#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১৪
এক সুঠামদেহী সুদর্শন পুরুষ বেলকনিতে বসে আছে।তার হাতে গরম ধোঁয়া উঠা কফির কাপ।একটু পরপর কাপে সময় নিয়ে চুমুক দিচ্ছে আর বাহিরের পরিবেশ দেখছে।আজকের দিনটা সুন্দর,রৌদ্রজ্বল।এখন কানাডাতে বসন্তকাল চললেও টরন্টোতে শীতকালই বলা চলে।শীতের জামা পরিধান করতে হয়।এই সময়টাতে কানাডা ফুলের রাজ্যে পরিণত হয়ে যায়।গাছে গাছে শুধু ফুল আর ফুল। নানান জাতের গাছ রয়েছে, যেগুলোতে কোনো পাতাই থাকে না, থাকে বিভিন্ন রঙের ফুল।যেন এক সাজানো বাসরসজ্জা।দোতলা বাড়িটার সামনের জায়গাজুড়ে দখল করে আছে সারি সারি চেরিফুল গাছ।আরো কত রঙের বিচিত্র ফুল।বেলকনিটা মানবের প্রিয় একটা জায়গা।এখানে বসে রঙ-বেরঙের ফুলের সাথে ভাব জমানো যায়,গল্প করা যায়,দুঃখবিলাস করা যায়।
একটু আগেই মানব ঘুম থেকে উঠে নিজ হাতে কফি বানিয়ে বেলকনিতে এসেছিলো।আজ তার খুশির দিন।সে আজ দু’বছর পর বাংলাদেশে ফিরবে।দু’ঘন্টা পর তার ফ্লাইট।
কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে মানব উঠে দাঁড়ায়। ঘরের ভেতর চলে যায়।তার নজর আঁটকায় দেয়ালে ঝুলানো একটা ছবির ফ্রেমে।তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।সে এগিয়ে যায় ছবিটার দিকে।ছবিটায় তার পাশে একটা মেয়ে বসা।যার চোখে-মুখে খুশির ঝলক,প্রাপ্তির হাসি।মেয়েটার চোখে জল,প্রাপ্তির আনন্দ।ক্যামেরামেন অনেক সুন্দর করে ছবিটা তুলেছিলো।ছবিটা মানবের বিয়ের।কোনো সাজপোশাক নেই।একদম ঘরোয়া পোশাকে তার বিয়ে হয়েছিলো।মানব ছবির ফ্রেমটা নিজের হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
“আমি আসছি বউ।আমার প্রায়শ্চিত্ত শেষ। এবার ভালোবাসা-বাসি হবে সমানে সমানে।”
তারপর ছবিটা লাগেজে রেখে দেয়।
বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।এই গাড়ি করেই মানব এয়ারপোর্টে যাবে।সব লাগেজ গাড়িতে রেখে বাড়ির চাবি বাড়ির আসল মালিকের হাতে দিয়ে দেয় সে।তারপর টুকটাক কথা বলে গাড়িতে উঠে বসে।তার নজর আটকায় বাড়ির সামনে ঝলঝল করা নেমপ্লেটটায়, যেখানে তার নাম লেখা।তার ঠোঁটে হাসির রেখা।এখন সময় হয়েছে অস্থায়ী নীড় ছেড়ে পুরনো বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার।গাড়ি চলতে শুরু করে সরু রাস্তা ধরে।পিছনে ফেলে রেখে যায় কয়েকজন পরিচিত মানুষ, সেই দোতলা বাড়ি,সারি সারি চেরিফুল গাছ এবং সেই নেমপ্লেটটা,যেখানে বড় বড় অক্ষরে ঝলঝল করছে,
“আফনান আহমেদ সংকল্প”
সেদিনের পর কেটে গেছে দুই বছর।সেদিন রাইমাকে বাঁচানো যায় নি।প্রতিজ্ঞাকে কেবিন থেকে বের করার সময়ই খবর আসে রাইমা পৃথিবী ত্যাগ করেছে।ঐদিন এমনিতেও প্রতিজ্ঞার হার্ট নেওয়া হতো না।সে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিলো বিধায় কাউন্সিলর ডাক্তারকে ফোনে প্রতিজ্ঞার সব কথা বলে।আর এও বলে যে তারা হাসাপাতালে পৌঁছানোর আগ অব্ধি প্রতিজ্ঞা যা বলে তাই শুনতে।যদি পৌঁছাতে দেরী হয় তাহলে যেনো অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে ঘুমের ইনজেকশন পুষ করে।নাহয় মেয়েটা বেশি উত্তেজিত হয়ে গেলে সমস্যা।সবে মাত্রই সুস্থ হয়েছে মেয়েটা।আবার অসুস্থ হয়ে গেলে সেরে উঠা সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়াবে।তাই তার সাথে ছোট্ট একটা নাটক করা হয়েছিলো।
সেদিন আহমেদ মেনশন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো।বাড়িতে কান্নার আহাজারি।সেদিন জাহানারা বেগমও কেঁদেছিলেন।যতই হোক রাইমা তার ছেলের বউ ছিলো।এতো তাড়াতাড়ি তার ছেলের জীবনে এমন একটা ঝড় তিনি সইতে পারেন নি।প্রতিজ্ঞা এবং তার পরিবারের লোকও সেদিন এবাড়িতে এসেছিলো।
অবাক করা বিষয়,সেদিন সন্ধ্যাবেলায় ফ্রাঞ্চিস আহমেদ মেমশনে এসে উপস্থিত হয়।জানা যায়,রাইমা নাকি জানতো সে আসবে।সেদিন রাইমার লা শের সামনে বসে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছিলো ছেলেটা।রাইমা হয়তো সঠিক মানুষকেই ভালোবেসে ছিলো।কিন্তু প্রকৃতি সব ভালোবাসা মেনে নেয় না।ফ্রাঞ্চিস এক সপ্তাহ সংকল্পের সাথে বাংলাদেশে থেকে ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে যায়।
রাইমার জানাজা শেষে সংকল্প ঘরে এসে বসে।তার কোনো হেলদোল নেই,অনুভূতি নেই।তাদের মধ্যে তো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিলো না কখনোই।তবে মেয়েটার অকালে চলে যাওয়ায় তার খারাপ লেগেছিলো।মেয়েটা কয়েকদিনে তার বন্ধু হয়ে উঠেছিলো।বিছানায় তাকাতেই তার নজর পড়ে ঐ চিঠিটায়।সে চিঠিটা খুলে।দেখলো তার কাবিননামা।যার কোনো প্রয়োজনই নেই এখন।কাগজটা ভাজ করতে গেলেই তার চোখ যায় কনে সই করার অংশটায়,যেখানে রাইমার সই নেই।অংশটা সম্পূর্ণ খালি।সংকল্পের খটকা লাগে।এমন তে হওয়ার কথা না।সে শাহআলম সাহেবের থেকে তাদের বিয়ে পড়ানো কাজীর নাম্বার নিয়ে ফোন করে তাকে ডেকে পাঠায়।
আহমেদ মেনশনের বড় ড্রয়িংরুমে মুখোমুখি বসে আছে সংকল্প এবং কাজী সাহেব।তাদের পাশে বসে আছে শাহআলম সাহেব,তার ছোট ভাই সাইদুল সাহেব,রাইমার বাবা-মা,ফ্রাঞ্চিস,জাহানারা বেগম, মাধুরী বেগম।পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিজ্ঞা ও বন্ধুমহল।সবার দৃষ্টি কাজী সাহেবের দিকে।কাজীর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বসে আছেন।এসি ছাড়ার পরেও তরতর করে ঘামছেন।হাতের রুমালটা দিয়ে বারবার কপাল মুছেন।
সংকল্প শক্ত গলায় বলে,
“এখানে রাইমার সই নেই কেনো?সত্যি কথা বলবেন।মেয়েটা এখন পৃথিবীতে নেই।”
কাজী সাহেব ঢোক গিললেন।তবুও মৌনতা অবলম্বন করলেন।সংকল্প আবার ধমকে উঠলো।বললো,
“চুপ করে আছেন কেনো?বলুন।”
কাজী সাহেব আমতা আমতা করে বলে,
“আপনাদের বিয়ে হয় নি।”
বাক্যটা ড্রয়িংরুমে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো।উপস্থিত সকলে যেনো আকাশ থেকে পড়লেন।সবাই নড়েচড়ে বসলো।দূরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিজ্ঞার চিত্ত কেঁপে উঠলো।এ কেমন সত্যি!এবার পূর্ণ মনোযোগ দিলো কাজীর দিকে।
শাহআলম সাহেব গর্জে উঠলেন।বললেন,
“মানে?”
কাজী সাহেব মাথানত করে থেমে থেমে বলতে লাগলেন,
“আপনাদের হয়তো মনে আছে বরের সাথে কনেকে বসানোর পর কনেকে যখন কবুল বলতে বলা হয় সে অজ্ঞান হয়ে যায়।তারপর জ্ঞান ফিরলে তার সবার সামনে কবুল বলতে লজ্জা লাগছে বিধায় তার ঘরে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে শুধু কন্যার মা,আমি এবং কন্যা উপস্থিত ছিলো।কন্যার মাকে কেউ একজন ডেকে পাঠালে তিনি চলে যায়।তখন কন্যা আমাকে দশ হাজার টাকা দেয়।আর বলে আমি যেনো সবাইকে বলি বিয়ে হয়েছে।সে নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে।কিছুদিন পর পালিয়ে যাবে।সে চায়না ছেলেটার জীবন নষ্ট হোক।তাই বিয়েটা করবে না।আমি প্রথমে রাজি হইনি কিন্তু টাকার লোভ সামলাতে….. ”
আর কিছু বলতে পারলেন না কাজী সাহেব।সংকল্প হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো।এতক্ষণে তার কাছে সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়।এরজন্যই রাইমা তাকে বলেছিলো যেদিন সে অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইটে উঠবে সেদিন সংকল্পকে একটা উপহার দিবে।যেই উপহার সংকল্পের জীবন পরিবর্তন করে দিবে।এরজন্যই রাইমা কথায় কথায় বারবার বিয়েটাকে নাটক বলতো।সব সমীকরণ অবশেষে মিলে গেলো।
শাহআলম সাহেব কাজী সাহেবকে অনেকগুলো কথা শুনালেন।তারপর রাইমার বাবা-মাকে অনেক অপমান করলেন।এই ফাঁকে কাজী সাহেব সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান।
সংকল্প যেনো নিজের রাগ আর দমিয়ে রাখতে পারলো না।কপালের রগগুলো ফুলে দপদপ করে জ্বলতে থাকলো।চোখ দিয়ে যেনো অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে।তার জীবনটা একটা খেলনা হয়ে গেলো।যে যেভাবে পারছে নাচাচ্ছে।এই বিয়ের জন্য সে তার ভালোবাসা বুঝে উঠার আগেই হারিয়ে ফেলেছে।তার ভালোবাসার মানুষটা কতটা যন্ত্রণা সহ্য করেছে।মৃত্যু মুখ ফিরে এসেছে।ড্রয়িংরুমের একটা আসবাবপত্রও আর ঠিক থাকলো না।কিছুক্ষণের মধ্যেই ধ্বং সস্তূপে পরিণত হলো।সংকল্প সবকিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে।শান্তমানুষগুলা রাগলে বুঝি এমনই হয়।তাদের রাগ ভয়াবহ হয়।দু’হাত দিয়ে অঝরে র ক্ত ঝরছে।কেউ তাকে আটকাতে পারলো না।কারো কথা শুনলো না সে।সবকিছু ভেঙ্গে তবেই সে শান্ত হয়।
সংকল্প হাঁপাচ্ছে।রাগ যেনো এখনো শেষ হয় নি।জাহানারা বেগম ছেলের এমন অবস্থা দেখে আহাজারি শুরু করলেন।প্রতিজ্ঞা এতোক্ষণ চুপচাপ সব দেখছিলো।তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।এবার সে ধীর পায়ে সংকল্পের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।সংকল্প চোখ তুলে তাকালো প্রতিজ্ঞার দিকে।কিন্তু ঐ শান্ত চোখ দুটোর দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলো না।অপরাধবোধ তাকে ঘিরে ফেলে।চোখ সরিয়ে নিলো সে।
প্রতিজ্ঞা শান্ত স্বরে বললো,
“এতো রাগ দেখাচ্ছেন কেনো?বিয়ে করতে পারেন নি বলে?আসেন বিয়ে করিয়ে দেই।আমার পরিচিত অনেক মেয়ে আছে আপনার জন্য মরিয়া হয়ে আছে।এবার আমি স্বাক্ষী থাকবো।সত্যি সত্যি বিয়ে হবে এবার।”
সংকল্প শান্ত চোখে তাকালো প্রতিজ্ঞার দিকে।এই মেয়ে তার রাগ নিয়ে মজা উড়াচ্ছে!
“সরো সামনে থেকে” বলে পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় সংকল্প।
খাটে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে আছে সংকল্প।হাত থেকে র ক্ত পড়ছে,তাতে তার খেয়াল নেই।সে ভাবনায় মত্ত।সাবিহার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ধীর পায়ে সংকল্পের ঘরে প্রবেশ করে প্রতিজ্ঞা।নিজের ঘরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে তাকায় সংকল্প।প্রতিজ্ঞা সংকল্পের পাশে এসে বসে।
সংকল্প শক্ত কন্ঠে বলে,
“তুমি এখানে কেনো?”
“ঘুরতে এসেছি।”
সংকল্পের দিকে না তাকিয়েই জবাব দেয় প্রতিজ্ঞা।সে সংকল্পের হাত নিয়ে ড্রেসিং করতে থাকে।সংকল্প কয়েকবার হাত সরিয়ে নিলেও প্রতিজ্ঞার জন্য পারলো না।আবার হাত সরিয়ে নিতে গেলে প্রতিজ্ঞা রাগী কন্ঠে বললো,
“বাহ বাহ স্যার।আপনি এতো বিয়ে পা গল জানতাম না তো। বিয়ে করতে পারেন নি বলে কি রা গ টাই দেখাচ্ছেন!”
সংকল্প চোখ ছোট ছোট করে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
“তুমি আমার সাথে মজা করছো?মজা মনে হচ্ছে সবকিছু তোমার কাছে?”
প্রতিজ্ঞা চোখ তুলে চাইলো না।ব্যান্ডেজ করতে করতেই উৎফুল্ল হয়ে বললো,
“সত্যি বলতে আসলেই আমার মজা লাগছে।অনেক বেশি আনন্দ হচ্ছে।আমি তো ঠিক করে নিয়েছি আজ রাতেই সবাইকে ট্রিট দিবো।”
সংকল্প চেয়ে রইলো প্রতিজ্ঞার মুখের দিকে।মেয়েটার চেহারায় কতদিন পর খুশির আভা দেখা দিয়েছে।কিন্তু সংকল্প তাতে সায় দিতে পারলো না।অপরাধবোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় তাকে।
ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে প্রতিজ্ঞা চলে যেতে উদ্যত হয়।দরজা অব্ধি গিয়ে থেমে যায়।কিছু একটা ভেবে এক দৌড়ে ফিরে এসে বসে থাকা সংকল্পকে জাপটে ধরে বললো,
“আপনি সেদিন ঠিক বলেছিলেন সংকল্প।সময় যেমন সবকিছু কেঁড়ে নেয়,ঠিক তেমন ফিরিয়েও দেয়।এমন ভাবে ফিরিয়ে দেয় যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।”
বলে আবার এক ছুট্টে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আকস্মিক আক্রমণে সংকল্প হতভম্ব হয়ে যায়।ব্যাপারটা বুঝতে তার কিছুক্ষণ সময় লাগে।বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ থম মে রে বসে থাকে।তবে সে অনুভব করে তার শান্তি শান্তি লাগছে।কিন্তু সে শান্তি তো ক্ষণস্থায়ী।
সেদিন রাতে সংকল্প কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়।সে দেশ ত্যাগ করবে।কানাডা চলে যাবে।সে জানে প্রতিজ্ঞা এখন তার জীবনে আসতে চাইবে।কিন্তু সংকল্প এটা হতে দিতে পারে না।সে মনে করে প্রতিজ্ঞা আরো ভালো কাউকে পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।সে প্রতিজ্ঞার যোগ্য নয়।প্রতিজ্ঞা তার জন্য অনেক কষ্ট করেছে।জীবনটা অব্ধি দিয়ে দিতে দু’বার ভাবে নি।সে চায় না প্রতিজ্ঞার জীবন নষ্ট করতে।পরবর্তী দু’মাস সে ঘরবন্দী হয়ে থাকে।
যেদিন কানাডা যাওয়ার ফ্লাইট তার দুইদিন আগে সে তার দেশ ছাড়ার খবর বাড়িতে জানায়।শাহআলম সাহেব ছেলেকে কিছু বলতে পারেন না।তার ঐ মুখ নেই।তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে ছেলের জীবনটা নষ্ট করেছেন।সেই অনুতপ্ততা থেকে সে এখন ছেলের সামনে বড় গলায় কিছু বলতে পারেন না।জাহানারা বেগম অনেক আহাজারি করেন,কান্নাকাটি করেন তবে ছেলেকে আটকাতে পারেন না।
“বর্তমান”
বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টা।সংকল্প একটা দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আজ সন্ধ্যায় সে বাংলাদেশে পৌঁছায়।তবে নিজের বাড়িতে যায় নি।নিজের ফ্ল্যাটে উঠেছে।শুধুমাত্র তিনজন ব্যক্তি ছাড়া কেউ জানে না সে বাংলাদেশে ফিরেছে।এখন যে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে, এই বাড়িতে সে আগেও অনেকবার এসেছে।তবে আজকেই প্রথম চোরের মতো বাড়িতে প্রবেশ করবে।একটা মেসেজের অপেক্ষা করছে সে।মেসেজের আওয়াজ পেতেই সে তৎক্ষনাৎ স্ক্রিনে নজর দেয়।তার অধর প্রসারিত হয়।স্ক্রিনে ভেসে উঠে,
“দরজা খুলে দিয়েছি।ভেতরে এসো।চিন্তা করো না সবাই ঘুমোচ্ছে।”
সে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।ভেতরে প্রবেশ করতেই দরজা খুলে দেওয়া নারীর সাথে তার হাসি বিনিময় হয়।নারীটি ফিসফিসিয়ে বলে,
“সাবধানে ওকে?যাওয়ার সময় আমাকে নক্ দিও,আমি সজাগ আছি।”
সংকল্প মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে যায়।ভিড়িয়ে রাখা দরজাটা আস্তে করে খুলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে।দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“শ্বশুর বাড়িতে চোরের মতো ঢুকতে হয়।কি কপাল আমার মাইরি!এ কপালকে ইতিহাসে ঝুলিয়ে রাখা উচিত।”
তারপর পেছন ফিরতেই চোখ আটকায় এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে থাকা এক মানবীতে।কতদিন পর তাকে দেখছে।মানবীর এমন রূপ দেখে তার গলা শুকিয়ে এলো।মানবীর পরনে সাদা টি-শার্ট আর হালকা গোলাপি রঙের প্লাজো।ঘুমের মধ্যে টিশার্ট উপরে উঠে গেছে,অর্ধউন্মুক্ত উদর,গলার দিকেও কিছুটা নেমে এসেছে।প্লাজো হাঁটুর উপরে উঠে গেছে।সংকল্প ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে থাকা মানবীকে ঠিক করে দিলো।
ঘরের আলো না নিভিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে মানবী।তাই সংকল্প আলো নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বেলে দিলো।তারপর এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো মানবীর মুখের পানে।যেনো কত জনমের তেষ্টা মেটাচ্ছে।মানবীর কপালে সময় নিয়ে নিজের পুরো ঠোঁটের উষ্ণ পরশ দিলো।মানবীর খবর নেই,সে ঘুমে কাতর।মানবীর ডান হাতটা নিজের দু’হাতের মুঠোবন্দি করে তাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো।অনেক সময় হাতে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো।বিড়বিড়িয়ে বললো,
“কতদিন পর শূন্য বুকটা পূর্ণ হলো বউ।”
অনেকক্ষণ পর চলে যাওয়ার সময় কপালে আবার উষ্ণ পরশ দিয়ে বললো,
“তোমার অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি দাগ কাটলাম বউ।তোমার সব ক্ষত আমি মলম হয়ে দূর করে দিবো। তোমার সব দুঃখ,কষ্ট আমি ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবো।অনেক বেশিই ভালোবাসি বউ।”
#চলবে…
[স্যরি দেরী হওয়ায়।প্রথমত ২৪ ঘন্টার রেস্ট্রিকশন।তারপর পোস্ট করতে গিয়ে ১৬৯০ শব্দ কে টে যাওয়া।
আর গতকালকে দু’টো পর্ব পরপর দিয়েছিলাম যেনো আপনাদের কাছে সবটা ক্লিয়ার হয়ে যায় অথচ আপনারা লজিক না বুঝে আমাকে কথা শুনালেন।কাউন্সিলর ডাক্তারের সাথে কথা বলেছে,জীবিত মানুষ হার্ট দিতে পারে না,আরো ক্লু দিয়েও আপনারা আমাকে ধুয়ে দিলেন।আপনারা স্বাভাবিক মানুষ হয়ে লজিক খাটাতে পারলেন না।অথচ প্রতিজ্ঞা অসুস্থ হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করেছ বলে তাকে ন্যাকা বলতেও বাদ রাখলেন না।ধন্যবাদ।হ্যাপি রিডিং]
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/