অবাধ্য_পিছুটান #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৩০

0
153

#অবাধ্য_পিছুটান
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৩০

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

অতঃপর কোলবালিশটার পানে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

-“ব্যাটা বদমাইশ। আমার আর আমার বউয়ের মাঝখানে এসেছিলি? দেখ এখন আমরা আমে দুধে মিলে গেছি আর তুই আটি হয়ে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছিস।”

তুর্য আর একটু এগিয়ে গেল পৃথার পানে। মেয়েটার গা ঘেঁষে বসলো। চুল ছাড়ানোর বাহনা দিয়ে নিজের হাত দ্বারা একটু স্পর্শ করলো বউয়ের এক হস্ত। পৃথা শিউরে উঠলো। তৎক্ষণাৎ তুর্যের থেকে একটু দূরে সরে গেল। মুখ খুলে কিছু বলার আগেই তুর্য থামিয়ে দিল তাকে। তড়িঘড়ি করে বলল,

-“স্যরি, স্যরি একটু তাড়াহুড়ো করে তোমার চুল ছাড়াতে গিয়ে হাতে হাত লেগে গেছে।”

পৃথাও আর বিষয়টা নিয়ে ভাবলো না ততটা। তার স্বামী যে সত্যি সত্যিই মাথার ভিতরে সব ব্রিটিশ বুদ্ধি নিয়ে ঘোরাফেরা করছে বুঝলো না ছোট মেয়েটা। তুর্য আর একটু এগুলো পৃথার পানে। মেয়েটা প্রথম স্পর্শে যতটুকু সরে গিয়েছিল ততটুকু দূরত্ব কমালো।

পৃথার ওপাশে আর জায়গা নেই। এরপর আর সরতে গেলেই খাট থেকে সোজা নিচে পড়ে যাবে মেয়েটা। তুর্য উঁকি দিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো বিষয়টা অতঃপর পরিকল্পনা করলো এবার হুট করেই বউয়ের নরম গালে হাত রাখবে। তারপর বউ শিউরে উঠে দূরে সরে যেতে নিলেই খাট থেকে পড়ে যাবে। তৎক্ষণাৎ তুর্যও নিজের হাত বাড়িয়ে কোমড় চেপে ধরবে পৃথার। একটু অনুভূতি নিয়ে রোমান্টিক কায়দায় নিজের দিকে টেনে নিবে বউয়ের ছোট খাটো দেহ খানা । বুকের সাথে মিশিয়ে ঐ নাটক সিনেমার মতো একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকবে বেশ সময় নিয়ে। আহা কি রোমান্টিক দৃশ্য। নিজের করা পরিকল্পনাকে নিজেই বাহবা জানালো তুর্য। এত সুন্দর বুদ্ধি যে তার মাথায় আছে বউ না আসলে তো জানতেই পারতো না। তুর্যের এখন খুব করে মনে হচ্ছে সে এখানে কি করছে? তার তো বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবী হওয়ার কথা ছিল। তার নিজেরই ভুল। এতদিন বিদেশে গিয়ে না পড়ে থেকে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ঢুকে পড়লেই আজ নাম জশ খ্যাতি এমনকি বউটাও তার থাকতো। ইসসস কি ভুলটাই সে করে ফেলেছে। মনে মনে কতক্ষন তুর্য নিজের করা ভুলের জন্য আফসোস করলো অতঃপর পরিকল্পনা অনুযায়ী সুকৌশলে নিজের এক হাত চুলের উপরে রেখেই বাড়িয়ে দিল পৃথার পানে। কিঞ্চিৎ সময়ের মধ্যেই পৃথার গালও ছুঁয়ে দিল তার শক্তপোক্ত পুরুষালী হাত দ্বারা। সত্যিই হঠাৎ তুর্যের এমন স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো পৃথা। পিছনের অবস্থা যাচাই বাছাই না করেই দ্রুততার সাথে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলো পিছনের দিকে। তুর্যের পরিকল্পনা মাফিক মেয়েটা পড়ে যেতেও নিল খাট থেকে। তুর্য ভীষন আবেগ নিয়ে নিজের এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে ধরতে চাইলো বউয়ের নরম কোমড় খানা। কিন্তু ধরতে আর পারলো না। ঠিক তখনই তাদের বন্ধ দরজায় টোকা পড়লো। না চাইতেও তুর্যের কান সেদিকে চলে গেল। আর এই টুকোতেই ঘটে গেল মহা বিপত্তি। পৃথা ধপাস করে পড়লো ইট কংক্রিটে গড়া পাকা মেঝেতে। চিৎ হয়ে পড়তেই মাথায় আঘাত পেল মেয়েটা, সাথে সাথে তুর্যের টিশার্টের বোতামে পেঁচিয়ে থাকা চুলগুলোও ছিঁড়ে গেল চড়চড় ধ্বনি তুলে। পৃথা তীব্র বেগে চেঁচিয়ে উঠলো,

-“ও মাগো।”

তুর্য আহাম্মক বনে গেল আকস্মিক ঘটে যাওয়া ঘটনায়। বোকা বোকা চোখে তাকালো পৃথার পানে। মেয়েটা এখনও চিৎ হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। মাথা চেপে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। তুর্য অস্থির হলো। নিজের ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে নেমে পড়লো বিছানা থেকে। তড়িঘড়ি করে পৃথাকে ধরে বসালো। ব্যাকুল কন্ঠে বলল,

-“ব্যথা পেয়েছো? কোথায় ব্যথা পেয়েছো? নিশ্চই মাথায়।”

পৃথা কোনো জবাব দিল না। লজ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা তার। ইসস কিভাবে বিছানা থেকে চিৎ হয়ে পড়ে গেল মেঝেতে। ছেলেটা নিশ্চই মনে মনে হেসেছে পৃথার উপর। ভেবেছে মেয়েটা বোকা, ন্যাকা। নয়তো পিছনে জায়গা না দেখেও সরতে কেন গেল। তুর্য পৃথার জবাবের অপেক্ষা করলো না। নিজ উদ্যেগেই দেখতে শুরু করলো মেয়েটার মাথা খানা। কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে বউয়ের চুলের ভাঁজগুলো দেখতে দেখতে ফুঁসে উঠলো তুর্য। কোন বজ্জাত এসে দরজায় টোকা দিল। না দিল তার পরিকল্পনা স্বার্থক হতে আর বউটাকেও ব্যথা দিল। তুর্য ক্রোধে ফোঁস ফোঁস করতে করতে এগিয়ে গেল দরজার পানে। শক্ত হাতে দরজাটা খুলতেই দেখা মিললো আরুশের। বেচারা দরজার বাইরে কোমড় চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরুশকে দেখে তুর্যের ক্রোধ বাড়লো আরও। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-“তোকে আমি এমনি এমনি মীর জাফরের বংশধর বলি বেয়াদব? কেবল একটু বউয়ের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। যেতে দিলি না আমাকে, টেনে হিচরে বউয়ের থেকে দূরে সরালি সাথে সাথে বউটাকেও একটা আছাড় মারলি।”

আরুশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল তুর্যের কথায়। সে আবার কি করলো? প্রথমত এই বিকালের সময়ে যে তুর্য নামক প্রাণী তার বউয়ের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে এটা পৃথিবীর কে বুঝবে? দ্বিতীয়ত সে কখন পৃথাকে আছাড় মা’র’লো? সে তো দরজার সম্মুখে দাঁড়ানো। ভিতরে গেলে না তুর্যের বউকে আছাড় মা’র’বে। আরুশ তাকালো তুর্যের পানে। বোকা বোকা কন্ঠে বলল,

-“আমি কখন ম্যামকে আছাড় মা’র’লা’ম স্যার?”

তুর্য বিরক্তি নিয়ে তাকালো আরুশের পানে। তীক্ষ্ম কন্ঠে বলল,

-“তুই শুধু আমার বউকে আছাড় মা’রি’স’নি আহাম্মক। সাথে আমার আবেগটাকেও আছাড় মে’রে আহত করে দিয়েছিস। আর একটু হলেই বউটাকে বুকে নিতাম। নিতে দিলি না। ”

থামলো তুর্য আবার বলল,

-“তোর কলিজা আমি ভাজা ভাজা করবো বেয়াদব। তোর সাথে আমি এক জ’ঙ্গী নারীর বিয়ে দেব। তারপর তোর বউসহ তোর পেটে বো’মা বেঁধে ছা’দে ঝুলিয়ে রাখবো।”

বরাবরের মতোই তুর্যের কথার কোনো তাল ঠিক পেল না আরুশ। শুধুমাত্র মস্তিষ্কে হানা দিল দুটো কথা। প্রথমত জ’ঙ্গী নারীর সাথে বিয়ে, আর দ্বিতীয়ত বউসহ পেটে বো’মা বেঁধে ছাদে ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টা। এই তুর্য নামক ভয়ানক প্রাণীর দ্বারা সব সম্ভব। পেটে বো’মা বেঁধে রাখা কেন বো’মা পেট কে’টে ভিতরেও ঢুকিয়ে দিতে পারবে এ। আরুশের মুখশ্রী চুপসে গেল। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,

-“স্যার আমি আর কখনও আপনার আবেগ ধরে আছাড় মারবো না। তবুও আমাকে ঐ জ’ঙ্গী ফ’ঙ্গি’র সাথে বিয়ে দিবেন না। ওরা খুব ভ’য়া’ন’ক হয়।”

তুর্য এবার একটু দমলো। তবে ভারী কন্ঠে বলল,

-“তা আমি পরে দেখে নেব তবে আমার বউয়ের থেকে আলাদা করার জন্য তোকে যে আমি ছাড়া দেব না সে বিষয়ে নিশ্চিত থাক। যাই হোক এই অসময়ে এসে আমার আবেগসহ বউটাকে আছড়া আছড়ি কেন করলি সেটা বল।”

আরুশ একটু হলেও স্বস্থির নিঃস্বাশ ফেললো। যাক তুর্য একটু তো স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে নয়তো ভেবেছিল আজ এই মুহূর্তেই না এই লোক ওকে মাটির মধ্যে গেড়ে টেড়ে দেয়। আরুশ একটু কেশে গলা পরিষ্কার করলো। কন্ঠ কিছুটা স্বাভাবিক করে বলল,

-“স্যার শাহীন মির্জার লোকেরা ঝামেলা করছে আবার। আমরা রাজশাহী থেকে ঢাকায় ফিরেছি শুনেই আবার ঢাকায় চলে এসেছে।”

তুর্য মুখ বাঁকালো। কটমট করে বলল,

-“তা তো আসবেই। ও ব্যাটা শাহীন মির্জা তো আগেই নিজের বউকে মে’রে’ছে। এখন নিজের বউয়ের কাছে যেতে পারছে না, বউয়ের থেকে আদর সোহাগ কিছু পাচ্ছে না তাই আমাকেও পেতে দিতে চাইছে না।”

থামলো তুর্য। হতাশ কন্ঠে বলল,

-“সবই হিংসে আরুশ, সবই হিংসে।”

আরুশ মনে মনে বিরক্ত হলো ভীষন। এমন এক জটিল বিষয় নিয়ে তুর্যের এত হেঁয়ালি আসছে কোথা থেকে? লোকটা কি জানে না সে আগুন নিয়ে খেলছে? একটু পান থেকে চুন খসলেই বিপদ। নিজের মনের বিরক্তি মনে চেপেই আরুশ বলল,

-“কিন্তু আমরা এখন কি করবো স্যার?”

তুর্য তেমন ভাবলো না বিষয়টা নিয়ে। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,

-“সবগুলোকে তুলে আমার আস্তানায় বেঁধে রাখ। আমি রাতে বউকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে চলে আসবো।”

আরুশ মনে মনে মনে ভেংচি কাটলো তুর্যের কথায়। বিরবিরিয়ে বলল,

-“বউ দেয় না পাত্তা তাকে আবার ঘুম পাড়িয়ে আসবে।”

তুর্য ঠিক শুনলো না আরুশের নিচু কন্ঠে বলা কথাগুলো। তাই আবার সে জিজ্ঞেস করলো,

-“কিছু বললি তুই?”

আরুশ থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল,

-“ককই কিছু না তো। এখন আসছি আমি।”

কথাটা বলেই তড়িৎ বেগে প্রস্থান করলো আরুশ। সে কি বলেছে একবার যদি কোনোভাবে এই লোক শুনে ফেলে তাহলে কিসের জ’ঙ্গী বউ আর কিসের বো’মা হা’ম’লা এর থেকেও ভয়ংকর কিছু ঘটে যাবে। তার থেকে জান নিয়ে পালানো শ্রেয়।

৩২.
রাত গভীর। চারদিকটা নীরব নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে। বাহিরে শুধু শোনা যাচ্ছে নিশাচর প্রাণীদের হাঁক ডাক। তুর্য কেবলই বাড়ি ফিরেছে নিজের কাজ শেষে। বউকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে কাজে যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে হয়েছিল তাকে তাড়াতাড়ি। ওদিকে একটু বেশিই গোলমাল বেঁধে গিয়েছিল। আরুশরা শাহীন মির্জার লোকদের তুলতে গিয়ে মা’রা’মা’রি’তে আবদ্ধ হয়েছিল। সেই মা’রা’মা’রি থামাতেই আবার তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল তাকে।

তুর্য নিজের কাছে থাকা অতিরিক্ত চাবি দিয়ে ঢুকলো বাড়িতে। চারদিকে তাকিয়ে দেখলো পুরো বাড়ি নীরবতায় ছেয়ে রয়েছে। বাড়ির কোনো ঘরেও আলো জ্বলছে না তেমন। শুধুমাত্র বসার কক্ষে টিমটিমে ড্রীম লাইটের অস্তিত্ব রয়েছে। হয়তো ইতমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই। তাহলে পৃথাও কি ঘুমিয়ে পড়েছে? হয়তো ঘুমিয়েছে। রাত প্রায় দুইটা, এতক্ষন তো জেগে থাকার কথা নয়। ভাবতে ভাবতেই নিজেদের কক্ষের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো তুর্য। বিছানার পানে তাকিয়ে দেখলো পৃথা গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে রয়েছে। তুর্য ওষ্ঠ প্রসারিত করে হাসলো। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো পৃথার পাশে। হাত তুলে আলতোভাবে ছুঁয়ে দিল বউয়ের গাল। অতঃপর একটু ঝুঁকে মেয়েটার ললাটে চুম্বন করে আবারও উঠে দাঁড়ালো। পাশ ফিরে ওয়াশ রুমের দিকে যেতে গিয়েই চোখ পড়লো বিছানার পাশের টেবিলে রাখা ঢাকা দেওয়া খাবারের উপরে। তুর্য এগিয়ে গেল সেদিকে, খাবারের উপর থেকে ঢাকনাটা তুললো দেখলো দুটো প্লেটে খাবার রাখা পরিপাটিভাবে। এর মানে পৃথা খায়নি রাতে। তুর্য তৎক্ষণাৎ কিছু বলল না। এক সাথে ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো বিছানায়। আদুরে কন্ঠে পৃথাকে ডাকলো,

-“বউ, ও বউ!”

পৃথার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। মেয়েটা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। ভারী নিঃশ্বাস পড়ছে তার। এ পর্যায়ে তুর্য একটু গলার স্বর বাড়ালো। জোরে ডেকে বলল,

-“ওঠো তাড়াতাড়ি, খেয়ে নিবে।”

পৃথা নড়েচড়ে উঠলো একটু। ঘুমের মধ্যেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

-“খাবো না আমি। আপনি খেয়ে নিন।”

তুর্যের হৃদয় কম্পিত হলো মেয়েটার কন্ঠস্বরে। এ ঘুম জড়ানো কন্ঠ নাকি নে’শা’র বান। হৃদস্পন্দন বাড়লো তুর্যের তবুও নিজেকে সামলে নিল সে। আলতোভাবে পৃথার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

-“না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে তোমার। ওঠো তাড়াতাড়ি।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here