যেটা সে এত দিন শুনতে চেয়েছিল অবশেষে শুনতে পেলো সেই সুখকর কথাটা। আর তার চেয়ে বড় কথা জাহিন তাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে। আপনি থেকে তুমিতে এসেছে তাহলে তাদের সম্পর্কটা। অয়ন্তি জাহিনের হাতের উপরে নিজের বা হাতটা রেখে আড়ষ্ট গলায় বলে।

“আবার বলবেন কথাটা প্লিজ।”

জাহিন মুচকি হেসে আরেকটু এগিয়ে এসে প্রগাঢ় গলায় বলল, “ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।”

অয়ন্তি জাহিনের গলা জাপ্টে ধরল। জাহিনও শক্ত করে অয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরল। কিছু মুহূর্ত পেরিয়ে গেল এভাবেই একে অন্যের হৃদস্পন্দনের গতি অনুভব করে। জাহিন ধীর হাতে অয়ন্তির ব্লাউজের ফিতাটা খুলে দিল। অয়ন্তির বুকের‌ উঠানামা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। জাহিন নিজের কাছ থেকে অয়ন্তিকে দূরে সরিয়ে এনে পুনরায় ডুবে যায় অয়ন্তির অধরে। অয়ন্তির কি হলো কে জানে নিজের হাত বাড়িয়ে জাহিনের শার্টের বোতাম খুলে দিল।‌ জাহিন থামে পড়নে থাকা শার্টটা ছুঁড়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে ধীরে ধীরে অয়ন্তির পিঠ ঠেকিয়ে দেয় নরম বিছানার মাঝে। জাহিন নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দেয় অয়ন্তির ছোট্ট দেহখানার উপরে। একে একে গলা, ঘাড়ে, চিবুকে, ব্ক্ষস্থলে জাহিনের ঠোঁটের বিচরণ বইতে শুরু করল অয়ন্তির দেহে। অয়ন্তি অস্থির হয়ে আকঁড়ে ধরল জাহিনের মাথার পেছনের চুল আর অস্পষ্ট গলায় বলল।

“নে… তা ম.. শাই।”

দুজনের মাঝে থেকে সরে যেতে লাগল সকল আবরণ। জাহিন বউয়ের সর্বাঙ্গে নিজের বেহায়া ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া বিচরণ চালাতে শুরু করল। প্রগাঢ়, বেসামাল পুরুষালির ছোঁয়া পেয়ে অয়ন্তি যেন নিজের শরীরের শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে। জাহিনের এক একটা অশান্ত নিঃশ্বাস অয়ন্তির মুখের উপর ফেলতে ফেলতে নেশাক্ত গলায় বলে।

“ভালোবাসি অয়ন্তি খুব ভালোবাসি তোমায়।”

__________

রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। জারা আস্তে আস্তে নিজের রুমের দরজা খুলে মাথা বের করে উঁকি দিয়ে দেখে বাইরে কেউ আছে কি না। না কেউ নেই পুরো বাড়ি ফাঁকা সবাই ঘুমে বিভোর হয়ে আছে এই বৃষ্টি মুখর রাতে। জারা আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়ে চোরের মতো পা টিপে টিপে হেঁটে নুহাশের রুমের সামনে আসে। নিজের বাড়িতেও জারাকে চোরের মতো হাঁটতে হচ্ছে। কি দিন কাল আইলো? জারা আস্তে করে নুহাশের রুমের দরজায় ঠোকা দিল। না ভেতরে থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলো না তার মানে নুহাশ ঘুমে। জারা দরজা ধাক্কা দিতেই তৎক্ষণাৎ খুলে গেল। জারা খুশিতে গদগদ হয়ে হা করে উঠে ভেবেছিল দরজা বন্ধ থাকবে কিন্তু না দরজা খুলা। উফ আল্লাহ তার সহায় আছে। দরজা খুলে ধীর পায়ে নুহাশের রুমের ভেতরে ঢুকে। রুমে প্রবেশ করতেই সুন্দর একটা ঘ্রান এসে নাকে বারি খায়। জারা বুক ভরে শ্বাস নিল। কেমন মাতাল করা গন্ধ। এই লোক কোন ব্র্যান্ডের পারফিউম ইউজ করে যে এমন মাতাল করা সুভাস ছড়াচ্ছে পুরো রুম জুড়ে? নুহাশের বউ হওয়ার পর তার প্রথম কাজ হচ্ছে এসব পারফিউম ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দেওয়া। এসব পাগল করা সুভাস লাগিয়েই তো মেয়েদের পাগল করে দেয় এই বেডা।

পুরো রুম অন্ধকার কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। ভ্যাগিস জারা বুদ্ধি করে ছোট একটা টর্চলাইট নিয়ে এসেছিল। টর্চলাইট জ্বালিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে বেডের কাছে এসে দাঁড়ায়। টর্চলাইটের মৃদু আলোতে নুহাশের মুখ দেখা যাচ্ছে। নুহাশ ঘুমে কাতর, কত্তটা নিষ্পাপ লাগছে মানুষটাকে। জারা মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় নুহাশের দিকে। নুহাশের গাল স্পর্শ করতে যাবে সাথে সাথে হাতটি সরিয়ে নেয়। কি করতে যাচ্ছিল সে এটা? যদি নুহাশ উঠে পড়ে তখন তো তার কার্যসিদ্ধি পূরণ হবে। জারা জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে তটস্থ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নুহাশের ফোনটা বেড সাইডের টেবিলের উপরে আছে। জারা যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে হাতে। ধীরে ধীরে টর্চলাইট’টা টেবিলের উপরে রেখে ফোন হাতে নিয়ে ফোনের পাওয়ার ওন করতেই ভেসে উঠে নুহাশের ছবি। জারা মুগ্ধ নয়নে নুহাশের ছবির দিকে তাকিয়ে রইল। তার অবচেতন মন বলছে, তুমি এত সুন্দর কেন নুহাশ ভাই? ছেলেদের এত সুন্দর হতে নেই তাতে মেয়েদের কু নজর লেগে যেতে পারে। হঠাৎ করেই জারা চমকে উঠে মাথা নাড়িয়ে মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে বলে।

“আশ্চর্য বার বার নিজের উদ্দেশ্য কেন ভুলে যাস তুই জারা। ফোকাস রাখ নিজের উদ্দেশ্যে।”

কিন্তু নুহাশের ফোনে প্যাটার্ন দেওয়া। জারা অনেক বার ট্রাই করল বিভিন্ন ধরণের প্যাটার্ন দিয়ে কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হল না সব ভুল হয়েছে আর ত্রিশ সেকেন্ডের ওয়ার্নিংও দিয়ে দিচ্ছে। এবার কি করবে জারা? এবার তো নুহাশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়া কোনো উপায় নেই কিন্তু যদি ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে গেলে নুহাশের ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন। কিন্তু কিছু করার নেই শেষ ভরসা নুহাশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট। জারা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের কোমর বাঁকিয়ে নুহাশের দিকে ঝুঁকে কাঁপাকাঁপা হাতে নুহাশের ডান হাতটা ধরল। নুহাশের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। জারার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি অস্বাভাবিক ভাবে চলছে। জারা নুহাশের তর্জনী ধরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে নিবে সাথে সাথে নুহাশ জারার বাহু ধরে ঝড়ের গতিতে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেলে। ফোনটা চিটকে পড়ে যায় বেডের এক কোণে। এতোটা দ্রুত ঘটেছে ঘটনা যে জারার বোধগম্য হচ্ছে না। নিজের ঘাড়ে কারো গরম, ভারী নিঃশ্বাস এসে পড়াতে জারার ধ্যান ভাঙলো। টার্চলাইটের আলোতে নুহাশের মুখ দেখা যাচ্ছে। জারা বুকের উঠানাম বেড়ে গেছে। নুহাশের এতোটা কাছে এই‌ প্রথম বারের মতো সে এসেছে। শরীর লৌহার মতো শক্ত হয়ে গেছে জারার। শুকনো ঢোক গিলে কাঁপাকাঁপা হাতে নুহাশের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে নিলে নুহাশ আরো আঁকড়ে ধরে জারাকে। পিটপিট চোখে নুহাশ জারার দিকে তাকাল। কি করবে এবার জারা? নুহাশ যদি প্রশ্ন করে সে এতো রাতে এখানে কি করছে তাহলে কি উত্তর দিবে? অস্থিরতা কাজ করছে মনের মাঝে। জারার ভাবনার মাঝে নুহাশ ভাঙ্গা গলায় বলল।

“বাস্তবে আমাকে জ্বালিয়ে নিজের মন ভরে না বলে এখন আমার স্বপ্নে চলে এসেছো আমাকে জ্বালাতে। এটা কিন্তু ঠিক না জান।”

জারা নুহাশের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে নুহাশের দিকে তাকায়। নুহাশ পুনরায় চোখ বন্ধ করে নেয়। জারা বুঝতে পারে নুহাশ স্বপ্ন দেখছে আর এই স্বপ্নটা যে একটা মেয়েকে নিয়ে দেখছে সে একশো পার্সেন্ট সিউর। আর কত বড় সাহস তাকে জান বলে ডাকছে। কোন শাকচুন্নিকে এই বেডায় জান বলে ডাকছে? কিন্তু নুহাশ এক অভিনব কাজ করে বসে ভাবুক জারার সাথে। ঘুমের ঘোরে জারার ঘাড়ে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে ফেলে। জারার সমস্ত কায়া কেঁপে উঠে। নুহাশের উনমুক্ত পেশিবহুল হাত শক্ত করে খামছে ধরে জারা। কি করতে এসেছিল এই ঘরে আর কি হচ্ছে তার সাথে? না সইতে পারছে না অত্যাচার। নিজেকে নুহাশের বাহুডোর থেকে মুক্ত করে যতসম্ভব তাড়াতাড়ি এই ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। কিন্তু চাইলেও নুহাশের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে এভাবেই পড়ে রইল জারা নুহাশের বক্ষস্থলে আর শুনতে লাগল নুহাশের হৃদপিন্ডের চলার গতি। টর্চলাইটের চার্জও শেষ হয়ে এসেছে। জারার চোখে ঘুম নেই ঘুমাবে কি করে এমন এক পরিস্থিতিতে ঘুম এসে জীবনেও ধরা দিবে না।

ধীরে ধীর নুহাশের হাতের বাঁধন নরম হয়ে এলো। জারা নিজের দু ঠোঁটে চেপে ধরে আস্তে আস্তে নুহাশের বক্ষস্থল থেকে সরে এলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল জারা। এখানে আর এক মুহূর্ত থাকা যাবে না যত সম্ভব তাড়াতাড়ি জারা নুহাশের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে। রুমে ঢুকে জারা দৌঁড়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। বা হাত নিয়ে যায় ঘাড়ে যে স্থানে নুহাশের ঠোঁট ছুঁয়েছে সেই স্থানটা চেপে ধরে। মুখে লাজুক হাসি তার। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে আছে। নুহাশের সামনে কি করে এখন যাবে সে গেলেই তো ওই অপ্রত্যাশিত দৃশ্যটা চোখের সামনে ছলছল করে বাস্তব রুপে ভেসে উঠবে।

________

রাত তিনটে বাজে জাহিন অয়ন্তির বুকে মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তার ঘুমটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। বাইরে বৃষ্টির তান্ডব থামলেও জাহিনের ভালোবাসার তান্ডব থামে নি এখন পর্যন্ত। অয়ন্তির দেহে নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজার করে দিচ্ছে যেন। অয়ন্তির পড়নে জাহিনের শার্ট। জাহিন শার্টের দুটো বোতাম খুলে অয়ন্তির গলায়, কাঁধে অবিরাম চু’মুর বর্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। জাহিন অয়ন্তির শার্টের আরেকটা বোতাম খুলতে যাবে সাথে সাথে অয়ন্তি জাহিনকে বাঁধা দিয়ে বলে।

“কি করছেন?”

জাহিন বউয়ের দু গালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে, “ভালোবাসছি।”

“যথেষ্ট ভালোবেসেন এবার থামুন।”

জাহিন এবার অয়ন্তির উপর থেকে সরে এসে নিজে শুয়ে অয়ন্তিকে নিজের বুকের বা পাশে রেখে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে অয়ন্তির বা হাতটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে জড়ানো কন্ঠে বলে, “ঠিক আছে থেমে গেলাম।”

বলেই অয়ন্তির কপালে চু’মু দিয়ে বলে, “ঘুমাও এবার তাহলে।”

অয়ন্তি জাহিনের বুকে মাথা রেখে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। প্রত্যেক মেয়েদের হয়তো স্বামীর বক্ষস্থলটা তাদের জন্য নিরাপদের স্থান। অয়ন্তির চোখে নেমে এলো রাজ্যের ঘুমে। ঘুমের দেশে ঢলে পড়ল। কিন্তু জাহিনের চোখে ঘুম নেই সে অয়ন্তিকে নিজের বুক থেকে এনে নিজের বাহুর উপরে শুইয়ে দিয়ে এক নজরে ঘুমন্ত অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে রইল। চোখ জোড়া মুগ্ধতায় ভরে আছে তার। জাহিন আলতো হাতে অয়ন্তির কানে চুল গুঁজে দিয়ে ভরাট গলায় বলে।

“ধন্যবাদ অয়ন্তি আমার জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আসার জন্য। ধন্যবাদ তোমাকে আমায় এমন একটা মধুময় রাত্রি দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ তোমাকে নিজেকে আমার কাছে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য। সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ তোমায়।”

জাহিনের কথা শেষ হওয়ার পরপরেই অয়ন্তি ধীর গলায় বলে উঠে, “ধন্যবাদ আপনাকে নেতামশাই আমাকে এতোটা গভীর ভাবে ভালোবাসার জন্য। ধন্যবাদ আপনাকে নেতামশাই আমাকে পরিপূর্ণ করার জন্য। সব কিছুর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ নেতামশাই।”

জাহিন বড্ড অবাক হয় অয়ন্তির কথা শুনে। সে তো ভেবেছিল অয়ন্তি ঘুমিয়ে পড়েছে। মেয়েটা তার মানে ঘুমায় নি। কত্ত চালাক এই মেয়ে। অয়ন্তি চোখ মেলে জাহিনের দিকে তাকায়। জাহিন মাথা নিচু করে অয়ন্তির অধর জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। ধীর ধীরে আবারো বেড়ে গেল দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ। আবারো জাহিন মত্ত হলো অয়ন্তির মাঝে। অয়ন্তিও নিজের সব টুকু উজার করে নিজের স্বামীকে বিলিয়ে দিলো পুনরায়।

#চলবে

প্রকাশিত আগের পর্ব গুলা
https://www.facebook.com/100063894182680/posts/879180814221717/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here