#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_৩২
প্রায় এক সপ্তাহ পর বাবার বাসায় এসে তুলি আনন্দে আশপাশ ভুলতে বসেছে। জোবায়েরের সঙ্গে অনেকদিন পর আজ স্পাইডার ম্যান মুভি দেখতে বসেছে। জোবায়ের বুঝিয়ে দিচ্ছিল তুলিকে মুভির কাহিনি। মুভি দেখার ফাঁকে শুভ্রর কল এলো। তুলি কল রিসিভ করে রুমে আসল-
‘বাসায় ফিরেছেন?’
‘হ্যাঁ, খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম মাত্র।’
‘আম্মু খেয়েছে? উনার জন্যে শুটকি রেঁধে রেখে এসেছিলাম।’
‘হ্যাঁ, খেয়েছে। বাপের বাড়ি ভালো লাগছে তো?’
‘অনেক।’
‘কী করছিলে?’
‘স্পাইডার ম্যান মুভি দেখছিলাম।’
শুভ্র এ কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে, পরপরই হেসে উঠল। বললো-‘এত বড় হয়ে এখনো জোবায়েরের সঙ্গে স্পাইডার মুভি দেখো?’
তুলি লজ্জা পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর একটু থেমে ম্লান কণ্ঠে বলল- ‘আর কিছুদিন পর থেকে ‘মা-মা’ জিনিস দেখার সময় হয়ে যাবে, এখন এগুলোই দেখি।’
শুভ্র হাসছিল, তুলির কথা শুনে হাসি থামিয়ে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করল-‘মানে? কেন?’
তুলি বলতে চাইলো কিছু। শুভ্রকে জানাতে চাইল নিজের সন্দেহের কথা। মুখ খুলতে চাইলে, পরপর থেমে যায়। সন্দেহের বশে এতবড় সুখবর শুভ্রকে এখুনি জানাবে না তুলি। পরে যদি সন্দেহ ভুল হয়, তবে কষ্ট পাবে শুভ্র। আগে শিউর হোক, জানুক সে সত্যি আসছে। তারপর একটা বড় সারপ্রাইজ দিয়ে শুভ্রকে জানাবে তাদের দুজনের অংশের কথা।তুলি শুভ্রের প্রশ্নের উত্তর চেপে গেলো। আরও কিছুক্ষণ শুভ্রর সঙ্গে কথা বলে নিল। তারপর একটু পর শুভ্র নিজেই বললো- ‘আমরা পরে কথা বলবো। এখন যাও, বাবা মার সঙ্গে সময় কাটাও। অনেকদিন পর আসলে না?’
তুলি সায় দিল শুভ্রর কথা। কল রেখে গেলো ইয়াসমিনের রুমে। ইয়াসমিন চুল আঁচড়াচ্ছেন। তুলি গিয়ে নিজের হাতে চিরুনি তুলে আঁচড়ে দিতে লাগলো ইয়াসমিনের চুল। ইয়াসমিন আরামে চোখ বুজে আছেন। জিজ্ঞেস করলেন-‘ওই বাড়িতে দিনকাল কেমন কাটছে তোর, তুলি?’
তুলি আনমনে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে জবাব দিলো-‘ভীষণ ভালো।’
‘তুই যে এলি শুভ্র কিছু বলেছে? অনুমতি নিয়ে এলি তো?’
‘হু, উনিই বলেছেন ঘুরে আসতে।’
ইয়াসমিন গল্প করতে লাগলেন তুলির সঙ্গে। একসময় তুলি দোনামোননা করে করে বললো-‘মা, আজ সন্ধ্যার পর একজায়গায় যাব। আমার সঙ্গে তুমি যাবে?’
‘কই যাবি? তুই না ফিরবি সন্ধ্যার পর?’
‘রাতে ওখান থেকেই সোজা ওই বাড়ি চলে যাব, এদিকে আর আসবো না।’
‘আচ্ছা যাবো। আগে বল কই যেতে চাইছিস? ফ্রেন্ডের বাসায়?’
‘না, হসপিটাল।’
‘হসপিটালে কেন?’
‘আমি সোনোগ্রাফি করবো।
‘সো-‘
ইয়াসমিন অবাক হয়ে তুলির দিকে তাকালেন। তুলি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো। মায়ের সামনে আর কিছু বলার নেই তার। ইয়াসমিন মেয়ের দিকে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে চেয়ে পরপর খুশি হয়ে বললেন-‘কিছু আন্দাজ করেছিস? পরীক্ষা করবি? কিট দিয়ে কর আগে, সন্ধ্যার পর যাব রিপোর্ট করতে।’
‘কিট আনিনি সঙ্গে।
‘দাঁড়া, আমি দেখি আছে কিনা ঘরে। নাহলে নিয়ে আসছি আমি ফার্মেসি থেকে।’
ইয়াসমিন উঠতে চাইলেন। তবে তুলি পেছন থেকে তার হাত আটকে দিল। ইয়াসমিন তাকালেন, তুলি বললো-‘আম্মু- আমি ডাইরেক্ট রিপোর্ট করব।’
ইয়াসমিন আর মেয়েকে ঘাটালেন না। বিছানায় বসলে, তুলি মায়ের কোলে মাথা রাখে। ইয়াসমিন তুলির চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ইয়াসমিনের চোখ দুটো ছলছল করছে। সেদিনের তুলি, ওই বাচ্চা তুলি আজ নিজেও মা হবে। আবেগে চোখ থেকে জল পড়তে চাইলে, ইয়াসমিন মুছে ফেলেন। তুলি মায়ের কোলে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।ইয়াসমিন তুলিকে বিছানায় শুইয়ে আলমারি ঘেঁটে পুরনো শাড়ি বের করলেন। কটা বাচ্চাদের কাথা সেলাই করতে হবে- এখন থেকে শুরু না করলে পরে যদি দেরি হয়ে যায়।
____________________
রিপোর্ট হাতে বিছানার উপর বসে আছে তুলি। শুভ্র এখন চেম্বার থেকে ফিরেনি। যখন ফিরবে, তুলির রিপোর্ট দেখবে- কী করবে তখন শুভ্র? কিভাবে সামলাবে নিজেকে। তুলি আজ মনের মতো সেজেছে। গায়ে শুভ্রর দেওয়া সেই কাবিনের দিনের জামদানি শাড়ি, হাতে শুভ্রর দেওয়া চুড়ি, শুভ্রর নামের খোদাই করা আংটি অনামিকা আঙুলে। সাজ নেই তেমন, তবে কপালে টিপ আর কাজল দিয়েছে। শুভ্র এতেই মুগ্ধ, তুলি জানে। শুভ্র এলো, আফরোজার সঙ্গে দেখা করে রুমে টোকা দিল। তুলির পা কাঁপছে, হাতের থাকা রিপোর্টও কাঁপছে। তুলি রিপোর্ট হাতে এগিয়ে গেলো। উত্তেজনায় হাঁটতেও পারছে না তুলি। অবশ লাগছে নিজেকে। ওপাশ থেকে শুভ্র মিহি স্বরে ডাকলো একবার- ‘তুলি, ভেতরে আছো? দরজা খুলো।’
তুলি ঢোল গিললো। রুমের লাইট নেভানো। মোমবাতি জ্বালান অনেকগুলো। তুলি সিটকিনি খুলে দিল দরজার। শুভ্র বলতে থাকে-‘কী করছিল-‘
সঙ্গেসঙ্গে তুলির দিকে চেয়ে থমকে যায় শুভ্র। তুলি দরজায় বাঁকা হয়ে হেলান দিয়ে আছে। ডান হাতে শাড়ি খামছে ধরে আছে- বাম হাত দরজা ঠেসে রাখা। শাড়িটা এমনভাবে পড়েছে, কোমর উন্মুক্ত, গায়ে লেপ্টে আছে একদম। শুভ্র ঢোক গিলে। তুলির পা থেকে মাথা অব্দি দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে বলে- ‘পাগল করার ধান্দায় আছেন নাকি- মিসেস শুভ্র?’
তুলি শুভ্রর টাই একহাতে ধরে টেনে শুভ্রকে রুমের ভেতরে আনল। তারপর নিজেই দরজায় সিটকিনি তুলে দিল। শুভ্র দরজা লক করার আওয়াজে পেছন ফিরে একবার দেখলো। তুলি আঙুল দিয়ে শুভ্রর মুখটা আবার নিজের দিকে করে নিলো। শুভ্র আবারও ঢোক গিলে। তুলিকে আপাদমস্তক বড্ড সুন্দর দেখাচ্ছে। তুলি শুভ্রর সম্পূর্ন মুখে আঙুল ঘুরিয়ে বললো-‘পেছনে কি, হুঁ? আমাকে দেখুন, শুধু এবং শুধু আমাকে।’
শুভ্র এবার হাসলো। তুলির কানের কাছে ফিসফিস করে শুভ্র বললো-‘আ’ম ডায়িং।’
তুলির বুকটা কেঁপে উঠে। শুভ্র তুলির কানের লতিতে চুমু খেলো। তুলি কেঁপে উঠে শুভ্রর শার্ট চেপে ধরলো। শুভ্র দুহাতে তুলির উন্মুক্ত কোমর চেপে ধরে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। তুলি শুভ্রর গলার টাই খুলে মাটিতে ফেলল। শুভ্র আনমনে দেখে যাচ্ছে তুলিকে। শুভ্র একসময় গাঢ় গলায় বললো—‘ইউর গ্লোসি লিপস মেকিং মি ক্রেজি। ক্যান আই কিস?’
তুলি মায়া দৃষ্টিতে তাকালো শুভ্রর দিকে। শুভ্র মুখটা এগিয়ে নিলে তুলি মাথা পিছিয়ে নেই। শুভ্র ভ্রু বাঁকায়- ‘কী?’
তুলির শুভ্রর বুকে হাত রেখে ঠেলে বললো-‘এত অধৈর্য্য কেন? এখন তো মাত্র শুরু।’
শুভ্র ব্যস্ত ভঙ্গিতে তুলির কোমরে চাপ দিয়ে নিজের দিকে টেনে বললো-‘অধৈর্য্য বানানো হয়েছে আমাকে। কাম, জাস্ট ওয়ান কিস।’
শুভ্র এগিয়ে আসলে, তুলি আবারো সরে শুভ্রর থেকে জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। শুভ্র হতাশ চোখে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।
তুলি থামল। তারপর ধীর হাতে শুভ্রর ডান হাত নিজের পেটের উপর রাখল। শুভ্র বুঝতে পারলো না প্রথমে তুলির এ আচরণের অর্থ। প্রথমে স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে হঠাৎই চোখ বড়বড় করে তুলির পেটের দিকে তাকিয়ে আবার তুলির দিকে তাকাল। তুলির শুভ্রর কানের কাছে ফিসফিস করে শোনাল-‘ছোট্ট শুভ্র আসছে। আপনার অপেক্ষার ফল ফাইনালি আসছে,শিশু ডক্টর।’
শুভ্র চমকালো, ভীষণ চমকে তুলির পেটে হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। তুলি হালকা হেসে আবারও বললো- ‘আপনার এতদিনের ইচ্ছা শেষ অব্দি পূরণ হচ্ছে। কেমন লাগছে ডাক্তার মশাই?’
আবেগে শুভ্রর চোখের কোণে অল্প কিছু পানি জমেছিল। শুভ্র পানিটুকু আড়াল করে তুলিকে ছেড়ে নিজের কোমরের দুপাশে হাত দিয়ে উপরের দিকে চেয়ে ঢোক গিলছে। শুভ্র ভয়াবহ নার্ভাস। কী বলবে, এমন একটা অবস্থায় কেমন রিয়েক্ট করা হয় শুভ্র জানে না। সে প্রথম বাবা হচ্ছে, বাচ্চা সম্পর্কিত অনুভূতিতে সে নতুন। শুভ্র ঢোক গিলছে, তার অ্যাডাম অ্যাপলস ফুলছে বারবার। তুলি শুভ্রকে সময় দিল। শুভ্র মাথা নিচু করল। দুপাশে মাথা নেড়ে নিজের কাঁদোকাঁদো অনুভুতি সামলে নিয়ে তাকাল তুলির দিকে। তুলি আবার হাসল। ভ্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল- ‘কেমন লাগছে?’
শুভ্র এবার হালকা হাসার ভান করে তুলিকে আচমকা জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবাল। তুলিকে যতটা পারে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিল। পিষে ফেলতে চাইছে যেমন তুলিকে নিজের সঙ্গে। তুলি সাবধানতা অবলম্বন করে পেটে এক হাত রেখে শুভ্রকে অপরহাতে জড়িয়ে রাখলো। শুভ্র ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বললো-‘আমাকে বাবা হওয়ার মতো বেস্ট একটা ফিলিংসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ তুলি। তুমি- তোমাকে ভা-ভালোবাসি,ভা-‘
শুভ্র আর বলল না কিছু। তুলি অনুভব করছে তার ঘাড় ভিজে যাচ্ছে। ওমা, শুভ্র কাঁদছে? তুলি বোকা হয়ে গেলো একদম, শুভ্রকে জোর করে নিজের থেকে ছাড়াতে চাইলে শুভ্র আরও শক্ত করে চেপে ধরল। তুলি হাল ছাড়ল। শুভ্র নিজের চোখের জল তুলিকে দেখাতে নারাজ, তাই তুলিও জোর করলো না। একসময় শুভ্র নিজেই নিজেকে সামলে সরে আসল। অন্যপাশে মুখ লুকিয়ে চোখ মুছে স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলো- ‘কয় মাস? এ খবর কখন পেলে? কাল? আজ? আজ পেয়েছো? আর কেউ জানে? আম্মু জানে?’
‘বলছি সব। ভ্রুণের বয়স ২ মাস ৭ দিন। কাল বাবার বাসায় ছিলাম না? আম্মুকে নিয়ে গিয়েছিলাম সনোগ্রাফি করতে। রিপোর্ট আজ ক্লিনিক থেকে ফেরার সময় নিয়ে এসেছি। রিপোর্ট পেয়ে আপনাকেই প্রথম বললাম।’
শুভ্র হা হয়ে গেলো। বললো-‘বিয়ের প্রথমরাতে ছক্কা? আমার বাবু বাবাকে বেশি অপেক্ষা করায় নাই।’
তুলি লজ্জা পেয়ে বললো-‘কী ভাষা মুখের।’
শুভ্র হেসে বললো-‘যাও ভাষা ঠিক করছি। আগামীকাল আমার সঙ্গে আবার যাবে ডাক্তারের কাছে। আমরা মহুকে কনসাল্ট করব আমাদের বেবির জন্য। ও তো গাইনোকলোজি স্পেশালিস্ট।’
তুলিও সায় দিলো। শুভ্র তুলিকে সামনে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। তারপর কাঁধে থুতনি রেখে বলতে লাগলো-‘এখন থেকে বাইরে চলাচল বন্ধ, ঘরেও তেমন কিছু করা লাগবে না। বুয়া এসে তো সব করেই যাই। রান্না আর বাসন থাকে। এগুলো আমি ঘরে থাকলে করে দিবো। ওয়েট, রান্নার জন্যে নতুন বুয়া রাখলেই তো হয়? কী বলো?’
‘বুয়ার হাতের রান্না খাবেন? আগে খেয়েছেন?’
‘না, তবে এখন থেকে খাবো।’
‘না, তার কোনো দরকার নেই। আমি রান্না করবো। আর আম্মু তো আমাকে সাহায্য করেনই। সমস্যা হবে না কোন।’
শুভ্র একটু থামল। তারপর দোনামোনা করে বললো-‘ ক্লিনিক করা লাগবে এ কদিন? বাদ দিলে হয়না? যদি কিছু হয়ে যায়।’
তুলি পেটের উপর রাখা শুভ্রর হাতের উপর হাত রাখল। বললো-‘ক্লিনিক ছুটি নিব ৭ মাসের সময়। এখন নেওয়া যাবে না। নতুন চাকরি, বাদ দিলে আর নিবে না আমাকে।’
‘ঠিকাছে, আমি জোর করব না তোমাকে। তবে এখন থেকে রিকশা বা সিএনজি কিছু চড়া যাবে না। আমাদের গাড়ি ইউজ করবে।’
‘তাহলে আপনি কী দিয়ে আসবেন? আপনার হসপিটাল তো আমার থেকেও বেশি দূরে।’
‘আমি একটা সিএনজি রিজার্ভ করে নিব এই কয়েক মাসের জন্যে। সিএনজি নিবে-আনবে।’
আরও কিছুক্ষণ কথা বললো দুজন। শুভ্রর হাতে তুলির সনোগ্রাফির ছবি। অবশ্য কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ছবিতে। তবুও শুভ্র হাতে ছবি নিয়ে বসে আছে। তুলি বেশ অনেকক্ষণ হলো ঘুমিয়েছে। শুভ্র তুলিকে বিছানায় শুইয়ে বারান্দায় গেল। এক হাতে নিজের বাচ্চার সনোগ্রাফির ছবি, অপরহাতে শুভ্রর বাবার ছবি। শুভ্র বারান্দার দোলনায় বসে বাবার ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর একসময় বললো-
‘আব্বু, আমি বাবা হচ্ছি।’
থামল শুভ্র। গলাটা আজ কাঁপছে কেন এত?কথাই বলতে পারছে না শুভ্র। ছবিতে শুভ্রর বাবা কথা বলতে পারেন না। যদি পারতেন খুশিতে শুভ্রকে বলতেন-‘এই তো আসল পুরুষের মতো কাজ। আমার ছেলে বাবা হচ্ছে, মিষ্টি বিলাব। মিষ্টির কেজি এখন কত করে রে শুভ্র? আমাদের সময় তো ছিলো ১ কেজি ১৮০ টাকা।’
শুভ্র থামে কিছুক্ষণ- তারপর নিজের মতো করেই বলতে লাগলো-
‘আমি তোমায় সেদিন বলেছিলাম, আমার ছাত্রিকে কিভাবে বিয়ে করবো। আম্মু কেন এমন ছেলেমানুষি সিদ্ধান্ত নিল। কিম্তু এখন- এখন আমি ভাবছি-আম্মু ছাড়া আমাকে আর কেউই বুঝে না আব্বু। আম্মু জানতেন, ওই মেয়ে, ওই ছাত্রির মধ্যেই আমার সব সুখ থাকবে। আর দেখো- থাকলোও। আমি ওই মেয়ে ছাড়া এখন কিছুই বুঝি না আব্বু। ওই মেয়ে আমার সমস্ত স্বত্তার মধ্য খুব বাজে ভাবে মিশে গেছে আব্বু। এখন ওই মেয়ের মধ্যে আমার আরেকটা স্বত্তা আসছে। তোমার শুভ্রর সন্তান। তুমি দাদা হচ্ছো। খুশি তুমি? ‘
কথা বলতে বলতে শুভ্রর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল শুভ্রর বাবার ছবির মধ্যে পড়ল। সঙ্গেসঙ্গে শুভ্র জল মুছে ফেলল। বাবার ছবিকেই হাত বাড়িয়ে সনোগ্রাফির ছবি দেখিয়ে বললো-‘দেখো আব্বু, এটা আমার সন্তান। হাত পা বোঝা যাচ্ছে না এখন। কিম্তু আর কদিন, তারপর সব বোঝা যাবে। তোমাকে তখন আরেকবার দেখাব। এখন এটাই দেখো।’
শুভ্র আনমনে বাবার ছবির দিকে অনেক কথা বললো। তুলি ঘুমে ছিল, শুভ্রর কথা শুনে উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ শুভ্রর সব কথা শুনছিল। শুভ্র কাঁদছে, আর কথা বলছে। তুলি শুভ্রকে আর বিরক্ত করলো না। জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ভালোবাসার লোভী নারীর মতো শুভ্রর সব কথা শুনতে লাগল।
#চলবে
আমার নেক্সট ধারাবাহিক গল্প #দীঘির_জলে_কার_ছায়া
পড়ার আমন্ত্রণ থাকবে❤️
অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ যদি বলে শেষ হয়ে যাবে? কেমন লাগবে