#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১৫
সূর্যালোক ধরণীতে তার দাপট ছড়াচ্ছে তীব্রভাবে।বোঝার উপায় নেই এখন সবেমাত্র সকাল দশটা বাজে।জানালার মাধ্যমে সূর্যের আলো এসে ঘুমন্ত মানবীর চোখে-মুখে পড়ছে।বিরক্তিতে সে মুখ কুঁচকে আছে।একবার বালিশ মুখের উপর রেখে মুখ ঢাকছে,আবার কাঁথার নিচে মুখ লুকাচ্ছে।এভাবেই কয়েকঘন্টা যাবৎ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে গড়াগড়ি খাচ্ছে এই মানবী।ঘুম যেনো তাকে ছাড়ছেই না।ছাড়বে কি করে,রাতে যে ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলো।এবার বিরক্তিতে সে উঠে বসলো।চেহারায় বিরক্তিভাব স্পষ্ট।তার কেমন জানি হাস ফাঁস লাগছে।অদ্ভুত লাগছে।ঘুম এখনো কা*টেনি।ঘুম ঘুম চোখে সে বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়ালো।জানালার পর্দা সরানো দেখেই তার মেজাজ চওড়া হতে লাগলো।কিন্তু চুপ করে রইলো।সে জানে এটা হয় মায়ের কাজ নাহয় ভাবীর কাজ।সামনের দিকে পা বাড়াতো নিবে তখনই চোখ যায় বিছানার পাশের ট্রি টেবিলটায়।সে ঐদিকে পা বাড়ায়।টেবিলের উপর একটা হলুদ রঙের চিরকুট রাখা।মানবী আগ্রহ নিয়ে চিরকুটটা খুলতেই গুটি গুটি অক্ষরে লেখা,
“Good morning.Get ready to be swept away in love Mrs. Afnan Ahmed Songkolpo.”
“সংকল্প” নামটা দেখতেই মানবীর বুকটা ধ্বক করে উঠলো।কিছুক্ষণ আগে হারিয়ে যাওয়া মেজাজ তিরতির করে বাড়তে লাগলো।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।চিরকুটটাকে ষোল টুকরো করে মেঝেতে ফেলে দিলো।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“ভালোবাসা বলতে কিচ্ছু নেই,কিচ্ছু না।গল্পতেই ভালোবাসা শব্দের উৎপত্তি, গল্পতেই ভালোবাসা শব্দের বিনাশ।”
তারপর চিৎকার করে নাদিয়াকে ডাকতে লাগলো। নাদিয়া নিচে কাজ করছিলো।চিৎকার শুনে কোনোমতে তাড়াহুড়ো করে এসেছে।হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
“কি হয়েছে প্রতিজ্ঞা?চেঁচাচ্ছ কেনো?”
প্রতিজ্ঞা শক্ত গলায় বললো,
” আমার ঘরে কে এসেছিলো ভাবী?”
নাদিয়া স্বাভাবিকভাবে বললো,
“আমি এসেছিলাম তুমি উঠেছো কিনা দেখতে।কেনো কিছু হয়েছে?”
প্রতিজ্ঞা আবার বললো,
“তোমার কথা বলিনি।তুমি ছাড়া আর কে এসেছিলো?”
নাদিয়া আশেপাশে চোখা বুলালো।কিছু একটা ভাবলো।তারপর স্বাভাবিকস্বরে বললো,
“আর কেউ তো আসেনি।কাজের লোকরা তো তোমার ঘরে আসে না।তুমিই তো নিষেধ করেছো।কিছু কি হয়েছে?বলো আমাকে!”
প্রতিজ্ঞা তীক্ষ্ণ চোখে নাদিয়াকে দেখছে।নাদিয়ার তাতে হেলদোল নেই।সে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিজ্ঞার উত্তরের অপেক্ষায় আছে।প্রতিজ্ঞা ঐ বিষয়ে কিছু বললো না।শান্ত স্বরে বললো,
“কিছু হয় নি।যাও এখন তুমি।”
নাদিয়া গেলো না।বরং প্রতিজ্ঞার দিকে এগিয়ে গেলো।প্রতিজ্ঞা৷ মাথানত করে বিছানায় বসে আছে।কিছু একটা ভাবছে।নাদিয়া প্রতিজ্ঞার পাশে গিয়ে বসলে প্রতিজ্ঞা প্রশ্নার্ত দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে।শান্তস্বরে বললো,
“কি হয়েছে?যেতে বলেছি তো তোমাকে।যাচ্ছো না কেনো?”
নাদিয়া প্রতিজ্ঞার মাথায় হাত বুলাতে শুরু করলো।আদুরে স্বরে বললো,
“কেনো বদলে গেলে প্রতিজ্ঞা?তুমি তো এমন ছিলে না।একটা হাসি-খুশি,প্রাণবন্ত মেয়ে ছিলে।আর এখন বদমেজাজি,খিটখিটে স্বভাবের হয়ে গেছো।বাবা-মা,তোমার ভাই তোমাকে নিয়ে কত চিন্তায় থাকে তুমি জানো?হঠাৎ হঠাৎ রুদ্রমূর্তি ধারণ করো আবার হঠাৎ শান্ত হয়ে যাও।খারাপ সঙ্গের সাথেও উঠাবসা এখন তোমার।সবই বাবার কানে আসে।কিছু বলতে পারেন না,তুমি শুনবে না বলে।কেনো এমন হয়ে গেলে প্রতিজ্ঞা?”
প্রতিজ্ঞা বিমূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।সাথে সাথেই কিছু বললো না।বিছানা থেকে উঠে চলে গেলো জানালার সামনে।জানালার গ্রিলে হাত রেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“ভালোবাসা নামক একটা নি”ষ্ঠুর শব্দ আমাকে বদলে দিয়েছে ভাবি।কিছুই তোমার অজানা নয়।”
নাদিয়া আগের জায়গায় বসে থেকেই বললো,
“তোমার ভালোবাসা তো পূর্ণতা পেয়েছে।সংকল্প তোমার স্বামী।”
প্রতিজ্ঞা তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো।তার দৃষ্টি বাহিরে।বললো,
“স্বামী!যে কিনা বিয়ের পরেরদিন আমার অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ করে আমায় ছেড়ে চলে গেলো।”
নাদিয়া উঠে দাঁড়ালো।পা বাড়ালো প্রতিজ্ঞার দিকে।বললো,
“তোমার জন্যই তোমার থেকে দূরে গিয়েছে।তখন তো সংকল্প অপরাধবোধের কারণে তোমার চোখে চোখ রাখতেই পারতো না।তোমার কন্ডিশনের কারণে নিজেকে দোষারোপ করতো।নিজেকে তোমার অযোগ্য ভেবেই সে তোমাকে নিজের সাথে জড়াতে চাইনি।তুমিই ওকে জোর করেছো বিয়ের জন্য।”
প্রতিজ্ঞা তাকালো নাদিয়ার দিকে।শেষ বাক্যটা কর্ণগোচর হতেই রাগান্বিত স্বরে বললো,
“ভুল করেছিলাম। শুনেছো তুমি?যাও এখন এখান থেকে।।যাও!”
নাদিয়া তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো।বললো,
“অপরাধবোধ,অনুতপ্ততার আর যাই হোক সংসার করা যায় না।তুমি কি ভাবছো সংকল্প তোমাকে ছাড়া ভালো আছে?সুখে আছে?তুমি ভুল ভাবছো।তুমি যতটা কষ্ট পাচ্ছো,সেও ততটাই কষ্ট পাচ্ছে।কতটা অপরাধবোধ কাজ করলে ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে থাকে মানুষ?ভেবে দেখো তো একবার।”
প্রতিজ্ঞা কিছু বললো না।সে এখনো এক দৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে।তার মুখ কঠিন হয়ে আছে।নাদিয়া আর কিছু বললো না।চলে গেলো ঘর থেকে।দেখলো না বাহিরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লুকিয়ে রাখা অশ্রভরা চোখ দুটোকে।
প্রতিজ্ঞা ঘুরে দাঁড়ালো।হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছলো।নিজেকে ধাতস্থ করে ঢোক গিললো।শক্ত গলায় বিড়বিড় করলো,
“অনেক কেঁদেছি,আর কাঁদবো না।ঘৃণা করি আপনাকে,শুধুই ঘৃণা করি।”
বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো প্রতিজ্ঞা।
হাত-মুখ ধোঁয়ার সময় গলায় পানির ফোঁটা পরতেই অনুভব করলো গলার এপাশটা কেমন জ্বলছে।আয়নাতে ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো একটু জায়গা কেমন কালসিটে হয়ে আছে।চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো প্রতিজ্ঞার।এটা কি!কিভাবে হলো!কখন হলো কিছুই বুঝতে পারলো না।উল্টো এই দাগ আরো চিন্তায় ফেলে দিলো তাকে।কে এসেছিলো রাতে!
প্রতিজ্ঞার ধ্যান ভাঙ্গে মেসেজের টুংটাং শব্দে।সে চিন্তিত ভঙ্গিতেই ফোনের কাছে গেলো।ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ অপশনে গিয়ে মেসেজ দেখেই তার চক্ষু চড়কগাছ।অচেনা একটা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।একটা মেসেজ নয়,বরং দুইটা।প্রথম মেসেজ,
“এভাবে এলেমেলো হয়ে ঘুমোলে তো নিজেকে কন্ট্রোল করা মুশকিল।আজকে ছেড়ে দিয়েছি তবে নেক্সট টাইম ছাড়বো না বউ।”
পরবর্তী মেসেজ,
“গলার দাগটা নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই।ঐটা তোমার এলোমেলো হয়ে ঘুমানোর জন্য আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটা শাস্তি।”
প্রতিজ্ঞা যেনো রাগ করতেই ভুলে গেলো।মাথাতেই আসছে না কে এমন করতে পারে।বউ বলে সম্বোধনই-বা কেনো করছে!প্রতিজ্ঞার প্রথমেই সংকল্পের কথা মাথায় আসলো।কিন্তু সে সংকল্পকে যতটুকু চিনে সংকল্প তো এতো ঠোঁটকাটা স্বভাবের না।আর সংকল্প দেশে ফিরলোই বা কবে!
প্রতিজ্ঞা আর কিছু ভাবতে পারলো না।ঐ নাম্বারে মেসেজ পাঠালো,
“কে আপনি?”
ঐপাশের মানুষটা যেনো ফোনটা হাতে নিয়েই বসে ছিলো।মেসেজের অপেক্ষা করছিলো।ফিরতি মেসেজ পেয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।সাথে সাথে ফিরতি মেসেজ পাঠায়,
“প্রাণপুরুষ”
“প্রাণপুরুষ” শব্দটা দেখেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো প্রতিজ্ঞার।প্রাণপুরুষ তো সংকল্প।তাহলে কি সংকল্প দেশে ফিরেছে!এতোকিছু না ভেবে সাথে সাথে ঐ নাম্বারে কল করলো।একবার,দুইবার,তিনবার পরপর সাতবার কল করলো।বারবার ওপাশ থেকে এক সুন্দরী রমণী বলে চলেছে,
“আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন তাতে এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।অনুগ্রহপূর্বক কিছুক্ষণ পর আবার কল করুন।”
প্রতিজ্ঞা রাগে গিজগিজ করতে করতে কন্টাক্টলিস্ট খুঁজে “সাব্বু” দিয়ে সেইভ করা নাম্বারটায় কল করলো।কতদিন পর এই নাম্বারে কল দিলো সে।সাথে সাথেই রিসিভ হলো।সাবিহা যেনো জানতো প্রতিজ্ঞার কল আসবে।ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো।প্রতিজ্ঞা কিছু বলার আগেই সাবিহা দুষ্টুমির স্বরে বললো,
“বাবাহ!আজকে সূর্য কোন দিক দিয়ে উদয় হলো আমার ভাবীজান আমাকে কল দিলো যে?ব্যাপার কি!”
প্রতিজ্ঞা কাঠকাঠ গলায় বললো,
“তোর ভাই দেশে ফিরেছে?”
সাবিহা ভাবুক ভঙ্গিতে বললো,
“বাড়িতে তো দেখি নি।”
প্রতিজ্ঞা গলার স্বর এক রেখেই বললো,
“তোর সাথে মজা করার জন্য ফোন দেই নি।যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বল।”
এবার সাবিহা সিরিয়াস হয়ে বললো,
“আমি জানি না।দেশে আসলে তো জানতাম।”
প্রতিজ্ঞা আর কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়। কল কাঁটার সাথে সাথেই দুই ভাই-বোন শব্দ করে হেঁসে উঠে।সাবিহা হাসতে হাসতে বলে,
“ভাই এবার তোর অনেক কাঠখড় পো*ড়াতে হবে।প্রতিজ্ঞা এখন মোমের মতো কঠিন হয়ে গেছে।”
সংকল্প দুর্বোধ্য হেঁসে বললো,
“প্রতিজ্ঞা মোম হলে আমি আ*গুন।আমার সংস্পর্শে এলে ওর কঠিন হৃদয় গলতে বাধ্য।”
#চলবে…
#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১৬ (বিয়ে স্পেশাল))
অতিরিক্ত চিন্তার দরুন আজ আর বের হওয়া হয় নি প্রতিজ্ঞার।মাথায় কিসব উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা আসছে।বারবার সংকল্পকে মনে পড়ছে।পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে।সংকল্পকে ভুলার জন্য কত কষ্ট,কত চেষ্টাই না সে করছে।তবে ভালোবাসার মানুষকে কি ভুলা যায়?মন থেকে কি একেবারের জন্য মুছে ফেলা যায়?মুছবে কি করে?পুরো হৃদয়জুড়ে যার অবস্থান,তাকে ভুলবে কি করে।তাহলে তো হৃদয়ের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।কিন্তু সংকল্পের প্রতি অভিমানেরা ঝেঁকে বসে আছে।দূরে গিয়েছে ঠিক আছে,তাই বলে কোনো যোগাযোগ রাখবে না!এতোদিনেও ফিরবে না!অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না, যত সময় যাচ্ছে তত যেনো অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হচ্ছে।তাইতো প্রতিজ্ঞা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে।ভুলে যাবে সংকল্পকে।তাকে যদি সংকল্প ভুলতে পারে,তাহলে সেও ভুলতে পারে।কিন্তু এই মানুষটার প্রতি রাগ,অভিমান কোনোটাই তো কাজ করে না।সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে বসেও লোকটা কেমন তার হৃদয়ে রাজত্ব চালাচ্ছে।প্রতিজ্ঞার মনে পড়ে যায় সংকল্পের দেশ ছাড়ার আগের দিনের কথা,তার বিয়ের দিনের কথা।
সূর্যের আলোর প্রভাবে সবেমাত্র আলোকিত হয়েছে ধরণী।ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে প্রতিজ্ঞার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।বুঝা যাচ্ছে,ফোনের ওপাশের ব্যক্তি অধৈর্য্যবান,সে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে।প্রতিজ্ঞা চোখ বন্ধ রেখেই ফোন খুঁজতে থাকে।পেয়ে গেলে ঘুমঘুম নেত্রপল্লব অল্পবিস্তর খুলতেই দেখতে পায় স্ক্রিনে “জাহানারা আন্টি” নামটা ভাসছে।সে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।বিরক্তিভাব উবে যায়।রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসে।প্রতিজ্ঞা ভয় পেয়ে যায়।কিছু বলতে নিবে তার আগেই জাহানারা বেগমের এক বাক্যে তার শরীর হিম হয়ে যায়।জাহানারা বেগম ক্রন্দনরত সুরে বলেন,
“প্রতিজ্ঞা সংকল্পকে আটকা,ও চলে যাচ্ছে।আমাদেরকে ছেড়ে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।ওকে আটকা।”
কর্ণগোচর হতেই প্রতিজ্ঞার ঘুম ছুটে যায়।শরীর দিয়ে বয়ে যায় হারানোর এক সুর।এই বেদনার সুর সহ্য করার মতোন না।সে চায় না দ্বিতীয়বারের মতো এই সুরের মুখোমুখি হতে।তার কথারা আঁটকে গেছে।বের হচ্ছে না।জাহানারা বেগম আরো কি কি যেনো বললেন তা প্রতিজ্ঞার কান অব্ধি পৌঁছায় নি।অনেকক্ষণ পর নিজেকে ধাতস্থ করে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“আমি আসছি।”
কল কেটে দেয়।দু’হাতে মাথায় চেপে ধরে বসে আছে।কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হওয়ার কাপড় পরে নেয়।সাদা রঙের হাঁটু অব্ধি কুর্তি,ছাই রঙা জিন্স।গলায় কুর্তিতে কাজ করা ল্যাভেন্ডার রঙের ওড়না প্যাঁচায়।চুলগুলো তাড়াহুড়োয় খোঁপা বেঁধে নেয়।কয়েক গোছা চুল কপাল পেরিয়ে নাকে,গালে স্পর্শ করছে।তারপর নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে আহমেদ মেনশনের উদ্দেশ্যে।
ঝড়ের বেগে আহমেদ মেনশনে পৌঁছায় প্রতিজ্ঞা।এদিক-সেদিক না তাকিয়ে আলোর গতিতে ছুটে যায় সংকল্পের ঘরে।ড্রয়িংরুমে উপস্থিত ছিলেন বাড়ির সবাই,শাহআলম সাহেব, সাইদুল সাহেব,জাহানারা বেগম,মাধুরী বেগম, সাবিহা।তারা ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলেন,যেনো কিছুই হয় নি।
রাহিব-সাহিব তখন খাচ্ছিলো।একজনের হাতে ব্রেড, আরেকজনের হাতে জুস।প্রতিজ্ঞার এমন আচমকা দৌড়ের বেগ দেখে একজন ব্রেডে কামড় বসিয়েই,চোখ বড়বড় তাকিয়ে আছে।আরেকজন জুস পান করতে গিয়ে নাকে-মুখে উঠে যায়।কাশতে শুরু করে।থামতেই দু’জনই দু’জনের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে সমস্বরে বলে উঠলো,
“উল্কাপিণ্ড!”
প্রতিজ্ঞা সংকল্পের ঘরের দরজাটায় ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে হাঁপাচ্ছে।বাম হাত দিয়ে বুক ধরে আছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।চল্লিশ মিনিটের রাস্তা সে বিশ মিনিটে এসেছে,পাঁচ মিনিটের পথ সে পয়তাল্লিশ সেকেন্ডে এসেছে।
সংকল্প গম্ভীর দৃষ্টিতে দেখছে প্রতিজ্ঞাকে।সে বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো।হঠাৎ আলোর বেগে প্রতিজ্ঞা অবতারণে সে অবাক হয় না।সে জানতো প্রতিজ্ঞা আসবে।অবাক হয় প্রতিজ্ঞার হাঁপানো দেখে।এগিয়ে এসে প্রতিজ্ঞার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।প্রতিজ্ঞা এক নিঃশ্বাসে পানিটা শেষ করে।
সংকল্প দু’হাত বুকে ভাজ করে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
“তুমি কি বাড়ি থেকে দৌড়ে চলে এসেছো?”
প্রতিজ্ঞা করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে পানির গ্লাস নিয়ে সংকল্পকে পাশ কাটিয়ে ঘরের ভেতর চলে যায়।গ্লাসটা তার আগের অবস্থানে রাখে।সংকল্প দরজার পাশে বুকে হাত গুঁজে প্রতিজ্ঞাকে অবলোকন করছে।
প্রতিজ্ঞা সংকল্পের দিকে পূর্ণদৃষ্টি স্থাপন করে শান্তস্বরে শোধালো,
“আপনি নাকি কালকে চলে যাচ্ছেন?”
সংকল্প যেনো কিছু মুহুর্তের জন্য পরিস্থিতি ভুলে বসেছিলো।প্রতিজ্ঞার প্রশ্নে সে চোখ ফিরিয়ে নেয়। অন্যদিকে তাকিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।প্রতিজ্ঞাও পেছন পেছন যায়। সংকল্পের দৃষ্টি ঐ লাল-কমলা রঙের ফুল গুলোর দিকে,আর প্রতিজ্ঞার দৃষ্টি সংকল্পে।
প্রতিজ্ঞা ফের শোধায়,
“কেনো যাচ্ছেন?”
সংকল্প তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে স্পষ্ট জবাব দেয়,
“কাউকে ভালো রাখার জন্য।”
প্রতিজ্ঞা হয়তো কিছু বুঝলো।তবুও অজ্ঞাত হয়ে শোধালো,
“আপনি কাউকে ভালোবাসেন?”
“বাসি।” স্পষ্ট জবাব সংকল্পের।দৃষ্টি ঐ লাল-কমলা রঙের ফুল গুলোতে নিবদ্ধ।
শব্দটা কর্ণগোচর হতেই প্রতিজ্ঞার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।ঠোঁট কামড়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“তার কাছেই ফিরে যাচ্ছেন?সে বুঝি কানাডায় থাকে?”
সংকল্প চমৎকার হাসলো।তাকালো প্রতিজ্ঞার দিকে।কিন্তু ঐ চোখগুলোয় সে বেশিক্ষণ তাকাতে পারে না।অপরাধবোধ, অনুতপ্ততা ঘিরে ফেলে।সংকল্প দৃষ্টি পরিবর্তন করে। শান্ত স্বরে বলে,
“সে এখানেই থাকে। তাকে ভালো রাখার জন্যই তাকে ছেড়ে যাচ্ছি।সে আমার থেকে ভালো কাউকে ডিসার্ভ করে।আমি তো ব্যর্থ প্রেমিক।তার কষ্ট ঘোচাতে পারি নি।বরং কষ্ট দিয়েই গেছি।মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছি।অপরাধবোধ আমাকে প্রতিমুহূর্তে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।তাই দূরত্ব চাই।”
প্রতিজ্ঞা অনেক কিছুই বুঝলো।দু’কদম এগিয়ে বললো,
“কতটা ভালোবাসেন তাকে?”
সংকল্প প্রতিজ্ঞার চোখে চোখ মিলিয়ে বললো,
“কতটা ভালোবাসি জানি না,তবে তার থেকে অনেক অনেক কম।”
তারপর বেলকনিতে এক ঝাঁক নিরবতার আগমন ঘটলো।দু’জনের দৃষ্টি দু’দিকে।কিছুক্ষণ পর প্রতিজ্ঞা আরো কয়েক কদম এগিয়ে সংকল্পের পাশে দাঁড়ালে সংকল্প চকিতে ফিরে তাকায়।শান্ত দৃষ্টিতে প্রশ্ন।প্রতিজ্ঞা ঐ শান্ত দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে করুণ স্বরে বললো,
“আমাকে আমার মতো করে ভালোবাসতে হবে না।আপনি শুধু আমার হয়ে যান,আমার সাথে থেকে যান সারাজীবনের জন্য।তাহলেই হবে!”
সংকল্পের চেহারায় আঁধার নেমে আসে।মাথা নত করে ফেলে।নতমস্তকে বলে,
“অসম্ভব।তুমি আমার থেকে ভালো ডিসার্ভ করো।আমার জন্য প্রতিনিয়ত তুমি কষ্ট পেয়েছো।আমি শুধু দেখেছি।কিছু করতে পারি নি, কিছু না।”
প্রতিজ্ঞা নিজের দু’হাতের আজলে সংকল্পের মুখটা নিয়ে বলে,
“আপনি তো জেনে বুঝে করেন নি।আপনি জানতেন না।আমার ভালো কাউকে লাগবে না।আমার শুধু আপনাকে লাগবে।আমার শুরুও আপনি,শেষও আপনি।”
সংকল্প নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।গাল ফুলিয়ে বুকভরা নিঃশ্বাস নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“জেনে হোক, অজান্তে হোক আমার জন্যই তুমি কষ্ট পেয়েছো।আমি তখন কিচ্ছুটি করতে পারি নি।অনেক কষ্ট পেয়েছো, আর না।আমি চাই না তুমি আমার সাথে নিজেকে জড়াও।নিজের জীবন নষ্ট করো।আমি চলে যাচ্ছি।তুমি নিজের জীবন গুছিয়ে নিও।শুভকামনা রইলো।এখান থেকে চলে যাও।যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ কষ্ট পাবে।আমি তোমাকে কষ্ট ছাড়া কিছু দিতে পারি নি,আর না দিতে পারবো।”
প্রতিজ্ঞা গেলো না।সেই জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।সংকল্প প্রতিজ্ঞাকে পিছ দিয়ে বেলকনির গ্রিল এক হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।অশ্রু লুকানোর প্রয়াস।প্রতিজ্ঞার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।যেকোনো সময় অশ্রুবর্ষণ হতে পারে।ঠোঁট কা ম ড়ে,অশ্রু আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে সে।
অনেকক্ষণ মৌনতা অবলম্বন করে দৃঢ় কন্ঠে প্রতিজ্ঞা বললো,
“আমার একটা কথা রাখবেন?”
“কি?”ঐভাবেই বললো সংকল্প।
“বলুন না রাখবেন কিনা!”
“আপ্রাণ চেষ্টা করবো।বলো!” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো সংকল্প।
প্রতিজ্ঞা ঢোক গিলে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“আমাকে বিয়ে করবেন,এখন,এই মুহুর্তে।”
সংকল্পের মাথায় যেনো বজ্রাঘাত হলো।বিস্ময় নিয়ে তাকায় প্রতিজ্ঞার দিকে।সে কল্পনাও করতে পারে নি প্রতিজ্ঞা এমন কিছু বলবে।প্রতিজ্ঞার হেলদোল নেই।সে অপেক্ষা করছে সংকল্পের উত্তরের। অধৈর্য্য হয়ে বললো,
“চুপ করে আছেন কেনো?”
সংকল্প প্রতিজ্ঞার দু’কাধে হাত রেখে কাঠ কাঠ স্বরে বললো,
“তুমি কি পা গল হয়ে গেছো?কিসব বলছো?আমি তোমার চোখের দিকে চোখ তুলে তাকাতে অব্দি পারি না।নিজেকে নিজের কাছে ঘৃণ্য মনে হয়,তুচ্ছ মনে হয়।ইচ্ছে করে শেষ করে দিই নিজেকে।তোমার জন্য,তোমার ভালো থাকার জন্য আমি চলে যাচ্ছি।আর তুমি বিয়ে করতে বলছো?”
” আপনার জন্যই পা গল হয়েছি।জানেন না আপনি?আপনি আমাকে কথা দিয়েছেন আমার কথা রাখবেন।আপনাকে বিয়ে করতে হবে।”
রাগান্বিত স্বরে বললো প্রতিজ্ঞ।
সংকল্প প্রতিজ্ঞাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে।বলে,
“এভাবে বিয়ে হয় না।অপরাধবোধ নিয়ে সংসার করা যায় না প্রতিজ্ঞা।আমার সিচুয়েশনটা একটু বুঝার চেষ্টা করো।আমি তোমার চোখের দিকে তাকাতে পারি না,তোমার সাথে কথা বলতে গিল্টি ফিল হয়,রিগ্রেট হয়,সেখানে বিয়ে কিভাবে করবো?অসম্ভব।”
“আপনাকে সংসার করতে হবে না।আপনি কালকে চলে যাবেন।আমি কোনো আপত্তি করবো না।এতোবছর অপেক্ষা করেছি,এতদিন কষ্ট সহ্য করেছি।আরো নাহয় কিছুদিন অপেক্ষা করবো।তবুও আপনি এখন বিয়ে করবেন।”
স্বাভাবিকভাবে বলে প্রতিজ্ঞা।
সংকল্প শক্ত গলায় বলে,
“তুমি সুখী হবে না।”
“আপনাতেই আমার সুখ নিহিত,সংকল্প।আপনি আমার হয়ে যাবেন, এর থেকে সুখের আর কি হতে পারে!”
সংকল্প এবার বললো,
“তোমার বাবা-মা রাজি হবে না।বোঝার চেষ্টা করো।”
প্রতিজ্ঞা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“বাবা-মা কেনো,আমার চোদ্দগুষ্টি রাজি।বাবা-মা কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের বিয়ের কথা বলার জন্য এবাড়িতে আসতো।”
সংকল্প অবাক হয়ে বলে,
“মানে?”
“মানে আমি বাবা-মাকে আগেই রাজি করিয়েছি।বাবা-মা বিজি তাই আসতে পারছিলেন না।”
সংকল্প অবাক না হয়ে পারলো না।এই মেয়ে তো তার ভাবনার চেয়েও কয়েক কদম এগিয়ে আছে।বোঝা যাচ্ছে, এবার ভালোভাবেই আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে।সংকল্প আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখলো প্রতিজ্ঞা ব্যস্তভঙ্গিতে কাকে যেনো কল করছে।ওপাশ হতে কলটা রিসিভ হতেই প্রতিজ্ঞা স্বাভাবিকভাবে বললো,
“হ্যালো বাবা!”
সংকল্প বুঝলো প্রতিজ্ঞা আনোয়ার সাহেবকে কল করেছে।সে ভ্রুকুটি করে দেখছে এই মেয়ে কি করে!
আনোয়ার সাহেব হেঁসে বললেন,
“হ্যাঁ মা বলো।”
“বাবা আমি বিয়ে করবো।” ফটাফট বলে ফেললো প্রতিজ্ঞা।
সংকল্পের চোখগুলো কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম।কোনো মেয়ে এভাবে বিয়ের কথা তার বাবাকে বলতে পারে বলে সংকল্পের জানা ছিলো না।আজকে জানা হয়ে গেলো।
আনোয়ার সাহেব হাসতে হাসতে মেয়েকে বললেন,
“করবে তো।আমরা তো বলেছি যাবো সংকল্পদের বাড়িতে।কথা বলবো ওদের সাথে।”
“কোনো কথা বলা লাগবে না।আমি সংকল্পদের বাড়িতে আছি।তুমি এক্ষুণি আসবে অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল।আমি আজ,এই মুহুর্তে বিয়ে করবো।”
বলে ফোন কেটে দেয় প্রতিজ্ঞা।
আনোয়ার সাহেব বুঝলেন কিছু হয়েছে।নাহলে মেয়ে এমন করতো না।জরুরি মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।যাওয়ার সময় স্ত্রীকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে গেলেন।প্রতিজ্ঞার মা সারা রাস্তা রাগে গিজগিজ করলেন।তিনি রাজি ছিলেন না এই বিয়েতে।কিন্তু বাবা-মেয়ে রাজি তার আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাসলিমা বেগম গিজগিজ করতে করতে বললেন,
“মেয়েকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছো।হঠাৎ ফোন দিয়ে বলে আমি এখন বিয়ে করবো।ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসতে হয় মেয়ের বিয়ের খবর পেয়ে।কপাল করে মেয়ে জন্ম দিয়েছিলাম।কত খেল দেখালো।”
আনোয়ার সাহেব স্ত্রীকে থামানোর জন্য বলেন,
“চুপ করো তো।তুমি আমি পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।ভুলে গেছো?সেখানে আমার মেয়ে তো আমাকে ফোন করে ডেকেছেই।”
তাসলিমা বেগম স্বামীর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকান।খেট খেট করে বলেন,
“তুমি যেমন ব জ্জা ত, তোমার মেয়েও হয়েছে তেমন।আমার ছেলেটা আমার মতো ভালো হয়েছে।”
আনোয়ার সাহেব ভেঙচি দিয়ে বলেন,
“অ্যাহ!তোমার ছেলে ভালো হয়েছে?তোমার ছেলে নাদিয়ার বাবাকে আগে পটিয়েছে।তারপর বিয়ে করেছে।চুপ করে বসো।”
তাসলিমা বেগম আর কিছু বললেন না।বিড়বিড় করে স্বামী এবং মেয়ের পিন্ডি চটকালেন।তানিমকে ফোন করা হয়েছে,সে মিটিং এ থাকায় আসতে পারবে না।নাদিয়া বাপের বাড়ি গিয়েছিলো আজ সকালেই।দু’দিন পরে আসার কথা।সে শুনামাত্রই বেরিয়ে পড়েছে।
আনোয়ার সাহেব এবং তাসলিমা বেগম আহমেদ মেনশনে পৌঁছে সবাইকে থমথমে অবস্থায় বসে থাকতে দেখেন।কাজী সাহেবকেও নিয়ে আসা হয়েছে।বন্ধুমহলকে ফোন করতেই ওরা কাজীকে ধরে বেঁধে নিয়ে আসে।ওদের সবার তো আজ খুশীর দিন।
সংকল্প নতমস্তকে বসে আছে।বাড়ির মানুষের সামনে লজ্জায় তার মাথাকা টা যাচ্ছে।যেখানে প্রতিজ্ঞার লজ্জা পাওয়ার কথা সেখানে সংকল্প লজ্জা পাচ্ছে।আর প্রতিজ্ঞা সে সংকল্পের হাত ধরে পাশ ঘেঁষে বসে আছে।সংকল্প তার হবে এর থেকে খুশির,আনন্দের কি হতে পারে!
জাহানারা বেগম তো আনন্দে আত্মহারা।উনি বলেছিলেন প্রতিজ্ঞাকে সাজিয়ে দিতে।কিন্তু প্রতিজ্ঞার এক কথা,
“সাজগোজের সময় নেই।তোমার ছেলে সুযোগ পেলে কালকের পরিবর্তে আজই চলে যাবে।সে সুযোগ খুঁজছে পালানোর।”
শাহআলম সাহেব কিছু বলেন নি।তবে মনে মনে খুশি হয়েছেন।অপরাধবোধ কিছুটা কমেছে।
কাজী সাহেব যখন কবুল বলতে বললে সংকল্প চুপ করে বসে ছিলো।সে কিছু ভাবতে পারছে না।তার জীবনে সবকিছুই কেমন হঠাৎ হঠাৎ হয়ে যাচ্ছে।দুটো বিয়ের একটাও সে আগে থেকে জেনে করতে পারলো না।
প্রতিজ্ঞা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“কবুল বলছেন না কেনো?বলুন!
সংকল্প শুকনো কেশে বললো,
” প্রতিজ্ঞা, এখনো সময় আছে।ভেবে দেখো…”
কথা শেষ করার আগেই প্রতিজ্ঞা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“কোনো ভাবাভাবি নাই।বিয়ে করবো এখন।কবুল বলুন!বাবা তোমার রিভালবারটা দাও তো।”
সবাই হাসছে।সংকল্প অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে কবুল বলে ফেলে।
প্রতিজ্ঞাকে বলতে বললে সে ফটাফট কবুল বলে ফেলে।অবশেষে তার ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পেলো,সংকল্প তার নামে লিখিত হলো।তার চোখে-মুখে খুশীর ছাপ স্পষ্ট।চোখে প্রাপ্তির জল…
সবাই স্বাক্ষী হয় এক অদ্ভুত বিয়ের যেখানে বর-কনে থেকে শুরু করে সবাই ঘরের পোশাক পড়া।আর মেয়ের বাবা ইউনিফর্ম পড়া…
ঐদিনের কথা মনে পড়তেই প্রতিজ্ঞার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।সে সত্যিই পা গল হয়ে গিয়েছিলো।আজও পা গল আছে।তবে শাস্তি তো সংকল্পকে পেতেই হবে….
#চলবে…
[বিয়েটা এভাবে দেওয়ার একমাত্র কারণ শুরু থেকেই প্রতিজ্ঞাকে আমি অন্যরকম রেখেছি।এখনো অন্যরকম রাখলাম।জানি এতেও আপনারা কথা শুনাবেন।হ্যাপি রিডিং।]
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/