হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৪২

0
433

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪২

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]

রাজনৈতিক দলের দুই দল মুখোমুখি হয়েছে। এক মেয়র পদ প্রার্থী জাহিনের দল আরেক মেয়র পদ প্রার্থী সুরেশ মজুমদারের দল। দুজনের দলেই ক্ষমতাশালী। কিন্তু দুই দলের দুই প্রার্থী নেই। জাহিন ছিল কিন্তু মাঝ রাস্তায় একজনের সাথে দেখা হওয়াতে ওখানে আটকে গেছে তাই দলকে এগিয়ে যেতে বলেছে। আর সুরেশ মজুমদারের ছেলে ত্রিনভ মজুমদার আছে দলের নেতা হিসেবে বাবার পরিবর্তে আপাতত। পুরো রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়ে আছে দুই দল। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। বিশেষ করে ত্রিনভ। ত্রিনভের মিছিলে চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ জন মানুষ হবে কিন্তু জাহিনের মিছিলে শ’খানেক মানুষ হবে বা তার চেয়ে বেশিও হতে পারে। ত্রিনভ তেজি গলায় বলে।

“এই‌ এলাকায় আমাদের দলের মিছিল হবে অন্য কোনো দলের নয় তাই সবাইকে নিয়ে এখানে থেকে চলে যা।”

মাসুম চেঁচিয়ে বলে, “এই ত্রিনভ এই এলাকাটা কি তোর বাপের?”

ত্রিনভ তেঁড়ে এসে বলে, “এই মাসুম বাপ তুলে কথা বলবি না।”

“তুই তুলতে বাধ্য করচ্ছিস।”

নুহাশ মাসুমকে ধমক দিয়ে বলে, “মাসুম তুই চুপ করবি।”

“কিন্তু ভাই।”

“চুপ কর।”

নুহাশ ত্রিনভের দিকে ফিরে ঠান্ডা গলায় বলে, “দেখো ত্রিনভ এলাকাটা তোমার একার নয় যে শুধু তুমি একাই মিছিল করে বেড়াবে। এখানে সকল প্রার্থীদের মিছিল করার রাইট আছে।”

“আমি তো মিছিল করতে না করছি না, শুধু আজকের জন্য মিছিল করা যাবে না। কারণ একই জায়গাতে সিংহ আর বাঘ এক সাথে থাকতে পারে না।”

হঠাৎ করেই পেছন থেকে রাশভারি গলার শব্দ ভেসে আসে, “তা তুমি নিজেকে কি ভাবচ্ছো এই মুহূর্তে বাঘ নাকি সিংহ?”

ত্রিনভ নুহাশের পেছনে তাকিয়ে দেখে জাহিন এসেছে। চেহারা কঠিন করে রেখেছে। জাহিন ত্রিনভের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আবারো প্রশ্ন করে, “কি হলো কি ভাবচ্ছো তুমি নিজেকে?”

ত্রিনভ ঝাঁঝালো গলায় বলল, “আমি নিজেকে কি ভাবছি সেটা আপনাকে বলতে বাধ্য নই। আপনি আপনার দলকে নিয়ে ফিরে যান আজ এই‌ এলাকায় আমাদের মিছিল হবে।”

জাহিন বাঁকা হেসে বলে, “তোমার কথায় নাকি।”

“হুম আমার কথায়।”

“ঠিক আছে তোমার সামনে দিয়ে আমার দল আজ এই‌ এলাকায় মিছিল করে বেড়াবে দেখি কি রে তুমি আটকাও?”

জাহিন দল নিয়ে সামনে এগোতে নিলে ত্রিনভ জাহিনের কলার চেপে ধরে। জাহিন রক্তচুক্ষু নিয়ে ত্রিনভের দিকে তাকায়। জাহিনের দলের ছেলেরা এগিয়ে আসতে নিলে জাহিন হাত বাড়িয়ে থামিয়ে দেয় তাদের। রাগে জাহিনের কপালের নীল রগটা দৃশ্যমান রুপে ভেসে উঠেছে। চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। ত্রিনভ জাহিনের চোখে চোখ রেখে উদ্যত গলায় বলে।

“বলেছি না আজ আপনার দল এই এলাকায় কোনো মিছিল করবে না মানে করবে না।”

জাহিন একবার ত্রিনভের দিকে তো আরেক বার নিজের কলারের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে, “কলারটা ছাড়ো ত্রিনভ।”

“ছাড়ব না কি করবেন আপনি?”

জাহিন চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে নাকের পাটা ফুলিয়ে নিজের পেশিবহুল হাত দিয়ে ত্রিনভের বা গালে সপাটে থাপ্পর দিয়ে বসে। চারিদিকে থাপ্পরের প্রতিধ্বনি হচ্ছে যেন। সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রাস্তার আশে পাশে যত মানুষ ছিল সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে দুই দলের আক্রোশ। আকস্মিক নিজের বা গালে শক্ত হাতের থাপ্পর পড়াতে ত্রিনভ নিজের টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। ত্রিনভের লোকেরা তেঁড়ে আসতে নিলে জাহিন তর্জনী তাঁক করে হুমকির স্বরে বলে।

“উমম একদম না। যেই জায়গাতে পা জোড়া আছে সেই জায়গাতেই আটকে রাখো। না হলে কিন্তু তোমাদের নেতার মতো তোমাদের একই অবস্থা করে ছাড়ব আমি।”

থেমে যায় সকলে। জাহিন নিজের কলার ঠিক করে হাঁটু মুড়ে ত্রিনভের সামনে বসে কৌতুকের স্বরে বলল, “ইস! খুব বেশি লেগেছে না। এক্কেবারে লাল হয়ে গেছে সাদা চামড়াটা। এই কেউ একটু বরফ নিয়ে আয় তো ওর জন্য। গালটা লাল হয়ে গেছে বাবুটার।”

ত্রিনভ রাগী চোখে জাহিনের দিকে তাকায়। বা গালটা হাত‌ দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। রাগে বার বার নাক আর ঠোঁটে ফুলে উঠছে। জাহিন ত্রিনভের কলারটা ঠিক করতে করতে গম্ভীর গলায় বলে।

“আমি সচরাচর কারো গায়ে হাত তুলি না। কিন্তু যখন যার গায়ে হাত তুলি তার শরীরের প্রত্যেকটা নিউরন নাড়িয়ে দেই।‌ তুমি অভদ্রতা করেছো তার জন্য এই‌ থাপ্পরটা তোমার প্রাপ্য ছিল।”

বলে উঠে যেতে নিলে জাহিন কিছু একটা মনে করে ত্রিনভের কানের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে আস্তে করে বলে, “আমরা দুজনে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ভাইরাল হয়ে যাবো নেট জগতে। ওলরেডি হয়ে গেছি হয়ত। অবশ্য এমনিতে আমরা ভাইরাল হয়ে আছি কিন্তু এবার একটু বেশি করেই ভাইরাল হয়ে যাবো। ভাইরাল হওয়ার জন্য নিজের মন মানসিকতাকে প্রস্তুত রখো ত্রিনভ। কারণ চড়টা তুমি খেয়েছো।”

কথাটা বলে জাহিন উঠে দাঁড়িয়ে দলের সকলকে নিয়ে চলে যায়। মাসুম চলে যাওয়ার আগে ত্রিনভকে ইশারা করে বলে, “কেমন লাগল থাপ্পরটা?” ত্রিনভ রাগে জর্জরিত হয়ে জোরে চিৎকার করে উঠে। চারিদিকে তাকিয়ে জনগণের দিকে তেঁড়ে এসে হুংকার ছেড়ে বলে।

“কি হুম কি দেখচ্ছিস তোরা সার্কাস দেখচ্ছিস তোরা?”

সাধারণ জনগণরা ভয় পেয়ে যে যার কাজ চলে যায় এখানে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে থেকে। ছাড়বে না সে জাহিনকে কিছুতেই ছাড়বে না। জন সম্মুখে তার গায়ে হাত তুলেছে এর প্রতিশোধ ও নিবেই নিবে।

_________

রেস্টুরেন্ট বসে রয়েছেন খলিল তালুকদার। তার সামনের চেয়ারে বসে রয়েছে কালো পোশাকদারী এক যুবক। মুখে কালো মাক্স আর মাথায় কালো ক্যাপ পড়া। মানুষটি কে সেটা চেনার কোনো‌ উপায় নেই। যুবকটির হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিনে ছলছল করছে নুহাশ আর জারার একে অন্যকে জাড়িয়ে ধরে রাখার ছবি। একটা পর একটা ছবি দেখে যাচ্ছে যুবকটি। চাইলেই এই মুহূর্তে জাহিনের ফোনে সে সমস্ত ছবি গুলা পাঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু না এই মুহূর্তে এই ছবিগুলা সেটা পাঠাবে না। আগে একটু প্রেমটা মাখো মাখো হোক তারপর না হয় সে তার মোক্ষম চালটা চালবে। জাহিন যখন জানতে পারবে তার বোনের সাথে অতি প্রিয় নুহাশের সম্পর্কের কথা তখন কি করবে জাহিন? ভেবেই‌ যুবকটির ঠোঁটের কোণে পৈশাচিক এক হাসি ফুঁটে উঠে। খলিল তালুকদার যুবকটির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলেন।

“এতো মনযোগ দিয়ে কি দেখচ্ছো ফোনে?”

যুবকটি জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “দেখছি এক বিশেষ ম’রণ অ’স্ত্র যেটা এক সুন্দর সম্পর্কের ভিত নড়িয়ে দিতে পারে।”

“কি সেটা?”

“বলতে আগ্রহী নই আপনাকে। আমি এখন আসি।”

বলেই যুবকটি চলে যায়। খলিল তালুকদার পড়েছে দুই গাছের চিপায়। যদি কোনো উল্টাপাল্টা কাজ করেন তাহলে জাহিন ওই অডিও রেকর্ড নিয়ে থানায় যাবে। কি যে করবেন কিচ্ছু বোঝতে পারছেন না। এখন মনে হচ্ছে এসব দু নাম্বারি কাজ না করাটাই ভালো ছিল।

________

নেহাল এসেছে জাহিনের পার্টি অফিসে। নেহালকে নিজের পার্টি অফিসে আসতে দেখে জাহিন কিছুটা অবাক হয়ে বলে, “তুই হঠাৎ?”

নেহাল চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলে, “কেন আসতে পারি না বুঝি তোর পার্টি অফিসে।”

“আসতে পারিস কিন্তু হঠাৎ এমন সময়।”

“আরে একটা কেস নিয়ে তোর কাছে আসে।”

জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “কিসের কেস?”

“একটা জমি সংক্রান্ত কেস। যার জমি তার চাচাতো ভাইয়েরা সেটা জোর করে দখল করে রেখেছে। মামলাটা আমি দেখছি কিন্তু তুই যদি একটু সাহায্য করিস তাহলে তাড়াতাড়ি জমিটা উদ্ধার করতে পারব না হলে দিনকে দিন পেঁচিয়ে যাবে কেসটা।”

“জমির মালিকের নাম কি?”

“রতন মিয়া।”

“জমির দলিল আছে তো রতন মিয়ার কাছে।”

“সব আছে।”

“ঠিক আছে। দেখব বিষয়টা।”

“ধন্যবাদ রে।”

“ধুর ধন্যবাদ দেওয়ার কি হলো? এটাই আমার কাজ তুই চিন্তা করিস না একটু টাইট দিলেই সুরসুর করে সরে যাবে।”

আকস্মিক জাহিনের হাত লেগে টেবিল থেকে কলম পড়ে যায়। কলম তোলার জন্য ঘাড় বাঁকিয়ে নিচু হতেই ভেসে উঠে জাহিনের ঘাড়ে কান বরাবর কালচে হয়ে থাকা একটা দাগ। নেহাল তা দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়। পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে দুষ্টু হাসি। জাহিন তা দেখে দু হাত দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে।

“কি উল্টাপাল্টা চিন্তা করছিস তুই আমাকে নিয়ে যে এমন বিশ্রী ভাবে হাসছিস আমার দিকে তাকিয়ে?”

নেহাল নাক মুখ ছিটকে বলে, “তুই কি আমাকে গে ভাবিস নাকি যে তোকে নিয়ে আমি উল্টাপাল্টা চিন্তা করব।”

জাহিন দু হাত টেবিলের উপরে রেখে ফাজলামির স্বরে বলে, “ভাবতেই পারিস বলা যায় না। তোর চরিত্র তো আবার ফুলের মতো পবিত্র।”

“ওই চরিত্র নিয়ে কথা বলবি না।”

“তাহলে এমন বিশ্রী ভাবে হাসছিলি কেন?”

নেহাল ঠোঁটে হাসি রেখে বলে, “তুই যে শেষমেষ মধু খেয়েছিস সেটা ভেবেই হাসছিলাম এই আর কি।”

জাহিন নেহালের কথা বুঝতে না পেরে বোকার মতো বলে, “ঠিক বুঝলাম না তোর কথা।”

“কংগ্রাচুলেশন।”

জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “কংগ্রাচুলেশন! কিসের জন্য?”

“এই যে নিজের কুমারত্ব হারানোর জন্য।”

জাহিন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে, চোখ বড় বড় করে তাকায়। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন। কি বলছে এইসব নেহাল? জাহিন নিজেকে তটস্থ করে শব্দ করে হেসে বলে, “কি যা তা বলছিস তুই এসব?”

“ওই একদম লুকানোর চেষ্টা করবি না আমার কাছে থেকে। তোর ওই ঘাড়ের লাল দাগটা সব বলে দিচ্ছে।”

জাহিন ঘাড়ের লাল হয়ে থাকা জায়গাটাতে হাত রেখে থমথমে গলায় বলল, “শা’লা তুই তো শ’কুনের চোখের দৃষ্টিকেও হারিয়ে দিবি। শ’কুনের চোখের দৃষ্টি থেকেও তোর চোখের দৃষ্টি ভয়ংকর।”

নেহাল হাসতে হাসতে বলল, “আমি একজন উকিল বুঝলি। আমার চোখের দৃষ্টি তো শ’কুনের চোখের মতো হবেই।”

জাহিন কিছু বলল না। নেহাল হাসি থামিয়ে বলল, “যাই হোক তোদের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক এটাই দোয়া করি প্রাণ ভরে।”

জাহিন প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসল।

________

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মুক্ত আকাশে উঁড়ে বেড়ানো সকল পাখিরা নিজের আপন নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু রাতের আঁধার যত বাড়চ্ছে তত নিশাচর প্রাণীদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে। দূর থেকে তাদের ডাক ভেসে আসছে।

জারা পড়ার টেবিলে বসে আছে। তার সামনে বইয়ের পাতা উল্টে আছে। কিন্তু তার পড়ায় কোনো মনযোগ নেই সে আছে নিজস্ব কল্পনায় মত্ত হয়ে। বার বার আপন মনে হেসে উঠেছে। ঠোঁটের কোণে এই হাসিতে রয়েছে সুখ আর প্রশান্তি। নুহাশ ভাই তাকে ভালোবাসে ভাবা যায়। আর সে কিনা এতো দিন কত শত উল্টাপাল্টা চিন্তা করে নিজের ব্রেইনের উপরে চাপ দিয়েছে। ইস এখন নিজেকে এতোটা বোকা লাগছে যা বলার বাহিরে।

অয়ন্তি জারার রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল হঠাৎ করেই জারার হাসির আওয়াজ পেয়ে থেমে যায়। অয়ন্তি রুমের পর্দা সরিয়ে দেখে একা একাই হাসছে জারা পাগলের মতো। অয়ন্তি অন্য সময় হলে জারার অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ করতো না কিন্তু এখন জারার অনুমতি না নিয়েই রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে।

“কি ননদিনী রায় বাঘিনী এত হাসছো কেন?”

জারা অয়ন্তির গলার স্বর শুনে হাসি থামিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “ওও ভাবি ভেতরে আসো।”

অয়ন্তি জারার সামনে দাঁড়িয়ে দু হাত বুকের মাঝে বেঁধে ভ্রুদ্বয় নাচিয়ে প্রশ্ন করে, “হাসছিলে কেন?”

জারা লাজুক হেসে বলে, “এমনিই ভাবি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে বলতে না চাইলে বলতে হবে না। তুমি পড়ো আমি যাই।”

“ভাবি দাঁড়াও।”

“কিছু বলবে?”

জারা নিজের ব্যাগ থেকে দশ থেকে পনেরোটা চকলেট বের করল। এই চকলেট গুলা নুহাশ আজ তাকে কিনে দিয়েছে। জারা চার থেকে পাঁচ চকলেট এগিয়ে দিয়ে বলে।

“নাও।”

“হঠাৎ চকলেট।”

“এত প্রশ্ন করো না তো চকলেট খাও।”

কথাটা বলে কিছু একটা ভেবে জারা বলে, “এই দাঁড়াও আজ চকলেট পার্টি দিবো। তুমি এখানে বসো আমি আসছি।”

কিছুক্ষণ পর আহান দৌঁড়ে এসে অধৈর্য গলায় বলতে থাকা, “ভাবি আপু কোথায় রেখেছে চকলেট গুলা?”

কথাটা বলে নিজেই চকলেট গুলা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে প্যাকেট খুলে চকলেট খেতে শুরু করল। জারাও এসে যোগ হলো। অয়ন্তি খেতে চায় নি জারা আর আহানের জোড়াজুড়িতে খেলো। কিন্তু অয়ন্তি বেশিক্ষণ চকলেট পার্টি নামক পার্টিতে থাকতে পারল না। জাহিন এসেছে আর এসেই তার খোঁজ করছে তাই নিজের ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্য চলে গেল।

কিন্তু রুমের ভেতরে যেতে বড্ড লজ্জা লাগছে তার। কি করে জাহিনের সামনে যাবে? জাহিনের সামনে গেলেই তো রাতের ওই সমস্ত ঘটনা গুলা তাজা হয়ে উঠবে মনের গহীনে। অয়ন্তি জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে তটস্থ করে নিয়ে রুমে এসে ঢুকে। জাহিন সোফায় বসে কিছু ফাইল চেক করছিল অয়ন্তিকে আসতে দেখে মাথা তুলে অয়ন্তির দিকে তাকায়। অয়ন্তিকে দেখে জাহিনের ভ্রু কুঁচকে আসে। অয়ন্তির ঠোঁটের কোণে কিছু একটা লেগে আছে সেটা স্পষ্ট দৃশ্যমানরুপে ভেসে আছে। জাহিন নরম গলায় বলে।

“অয়ন্তি কাছে আসো তো।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “কেন?”

“আসতে বলছি আসো।”

অয়ন্তি স্বামীর কথা মতো জাহিনের কাছে আসে দাঁড়ায়। অয়ন্তি কাছে আসতেই জাহিন অয়ন্তির হাত ধরে নিজের কোলে এনে বসায়। অয়ন্তি জাহিনের এহেন কাজে চমকিয়ে জাহিনের দু কাঁধ আঁকড়ে ধরে। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্নবোধক নয়নে জাহিনের দিকে তাকায়। জাহিন বা হাতটা অয়ন্তির উনমুক্ত কোমরে রেখে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা জিনিসটা মুছে বলে।

“কি খেয়েছো?”

অয়ন্তি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে, “চকলেট খেয়েছি।”

জাহিন দুষ্টু হেসে বলে, “নিজে তো ঠিকই চকলেট খেয়েছো তো আমার চকলেটটা কোথায়?”

অয়ন্তি আগ্রহের সহিত বলে, “আপনি চকলেট খাবেন তাহলে বসুন আমি নিয়ে আসছি।”

অয়ন্তি উঠতে নিবে তখনই জাহিন অয়ন্তির কোমর দু হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে বলে, “চকলেট খাবো না অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে বলে, “কি খেতে ইচ্ছে করছে বলুন বানিয়ে আনছি।”

“বানাতে হবে না। সৃষ্টি কর্তা আগে থেকেই নিজের হাতে অতি যত্ন করে জিনিসটা তৈরি করে রেখেছেন আমার জন্য।”

অয়ন্তি জাহিনের কথার কোনো মানে বুঝতে পারল না। জাহিন অয়ন্তির এমন চেহারা দেখে ঠোঁট টিপে হাসল। জাহিন আলতো হাতে অয়ন্তির গালে হাত রাখল আর নেশাক্ত গলায় বলল।

“একটা চুমু দাও তো বউ।”

জাহিনের এহেন কথা শুনে অয়ন্তি চোখ বড় বড় জাহিনের পানে তাকায়। কি বলছে এই লোক? গতকাল রাতে কাছাকাছি আসার পর থেকে জাহিনের মুখে যেন ওল টাইম লাগাম ছাড়া কথাবার্তা লেগেই আছে, থামার নামেই নেই। জাহিনকে যেমনটা দেখে এসেছিল এত দিন এখন তার উল্টো জাহিনকে দেখছে। জাহিন পুনরায় বলল।

“কি হলো? অপেক্ষা করছি তো আমি চুমুটা দাও।”

অয়ন্তি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে এলো। সে কি করে জাহিনকে চুমু দিবে তার বুঝি লজ্জা লাগবে না। জাহিন অয়ন্তির লজ্জামাখা মুখটা দেখে বলে, “এখনও এতো লজ্জা। গতকাল না লজ্জা ভাঙালাম আপনার ম্যাডাম।”

অয়ন্তি প্রতিউত্তর করল না জাহিনের কথায়। জাহিন আবারো বলল, “আমি যখন তোমাকে চুমু দেই তখন তো তুমি খুব উপভোগ করো তাহলে আমার বেলায় উল্টো কেন?”

অয়ন্তি চুপটি করে জাহিনের কোলে বসে রইল। অয়ন্তি পুনরায় অনুভব করতে পারল তার গাল আর গলার কাছটায় অতি পরিচিত ছোঁয়া। অয়ন্তি শুকনো ঢোক গিলল। খামচে ধরল জাহিনের শার্টের কলার। বুঝতে পারছে কি হতে চলেছে একটু পর। জাহিন অয়ন্তির কপালে নিজের কপাল ঠেকালো। একে অন্যের মুখে দুজনের গরম নিঃশ্বাস আঁছড়ে পড়ছে। জাহিন অয়ন্তি দুজনেই চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ। অনুভব করল দুজন দুজনের হৃদস্পন্দনের গতি। জাহিন চোখ বন্ধ অবস্থায় কন্ঠে মাদকতা মিশিয়ে বলল।

“আই লাভ ইউ অয়ন্তি। খুব ভালোবাসি তোমাকে খুব।”

কথাটা শোনা মাত্রাই অয়ন্তির সারা শরীরের ভাঁজে ভাঁজে শিহরণ বয়ে গেল। শ্বাস ভারী হয়ে এলো। বুকের মাঝটায় একটা শান্তি শান্তি অনুভব হচ্ছে অয়ন্তির। এই তিন শব্দের কথাটা জাহিন হয়ত বা এখন নিয়ে শত বার বলে ফেলেছে তাকে, কিন্তু তারপরও যেন লোকটার মন ভরছে না কথাটা বলে। কিন্তু জাহিন এই ম্যাজিক্যাল তিনটা ওয়ার্ড সারাটা জীবন অয়ন্তিকে বলতে চায় সারাটা জীবন।

জাহিন চোখ মেলে তাকায় অয়ন্তির দিকে। অয়ন্তির মায়া ভরা চেহারার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল। পুরুষালী সত্ত্বা জেগে উঠছে ধীরে ধীরে তার। স্ত্রীকে নিজের সান্নিধ্যে চাইছে। জাহিন ঢোক গিলে বা হাতটা অয়ন্তির পিঠের উপরে রেখে আকস্মিক অয়ন্তিকে সোফায় শুয়েই দেয়। অয়ন্তি চমকে জাহিনের দিকে তাকায়। ভয়ে দু হাত দিয়ে আঁকড়ে জাহিনের গলা জড়িয়ে ধরে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। জাহিন অয়ন্তির দিকে ঝুঁকে নরম গলায় বলল।

“ভয় পেয়েছো?”

অয়ন্তি মাথা উপর নিচ করল। জাহিন প্রগাঢ় গলায় বলল, “তা মিসেস অয়ন্তি আপনার ভয় কাটাবো?”

অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে নেয়। জাহিন মুচকি হেসে নিজের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি যুক্ত গালটা এগিয়ে নিয়ে অয়ন্তির মসৃণ গালের সাথে ঘষা দিল। অয়ন্তি অস্ফুটে গুঙিয়ে উঠল। জাহিন মাথা তুলে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকায় অয়ন্তির পানে। অয়ন্তি তৎক্ষণাত চোখ নামিয়ে নিলো। জাহিনকে নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। জাহিন নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা আঁকড়ে ধরল নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর ওষ্ঠদ্বয়। অয়ন্তিও সায় দিল স্বামীর ডাকে। জাহিনের বেসামাল হাতের ছোঁয়া বাড়তে শুরু করল অয়ন্তির ছোট্ট দেহে। দুজনের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো। ওদিকে যে রুমের দরজা খোলা সেই দিকে দুজনের মধ্যে কারোর কোনো খেয়াল নেই। হঠাৎ করে আহান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।

“ভাবি তুমি চকলেট পার্টি শেষ না করেই চলে আসলে যে?”

জাহিন আহানের গলার স্বর শোনে ছিটকে অয়ন্তির কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।। দুজনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আহানের ডাক শোনে। অয়ন্তি বসে চোখ বন্ধ করে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট চেপে অন্য দিকে ফিরে রইল। আহান ভাই আর ভাবির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।

“কি করছো তোমরা দুজনে?”

জাহিন গলা খাকারি দিয়ে বলে, “কি করব কিচ্ছু করছি না তো।”

“আচ্ছা কিছু না করলেই ভালো।”

আহান কথাটা বলে অয়ন্তির কাছে এসে অয়ন্তির হাত ধরে বলে, “ভাবি তুমি চলো।”

অয়ন্তি জাহিনের দিকে কটমট চোখে তাকাল। জাহিন অসহায় চোখে বউয়ের দিকে তাকাল। তার কি দোষ সে কি জানত আহান এমন সময় চলে আসবে। আর অয়ন্তিও বা কেমন রুমের দরজা বন্ধ না করে চলে আসলো, যদি বন্ধ করে আসত তাহলে তো এমন বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়তে হতো না। এখানে দুজনেরই দোষ আছে।

অয়ন্তি চলে গেল। জাহিন ধপ করে সোফায় বসে দু হাত দিয়ে খামচে ধরল মাথার চুল। নিজের চুল নিজেই এলোমেলো করে দিয়ে মৃদু চিৎকার করে আশাহত গলায় বলল।

“এমন একটা ভাইয়েই যথেষ্ট বড় ভাইয়ের রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য।”

কথাটা বলে সোফায় মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে কাতর গলায় বলল, “ওরে আহান রে তুই কি আর আসার টাইম পেলি না। গুণে গুণে তোকে এই সময় এই ঘরে এসে তোর মহা মূল্যবান পদধূলি দিতে হল। একটু পরেও তো আসতি পারতি ভাই আমার।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here