#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩৮
[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]
শীতের রাত। কনকনে ঠান্ডা। চারিদিক ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে। ঘড়ির কাঁটায় এখন বাজে রাত সাড়ে বারোটা। মাঝে মাঝে শীতে জর্জরিত হয়ে কাছেপিঠে থাকা কুকুরগুলা আ’র্ত’নাদ করে উঠছে এই প্রকাণ্ড শীতের মাঝে নিজেকে একটু উষ্ণ করার জন্য।
জাহিন ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালে হেলান দিয়ে। ভেজা চুলগুলা পুরো কপাল জুড়ে পড়ে রয়েছে। একটু আগেই শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে সে। পড়নে ফুলস্লিভ টি শার্ট আর ট্রাউজার। বা হাতটা পেটের উপরে রেখে তাতে ডান হাতের কনুই রেখে তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল ঠোঁটের উপর ঠেকিয়ে এক নজরে আধ শোয়া হয়ে থাকা অয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন্তি দুধ খাওয়ার ফাঁকে চোখ তুলে জাহিনের দিকে তাকায়। জাহিন সাথে সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে দু হাত গুঁজে নজর সরিয়ে নেয়। অয়ন্তি কুসুম গরম দুধ ভর্তি পুরো গ্লাসটা শেষ করল। জোহরা বেগম দুধের গ্লাসটা বা হাতে নিয়ে অয়ন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পরম মমতা ভরা কন্ঠে বলে।
“অনেক ধকল গেছে শরীরের উপর দিয়ে এবার চুপটি করে ঘুমাও।”
অয়ন্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়। জোহরা বেগম বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই ঘরে থাকা সকলে এক এক করে বেরিয়ে যেতে শুরু করল। জোহরা বেগম ছেলের কাছে এসে বলেন।
“শুয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে আর আজ যা হয়েছে সেগুলা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলে দে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।”
জাহিনের মাকে খুব বলতে ইচ্ছে করছে, সব ভালো কি আল্লাহ আমার কপালেই লিখে রেখেছেন নাকি। যদি লিখে থাকেন তাহলে এই ভালো কাজগুলা লেখার দরকার নেই এর চেয়ে খারাপ কিছু লিখে দেক। কিন্তু জাহিন মনের কথা মনে রেখেই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মাথা নাড়ায়। জোহরা বেগম চলে যান। পুরো রুম খালি শুধু রয়ে গেছে দুজন মানব মানবী। জাহিন চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। অয়ন্তির দিকে তাকালে দেখে অয়ন্তি মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এই চাওনি তাকে বড্ড বেসামাল করে তুলে বুকের ধুকপুকানিটা যেন একটু বেশি মাত্রায় বেড়ে যায়। জাহিন ধীর পায়ে হেঁটে সুইচবোর্ড টিপে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দরজার সিটকানি লাগিয়ে দেয়। অয়ন্তি কোমর পর্যন্ত ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে আধ শোয়া অবস্থায় বসে রইল। অয়ন্তি শুকনো ঢোক গিলল। এখনও চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে জাহিনের করা দৃশ্য গুলা ভাসছে। কত্তটা ব্যাকুল হয়ে তার সারা মুখমন্ডলে নিজের উষ্ণ, নরম ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়েছিল। মনে হচ্ছে যেন এই ছোঁয়াগুলা এখনও তার গায়ে মেখে আছে। অয়ন্তি মনে মনে ভাবছে ভালোই হয়েছে সে কিডন্যাপ হয়েছে। কিডন্যাপ হওয়ার কারণেই তো আজ অন্য এক জাহিনকে দেখতে পেয়েছে। যেই জাহিনের চোখ ছিল তাকে হারানোর ভয়।
জাহিন বেডে বসে কিয়ৎক্ষণ চুপ করে থেকে মৃদু আলোয় অয়ন্তির মুখের দিকে ফিরে শান্ত গলায় জিঙ্গাসা করল, “এখন ঠিক লাগছে শরীরটা। খারাপ লাগছে না তো।”
অয়ন্তির মুখে “রাও” নেই সে শান্ত চোখে তাকিয়ে রইল স্বামীর পানে। অয়ন্তির এমন চাওনি দেখে জাহিন আতকে উঠে আকুল কন্ঠে বলে, “কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে বুঝি?”
জাহিন অয়ন্তির দিকে এগিয়ে এসে অয়ন্তির কপালে, গলায় হাত রেখে চেক করে নরম গলায় বলল, “জ্বর তো নেই তাহলে?”
অয়ন্তি আকস্মিক জাহিনকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো বলতে লাগল, “কিচ্ছু হয় নি আমার নেতা মশাই কিচ্ছু হয় নি। আমি একদম ঠিক আছি।”
জাহিন একদমেই প্রস্তুত ছিলো অয়ন্তির এমন কিছু একটা করবে বলে। এভাবে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরার কারণে জাহিনের শরীর কিছু হেলে পড়ে। জাহিন ঢোক গিলে নিজেকে সামলে নিয়ে অয়ন্তির বাহুর উপরে এক হাত রাখে। অয়ন্তি স্বামীর বুকে মাথা রেখে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়ে জাহিনের টি শার্টে আঁকড়ে ধরে ক্ষীণ গলায় বলল, “আমায় খুঁজে পেতে আপনি খুব দেরি করে ফেলেছেন নেতা মশাই। জানেন কতটা অপেক্ষায় ছিলাম আপনার।”
জাহিন চোখ বন্ধ করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল, “সরি আর দেরি হবে না এবার থেকে আরো আগে আপনার কাছে পৌঁছে যাব।”
কথাটা বলে থেমে গিয়ে আবারো বলে, “নাহ এমনটা আর হতেই দিব না। আর কাউকে ছুঁতে দিবো না আপনাকে।”
অয়ন্তি মৃদু হেসে মাথা তুলে জাহিনের দিকে তাকিয়ে আবদার করে বলে, “একটা গান শুনাবেন নেতা মশাই।”
জাহিন ভ্রু কুঁচকে বলে, “গান। এই সময়।”
“গান গাইতে বুঝি নির্দিষ্ট সময় লাগে।”
“নাহ তা লাগে না কিন্তু আমি ভালো গান গাইতে পারি না।”
“যেমনই পারুন।”
জাহিন কিছু একটা ভেবে বলে, “উমম! আমি গান গাইলে কি দিবেন আপনি আমায় এর পরিবর্তে?”
“আপনি যা চাইবেন তাই দিব।”
“যা চাইব তাই দিবেন।”
অয়ন্তি মাথা উপর নিচ করে। জাহিন মুচকি হেসে বলে, “থাক এখন কিছু চাইব না এখন আপনি নিজ থেকে না হয় আমায় কিছু দিয়েন। পরের বার না হয় আমি চেয়ে নিব।”
“ঠিক আছে তাহলে শুরু করেন।”
“কি শুরু করব?”
“ওমা গান গাওয়া।”
অয়ন্তি কথাটা বলে জাহিনের বুকে মাথা রাখে। জাহিন ঢোক গিলে গলা খাকারি দিয়ে গাইতে শুরু করল। প্রগাঢ় তার গলার স্বর। নিরব, নিস্তব্ধ কক্ষে যেন চারদিক থেকে জাহিনের গভীর কন্ঠের প্রতিধ্বনি হতে শুর করল।
❝ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান, ঘুমাও আমার কোলে
ভালবাসার নাও ভাসাবো, ভালবাসি বলে
তোমার চুলে হাত বুলাবো, পূর্ণ চাঁদের তলে
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার, জোসনা পড়ুক কোলে
আজকে তোমার মনকে জড়ায়, ধরবে আমার মন
গাইবে পাখি, গাইবে জোনাক গাছ গাছালি বন
এত ভালবাসা গো জান, রাখিও আঁচলে
দোলাও তুমি, দুলি আমি জগত বাড়ি দোলে।❞
জাহিন পুরো গানটা গেয়ে থামে। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে গানটা অনুভব করল। নাম না জানা এক শীতল শিহরণ বয়ে গেল মনের মাঝে। বুকের উঠানামা বেড়ে গেছে। জাহিন অয়ন্তির কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভাবে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই জাহিন অয়ন্তির বাহু ধরে নিজের বুকের উপর থেকে সরাতে নিবে সাথে সাথে অয়ন্তি জাহিনের ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে দিয়ে বলে, “আমি ঘুমাই নি নেতামশাই।”
জাহিন অয়ন্তিকে নিজের বুক থেকে সারাতে গিয়েও সরালো না। আস্তে করে প্রশ্ন করল, “খুশি এবার।”
অয়ন্তি মাথা নাড়ায়। জাহিন নরম গলায় বলল, “তাহলে ঘুমান এখন, অনেক রাত হয়েছে।”
কিন্তু অয়ন্তি জাহিনকে চমকে দিয়ে দু হাত দিয়ে জাহিনের পিঠ শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। জাহিন বড্ড অবাক হয়। অয়ন্তির আচরণ অদ্ভুত লাগছে তার কাছে। অয়ন্তি ক্ষীণ গলায়, “চোখ বন্ধ করুন তো একটু নেতা মশাই।”
জাহিন হতবাক হয়ে বলল, “কেন?”
“আহ করুন না এতো প্রশ্ন না করে।”
জাহিন জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করল। অয়ন্তি আস্তে আস্তে জাহিনের বুক থেকে মাথা তুলে জাহিনের মুখের দিকে তাকায়। চোখ বন্ধরত জাহিনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে। গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, সরু নাক, ডান কানের একটু সাইডে মস্ত বড় একটা কালো তিল। এই তিলটা যেন একটু বেশি সুন্দর কিন্তু দাঁড়ির আড়ালে লুকিয়ে থাকার কারণে সৌন্দর্যটা ঢেকে থাকে। নিঃসন্দেহে লোকটি সুদর্শনের খাতায় নাম লিখাতে পারবে আবলীলায়। অয়ন্তি হাসে তার বর এতো সুন্দর, ইস আগে কেন খেয়াল করে নি সে। বড্ড আফসোস হচ্ছে এখন তার। অবশ্য খেয়াল করবেই বা কি করে এভাবে দেখার সুযোগ তো হয় নি। জাহিন চোখ বন্ধ অবস্থায় ভরাট কন্ঠে বলে উঠে।
“কি করছেন আপনি অয়ন্তি?”
অয়ন্তি নিজেকে উঁচু করে জাহিনের মুখ বরাবর হয়। জাহিনের মুখের উপরে আছড়ে পড়ছে অয়ন্তির উত্তপ্ত শ্বাস। জাহিন ভ্রু কুঁচকে নেয় কি করতে চাইছে কি এই মেয়ে? অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে লাজ লজ্জা পেছনে ফেলে দিয়ে জাহিনের গালে টুপ করে চু’মু খেয়ে দূরে সরে যায়। জাহিন তড়িৎ বেগে চোখ মেলে তাকায়। এই মুর্হূতে কি করল অয়ন্তি এটা? জাহিন হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মাথা নিচু করে থাকা অয়ন্তির দিকে। জাহিন বাম হাতটা নিয়ে যায় অয়ন্তির চু’মু দেওয়ার স্থানে। এদিকে অয়ন্তি এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে নিজেও অবাকের শেষ চূঁড়ায় পৌঁছে গেছে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রইল। এবার জাহিন কি ভাববে তাকে? ইস! অয়ন্তির এই কাজের দ্বারা জাহিনের নির্জীব হয়ে থাকে অনুভূতি গুলা যেন তরতর করে সতেজ হয়ে উঠছে। এই বেসালাম অনুভূতি গুলা আর সামলে রাখা পসিবল নয় তার জন্য। এবার অয়ন্তিকেই এই ভার নিতে হবে। সে অপরাধ করেছে এবার অপরাধের শাস্তিও পেতে হবে তাকে।
জাহিনের শীতল হাত দুটো রোবটের ন্যায় অয়ন্তির উষ্ণ গালে রাখল। অয়ন্তি মোচরে উঠল জাহিনের শীতল ছোঁয়া পেয়ে। শ্বাস ভারী হয়ে আসছে, গলা শুকিয়ে আসছে, হাঁসফাঁস লাগছে তার। জাহিন অয়ন্তির মুখটা উপরে তুলে এক নজরে তাকিয়ে রইল। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নানান কিছুর আভাস দিচ্ছে মনের মাঝে। ঠান্ডায় আর লজ্জায় অয়ন্তির ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে। ভ্রু-যুগলের মাঝে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে আছে তার। তিরতির করে কাঁপতে থাকা অয়ন্তির ঠোঁট জোড়া যেন জাহিনকে আরো বেশি আকৃষ্ট করছে। জাহিন একটা ঘোর মাঝে পড়ে গেছে। এই গভীর ঘোর থেকে বেরিয়ে আসা যেন অসহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাহিন ঢোক গিলে আবেশে চোখ বন্ধ করে অয়ন্তির কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়। অয়ন্তির ঠোঁটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট দ্বারা আঁকড়ে ধরল। অয়ন্তি আনমনে এক হাত দ্বারা জাহিনের টি শার্ট খামছে ধরল আর অন্য হাত দিয়ে জাহিনের গলা পেঁচিয়ে তার চুল খামছে ধরল। জাহিন এক প্রকার পাগলের ন্যায় আচরণ করছে। বা হাত দিয়ে অয়ন্তির কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরল। শান্ত শ্বাস প্রশ্বাস অশান্ত হতে শুরু করল। জাহিনের বেসামাল হাতের ছোঁয়া অয়ন্তির সারা শরীরের বিচরণ হতে শুরু করল। অয়ন্তি চোখ মুখ শক্ত করে খিঁচে বন্ধ করে রইল।
জাহিন থামে ধীরে ধীরে অয়ন্তির কাছ থেকে সরে আসে। অয়ন্তি চোখ বন্ধ করে রয়েছে। দুজনই জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। জাহিনের ঘোর যেন এখনও কাটে নি সে এক পলক অয়ন্তিকে দেখে পুনরায় অয়ন্তির অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দেয়। অধরে অধর মিলিত অবস্থায় জাহিন অয়ন্তিকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। নিজের বেসামাল অনুভূতি গুলা নিকড়ে দিচ্ছে অয়ন্তির শরীরের ভাঁজে ভাঁজে শীতল হাতের স্পর্শ এঁকে দিয়ে। জাহিনের পাগলামিতে অয়ন্তি প্রথমে সায় না দিলেও এখন সায় দিতে শুরু করল। জাহিন পেয়ে বসল। উন্মাদের মতো চু’মু খেতে লাগল। জাহিন ঠোঁট ছেড়ে বউয়ের গলার মাঝে নিজের মুখ ডুবিয়ে অজস্র চু’মুর বর্ষণ দিয়ে যাচ্ছে অয়ন্তি অঙ্গে। পাগল প্রায় জাহিনকে সামলাতে পারছে না অয়ন্তি। এমনিতেই তার শরীর ক্লান্ত আর তার উপরে জাহিন এমন পাগলামো করেছে যেটা অয়ন্তি আর সহ্য করতে পারছে না। সে বড্ড ভুল করে ফেলেছে এই ঘুমন্ত বাঘকে জাগিয়ে তুলে। জাহিন অয়ন্তির বুক থেকে শাড়ির আঁচলটা সরাতে নিলে কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে। কি করছিল এতক্ষণ সে আবেগের বশীভূত হয়ে? অয়ন্তির উপর দিয়ে আজ এত বড় ধকল গেছে আর সে কিনা এভাবে? জাহিন সটান অয়ন্তির উপর থেক সরে আসল। অয়ন্তি প্রাণ ভরে শ্বাস নিল। দম বন্ধ হয়ে আসছিল তার। জাহিন নিজেকে তটস্থ করল, একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে আজ। জাহিন ঘাড় ঘুরিয়ে অয়ন্তির দিকে তাকাল অয়ন্তি আগের ন্যায় বিছানায় পড়ে রইল চোখ বন্ধ করে। জাহিন তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে দু হাত দিয়ে চুল খামছে ধরল ক্রোধে। উঠে চলে যেতেও পারছে না অয়ন্তিকে একা রেখেও। জাহিন ঢোক গিলে অয়ন্তির উপরে হালকা ঝুঁকে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে।
“অয়ন্তি।”
অয়ন্তি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। জাহিন অয়ন্তির ঠোঁটের কোণে বৃদ্ধাঙ্গুল রেখে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে বলে, “সরি। একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। কিন্তু দোষ কিন্তু আপনার ওভাবে যদি চু’মুটা না দিতেন আমাকে তাহলে এমনটা হতো না কিন্তু। আমি নিজেকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম, আপনি আমায় উস্কে দিয়েছেন।”
অয়ন্তির লজ্জায় মন চাইছে মাটি ফাঁক করে গভীরে চলে যেতে। নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো ভালো কথা তা বলে এভাবে বলতে হবে কথাটা সে উস্কে দিয়েছে। সে তো গান গাওয়ার পরিবর্তে চু’মুটা দিয়েছিল। কে জানত এমনটা হবে? জাহিন মুদৃ হেসে অয়ন্তির ঠোঁটের নিচে ছোট্ট করে চু’মু দিয়ে অয়ন্তিকে নিজের বুকে এনে বলে।
“ঘুমান এবার। অন্য আরেক রাতে পুরো কাজটা কমপ্লিট করব কেমন?”
অয়ন্তি চোখ বড়বড় করে তাকায়। অন্য আরেক রাতে পুরো কাজটা কমপ্লিট করবে মানে কি? কি করার কথা বলছে এই লোক? অয়ন্তি মুখ তুলে জাহিনের দিকে তাকায়। জাহিন তা দেখে অয়ন্তির এলোমেলো চুল গুলা কানে গুঁজে দু চোখের পাতায় হাত রেখে ফিচেল স্বরে বলে।
“চোখ বন্ধ করে ঘুমান।”
অয়ন্তি মাথাটা নুইয়ে নেয়। জাহিন মুচকি হেসে অয়ন্তির চুলের ভাঁজে হাত বুলাতে শুরু করে।
_______
রাত দুটো বাজে। সাখাওয়াত ভিলার কলিং বেল বেজে উঠে। সদর দরজা খুলে দেয় সাখাওয়াত বাড়ির গিন্নি পাপিয়া সুলতানা। যুবকটি এক পলক মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বাইরের জুতা না খুলেই ভেতরে প্রবেশ করে। পাপিয়া সুলতানা দরজা লাগিয়ে কন্ঠে তেজ এনে বলেন।
“দাঁড়াও লাবীব।”
থেমে যায় যবুকটির পদাচরণ। পাপিয়া সুলতানা ছেলের সামনে এসে গম্ভীর গলায় বলেন, “কোথায় ছিলে তুমি?”
লাবীব তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। পাপিয়া সুলতানা তা দেখে বলেন, “তুমি হাসছো। তুমি জানো তোমাকে নিয়ে কতটা টেনশনে থাকি। কোথায় থাকো না থাকো তা কিচ্ছু বলে যাও না তুমি। এমনকি কল করলেও কল পর্যন্ত ধরো না। কোথায় ছিলে তুমি এত রাত অব্দি?”
লাবীব শান্ত গলায় বলল, “আপনাকে বলতে বাধ্য নই আমি কোথায় ছিলাম।”
“লাবীব আমি তোমার মা হই ভুলে যেও না।”
“ভুলে যাই নি তো। ভুলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। যেই মা নিজের সন্তান কিসে ভালো থাকবে কিসে আনন্দে থাকবে সেটার কথা বিবেচনা করে না। সেই মাকে কি করে ভুলা যায়?”
“আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি।”
লাবীব নিঃশব্দে হেসে বলে, “তাই। কিন্তু আপনি আমার ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে দিয়েছেন। আমাকে দেখে কোন দিক দিয়ে মনে হচ্ছে আপনি ভালো কাজ করেছেন বলবেন একটু?”
“লাবীব দেখো যা হওয়ার হয়ে গেছে। মেয়েটা বিয়ে করে সুখে সংসার করছে এখন।”
“সেই সুখে সংসারটা আমার সাথে করতে পারত।”
“বিয়ের দিন তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল লাবীব।”
লাবীব গাড়ির রিংটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে, “এক্সিডেন্ট এক্সিডেন্ট এক্সিডেন্ট তাতে অয়ন্তির কোথায় দোষ ছিল?”
“ও একটা অপয়া লাবীব, ওর মা আর দাদু ওর জন্যই মারা গেছেন। মা হয়ে চাইব না ওই মেয়েটার জন্য তোমার কোনো ক্ষতি হোক।”
“কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অয়ন্তি না আপনি অপয়া। আপনি আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছেন। প্রতিনিয়ত আমি এক অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করি। বেঁচে থেকেও আমি একটা প্রাণহীন বস্তুর মতো আছি।”
মা ছেলের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সায়েম সাখাওয়াত, “কি হচ্ছে কি এসব?”
লাবীব অবলীলায় বলে, “আপনার স্ত্রীকে জিঙ্গাসা করুন।”
কথাটা বলেই লাবীব সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। সায়েম সাখাওয়াত স্ত্রীকে বলেন, সম্পূর্ণ দোষটা তোমার পাপিয়া। তুমিই ছেলেটাকে এমন হতে বাধ্য করেছো।”
“আমি ছেলের বিয়ে দিব।”
“দেখো পারো কিনা?”
কথাটা বলে সায়েম সাখাওয়াত চলে যান। পাপিয়া সুলতানা সোফায় বসে পড়েন সে কি ভুল করে ফেলেছে। না সে ভুল করে নি সে যা করেছে ঠিক করেছে। ওই মেয়ে অপয়া না হলে দ্বিতীয় বিয়েতে এত এত নাটকীয়তা হয় কি করে?
লাবীব নিজের ঘরে এসে ধপ করে চিত হয়ে বেডে শুয়ে পড়ে। আজ যখন অফিসের কাজ শেষ করে অফিস থেকে বেরিয়ে ছিল তখন হঠাৎ করেই মাঝ রাস্তায় একটা পরিচিত কন্ঠের চিৎকার শুনে সে চমকে যায়। পরক্ষণে বুঝতে পারল এই কন্ঠের মালিকটা কে। তারপরেই শুরু হল সেই কালো গাড়িটাকে ফলো করা। আর এরপর অয়ন্তিকে উদ্ধার করার কাজে সফল হওয়া। সফল হয়েও অয়ন্তিকে হারিয়ে ফেলে শেষ মুহূর্তে। আচ্ছা অয়ন্তি এখন কি করছে? নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কবে দেখা হবে আবার তাদের? লাবীব শুয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক কদম হেঁটে এগিয়ে যায় বড় একটা পেন্টিং এর সামনে। তার সামনে হাস্যজ্জ্বল চেহারার অয়ন্তি বসে রয়েছে। এই পেন্টিংটা সে নিজ হাতে এঁকেছে। লাবীব পেন্টিংটার উপরে হাত রেখে বলে।
“তুমি কি জানো অয়ন্তি তুমি যখন প্রাণ খোলে হাসো তখন তোমাকে কত্তটা অপূর্ব লাগে দেখতে।”
কথাটা বলে কিয়ৎক্ষণ থেমে বলে, “আচ্ছা তোমার একবারও আমার কথা মনে পড়ে না। ভুলে গেছো আমাকে তাই না। সমস্যা নেই মনে করিয়ে দিব তোমায়, কে ছিলাম আমি?”
#চলবে