হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো #মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা #পর্ব ১৩ (বোনাস পার্ট)

0
124

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১৩
(বোনাস পার্ট)

হাসপাতালে থমথমে পরিবেশ।সময় পেরিয়েছে কয়েক ঘন্টা। শাহআলম সাহেব মাইনর স্ট্রোক করেছেন।এখন অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে।স্যালাইন চলছে।রাইমার শারিরীক অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে।হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করতে পারছে না।ডাক্তার হার্টের জন্য তাড়া দিচ্ছেন।এই হাসপাতালে গত কয়েকঘন্টার মধ্যে কোনো রোগী মা*রা যায় নি।ফলস্বরূপ,অপারেশন শুরু করা যাচ্ছে না।এমনকি আশপাশের অনেক হাসপাতালে খোঁজ নেওয়া হয়েছে গত কয়েক ঘন্টায় মা*রা যাওয়া কোনো লা*শ নেই। যেসব মৃত দেহ পাওয়া গেছে ঐগুলোর বয়স একদিন,দুইদিন এমন।দাতা হার্ট মৃত্যুর ছয় ঘন্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন করতে হয়।কিন্তু হার্ট পাওয়া যাচ্ছে না।রাইমার মা-বাবার আহাজারিতে পুরো হসপিটাল থমথমে।সংকল্পের পরিবারের সবাই তাদেরকে অনেক কথা শুনিয়েছে।কিন্তু এমন পরিবেশে এসব কথা তারা গায়ে মাখেন নি।মেয়ে তো মৃত্যুর দোরগোড়ায়।

তখনই ডাক্তার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন।সংকল্পকে বললেন,
“আপনারা কিছু ব্যবস্থা করতে পেরেছেন?”

সংকল্প মাথা নত করে রেখেছে।সেও অনেক খোঁজ নিয়েছে।কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মা*রা যাওয়া কোনো ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায় নি।
সংকল্প মাথা নত করেই বললো,
“পাই নি।”

দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ডাক্তার এবং সংকল্প উভয়েরই।
ডাক্তার বিপরীতে বললেন,
“দ্যান উই আর স্যরি।এখন পেশেন্টের মৃত্যুর অপেক্ষা।”

কথাটা যেনো হাসপাতালের করিডোরে বিস্ফোরণ সৃষ্টি করলো।মানুষ মরণশীল।একদিন মর*তে হবেই।তাই বলে একটা মানুষ চোখের সামনে এভাবে মা রা যাবে!এটা মেনে নেওয়া কঠিন।

প্রতিজ্ঞা এখনো করিডোরেই বসে আছে।তার মাথায় চলছে ভিন্ন চিন্তা।মাথাটা যেনো ছিড়ে যাচ্ছে।
ডাক্তার চলে যেতে নিলেই সে হুট করে বলে উঠে,
“আমি হার্ট দিবো।”

উপস্থিত সকলে চমকায়।বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকে প্রতিজ্ঞার পানে।বিষয়টা বুঝতে সংকল্পের সময় লাগে।

ডাক্তার প্রতিজ্ঞাকে বলে,
“জীবিত মানুষ হার্ট দিতে পারে না।মাস্ট বি ব্রেন ডেথ।”

প্রতিজ্ঞা সাথে সাথে বলে উঠে,
“আপনারা তো ডাক্তার, আমাকে মে*রে ফেলতে আপনাদের কিছু সময়ের ব্যাপার।”
“এটা আইনগতভাবে অপরাধ।”

প্রতিজ্ঞা সাথে সাথে বলে,
“আমি বন্ডে সাইন করবো।আমার জীবন আমার ইচ্ছা।যেসব ডকুমেন্টস আছে সব আমি ফিল আপ করবো।আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না।”

ডাক্তার অবাক হয়।বলেন,
“আপনি পাগ লামী করবেন না।আমরা দেখছি হার্ট পাওয়া যায় কিনা।শান্ত হোন।”

কিন্তু প্রতিজ্ঞা নিজের মধ্যে নেই।আবার উত্তেজিত হয়ে পড়ছে।অস্বাভাবিক আচরণ করছে।সেই হার্ট দিবে।একপর্যায়ে সংকল্প এসে তাকে থাপ্পড় মা*রে।চেঁচিয়ে বলে,

“আর ইউ আউট অব ইউর মাইন্ড?কি শুরু করেছো?সবকিছুতে নিজেকে জাহির করতে আসো কেনো?কেনো নাটক করছো?এখানে উপস্থিত মানুষগুলা তোমার নাটক দেখতে এসেছে?”

প্রতিজ্ঞার এতে খেয়াল নেই।সেও চেঁচিয়ে বলে,
“হ্যাঁ,পা গল হয়ে গেছি।আপনাকে বলি নি আমার নাটক দেখতে সরুন।”

বলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সংকল্পকে। তারপর ডাক্তারের কাছে যায়।ডাক্তার তাকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু সে বুঝতে নারাজ।একপর্যায়ে প্রতিজ্ঞা সামনে হুম*কি দেয়,
“যদি আমার হার্ট দেওয়ার ব্যবস্থা না করেন,তাহলে আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দিবো।”

অবস্থা বেগতিক দেখে সাবিহা প্রতিজ্ঞার মাকে ফোন করে সব জানায়।তিনি বলেছেন,কোনোমতে প্রতিজ্ঞাকে আটকাতে,তিনি প্রতিজ্ঞার কাউন্সিলরকে নিয়ে আসছেন।
সাথে প্রতিজ্ঞার কাউন্সিলরের নাম্বারও দিলেন সাবিহাকে।

সাবিহা কাউন্সিলরকে ফোন দিয়ে সব জানায়।প্রতিজ্ঞা উত্তেজিত হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছে।কাউন্সিলর সব শুনে সাবিহাকে বলে ডাক্তারের কাছে ফোনটা দেওয়ার জন্য।সাবিহা ডাক্তারের কাছে ফোন দিলে কাউন্সিলর ডাক্তারের সাথে কিছু কথা বলে ফোন রেখে দেন।

প্রতিজ্ঞা এখনো অস্বাভাবিক আচরণ করছে।ডাক্তার তখন প্রতিজ্ঞাকে শান্ত করতে বলেন,
“আমরা আপনার হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করবো।আমরা সার্জনের সাথে কথা বলছি।আপনি শান্ত হোন।”

তারপর নার্সকে ডেকে কিছু বললে নার্স প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে চলে যায়।

উপস্থিত সকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চায়।কিন্তু ডাক্তার কিছু না বলে চলে যায়।সংকল্প থ মে*রে আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।কি থেকে কি হচ্ছে সে কিছু অনুধাবন করতে পারছে না।

প্রতিজ্ঞা বেডে শুয়ে আছে,চোখদুটো উপরে ছাদে নিবদ্ধ।সংকল্প তার পাশে বসে আছে।সংকল্পের চোখে পানি।মানুষ ভালোবাসতে পারে,কিন্তু তাই বলে এমন!এমন ভালোবাসাকে কি বলে!কি নামে অ্যাখ্যায়িত করা যায়, সংকল্পের জানা নেই।এর মধ্যে সে অনেকবার প্রতিজ্ঞাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে,কিন্তু প্রতিজ্ঞা শুনতে নারাজ।সে তার সিদ্ধান্তে অটল।সংকল্প ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু ডাক্তার ব্যস্ত।

সংকল্প ঢোক গিলে ছলছল চোখে বললো,
“নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিও না।তোমার পুরোটা জীবন বাকি।তুমি অনেক ভালো কিছু ডিজার্ভ করো।নিজের জীবনে এগিয়ে যাও।এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসো।”

প্রতিজ্ঞা কিছুক্ষণ মৌন থেকে উপরে চোখ রেখেই বলতে শুরু করলো,

“এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সব এনটিটি আমি ইগ্নোর করে যেতে পারি শুধু আপনাকে ছাড়া।সেখানে মৃত্যু কোনো বড় কিছু নয়।তাছাড়া আপনার বুকে অন্য কাউকে দেখার চেয়ে আমার কাছে মৃত্যু বড় সুখের,বড়ই আনন্দের।সেখানে আপনার ভালোবাসার মানুষের মধ্যে আমার হৃদয় স্থাপন করা হবে।আমার হৃদয় আপনার হৃদয়ের সান্নিধ্যে আসবে।এর থেকে বড় পাওয়া আমার কাছে কি হতে পারে?আমার শরীর হয়তো আপনার স্পর্শ পাবে না,আপনার সংস্পর্শে আসবে না,আপনার আদর মাখানো স্পর্শ, ভালোবাসা পাবে না,আমার মাথা হয়তো আপনার বুকে ঠাঁই পাবে না,আমি হয়তো আপনার হৃদপিণ্ডের স্পন্দন শুনতে পারবো না, আমার অধরযুগল হয়তো আপনার অধরযুগলে বন্দি হবে না,আপনাকে নিয়ে দেখা এতো এতো স্বপ্ন হয়তো পূরণ হবে না।কিন্তু!কিন্তু,আমার হৃদয় তো আপনাকে পাবে,আমাদের হৃদয়ের মিলন হবে,এই সুযোগ আমি কিভাবে হাতছাড়া করি,বলুন সংকল্প?”

প্রতিজ্ঞা থেমে থেমে কথাগুলো বলে থামলো।সংকল্প টলমলে দৃষ্টিতে লাল চোখে চেয়ে আছে।তবে কিছু বললো না,চুপ করে রইলো।

প্রতিজ্ঞা ঢোক গিলে আবার বলতে শুরু করলো,
“আপনার স্থান আমার হৃদয়ে ছিলো,আছে আর সারাজীবন থাকবে।ওপস্ জীবন তো একটু পরেই শেষ,ফিনিশ,জীবনের দ্য এন্ড!”

শেষ বাক্য চয়নে প্রতিজ্ঞা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।আবার বলতে শুরু করলো,
“কিন্তু আমার হৃদয় স্পন্দিত হতে থাকবে আপনার ভালোবাসার মানুষের হৃদয়ে।আপনি আমার হৃদয়ে থাকবেন।এই মৃত্যু আমি সাদরে গ্রহণ করবো,সানন্দে বরণ করবো।”

এর মধ্যেই নার্স এসে ওয়ার্ড বয়দের তাড়া দিলো।বললো,

“তাড়াতাড়ি নিয়ে আসুন ওনাকে।ওটি রেডি করা আছে।”

ওয়ার্ডবয়রা স্ট্রেচারে ধরতে নিলেই প্রতিজ্ঞা সংকল্পকে করুণ স্বরে বললো,
“আবার একটা অনুরোধ রাখবেন?”
“আপ্রাণ চেষ্টা করবো।বলো!”
সংকল্প জানতে চাইলো।

প্রতিজ্ঞা বিপরীতে হাসলো।বললো,

“এতো কঠিন কিছু চাইবো না।ভালোবাসার মতো সহজ জিনিস চেয়েই পাইনি।আপনাকে একটু ছুঁই? আপনার হাতটা একটু ধরি?সবসময়ই চাইতাম মৃত্যুর সময় যেনো আপনাকে পাশে পাই।আপনার হাতে হাত ধরে পুরো দুনিয়া দেখার স্বপ্ন তো পূরণ হলো না,মৃত্যুর আগে নাহয় আপনার হাতটা ধরে মৃত্যু যাত্রাটা উপভোগ করি।ধরি?”

কথা শেষ হতে দেরী,সংকল্পের হাতে ধরে মাথা ঠেকাতে দেরী নেই।প্রতিজ্ঞার চেহারায় প্রশান্তির ছাপ।সে টের পেলো সংকল্প কাঁদছে। এর মধ্যেই সংকল্ক বললো,
“আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি তোমাকে নিজের করতে পারিনি…”
আরো কিছু বলতে নিলেই প্রতিজ্ঞা থামিয়ে দেয়।কথার পিছে বলে,
“সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না।আমি হয়তো ভূল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম।”

কথাটা শুনতেই সংকল্প অশ্রুভরা দৃষ্টিতে বিস্ময় নিয়ে তাকালো প্রতিজ্ঞার দিকে।প্রতিজ্ঞা হেঁসে বললো,

” আপনি আমাকে ভালো না বাসলেও, আমি ভালোবাসি আপনাকে।আই লাভ ইউ মোর দ্যান এনিথিং।”

সংকল্প মাথানত করে ফেললো।প্রতিজ্ঞা ডাকলো,
“শুনোন!”
“বলো!” দৃষ্টি না তুলেই বললো সংকল্প।

“হে সখা,মম হৃদয়ে রহো।”

আবার,বললো,

“নিঃশব্দ অশ্রুপাতে অগণিত প্রহর কাটাইয়া অবশেষে সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে।”

সংকল্প তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি তুললো।

ওর্য়াড বয়রা এবং নার্স প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে যাচ্ছে।সংকল্প এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ঐদিকে।তার মানসপটে প্রতিজ্ঞার সব কর্মকান্ড,পাগলামী সব ভেসে উঠছে।মেয়েটা তার জন্য জীবনটাই দিয়ে দিলো।বিপরীতে সে মেয়েটাকে দুঃখ ব্যতীত কিছু দিলো না।তার মস্তিষ্কে যেনো বারবার ঐ একটা বাক্যই আন্দোলিত হচ্ছে,

“হে সখা,মম হৃদয়ে রহো।”

চলবে….

[স্যাড স্যাড দিতে দিতে অর্ধেকের বেশি পাঠক হারিয়ে ফেলেছি।যাও কয়েকজন ছিলেন,আপনাদের আজকে হারিয়ে ফেলবো।তবুও আমি লিখলাম।ঐ যে থিমটাই এমন।মেয়েটা যদি নিজের ভালোবাসাই প্রকাশ করতে না পারে তাহলে থিমটাই চেন্জ হয়ে যাবে।আর হ্যাঁ,জীবিত মানুষ হার্ট দিতে পারে না।এটা আইনত অপরাধ।হ্যাপি রিডিং]
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here