তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল #পর্ব_১৬ #সারিকা_হোসাইন

0
411

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_১৬
#সারিকা_হোসাইন

সৌম্যের সামনে অবনত মস্তকে বসে আছে পিউ।তার চোখ থেকে অনবরত টুপটাপ করে গড়িয়ে পড়ছে জল।সৌম্য নির্বাক হয়ে বসে আছে।তাকে শান্তনা দেবার মতো কোনো ভাষা তার জানা নেই।

শুধু কোমল কন্ঠে বলে উঠলো
―পিউ এভাবে কাঁদলে তো বুকে কষ্ট হয় সোনা!

কান্নার বেগ আরো হুহু করে বাড়ে পিউ এর।
একটি পেন ড্রাইভ নিয়ে সৌম্যের কাছে এসেছে পিউ।
সিক্ত নয়নে অপরাধীর ন্যায় কাঁপা হাতে পেনড্রাইভ টি তুলে দিলো সৌম্যের হাতে।

সৌম্যের কথামতো সে তার বাবার পিছনে স্পাই এর মতো লেগেছিলো এ কয়দিন।
ফিঙ্গার প্রিন্ট পাউডার কালেক্ট করে এর সাহায্যে ফোনের লক খুলতেও সক্ষম হয়েছিলো পিউ।

এরপর সে গোপন কল রেকর্ডার এপ্স চালু করে দেয় নাসের হায়দার এর ফোনে।
ওখানে সকল ধরনের কথা রেকর্ড হতো।
পিউ সৌম্যের দরকারি রেকর্ড গুলো প্রতিদিন রাতে তার বাবা নেশায় বুদ হয়ে মাতাল হলে কালেক্ট করে নিজের পেন ড্রাইভে রেখে দিতো।

আজ ও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
―কিন্তু এই রেকর্ড টা শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

“”মেজর মুহিত ওয়াসিফ কে শেষ করে দেবার প্ল্যানিং করছে তার বাবা!””

স্বর্গ কখনো যদি জানে তার বাবা তার ভালোবাসার মানুষের হত্যাকারীদের একজন।
তখন স্বর্গ কে কিভাবে মুখ দেখাবে পিউ?

নিজের বাবার প্রতি ঘেন্নায় বমি এসে যাচ্ছে পিউ এর।এতোদিন কার কাছে থেকেছে সে?

এখন পিউ বুঝতে পারছে তার মা কেনো তাদের ছেড়ে পালিয়ে গেছিলো।
অযথাই মায়ের প্রতি এতোগুলো বছর ঘেন্না পোষন করেছে।
আসল কালপ্রিট তো ওই নাসের হায়দার।

পিউ সহসাই সৌম্যের হাত চেপে ধরলো,
কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চলো সৌম্য।
ওই রাক্ষসপুরী তে আমি আর যাবো না।
―আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চলো।

“”ওখানে প্রতিমুহূর্তে আমার দম বন্ধ লাগে,আমার কিচ্ছু ভালো লাগেনা।সব কিছু চরম অসহ্য মনে হয়।

―প্লিজ আমার উপর একটু দয়া করো সৌম্য।

বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো পিউ।

সৌম্য পিউকে শান্ত করার জন্য তৎপর হলো।বিভিন্ন কথা বলে পিউকে শান্ত করার চেষ্টা চালালো।কিন্তু কিছুতেই পিউ থামছে না।

সৌম্য পড়লো আরেক বিপাকে।

একজন সেনা সদস্য হিসেবে তার বিয়ের বয়স হতে আরো মাস ছয়েক বাকী।
বাড়িতেও এখনো পিউ এর কথা বলা হয়নি।
গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে সৌম্য।
পিউ কি পারবে নিজেকে গ্রামীন পরিবেশে মানিয়ে নিতে?

তবুও পিউকে শান্তনা দিতে সৌম্য আদুরে স্বরে বলে উঠলো এভাবে কেঁদোনা প্লিজ।
―কান্না করছো তুমি,কষ্ট পাচ্ছি আমি।
আমি প্রমিজ করছি যতো দ্রুত পারি তোমাকে আমার কাছে আনার ব্যাবস্থা করবো।
প্লিজ লক্ষিটি আর এভাবে কেঁদে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করো না।
বলেই পিউ এর মাথা তার বুকে চেপে ধরলো।

******
মিসেস তারিন স্বর্গকে চেয়েছে মুহিতের জন্য,তনুজার মুখে যেনো আর খুশি ধরেনা।
ছেলে হিসেবে মুহিতকে লুফে নিতে কে না চাইবে?
সৌন্দর্যে,ব্যাক্তিত্বে,যোগ্যতায় লাখে একটা মিলে এমন ছেলে।

নাফিজ কে যখন তারিন বলেছে তোর মেয়েকে দিবি আমাকে?

নাফিজ খুশিতে হাসতে হাসতে এক বাক্যে বলেছে আপা তুই এখনই নিয়ে নে তোর ভাতিজি কে!

মিসেস তারিন ভেবেছিলেন এমন ভাঙাচোরা পরিবারে নাফিজ হয়তো মেয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাবে বা মুখে সরাসরি না বললেও আকার ইঙ্গিত দিয়ে বুঝাবে।

এজন্য কিছুটা ভয় আর কিছুটা সংকোচ রেখেই তিনি আবদার টা করেছিলেন।

নাফিজ এতো দ্রুত রাজি হয়ে যাবে এটা তারিনের কল্পনার বাইরে ছিলো।

সেদিন রাতে পানি পিপাসায় ঘুম ভেঙে যায় মিসেস তারিনের।উনার কক্ষের জারে কোনো পানি ছিলো না।
দরজা খুলে যেই বাইরে বের হবেন তখন ই দেখতে পান মুহিত দৌড়ে স্বর্গের রুম থেকে বেরিয়ে আসছে।

মুহিত কে কিছু টের পেতে না দিয়ে পানি না খেয়েই দরজা লাগিয়ে দেন মিসেস তারিন।

ছেলে কেনো ওই রুমে গিয়েছে মায়ের বুঝতে এক সেকেন্ড সময় ও লাগলো না।

স্বর্গ যখন জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পরে ছিলো মুহিত কে মারাত্মক রকমের অস্থির দেখেই তিনি বুঝেছিলেন ছেলে ভালোবেসে ফেলেছে।

মা ছেলে মিলে জীবনে অনেক খুশি তারা হারিয়ে ফেলেছে।
গাধার মতো বাবার অর্পিত দায়িত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে ছেলেটা।

মা হিসেবে কখনো কিছুই দিতে পারেননি তিনি মুহিত কে!
―,যা মুহিতের সকল গ্লানি মুছে দিতে পারে।

ভাইয়ের কাছে ভিক্ষা চেয়ে হলেও স্বর্গ কে মুহিতের কাছে এনে দেবেন এমন প্রতিজ্ঞাই তিনি মনে মনে করে ছিলেন।

কিন্তু তারা মুহিত কে এভাবে গ্রহণ করে ফেলবে উনি ভাবতেই পারেন নি।

মরার আগে ছেলেটাকে একটু গুছিয়ে দিয়ে যেতে পারলেই শান্তিতে শ্বাস ত্যাগ করা যাবে।
আমি থাকি বা না থাকি ছেলেটা তার ভালোবাসার মানুষের সাথে তো থাকবে?
মুহিতের বাবার অসমাপ্ত দায়িত্ব পালন করে দিয়ে যেতে পারলে মানুষটার আত্মা টা তো শান্তি পাবে।
মনে মনে ছেলে মেয়ে স্বামীর অতীত স্মৃতি মনে করে আনমনে অশ্রু বিসর্জন দিলেন তিনি।

ভেতরে থাকা দীর্ঘশ্বাস টাকে লুকিয়ে চোখে জমে থাকা জল মুছে ফেললেন সংগোপনে।
আজ মুকিত টা বেঁচে থাকলে কতো বড়ো হতো?
মুকিতের জন্যও একটা লাল টুকটুকে বউ আনতে হতো!
নামিরার ছোট বেবীটাকে দেখে কেমন রিয়াকশন হতো মুকিতের?

আহ, এসব ভাবলে বুকে ব্যাথা হয়,কষ্ট হয় প্রচুর।আমার ছোট বাচ্চাটা।
―আমার মুকিত !
আর পারলেন না এসব ভাবনা ভাবতে মিসেস তারিন।
হৃদযন্ত্র টা সায় দেয়না আর এসব ভাবলে।নিষ্ঠুরের মতো পীড়া দিতে থাকে।

★★★★

তনুজা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্বর্গের দিকে।
মেয়ের ঠোঁট কিভাবে এতখানি কেটে গেলো সেটাই তার বোধগম্য হচ্ছে না।
এদিকে জ্বরটাও কমছে না।মেয়েটার খালি বিপদের উপর বিপদ যাচ্ছে।
তনুজা একবার শুনেছিলেন গ্রাম্য মহিলাদের কাছে
―বিয়ের আগে যেসব কুমারী মেয়ের অসুখ বিসুখ,বিপদ আপদ লেগেই থাকে,তাদের যদি দ্রুত বিয়ে দেয়া হয় তাহলে সমস্ত বিপদ কেটে যায়।
উনি জানেন এসমস্তই কুসংস্কার।
কিন্তু মায়ের মন বলেও তো কথা।

তাই তিনি মনে মনে ভাবলেন যতো দ্রুত পারা যায় মেয়েকে মুহিতের গলায় ঝুলিয়ে দেবেন

মনের চিন্তা সরিয়ে স্বর্গের উদ্দেশ্যে বলে ফেললেন তনুজা
― ঠোঁটে ব্যথা কিভাবে পেলিরে বাবা?

―মায়ের কোলে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিলো স্বর্গ।

মায়ের এহেন প্রশ্নে ভড়কে না গিয়ে সুন্দর ভাবে বলে দিলো

–―রাতে জ্বরের ঘোরে ওয়াশ রুমে যেতে নিয়েছি অমনি ওয়ালে বাড়ি খেয়েছি মা।

―চিন্তা করো না,ওয়েন্টমেন্ট লাগালেই ভালো হয়ে যাবে।

বলেই মুখ টিপে হেসে উঠতে চাইলো কিন্তু ঠোঁটের ঘায়ে টান লাগায় আউচ্ শব্দ করে উঠলো।

★★★★

জুন মাস বছরের সবচেয়ে উত্তপ্ততম মাস।আকাশে ঝকঝকে আকাশি মেঘের ভেলা সাথে আগুনসম সূর্যের তেজ।
কোনো ফাঁকফোকর গলিয়ে ধরনীতে বাতাসের আগমন হয় না।
ঘরের বাইরে বের হলেই মনে হয় যেনো গায়ে ফোস্কা পড়ে গেলো।
একটু রোদে দাঁড়ালেই পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।

মুহিতের জলপাই রঙা আর্মি জিপটা নিয়ে মুহিত নাফিজ মাহমুদের বাংলোর সামনে অপেক্ষা করছে।আজ মিসেস তারিনের অস্ট্রেলিয়া যাবার ফ্লাইট।
আরো বিশ মিনিট আগে মুহিত মা কে তাড়া দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে আছে।অথচ তার মায়ের কোনো খবর নেই।গরমে আর সূর্যের তাপে মুহিতের মাথাও গরম হয়ে যাচ্ছে।

মেয়ে মানুষের এই এক দোষ।
কথার পর্বই শেষ হতে চায় না তাদের ।সময় নিয়ে একদম তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
হাতে থাকা স্মার্ট ওয়াচ টা বার বার টাচ করে করে সময় দেখে নিচ্ছে মুহিত।বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ” চ” সূচক শব্দ করে জিপ থেকে নেমে দাঁড়ালো।
তার জানার অনেক আগ্রহ জাগলো এতো সময় কি করছে উনি ভেতরে।

_________

মিসেস তারিন খুশি খুশি মুখ নিয়ে তনুজার হাতে ধরে বিদায় নিচ্ছেন,তনুজা কেঁদে ভাসাচ্ছেন।
নাফিজ মাহমুদ বিরক্ত মুখে তাকিয়ে আছেন সহধর্মিনী তনুজার পানে।
অযথা কান্নার মানেই বুঝতে পারছেন না তিনি।
সকাল থেকে এই মহিলা কে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না করতে দেখছেন তিনি।
তনুজা কোমল মনের মানুষ,সবাইকে একদম হৃদয়ের মধ্যে খানে বসিয়ে রাখে।
তাই বলে এতো কান্না করতে হবে?
মনের বিরক্তি আর ধরে রাখতে পারলেন না মুখ দিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন―
―আপা কি সারা জীবনের জন্য যাচ্ছে নাকি তনুজা?
যাচ্ছে তো মাস তিনেক এর জন্য।আর তার মেয়ের কাছে যাচ্ছেন।
অস্থানে তো যাচ্ছে না।
তুমি কান্না বন্ধ করো, না হলে আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।

মিসেস তারিন তনুজার চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন
―এতো কোমল কেনো তুমি তনু?
―আপা কিছুদিন পরই তো ফিরে আসবো।মনে কষ্ট নিও না।

চোখের জল মুছে তনুজা মিসেস তারিন কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন―
নিজের যত্ন নিবেন আপা, একদম খাবারে অনীহা করবেন না।
ওখানে নামিরা তো বাবুকে নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে যাবে।আপনাকে আপনার নিজের ই সবকিছু খেয়াল করে চলতে হবে।

মিসেস তারিন স্বর্গের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে থুতনি ধরে বললেন
―ফিরে এসেই তোমাকে আম্মা বানিয়ে আমাদের ঘরে নিয়ে যাবো।
আজেবাজে চিন্তা একদম করবেনা আম্মা।
এসে যেনো দেখি খেয়েদেয়ে একদম গুলুমুলু হয়ে গেছো।
ঠিক আছে?

স্বর্গের মনে হয় মিসেস তারিন কে আল্লাহ মুখে মধু দিয়ে পাঠিয়েছেন এই দুনিয়ায়।
না হলে একটা মানুষের কন্ঠ ,কথা বলার ধরন এতো মিষ্টি হয় কি করে?

মুহিত দরজায় দাঁড়িয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিলো।এর পর রুমে প্রবেশ করে মাকে শুধালো――
―মেয়ের কাছে যাবার ইচ্ছে নেই?
―দেখো কটা বাজে?
তোমার ফ্লাইটের টাইম হয়ে যাচ্ছে,দ্রুত বের হও।
ভাবছো পনেরো মিনিটের রাস্তা এজন্য ঢিলেমি করছো?
ইমিগ্রেশনে তোমার কাজ আছে মা-
তাড়াতাড়ি চলো বলেই মুহিত নাফিজ মাহমুদ কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

******
শুনশান একটি জঙ্গল,কোনো মানুষের আনাগোনা নেই।মাঝে মাঝে পাখিদের কিচিরমিচির ডাক শোনা যাচ্ছে।চারপাশে বিশাল উঁচু উঁচু পাহাড়।
মুহিত আর স্বর্গ হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটি পাহাড়ের চূড়ায় এসে পৌঁছালো।

হঠাৎ ই পাহাড়ের চূড়া থেকে মুহিত কে কেউ ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দিলো।

,স্বর্গ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে কিন্তু নড়ার শক্তি পাচ্ছে না।মনে হচ্ছে কেউ তাকে চেপে ধরে আছে।

গলা দিয়ে আওয়াজ ও বের হচ্ছে না।

মুহিত কে ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে লোকটি ভয়ংকর ভাবে হো হো শব্দ তুলে হেসে যাচ্ছে।

স্বর্গ কোনো কথাও বলতে পারছে না,কারো কাছে সাহায্য ও চাইতে পারছে না।
শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
অনেক কষ্টে গলায় শক্তি সঞ্চয় করে স্বর্গ চিল্লিয়ে উঠলো

“”মুহিত!

নিমিষেই ঘুম ছুটে গেলো স্বর্গের, সে এখনো কাঁদছে।শরীর ঘামে ভিজে একাকার।
এসির পাওয়ার উনিশ।
তবুও গরমে পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে মরুভূমির ন্যায় হয়ে উঠলো।

ভয়ে বুক দুরু দুরু করে কাঁপছে।ঘড়িতে সময় দেখে নিলো দেড়টা বাজে।

কোনো কিছু চিন্তা না করেই মুহিতের রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলো।

――――――
মুহিত ল্যাপটপে নিজের যাবতীয় কাজকর্ম গুছিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
ভোর হতেই তাকে সিলেট যেতে হবে।সেখানে তিন দিনের জন্য থাকতে হবে।
মুহিতের সাথে মেজর আদ্রিয়ান আভিয়াজ ,ও দুজন ক্যাপ্টেন যাবে।
সৌম্য যেতে পারবেনা।
সে ছুটিতে আছে।

তাদের কাছে গোপন সূত্রে খবর এসেছে সিলেট বর্ডার থেকে পাথরের গাড়িতে করে বিভিন্ন ড্রাগস বাইরের দেশ থেকে ঢাকায় সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে।
মুহিত জানে এটি কার কাজ।
এজন্য প্রমান জোগাড় করতে নিজেই যাবে সে।
যেভাবেই হোক,যে কোনো প্রকারে আশরাফ চৌধুরী সম্পর্কে সকল তথ্যই মুহিত বের করে আনবে।
তাকে যদি পাতালেও যেতে হয় ,সেখানেও সে যেতে প্রস্তুত।

সব কিছু গুছিয়ে কেবলই মুহিত গায়ের টিশার্ট টা খুলে হ্যাঙ্গারে ঝুলাবে।
এমন সময়ে স্বর্গ এসে পিছন থেকে মুহিত কে ঝাপটে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে।
এতো রাতে স্বর্গের উদ্ভ্রান্তের ন্যায় কান্নায় ভয় পেয়ে যায় মুহিত।

মামা মামী কেউ বাড়িতে নেই,হঠাৎ মামীর বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে রাতে তারা উনাকে দেখতে গিয়েছেন,সকালে ফিরবে।
স্বর্গ অসুস্থ বলে তাকে রেখে গিয়েছে।

এখন যদি স্বর্গের অসুস্থতা বাড়ে, মুহিত একা কিভাবে সামলাবে?

সমস্ত চিন্তা বাদ দিয়ে স্বর্গকে সামনে এনে বিছানায় বসালো মুহিত।

বিচলিত হয়ে জানতে চাইলো
পেট ব্যাথা হচ্ছে বাবু?
কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো!
এক্ষুনি সব ঠিক করে দিচ্ছি
প্লিজ জান এভাবে কেঁদোনা সহ্য করতে কষ্ট হয়।

মুহিতের আদর যুক্ত কথায় কিছুটা ফুপানো কমলো স্বর্গের।
মুহিত স্বর্গের চোখের জ্বল মুছিয়ে দিয়ে হাটু মুড়ে ফ্লোরে বসে স্বর্গ কে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে জানতে চাইলো

কি হয়েছে পাখী?হসপিটাল নিয়ে যাবো?অনেক খারাপ লাগছে?

স্বর্গ মুহিতের ঘাড়ে থুতনি রেখে ফুপাতে ফুপাতে বললো
―আমি তোমাকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখেছি!

“”কেউ তোমাকে ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছে।””
“জানো আমি না তোমাকে কোথাও আর খুঁজে পাইনি!”
বলেই মুহিত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জোরে কেঁদে উঠলো স্বর্গ।

“”জানো আমার কতো কষ্ট হচ্ছিলো?””

তোমাকে হারালে আমি কিভাবে বাঁচবো মুহিত?

স্বর্গের স্বপ্নের কথা শুনে মুহিত স্বাভাবিক হলো,স্বর্গকে নিয়ে যেই ভয় পাচ্ছিলো সেটা কেটে গেলো।
স্বর্গকে ছাড়িয়ে,ফ্লোর থেকে উঠে স্বর্গের পাশে বিছানায় বসলো।

স্বর্গের একটা হাত মুহিতের কোলে রেখে আরেকটা হাত বুকে জড়িয়ে মুহিত বলে উঠলো―

“”তুমি বাজে স্বপ্ন দেখেছো।
অসুস্থ হলে মানুষ এমন ভিত্তিহীন স্বপ্ন দেখে।

―এই দেখো আমি সুস্থ সবল ভাবে তোমার সামনে বসে আছি।
তোমার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরায় কার সাধ্যি?

কেউ কিছু করতে এলে তুমি তাকে ক্রসফায়ার করে দিও আমি অনুমতি দিলাম
বলেই মুহিত স্বর্গের জড়িয়ে রাখা হাতে চুমু খেলো।

আমার কিচ্ছু হবে না লক্ষীটি।
আমি যেখানেই যাই, যাই করি না কেনো!
সমুদ্রের নিচেও যদি যাই তোমার জন্য ফিরে আসবো!

“”হ্যাপি??

স্বর্গ মুহিতের চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভেঙে বললো
―তিন সত্যি বলো!

স্বর্গের কিউট ফেস টি দেখে মুহিত হেসে ফেললো এবং পর পর তিনবার ঠোঁটে চুমু একে বললো
―এক সত্যি, দুই সত্যি, তিন সত্যি।

স্বর্গ বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠলো আমি তোমার সাথে ঘুমাবো,আমার ভয় লাগছে।

মুহিত কিছুক্ষন মৌন রইলো
এর পর স্বর্গকে বুকে টেনে নিয়ে বললো
একজন ছেলে আর একজন মেয়ে বিয়ের আগে এক বিছানায় ঘুমুলে দুর্ঘটনা হয়ে যাবে রে পাগলী।

আমি চাইনা আমার জন্য তোমার কোনোক্ষতি হোক।

স্বর্গের চুলে বিলি কাটতে কাটতে মুহিত বললো
―কি বলেছি বুঝতে পেরেছেন ম্যাডাম?

নাহ বুঝিনি।

স্বর্গ নাছোড়বান্দা।
সে এই রুমেই ঘুমাবে।

অগত্যা না পারতে মুহিত রাজি হলো।
মুহিত নিজের কাঁথা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে বিছানা করতে নিলেই সেখানে স্বর্গ বাধা প্রদান করে বলে উঠলো
―তোমার বুকে ঘুমুতে চাই মুহিত,তোমার বিছানায় নয়।

বাঁকা হাসলো মুহিত।মেয়েটা তাকে ভালোই কাবু করতে জানে।
এমন জীবন সঙ্গী হলেই তো বিবাহিত জীবন মধুর হবে।

মুহিত স্বর্গের দিকে তাকিয়ে বললো
তোমার সাথে শোবো কিন্তু শর্ত আছে
উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো স্বর্গ
“”কি শর্ত?

রুমের লাইট অন থাকবে ঠিক আছে??

বাধ্য মেয়ের মতো স্বর্গ রাজি হলো।

ঘড়ির কাটা তিনটের ঘরে।
হঠাৎই গুড়গুড় শব্দে মেঘ ডেকে ঝুম বরাবর বৃষ্টি শুরু হলো।
পরিবেশ নিস্তব্ধ, কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই।
এই দূতলা বাড়িটিতে প্রাপ্ত বয়স্ক দুজন নর- নারী ছাড়া আর কোনো প্রাণী নেই।

মানব মানবী কারোর চোখের পাতাতেই ঘুম ধরা দিচ্ছে না।
দুজন দুজনের হৃদ স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে।

মুহিত অস্থির হয়ে যাচ্ছে বার বার।
ভেতর থেকে নিজের পুরুষ সত্ত্বা বার বার নিজের পুরুষত্ব জাহির করতে চাইছে।
মুহিত তাকে শিকল পরিয়ে বেঁধে রেখেছে।

অষ্ঠেপিষ্টে স্বর্গ দখল করেছে মুহিতের বুক,পা,হাত।

মুহিতের মাথা খালি খালি লাগছে,ভো ভো শব্দ হচ্ছে।মনে হচ্ছে গায়ে কেউ কেরোসিন ঢেলে দিয়েছে।
স্বর্গের লজ্জা জনক চোখের চাউনি, বার বার ঠোঁট কামড়ে ধরা,এলোমেলো চুল,ওয়েস্টার্ন স্লিপিং ড্রেস।
সবকিছু মুহিত কে কন্ট্রোল লেস করে দিচ্ছে।

হঠাৎই মুহিত স্বর্গকে নীচে ফেলে স্বর্গের উপরে উঠে গেলো।

স্লিপিং শার্ট এর কলার সরিয়ে স্বর্গের কাঁধে কামড়ে ধরলো।
স্বর্গ ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো।
হুঁশে ফিরলো মুহিত, কামড়ের জায়গা থেকে মুখ সরিয়ে দেখতে পেলো ক্ষত থেকে ব্লাড বের হচ্ছে।
স্বর্গের চোখে টলমলে জল।
নিজেকে অপরাধী মনে হলো মুহিতের।

কিভাবে পারলো নিজের কলিজায় কামড় বসাতে?
রাগের চোটে ওয়ালে জোড়ছে ঘুষি বসিয়ে দিলো।

কেনো সে নিজের কন্ট্রোল ধরে রাখতে পারছে না?

কয়েকটা ঘুষি মারতেই হাত ফেটে বেরিয়ে এলো রক্ত।

স্বর্গ দৌড়ে এসে মুহিত কে জড়িয়ে ধরলো।

প্লিজ থামো!

আমার ব্যাথা লাগেনি।

―নিজেকে কষ্ট দিও না প্লিজ

চলো হাতে ব্যান্ডেজ করবে বলে মুহিতকে ছেড়ে দিয়ে নিজের রুমে দৌড়ে চলে গেলো ফার্স্ট এইড বক্স আনতে।
অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে এসে মুহিতকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসালো।
স্যাভলন আর তুলার সহিত রক্ত পরিস্কার এর কাজ চালালো।
মুহিত নির্বিকার,
ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে সাদা ব্যান্ডেজ হাতে মোড়াতে লাগলো স্বর্গ।
মুহিত গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো

―কাল আমাকে বিয়ে করবি জান??
#চলবে।

গল্প টা কি ভালো লাগছে না কেউ রেসপন্স করছে না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here