অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ অবন্তিকা_তৃপ্তি #পর্ব_৩০(১৮+ এলার্ট)

0
330

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_৩০(১৮+ এলার্ট)

রাতের খাবার শেষ করে তুলি বাসনপত্র রান্নাঘরে নিয়ে যাচ্ছিল। আফরোজা হাত মেলাতে চাইলেন কাজে- তুলি জোর করে তাকে রুমে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলো। তারপর নিজেই একা একা বাসনপত্র নিতে লাগলো রান্নাঘরে। হঠাৎ শুভ্র হাত ধুয়ে এসে নিজেও একটা একটা করে বাসন রান্নাঘরে নিয়ে এলো। তুলি শুভ্রকে কাজ করতে দেখে হইহই করে উঠে বললো- ‘কী করছেন? আমি পারব। কটা বাসনই তো।’

শুভ্র গ্লাসগুলো রান্নাঘরের বেসিনে রেখে বললো -‘হাতে হাতে করলে দ্রুত শেষ হবে। আমি বাসন আনছি- তুমি এগুলো ডিশ ওয়াশারে দিয়ে দাও।’

শুভ্র বাসন রেখে আবারও ডাইনিংয়ে গেলো। তুলি মৃদু হেসে শুভ্রর যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকল। ওমন একটা সোনার মানুষ আল্লাহ তুলির কপালে রেখেছিলেন? তুলি হালকা হেসে সব বাসন ডিশ ওয়াশারে দিলো। তুলি তরকারিগুলো ফ্রিজে রাখছে। শুভ্র হাত ধুয়ে তুলির পাশে এসে দাড়ালো। তুলি বললো- ‘রুমে যান। আমি এটুকু করে নিচ্ছি।’

শুভ্র এবার কথা শুনলো। এগিয়ে এসে তুলির কপালে চুমু খেয়ে অশান্ত গলায় বললো -‘দ্রুত আসো। অপেক্ষা করবো।’

শুভ্র তুলির দিকে চেয়ে দুষ্টু একটা হাসি উপহার দিয়ে রুমে চলে গেলো। তুলি অবাক হয়ে তরকারি হাতে শুভ্রর চলে যাওয়া দেখলো। পরপর হালকা হেসে আবার কাজে মন দিল।

আজকের রাতটা কেমন অদ্ভুত! শুনশান, আকাশের মাঝখানে মস্ত বড় এক চাঁদ। আজকের রাতটা যেন ডাকছে কাউকে; আহ্বান করছে এক নতুন শুরুর। তুলি আফরোজার সঙ্গে রান্নাঘর সামলে নিজেদের বেডরুম এলো। শুভ্র বারান্দায় বসে আছে। কোলের উপর ল্যাপটপ। অথচ সে ল্যাপটপ দেখছে না। মাথা তুলে আকাশের দিকে চেয়ে রইলো বেশ খানিক সময়। তুলি হালকা হেসে দরজা লক করে ধীর পায়ে শুভ্রর কাছে এসে দাঁড়ালো। শুভ্র আনমনে আকাশ দেখছে। তুলি আর তাকে বিরক্ত করলো না। রান্নাঘর থেকে এসেছে- গায়ে ঘাম। তাই সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুম থেকে একদম গোসল করেই বের হয়েছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে তুলি অবাক। বাইরে এখন বৃষ্টি নেমেছে। একটু আগেই তো দেখলো আকাশ পরিষ্কার। এক্ষুনি বৃষ্টিও নেমে গেলো? তুলি চুলগুলো গামছাতে পেঁচিয়ে বারান্দায় এলো। শুভ্র তখন ল্যাপটপটা ঘরে রেখে আবারও বারান্দায় দোলনায় বসেছে। তুলি গিয়ে শুভ্রর পাশে দাঁড়াল। হঠাৎ করেই শুভ্রর আশেপাশে শ্যাম্পুর সুন্দর এক গন্ধ পেয়ে পাশে তাকাল। চুলে গামছা পেঁচিয়ে তুলি শুভ্রর পাশে দাঁড়ানো। মুগ্ধ দৃষ্টি আকাশের দিকে। ভেজা গায়ে জড়ানো গোলাপি রঙের শাড়ি, তুলির গায়ের সঙ্গে শাড়ির রঙটা এতটা মানাচ্ছে- শুভ্র মুগ্ধ হয়ে তুলিকে দেখেই মন ভরছে না।

তুলি আকাশের দিকে চেয়ে বললো- ‘হুট করেই বৃষ্টি নামলো? গোসলে যাওয়ার আগেও তো দেখলাম আকাশ ফকফকা।’

শুভ্র শুনে না। সাজেকের সেই রাতের ন্যায় আবারও আজকের বৃষ্টি উষ্কাতে চাইছে শুভ্রকে। বৃষ্টির ফোঁটা গ্রিল পেরিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে শুভ্র-তুলি দুজনকেই। শুভ্রর সাদা টিশার্ট ভিজে গেছে অনেকটাই। শুভ্র মুগ্ধ হয়ে দোলনা থেকে উঠে তুলির পেছনে এসে দাঁড়াল। গামছায় তুলির ভিজে চুল খোঁপা করা। কপালের উপর ভিজে কয়েকটা চুল পরে আছে। মারাত্মক একটা দৃশ্য। শুভ্র তুলির পেছনে দাঁড়িয়ে আলগোছে হাত বাড়িয়ে তুলির চুলের গামছা খুলে দিল। ভিজে চুল সব ঘাড়ে ঝরঝরিয়ে পরতেই তুলির গা শিরশির করে উঠল। ঘাড় ঘুরিয়ে শুভ্রর দিকে তাকাল। শুভ্রর চোখে চেনাপরিচিত সেই একই নেশা। ছোঁয়াচে রোগের ন্যায় তুলির মধ্যেও সঞ্চারিত হল সেই একই নেশা। শুভ্র তুলির ভিজা চুলগুলো ঘাড়ের পাশ থেকে সরিয়ে ডান কাঁধে ছড়িয়ে দিয়ে মুখ ডুবালো তুলির ঘাড়ের নরম অংশে। তুলি শিরশিরিয়ে উঠে পরনের শাড়ি খামছে ধরলো। মুখ ফুটে অস্ফুট স্বরে বলতে চাইল- ‘মাত্র গোসল-‘
শুভ্র জড়ানো গলায় তুলির ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বললো- ‘আবার করবে।’

নির্লজ্জ লোকের নির্লজ্জ যত কথা। তুলি এখন আবেশে গা না ভাসালে না থাকলে কটা কথা শোনাত। ঠাণ্ডার পড়েছে আজ, তারমধ্যে সকালে একবার, রাতে দুবার গোসল করলে তুলিকে কী খুঁজে পাওয়া যাবে? মনে তো হয়না। শুভ্র তুলির ঘাড় থেকে মুখ তুলে পেছন থেকে জড়িয়ে ধড়ে কাঁধে থুতনি রাখলো। তুলি অশান্ত শ্বাস ফেলছে। শুভ্র থামল- তুলিকে একপল দেখে নিয়ে বড্ড আবেগ নিয়ে ডাকলো- ‘তুলি, আমার জান?’

তুলি চোখ বুজলো, থেমে থেমে জবাব দিলো- ‘হু?’

শুভ্র তুলির কাঁধে চুমু খেলো। জড়ানো গলায় শোধালো- ‘আই নিড অ্যা বেবি।’

তুলি জবাব দিলো না। বুকটা ধড়ফড় করছে তুলির। কিছুক্ষণ অশান্ত একেকটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। চোখে ভাসল- এক নিষ্পাপ শিশুর ছবি। শুভ্রর কোলে মাথা ঠেকানো শিশুর- শুভ্র আলগোছে পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। তুলির চোখটা ছলছল করে উঠল। হ্যাঁ; তুলির চাই একটা বাচ্চা। এক নিষ্পাপ অংশ চাই- তার আর শুভ্রর। তুলি মুখে উত্তর দিলো না- বরং সম্মতিস্বরূপ মাথাটা আলগোছে শুভ্রর গালের সঙ্গে ঠেকালো। শুভ্র উত্তর বুঝে হালকা হাসলো। তুলির গালে নিজের গাল ঘষে ঝট করে তুলিকে পাঁজকোলে তুলে নিল। বিছানার দিকে এগুতে এগুতে বললো- ‘প্রসেসিং শুরু হোক তাহলে।’

তুলি লজ্জা পেয়ে শুভ্রর টিশার্টের কলার খামছে ধরল- অস্ফুট স্বরে বললো- ‘নির্লজ্জ আপনি।’

শুভ্র তুলিকে আলগোছে বিছানায় শোয়ালো। নিজের সমস্ত ভার তুলির উপর ছেড়ে বললো -‘শুভ্রকে নির্লজ্জ করেছিলটা কে?’

তুলি লজ্জা পেয়ে মুখটা ডান পাশে সরাল। শুভ্র তুলির থুতনি চেপে নিজের দিকে ফেরাল। শুভ্র বললো – ‘মনে নেই? সাজেকের বৃষ্টি ভেজা রাতে আমার চূড়ান্ত সর্বনাশ করে ফেলেছিলি? ইউ রিমেম্বার?’

তুলি মেকি রাগ দেখিয়ে বললো -‘আমি কাছে ডেকেছিলাম আপনাকে? মিথ্যা বলছেন কেন?’

শুভ্র তুলির কপালে গাঢ় এক চুমু খেয়ে বললো -‘আমি জানি তুমি ডাকো নি আমায়। তুমি শুধু আমায় সিডিউজ্ড করেছিলে। কাছে যা যাওয়ার, তা আমি আপনা আপনি গিয়েছিলাম।’

বলে ডান চোখটা আবারও টিপলো শুভ্র। তুলি হা হয়ে গেলো। অবাক হয়ে বললো- ‘সিডিউজ্ড? আমি করেছি?’

শুভ্র উত্তর দিলো- ‘হ্যাঁ করেছ। আমি ভালো ছেলে হয়ে রুমে বসেছিলাম। তুমি বারান্দায় বৃষ্টিতে ভিজছিলে। আমি গেলাম, আমাকে কাছে ডাকলে। ভদ্র আমাকে ভেজা গায়ে মুগ্ধ করলে। ওই রাতের পর আমার আর ভদ্র হয়ে থাকতে ইচ্ছাই করে না। ভদ্র হয়ে থাকলে- বেবিরা কি আসবে কখনো? তাই বেবিদের বাবা ইচ্ছে করেই নির্লজ্জ হয়েছে। অল ফল্ট ইজ ইয়োর্স।’

তুলি হতবম্ব হয়ে শুভ্রর কথা শুনছিলো।শুভ্রর একেকটা কথা শুনে ইচ্ছে তো করছে- মাথাটায় ধরে একটা দিতে। নিজে এগিয়ে এসে- দোষ সব তুলির কাঁধে দেওয়া হচ্ছে। তুলি ঝগড়া ঝগড়া মুখ করে আঙুল উচিয়ে বলতে চাইল- ‘দেখুন-‘

শুভ্র বলতে দিল না। তার আগেই তুলির আঙ্গুলের ডগায় চুমু খেয়ে বললো – ‘সারারাত পরেই আছে মিসেস শুভ্র। আই উইল ডেফিনেটলি অবসার্ভ ইউ দিস নাইট।’

তুলি বড়বড় চোখে শুভ্রর দিকে তাকালো। আরও কিছু বলতে যাবে- তার আগেই শুভ্র তুলির ঠোঁটে আঙুল চেপে চোখের দিকে চেয়ে বললো -‘আজকেও ঝগড়া করবে? লেটস মেইক দিস নাইট মেমোরেবোল- মিসেস শুভ্র।’

তুলি শুভ্রর চোখে চোখ রাখলো। চূড়ান্ত নেশা লেগে আছে শুভ্রর চোখে-মুখে। তুলি সেই নেশায় ডুবলো বরাবরের ন্যায়। মাথাটা একটু তুলে শুভ্রর গলা জড়িয়ে হালকা করে ঠোঁট ছুয়ালো শুভ্রর ঠোঁটে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা শুভ্রর দিকে চেয়ে লাজুক গলায় বললো -‘লেটস মেইক দিস নাইট মেমোরেবোল, মিস্টার শুভ্র।’

শুভ্র কিছুক্ষণ চমকে তুলির দিকে চেয়ে থাকলো। তুলি আপাতত শ্বাস আটকে মাথা নিচু করে আছে। শুভ্র মৃদু হেসে লাজুক তুলিকে আস্তে করে বিছানায় শোয়ালো। তারপর ধীরে ধীরে কপালে চুমু খেলো। চুমু খেল নাকের ডগায়। চুমু খেলো তুলির নরম দু গালে। ধীরে ধীরে তুলির সর্বাঙ্গ শুভ্রর দখলে চলে গেল। বৃষ্টি ভেজা রাত এ দম্পত্তিকে উষ্কে দিলো চূড়ান্তে। শুভ্র বরাবরের মতো নিজের কন্ট্রোল হারাল। তুলি- সে তো মাতোয়ারা শুভ্রর স্পর্শে।

#চলবে
এক্সামের কারণে লেখারই টাইম পাচ্ছি না। ছোট এবং দেরিতে দেওয়া পর্বগুলোর জন্যে দুঃখিত❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here