আশার_হাত_বাড়ায়|৩০| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
306

#আশার_হাত_বাড়ায়|৩০|
#ইশরাত_জাহান
🦋
তিনদিন হয়ে গেলো কক্স বাজারের সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায় সবাই।আজকে মিস্টার জায়ানের মেয়ের গায়ে হলুদ।রাতে অনুষ্ঠান হবে।ফাইভস্টার হোটেলে অনুষ্ঠান।সবাই একই রঙের পোশাক পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে।হলুদ গাউনের সাথে কলাপাতা রঙের ওড়না আর মাথায় হিজাব পরে আছে শ্রেয়া।মিমি নিজেও হিজাব পরেছে।শ্রেয়া আর অর্পাকে দেখে ভালো লাগলো তার কাছে।সবাই এসে এদিক ওদিকে ছড়িয়ে গেলো।ফারাজ নিজের মতো এনি তার মতো ক্লায়েন্ট নিয়ে কথা বলছে।বিদেশী দুই ক্লায়েন্ট আজকের অনুষ্ঠান শেষ করে চলে যাবে।ওদের কাজ শেষ।আজকে শুধু অনুষ্ঠানের জন্য থেকে গেছে।অনেকক্ষণ ধরে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে আছে জ্যাক।আজকে শ্রেয়া একটু সেজে এসেছে।দেখতে অন্যদিনের থেকে আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।শ্রেয়ার সবকিছু যেমন তেমন ওর চোখটা একটু বেশি সুন্দর।বলা চলে চোখের জন্যই ওর সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।আজ সেই চোখে কাজল দিয়েছে শ্রেয়া।জ্যাক এসে শ্রেয়ার সাথে কথা বলে।শ্রেয়া আশেপাশে তাকিয়ে জ্যাকের সাথে কথা বলতে থাকে।জ্যাকের চোখ শ্রেয়ার আপাদমস্তক বিচরণ করতে থাকে।শ্রেয়াকে বাজে দৃষ্টিতে দেখছে জ্যাক।শ্রেয়া তাকিয়ে নেই জ্যাকের দিকে।সে তার মতো আছে।পাশে থাকা আরেকটি মডার্ন মেয়ের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত।জ্যাক শুধু ওদের সাথে দাড়িয়ে দেখছে।শ্রেয়া ইচ্ছা করেই জ্যাককে ইগনোর করতে থাকে।এভাবে চলতে চলতে অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে তখন শ্রেয়ার কাছে একটি ট্রেতে ড্রিংক নিয়ে হাজির হয় ওয়েটার।শ্রেয়াকে অফার করে বলে,”ম্যাংগো ওর অরেঞ্জ এনিথিং ম্যাম?”

গলা শুকিয়ে এসেছে শ্রেয়ার।পানি হলে বেশি ভালো হতো কিন্তু তারপরও বলে,”ম্যাংগো।”

মেয়েটি জুস দিলো শ্রেয়ার হাতে।শ্রেয়া চুমুক দিতেই মেয়েটি তার ট্রে শ্রেয়ার দিকে ঠেলে দেয়।ফলস্বরূপ কিছুটা জুস শ্রেয়ার জামায় লেগে যায়।লাল রঙের জুস হলুদ জামায় লেগে বিশ্রী দেখা যাচ্ছে।ওয়েটার ভিত মুখ ধারণ করে বলে,”সো সরি ম্যাম।আমি বুঝতে পারিনি।”

“ইটস ওকে,ওয়াশরুম কোনদিকে?”

“উপরের ফ্লোরে একেবারে কোনায়।”

“ওকে।”

শ্রেয়া চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।ওয়েটার মেয়েটির কাছে জ্যাক এসে কিছু টাকা দিলো।মেয়েটি হাসিমুখে টাকা নিলো।

ওয়াশরুম খুঁজতে খুঁজতে হয়রান শ্রেয়া।একেকটি রুম দেখতে পাচ্ছে।এই রুমগুলোর মধ্যে হয়তো ওয়াশরুম থাকবে।কিছু চেনে না জানে না ঢুকতেই অস্বস্তি লাগছে।একটু সাহস যুগিয়ে মেয়েটির কথামত একেবারে কোনার রুমে ঢুকলো।ওয়াশরুম দেখতে পেলো এবার।পানি ছেড়ে যে জায়গায় জুস লেগেছে ওই জায়গাটি পরিষ্কার করতে থাকে।কিছুটা পরিষ্কার হলেও রং সেই ফ্যাকাশে হয়ে যায়।বেশি চেষ্টা করা বৃথা ভেবে ওড়না দিয়ে জায়গাটি ঢেকে নেয়।বাইরে বেড় হয়ে দেখতে পেলো দরজার সাথে দাড়িয়ে আছে জ্যাক।জ্যাক দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম। সাদা চামড়া ঘোলা চোখ ঠোটটা হালকা বাদামি।বিদেশিদের যেমন হয় ঠিক তেমনই জ্যাককে দেখতে লাগে।শ্রেয়া অবাক নয়নে দেখে ভয় পেলো।এই জ্যাক এখানে কেনো?শ্রেয়া প্রশ্ন করে,”আপনি এখানে কেনো?”

জ্যাক দরজাটা একটু চাপিয়ে দিয়ে বলে,”কাম অন হানি!আই জাস্ট ওয়ান্ট টু ইনজয় উইথ ইউ।”

শ্রেয়া চলে যেতে নেয়।কোনো কথা বলার রুচি নেই।জ্যাক শ্রেয়ার হাত ধরে আবারও সামনে নিয়ে আসে।জ্যাক বলে,”লিসেন হানি! ইউ ক্যান্ট ইস্কেপ।”

“প্লীজ লেট মি গো।আই ডোন্ট লাইক দিস।”

শ্রেয়ার কথাতে পাত্তা দিলো না জ্যাক।শ্রেয়ার হাত মোচড়াতে থাকে।আর দৃষ্টি তার শ্রেয়ার বিভিন্ন স্থানে।যেটা এখন শ্রেয়া বুঝতে পারছে।পারবে না কেনো?এখন শ্রেয়া জ্যাকের অতি নিকটে ও সামনে।জ্যাকের এই চাহনি দেখে ঘৃণা লাগছে শ্রেয়ার কাছে। জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”হেল্প হেল্প।”

কিন্তু কেউ আসছে না।শ্রেয়া এবার কান্না করে দিলো।মাথার পিনগুলো একটু ঢিলে হয়ে আসে হিজাবটা বেকে যায়। ইনার থাকার কারণে একটু নিজেকে ধরে রেখেছে।জ্যাক শ্রেয়াকে নিয়ে এক প্রকার জোর করতে শুরু করলো।আরো বিভিন্ন কথা বলছে ইংরেজিতে।যেগুলো বিষের মত লাগছে শ্রেয়ার কাছে।এক সময় না পেরে শ্রেয়া ভাবলো তাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে জ্যাক ওকে ছেড়ে দেয়।বুদ্ধি খাটিয়ে শ্রেয়া দেখলো আজ সে উচু হিল পরেছে। হিলের সাথে উচু করে স্থানের যে স্ট্যান্ড ওটা চিকন আর শক্ত।যার কারণে এটা উচু হয়ে আছে।এই হিলের একটা আঘাত পেলে জ্যাক সরে যেতে পারে।ভাবতে ভাবতে শ্রেয়া তার পা উচু করে হিল দিয়ে জ্যাকের পা বরাবর রেখে জোরে পিষতে থাকে।প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও কয়েক সেকেন্ড পর ব্যাথা অনুভব করে জ্যাক।একটু দূরে সরে গেলেই শ্রেয়া তার পা দিয়ে সোজা জ্যাকের পু রু ষ ত্বে আঘাত করে।চিল্লিয়ে বলে,”মেয়েরা অসহায় থাকে ঠিকই সময় হলে নিজেকে রক্ষা করতে জানে।”

বলেই হাঁফাতে হাঁফাতে শ্রেয়া বেড় হতে নিবে ধাক্কা খেলো এনির সাথে।এনির পাশেই ফারাজ আছে।তার কিছুটা দূরে অর্পা মিরাজ আর মিমি।শ্রেয়াকে দেখতে না পেয়ে খুজতে খুজতে এসেছে।শ্রেয়া হাঁফিয়ে উঠেছে।এতক্ষণ অনেক ভয়ে ভয়ে ছিলো।এনির কাছে এসে এনিকে শক্ত করে জড়িয়ে কান্না করছে।ফারাজ ভিতরে এসে দেখলো জ্যাককে।কি হয়েছে এটা আন্দাজ করেছে ফারাজ।জ্যাককে কোকড়াতে দেখে বুঝে নিলো শ্রেয়া ওকে আঘাত করেছে।ফারাজ মুখে ফিচেল হাসি ফোটালো।যাক সময় থাকতে তো সে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে।এটাই অনেক।ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হয় আরো একজন বিদেশী ক্লায়েন্ট।জ্যাকের কাছে এসে বলে,”হাও ডিড ইট হেপেন?”

জ্যাক লোকটির হাতের সাহায্যে উঠে দাড়ালো।তারপর শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”দিস লেডি,ইয়েস দিস লেডি ট্রাই টু সিডিউস মি।এন্ড নাও শি হার্ট মি।”

শ্রেয়া কথাটি শুনে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,”ইউ আর এ লায়ার।”

এনির দিকে ঘুরে বলে,”বিলিভ মি!আমি এগুলো করিনি।আমি তো জামা পরিষ্কার করতে এসেছি আর উনি আমাকে নিয়ে বাজে ব্যাবহার শুরু করেছিলেন।কথার ছলে টাকার অফার দিয়েছিলেন।”

জ্যাক আর শ্রেয়ার কথা কাটাকাটি চলতে থাকে।এক পর্যায়ে জ্যাক নোংরা দৃষ্টি দিয়ে বলে,”ইউ বি*চ।”

আর কন্ট্রোল করতে পারলো না ফারাজ।সোজা এসে মারতে লাগলো জ্যাককে।জ্যাককে ঘুষি মারতে থাকে আর বলে,”মেয়েদের রেসপেক্ট করতে শিখিস নি? তোরা বিদেশী হয়ে যদি মেয়েদের সাথে এমন করিস তাহলে মেয়েজাতির সম্মান কোথায়?”

আরো মারতে থাকে ফারাজ।এবার জ্যাকের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আর বেশি মারতে থাকলে বা”জে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।এনি জোরে জোরে বলতে থাকে,”স্টপ নাও হ্যান্ডসাম।নাও ইটস ঠু মাচ।”

কিন্তু ফারাজের কোনো রেসপন্স নেই।সে তার মতো মারতেই থাকে।এক পর্যায়ে শ্রেয়া এসে বাধা দেয় ফারাজকে।অর্পা রাগী চোখে মিরাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাইকে কি সামলাতে পারছো না।রাগের মাথায় আছে ভাই এখন।শ্রেয়াকে উল্টা পাল্টা কিছু যদি বলে দেয়।তাড়াতাড়ি যাও।”

মিরাজ হা হয়ে এতক্ষণ ভাইয়ের মার দেখছিলো।বউয়ের কথা শুনেও তার কোনো প্রতিউত্তর পাওয়া গেলো না।একটা মেয়ের জন্য এমন মার মারবে বুঝতে পারেনি মিরাজ।অবাক হয়ে আছে এখনও।অর্পা বিরক্ত হয়ে ঘুতা দিলো মিরাজের বুক বরাবর।হুশ ফিরলো মিরাজের।অর্পা আবার বলে,”ভাইকে যেয়ে আটকাও।”

মিরাজ দ্রুত গেলো ফারাজের কাছে।শ্রেয়া সামলাতে আসলেও ফারাজ বা জ্যাককে ধরেনি।শুধু হাত ইশারা করে বলে,”স্যার প্লিজ ছেড়ে দিন।ওনার অবস্থা খুবই খারাপ।”

মিরাজ এসে এবার ফারাজের দুই হাত আঁকড়ে নিলো।রাগী দৃষ্টি এখনও জ্যাকের দিকে।অতপর শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”ইউ ইডিয়ট!নিজেকে প্রোটেক্ট করতে জানেন না?এই লোকটা আপনার দিকে কু দৃষ্টি দিয়ে ছিলো শুরু থেকেই।আরে আমি তাই বুঝতে পারছি আর আপনি বুঝতে পারেননি।বাহ!একটা ছেলে বাজে ভাবে আপনার কাছে আসতে চায় আপনি নিজেকে এলার্ট রাখেন না।দোষ তো ওর একার না দোষ আপনারও।বিবেক দিয়ে চলেন না।এক দুনিয়া থেকে এসেছেন তো শত দুনিয়ার সম্মুখীন হবেন।বাচ্চা না আপনি।সেন্স অফ হিউমার থাকতে হয়।যত্তসব বিবেকহীন লোকজন।”

বলেই ফারাজ চলে গেলো।যাওয়ার সময় মিমিকে ক্রস করে যায়।মিমি নিজেও ভয় পেয়ে চুপ করে আছে।শ্রেয়ার খারাপ লাগলো কথাগুলো।মূলত ফারাজের কথার মানে ছিলো শ্রেয়াকে আগে থেকে সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো।তাহলে এই পরিস্থিতি আসতই না।

ঘরে এসে বসে আছে ফারাজ।অনেকক্ষণ হয়ে গেছে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।ফারাজ নিজেও এখন শান্ত।এনি এসেছে ফারাজের রুমে।বলে,”আসবো হ্যান্ডসাম?”

“হুম।”

এনি এসে ফারাজের পাশে বসে বলে,”এতটা হাইপার হওয়া উচিত ছিলো না।শেহনাজ হার্ট হয়েছে।”

“চ!একটা মেয়ের দিকে পুরুষের নজর থাকে এটা সেই মেয়ে বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে চলবে না?”

“এখানে শেহনাজের কি করণীয়?ও তো যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছে।জ্যাক নিজেকে কন্ট্রোল রাখেনি।”

“এনি আই মাস্ট সে জ্যাক ইজ দ্যা মেইন ক্রিমিনাল বাট মিস শ্রেয়া শুড বি এলার্ট।সে চাইলে ওয়াশরুমে কাউকে নিয়ে যেতে পারতো।অর্পা নিজেও তো ছিলো সেখানে।অর্পা তো না করতো না।”

“হ্যাঁ এটাও ঠিক।কিন্তু হ্যান্ডসাম!তোমাকেও বুঝতে হবে শেহনাজ অতটাও অগ্রিম কিছু ভাবেনি।”

“ভাবা উচিত ছিলো এনি।মেয়েদের যেমন স্বাধীনতা দরকার ঠিক তেমন নিজেকে রক্ষা করাটাও দরকার।শুধু স্বাধীনতা দিয়ে কিছুই হয় না যদি নারী তার ইজ্জত মান ধরে রাখতে না পারে।শুধু মিস শ্রেয়া বলে কথা না সব মেয়েদেরকেই সম্মানের সাথে স্বাধীনতা চাওয়া উচিত।নারী তুমি শরীরের নাশকতায় চাইবে স্বাধীনতা যাহাতে আছে পুরুষের চাওয়া পাওয়া।তাহলে তো হবে না।নারীর স্বাধীনতা হলো এই সমাজের দুরবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য।”

এনি ভেবে দেখলো ফারাজ ভুল কিছু বলেনি।কিন্তু শ্রেয়া তো ফারাজের এসব কথা বুঝবে না।বুঝবে যদি ভালোভাবে তাকে বুঝিয়ে বলা হয়।

“তুমি অনেক পঁচা হয়ে গেছো পাপা।”

হঠাৎ মিমির কথা কর্ণপাত হতেই পিছনে ফিরলো ফারাজ।মিমি মুখ গোমড়া করে আছে।ফারাজ হাত দিয়ে ইশারা করলো মিমিকে কাছে আসতে।মিমি ফারাজের কোলে এসে বসতেই ফারাজ বলে,”কি পঁচা কাজ করেছি আমি?”

“তুমি আন্টিকে খুব বকা দিয়েছো।এভাবে কেউ কাউকে বকে না।তুমি কেনো বকা দিবে?ভালোভাবে বুঝিয়ে বলবে।আমাকেও তো কি সুন্দর চকলেট দিয়ে বুঝিয়ে বলো।”

মিমির দিকে তাকিয়ে ফারাজ বলে,”তোমার শ্রেয়া আন্টি আর তোমার বয়সের দূরত্ব অনেক বেশি মা।শ্রেয়া আন্টি এখন বড়।তাকে কি এসব দিয়ে বুঝিয়ে বলা যায়?”

“তাই বলে তুমি ইডিয়ট বলে গালি দিবে?যাও এখন সরি বলো।আন্টি কান্না করছে।”

“হোয়াট?”

“হ্যাঁ,তুমি এখন আন্টিকে সরি বলবে পাপা।তাহলেই আমি তোমার সাথে কথা বলব।তার আগে না।”

বলেই দৌড়ে গেলো মিমি।ফারাজের আড়ালে এনি মিচকি হাসি দিয়ে জোরে বলে,”মেয়ের কথা রাখতে শেখো হ্যান্ডসাম।ভালো ফলাফল পাবে।আর সরি বললে কেউ পঁচা হয়ে যায় না।সরি না বললে উল্টো তুমি তোমার মেয়ের কাছে পঁচা হবে।”

ফারাজ মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।এনি চলে যেতেই ফারাজ গেলো শ্রেয়া অর্পা যে রুমে আছে ওই রুমের দিকে।দরজায় টোকা দিতেই অর্পা বলে,”আসেন ভাইয়া।”

“মিস শ্রেয়া কোথায়?”

“ও তো রুফে আছে।মন ভালো নেই তাই রুফের দিকে গেছে।”

ফারাজ কোনো কথা না বলে চলে গেলো সেদিকে।ফারাজ যেতেই অর্পা কল দিলো এনি আর ইভাবে।পাশে মিমিও ছিলো।সবাই মিলে ফারাজকে ফলো করতে করতে চলে গেলো রুফের দিকে।চারপাশের বড় বড় নারকেল গাছের শীতল বাতাস রুফের চারপাশের বয়ে যাচ্ছে।শ্রেয়া ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।মাথায় ওড়না দেওয়া।ফ্রেশ হয়ে রুফে এসেছে।ফারাজ কিছু তাজা ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে।পাশেই অহরহ টব থেকে ফুটন্ত বেলিফুলের ঘ্রাণ।ভালোই লাগছে পরিবেশটা।পাশে পাশে ঝরবাড়ি দেওয়া।ঘুরতে আসা মানুষগুলোর জন্য এভাবে সাজানো এই রুফ।ফারাজ গোলা খাকারি দিলো।পুরুষালি কণ্ঠে হালকা কেপে পাশে তাকালো শ্রেয়া। ফারাজকে মাথা নিচু করে নিলো।ফারাজ সোজা সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।শ্রেয়ার উদ্দ্যেশে বলে,”আমরা মিষ্টি কিনি কিভাবে জানেন তো মিস শ্রেয়া?”

শ্রেয়া আড়চোখে দেখছে ফারাজকে।ফারাজ জানে শ্রেয়া উত্তর দিবে না।তাই ফারাজ বলে,”ছোট বেলার এক কাহিনী বলা যায় এখনও এমনটাই করি।শুনবেন কি?”

“হ্যাঁ।”

“আমি ছোট থেকে খুব মিষ্টি খেতাম।বলা চলে বাবা টাকা দিলে টিফিনে মিষ্টি কিনে খেতাম।সেরা দোকানের মধ্যে একটি দোকান ছিলো যেটা একটু কাছে।প্রায় প্রায় যেতে যেতে একদিন দেখলাম মিষ্টি যেখানে থাকে ওই স্থানে গ্লাস খোলা। একটু সামান্য কিছুক্ষণের জন্য খোলা মিষ্টিতে মাছি এসে ভনভন করছে।ওই মিষ্টি দেখে খাওয়ার রুচি মরে যায়।ওইদিন আমি মিষ্টি না কিনেই বাসায় আসি।এরপর দোকান পাল্টাই।”

মিষ্টি নিয়ে ফারাজের এমন কথা শুনে শ্রেয়া তাকিয়ে আছে ফারাজের দিকে একমনে।ফারাজ ফোঁস করে নিশ্বাস নিয়ে বলে,”বোঝেননি নিশ্চয়ই?”

“কি বুঝবো?”

“আমরা ছেলেরা মেয়েদেরকে মিষ্টি ঐশ্বর্য রমণী এসব নামে ডাকি।মোহিত হয়ে ডাকা হয়।যেমনটা মিষ্টি এক ভালোবাসার খাবার তেমন নারী হলো ভালোয়াবার স্থান।মিষ্টি যখন ঢাকনা/গ্লাস দিয়ে ঢাকা ছিলো তখন ঐ মিষ্টির উপর মাছি বসেনি।কিন্তু উন্মুক্ত মিষ্টিতে মাছি এসে বসেছে।সেখানে আপনি একজন নারী মিস শ্রেয়া।আপনার দিকে পুরুষের নজর থাকবে।দেখুন পৃথিবীতে ভিন্ন মস্তিষ্কের মানুষ আছে।নারী পুরুষের মধ্যেও ভালো মন্দ আছে।এর একটা প্রমাণ আমি আপনি নিজেদের জীবন থেকে পেয়েছি।নারীরা অনেক সময় নিজেদের রক্ষা করতে পারে না কারণ তারা নর্দমার পশুদের খোক্করে পড়ে।আবার কিছু পুরুষের জীবনে নোংরা মস্তিষ্কের নারী জোটে।পুরুষকে করে দেয় ছারখার।তাই যতটুকু সম্ভব নিজেদের রক্ষা করতে হয়।আপনি যখন কোনো সমস্যায় পড়বেন অগে দেখবেন আপনার আশেপাশে লোক আপনাকে কোন পরিবেশে নিয়ে যাচ্ছে।আদৌ কি আপনাকে সাহায্য করছে নাকি সাহায্যের নামে ঝুঁকিতে ফেলছে।আপনার পোশাকে জুস ইচ্ছা করে ঢালা হয়।মিমি আমাকে বলে দেয় এটা।তবে মিমি বুঝতে পারে না আগে।আমরা আপনাকে না পেয়ে খুজতে খুজতে এদিক ওদিক জিজ্ঞাসা করাতে মিমি বলে আপনি এদিকে এসেছেন।মিমি মনে করেছিলো আপনাকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য জ্যাক হয়তো ওয়েটারকে টাকা দিয়েছে।ছোট মেয়ের মাথায় যেটুকু আসে আর কি।কিন্তু আমরা বুঝে যাই।মেয়েটাকে ফায়ার করে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু আপনাকেও আরো বেশি সচেতন হতে হবে।আপনি অন্তত ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য অর্পা বা ইভাকে নিতে পারতেন।যেহেতু কিছু চিনেন না জানেন না।”

কথাগুলো বলে ফারাজ আবার চলে যেতে নেয়।কিছুটা হেটে আবারও শ্রেয়ার দিকে ঘুরে বলে,”রাগের মাথায় কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম। আঘাত করার ইচ্ছা ছিলো না।”

সরাসরি সরি বলতে পারলো না ফারাজ।কিন্তু এটা যে সরির জন্য বলা শ্রেয়া বুঝে নিলো।ফারাজ যেতেই ঠোটটা হাসি হাসি করে চাঁদ দেখতে থাকলো।

চলবে…?
এতদিন পরীক্ষার জন্য গল্প দেইনি। পড়ার চাপ অনেক বেশি ছিলো আর আমার জ্বর আসছিলো।এবার থেকে রেগুলার গল্প দিবো ইন শা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here