হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো #মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা #পর্ব ১৭

0
123

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১৭

সূর্য অস্ত গেছে অনেকক্ষণ।আঁধারিয়া মেঘ ঘিরে ফেলেছে আকাশকে।মধ্যরাত!শহরবাসীর কেউ হয়তোবা ঘুমে মগ্ন, কেউ-বা জীবন নিয়ে চিন্তায় ব্যস্ত,কেউ-বা সুখে মগ্ন।প্রতিজ্ঞা বিছানার এপাশ-ওপাশ করছে।ঘুম আসছে না তার।আজ ঘুমের ওষুধ খায় নি।সে অপেক্ষায় আছে গতকাল রাতে আসা আগুন্তকের।তার ভাবনা আজ রাতেও সেই আগুন্তক আসবে।সে ধরবে তাকে,দেখবে কে সেই ব্যক্তি।কিন্তু রাত দু’টো বেজে গেছে আগন্তুকের আসার নাম নেই।প্রতিজ্ঞার রাগ লাগছে।আগন্তুককে পেলে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বে।একবার হাতে নাতে ধরা পড়ুক।প্রতিজ্ঞার ধ্যান ভাঙ্গে মেসেজের টুংটাং শব্দে।বিরক্তির সাথে ফোন হাতে নেয়।কে এতো রাতে মেসেজ দিলো!মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখে সকালের সেই অপরিচিত নাম্বারটা থেকে মেসেজ এসেছে।মেসেজটায় ক্লিক করতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠে,

“রাত জাগলে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল হবে,বউ।আমি চাই না আমার জন্য রাত জেগে তোমার সৌন্দর্য কোনো অংশে কমে যাক।
যখন রাত জেগে আমার আদর খাবা,তখন অন্য ব্যাপার।”

শেষ লাইন পড়তেই প্রতিজ্ঞা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো।ফর্সা গালদুটো লালচে বর্ণ ধারণ করতে গিয়েও করলো না।তরতর করে রাগ বাড়লো।মাটি চাপা দিলো লজ্জাকে।কেমন ঠোঁটকা টা!”বউ” শব্দ দেখে প্রতিজ্ঞার মনে হয় এই আগন্তুক সংকল্প,পরক্ষণেই মনে হয় সংকল্প তো এতো ঠোঁটকা টা স্বভাবের না।সে যথেষ্ট ভদ্র।সবসময় নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করে।দু’টো কথা বললেও সে ভেবেচিন্তে বলে।তাকে কেউ বাঁশ দিলেও সে চুপচাপ সয়ে যায়।প্রতিজ্ঞার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে আরেকটা মেসেজের টুংটাং শব্দে। স্ক্রিনে ভেসে উঠে,

“আমি কে সেটা ভাবতে গিয়ে নিজের আধ নষ্ট হওয়া মাথাটাকে ফুল নষ্ট করো না,বউ।রিল্যাক্স,আমি আজ আসবো না।”

প্রতিজ্ঞা চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।তার মাথা আধ নষ্ট!সে সাথে সাথে নাম্বারটায় কল দিলো।অবাক করা বিষয়,এখন রিং হচ্ছে,আগন্তুক ফোন বন্ধ করে নি।একবার, দুইবার,তিনবারের মাথায় কলটা রিসিভ হলো।কিন্তু ওপাশ থেকে নিঃশ্বাসের শব্দ ব্যতীত কোনো শব্দ এলো না।প্রতিজ্ঞা রাগান্বিত হয়ে বললো,
“এই কে আপনি?”

আগুন্তুক চুপ।কতদিন পর এই গলার স্বরটা শুনেছে।শরীর দিয়ে বয়ে চলে যায় এক প্রশান্তির স্রোত।

প্রতিজ্ঞার আবার শক্ত গলায় বললো,
“কে আপনি?কথা বলছেন না কেনো?”

এবারও আগন্তুক চুপ।সে তো প্রেয়সীর স্বরে বহুদিনের তেষ্টা মেটাতে ব্যস্ত।

বিপরীত পাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিজ্ঞা কল কেটে দেয়।রাগে গিজগিজ করতে করতে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়ে।বিপরীত পাশে রেখে যায় এক পা গল প্রেমিককে।যে প্রেয়সীকে বুকে টানার জন্য অধীর আগ্রহে দিনযাপন করছে।মানব চলে যায় বেলকনিতে।হাতে সিগা রেট।পুরুষালি ঠোঁটগুলোকে সিগা রেটের বিষা ক্ত ধোঁয়ায় পো ড়াতে শুরু করে। একে একে পাঁচটা সিগা রেট শেষ।তবুও শান্তি পাচ্ছে না।বিড়বিড়িয়ে বললো,

“তুমি আমার এমন এক নেশা বউ,যে নেশাকে পৃথিবীর কোনো অ্যালকোহল কা টাতে পারে না।তোমার থেকে দূরে গিয়ে নিজেকে প্রণয়ের দহনে পু*ড়িয়েছি,রোজ ছাড়খাড় হয়েছি।কত সহস্রাধিকবার ইচ্ছে করেছে তোমার কাছে ফিরে আসি,কাছে টেনে নিই তোমাকে,এই দহনে দ গ্ধ হওয়া হৃদয়কে শান্ত করি।পরক্ষণেই পিছিয়ে গেছি।তোমার পাওয়া কষ্টগুলো অনুভব করতে হতো যে।তবে এবার অপেক্ষার পালা শেষ,সামনে আসার সময় হয়ে গেছে।

রক্তলাল চোখগুলো আকাশে নিবদ্ধ।এই রাত জাগতে আরো কতগুলো সিগা রেটের সাহায্য নিয়েছে কে জানে!রোজকার অভ্যাস কিনা!

ধরণি সূর্যের আলোকে আলোকিত।সূর্য পৃথিবীবাসীর উপর যুদ্ধবিগ্রহ ঘোষণা করেছে।ফলস্বরূপ,গরমে অতিষ্ঠ সবাই।সকাল দশটা।সারারাত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো সংকল্প।কিছুক্ষণ আগেই বিছানায় পিঠ ঠেকিয়েছে। সারারাত না আসা ঘুম,যাও এসেছিলো,কলিংবেলের শব্দে আবার উবে যায়।দরজার ওপাশের ব্যক্তি বড্ড অধৈর্য্যশীল।সংকল্প দরজা খুলতেই ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে।সংকল্পও তাকে জড়িয়ে ধরে।নিয়ে যায় নিজের ঘরে।বিছানায় বসায়।তারপর কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে।মহিলা এখনো কাঁদছে।
সংকল্প বিরক্তি নিয়ে বলে,
” আহ মা!এমন ম রা কান্না জুড়েছো কেনো?”

জাহানারা বেগম চাপড় লাগালেন ছেলের পিঠে।সংকল্প হেঁসে উঠলো।তিনি নাক টানতে টানতে বললেন,
“শ য় তান!কতদিন পর তোকে দেখেছি।”

সংকল্প চোখ বন্ধ রেখেই বললো,
“তোমার সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো মা।”

জাহানারা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
“তাতে কি হয়েছে?মায়ের মন তুই বুঝবি না।”

সংকল্প মায়ের কথার বিপরীতে বললো,
“আচ্ছা হয়েছে।কান্নাকাটি অফ করো।আর মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।আমি একটু ঘুমাই।কতদিন পর তোমার কোলে মাথা রেখেছি।”

জাহানারা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলাতে শুরু করলেন।চিন্তিত স্বরে শোধালেন,
“রাতে ঘুমাস নি?চোখ লাল হয়ে আছে কেনো?”
“নাহ।” ছোট্ট উত্তর সংকল্পের।
“কেনো?কি হয়েছে?অসুস্থ তুই?জ্বর এসেছিলো?কই দেখি?ওমা জ্বর তো নেই!তাহলে?পেট খারাপ হয়েছিলো?ওষুধ খেয়েছিস?চুপ করে আছিস কেনো?”

আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন জাহানারা বেগম।মায়ের প্রশ্নের বেগে উঠে বসে সংকল্প।চোয়াল ঝুলিয়ে বলে,
“মা স্টপ!কিছু হয় নি আমার।আই অ্যাম ফাইন।”
“তাহলে রাতে ঘুমাস নি কেনো?”
“তোমার বউমার কথা ভেবে।”হাই তুলে বললো সংকল্প।
“ওহ!প্রতিজ্ঞার সাথে দেখা করছিস না কেন?বেচা রি কম কষ্ট তো পায় নি।” মন খারাপ করে বললেন জাহানারা বেগম।
সংকল্প গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো।বললো,
“করবো।”

তারপর নিরবতা।জাহানারা বেগম কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন।সংকল্প বুঝতে পারলো।বললো,
“কি বলবে সোজাসুজি বলে ফেলো!”

জাহানারা বেগম যেনো আশকারা পেলেন।গদগদ হয়ে বললেন,
“বাড়ি ফিরে চল।”

সংকল্প যেনো জানতো মা এটাই বলবে।সে প্রতিউত্তর করলো না।মেঝেতে দৃষ্টি স্থাপন করে রাখলো।জাহানারা বেগম ছেলের ভাবমূর্তি বুঝার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।আবার বললেন,
“চুপ করে গেলি কেনো?কিছু বল।”
সংকল্প মায়ের দিকে তাকালো।মায়ের চেহারায় চিন্তা দেখে স্মিত হাসলো।বললো,
“এখন যাবো না।”

জাহানারা বেগমের চিন্তায় জোয়ার এলো।অস্থির হয়ে বললেন,
“কেনো যাবি না?তোর বাবা কষ্ট পাচ্ছেন।তিনি তার ভুল দু’বছর আগেই বুঝতে পেরেছেন।তুই আমার সাথে বাড়ি ফিরে চল।আমরা সবাই গিয়ে প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে আসবো।বাড়ির বউ বাড়িতে ফিরে আসবে।না করিস না।”

সংকল্প বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।টাওয়েলটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো,
“প্রতিজ্ঞাকে নিয়ে ঐ বাড়িতে প্রবেশ করবো।জোর করো না।”

জাহানারা বেগম আর কিছু বলার অবকাশ পেলেন না।

প্রতিজ্ঞা ঘুম থেকে উঠেছে এগারোটায়।আড়মোড়া ভেঙ্গে ফোনটা নিলেই দেখতে পায় স্ক্রিনে ভেসে উঠা কয়েকলাইন,

“আমি তো সে,যার বিচরণ তোমার মন-মস্তিষ্কে,
আমি তো সে,যার চলাচল তোমার প্রতিটি নিউরনে,
আমি এক অমোঘ কালরাত্রি,যেথায় তোমার বিনা শ,
আমি এক তীরভাঙ্গা নদীর কূলহারা ঢেউ,
যার গতিবিধি তোমাতেই সীমাবদ্ধ।
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার বাস,
আশেপাশে করো না আমার খোঁজ,
আমি তোমারই হৃদয়ভাঙ্গা প্রাণপুরুষ।”

#চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here