#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_১৭
#সারিকা_হোসাইন
[১৮+এলার্ট,যারা পছন্দ করবেন না গল্প পড়বেন না,কেউ বাজে মন্তব্য করে কমেন্টস বক্স দূষণ করবেন না]
ঘড়ির কাটা টিকটিক করে জানান দিলো এখন সকাল ন’টা।কিছুক্ষণ আগেই তনুজা আর নাফিজ মাহমুদ বাসায় ফিরেছেন।বাবাকে কাছে পেয়েই আবদারের ঝুলি খুলেছে স্বর্গ।
―বাপী ,মেজর মুহিতের সাথে আমিও সিলেট ঘুরতে যেতে চাই। বলেই নাফিজ মাহমুদের উত্তর শোনার প্রতীক্ষায় তাকিয়ে রইলো স্বর্গ।
―নাফিজ মাহমুদ স্বর্গকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে,
মুহিত সেখানে ঘুরতে যাচ্ছে না, সে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাজে।
সেখানে স্বর্গকে নিয়ে গেলে তার কাজে ঝামেলা হবে,মুহিত বিরক্তও হতে পারে।
কিন্তু স্বর্গ যাবেই।স্বর্গ না যেতে পারলে মুহিত ও যেতে পারবে না।
এতবড় মেয়ের বাচ্চাদের মতো জেদ দেখে মনেমনে খুব বিরক্ত হলেন নাফিজ মাহমুদ।
এবার তনুজা মেয়ের পক্ষ নিয়ে বলে উঠলো―
তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ মেয়েটা দীর্ঘদিন ধরে ঘর বন্দী হয়ে আছে।মুহিত যেহেতু যাচ্ছে মেয়েটাকেও নিয়ে যাক না।
শুধু তো সাথে করে নিয়েই যাবে,ওকে তো আর কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে না তাইনা?
আল্লাহ তো আমার মেয়েকে জ্ঞান বুদ্ধি সব দিয়েছেন, মুহিতের কাজে ডিস্টার্ব হবে এমন কিছু সে কেনো করবে?
ঘরে বসে সারাক্ষন বোরিং হবার চাইতে একটু হাওয়া বদল করে আসুক না।
নাফিজ মাহমুদ সবই বুঝলেন,তনুজার কথাও ফেলে দেবার নয়।মেয়েটা সারাক্ষন অসহায় এর মতো শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে।
কিন্তু মুহিতের যেই ব্যাক্তিত্ব,নাফিজ মাহমুদ কিভাবে এই আবদার করবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।
হঠাৎই দূতলার সিঁড়ি বেয়ে মুহিতকে নামতে দেখা গেলো।
ধবধবে ফর্সা গায়ে নেভি ব্লু শার্ট জড়িয়েছে সাথে পড়েছে লাইট কালারের জিন্স।পায়ে সাদা স্নিকার্স।চোখে কালো রোদ চশমা।
ছেলেটা এতটাই সুন্দর,দেখলেই ফুরফুর করে মন থেকে ভালোবাসা চলে আসে।
মুহিতের এমন রূপ দেখে মনে শিহরণ জেগে গেলো স্বর্গের।পুরুষটি আজকে থেকে তার একান্ত ব্যাক্তিগত হবে।এতো সুখ কোথায় রাখবে স্বর্গ?
সুখের ঠেলায় কি সে আজ মরে যাবে?
মুহিত নীচে নেমে মামা মামীকে উদ্দেশ্য করে বললো
―আমি সিলেটে যাচ্ছি,ফিরবো তিন চার দিন পর।
তনুজা কিছুটা ইতস্তত করে মুহিতকে বলেই ফেললো
―বাবা মুহিত, স্বর্গ যদি তোমার সাথে যায় তোমার কোনো আপত্তি আছে?
না মানে ও অনেক দিন ধরে ঘরে বসে আছে,মনটাও ভালো নেই।একটু হাওয়া বদল হলে প্রকৃতি দেখলে যদি মনটা ভালো হয় এই আর কি?
মামী আসলে――
মুহিত কে থামিয়ে দিয়ে নাফিজ মাহমুদ বলে উঠলেন
―ও তোমাকে বিরক্ত করবে না।ও শুধু তোমার সাথে যাবে,ওখানে আমার এক ফ্রেন্ড আছে আমি তাকে বলে দেব স্বর্গের ঘুরাঘুরির সকল ব্যাবস্থা আমার বন্ধু করে দেবে।
মুহিত মনে মনে বিপাকে পড়ে গেলো।
“”আরেহ বন্ধুর বাসায় গেলে বিয়ে হবে কিভাবে??
“এ আবার কোনো মুসিবত হাজির হতে চাচ্ছে!
স্বর্গ মাঝে দিয়ে বলে উঠলো
আমি মেজর মুহিতের সাথেই ঘুরবো,কোনো বন্ধু ফন্ধুর বাসায় যাবোনা।
এবার মুহিত কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে নিজেই আগ বাড়িয়ে বলে ফেললো
না স্যার কোনো সমস্যা নেই,আমি উনাকে নিয়ে যেতে পারবো,বলেই স্বর্গের উদ্দেশ্যে তাগাদা দিলো
―স্বর্গ আপনি দ্রুত রেডি হোন, একটু পরেই মেজর আদ্রিয়ান গাড়ি নিয়ে আসবে।
মনে মনে মুহিত দোয়া পড়তে লাগলো
হুহ বাবা বেঁচে গেছি,এখনই তো ভালো সাজার নাটক ছুটে যাচ্ছিলো।
বিয়ের আগেই কি শশুরের কাছে আবদার করা যায় নাকি যে,
“”আপনার মেয়েকে আমার সাথে দূরে ঘুরতে যেতে দিন??
মিনিট দশেকের মধ্যেই স্বর্গ নীচে নেমে এলো।
তার পরনে মেরুন রঙের একটি জামদানি শাড়ি,সাথে ম্যাচিং গহনা,কানের দুল।বাদামি চুল গুলো খোঁপা করা,ঠোঁটে লিপস্টিক,চোখে কাজল, মুখে হালকা প্রসাধনী।
এমন রূপে নিজের প্রানপ্রিয় উর্বশীকে দেখে হার্টবিট মিস করলো মুহিত।
কেউ দেখার আগেই চোখ সরিয়ে, মামা আসছি ,বলে আগে আগে বেরিয়ে গেলো।।
বুকের বাম পাশে চাপড়াতে চাপড়াতে মুহিত মনে মনে বললো
―এই মেয়ে তোকে খু*ন করে ছাড়বে মুহিত।রূপের আগুনে তোকে ঝলসে দেবে।
এমন আগুন সুন্দরী নিয়ে রাস্তায় গাড়ি কিভাবে চালাবে মুহিত?
যদি মুহিত হার্ট এট্যাক করে?
হঠাৎই স্বর্গের গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো―
কেমন অভিনয় করেছি মুহিত সোনা?
মুহিত হেসে হেসে বললো
―খুব ভালো হয়েছে,খুব খুশি হয়েছি, দশে দশ।সিলেট গিয়ে পুরুস্কৃত করবো দাঁড়াও।
মুহিত যে তাকে লেগপুল করছে সেটা ভালোই বুঝতে পারলো স্বর্গ।
এজন্য দ্রিম করে মুহিতের পিঠে বসিয়ে দিলো এক ঘা।
পিঠ হাতাতে হাতাতে মুহিত বলে উঠলো গুন্ডি একটা।
সব কিছুর শোধ সিলেট গিয়ে তুলবো।মনে মনে বাঁকা হাসলো মুহিত।
এরই মাঝে জিপ নিয়ে হাজির হলো মেজর আদ্রিয়ান।
মুহিত দুটো জিপের ব্যাবস্থা করেছে।।
একটাতে সে আর স্বর্গ যাবে অন্যটায় মেজর আদ্রিয়ান আর ক্যাপ্টেন রা যাবে।
ব্যাগপত্র গাড়িতে ভরে সবাই যার যার মতো গাড়িতে চেপে বসলো।গন্তব্য সিলেট,মৌলুভীবাজার,শ্রীমঙ্গল।
――――――――
হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছেন আশরাফ চৌধুরী।মিথ্যে অভিনয় করে কতোদিন বসে বসে টাকা ঢালবেন সেখানে?
তার মধ্যে কোনো কাজ ই সেখান থেকে করা যাচ্ছিলো না।
নিজের ছেলের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে তেতে উঠলেন আশরাফ চৌধুরী।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন
“”যার জন্য তার ছেলের এহেন দশা,তাকে জীবনের চরম শিক্ষাটাই দিবেন।
ভাবতেই কানে ফোন তুললেন
কি রে ফকিরের বাচ্চা দারোয়ান খলিল,ওই চুতিয়া মেজরের খবর বল।
ওপাশ থেকে খলিল নিজের এমন অপমানে কষ্ট পেলো।কিন্তু এটা তার সাময়িক কষ্ট।যখন টাকার চেক হাতে আসে এসব কষ্ট সেই চেকের সামনে ফিকে হয়ে যায়।
খলিল অপমান গায়ে না মেখে গদগদ হয়ে বললো
একটু আগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
বিদঘুটে হাসলো আশরাফ চৌধুরী।
আজকেই তবে মেজরের খেল খতম হতে যাচ্ছে ?হুম?
মুহূর্তেই হাসি রাগে রূপান্তরিত হলো।
মদের গ্লাস হাতে তুলে চুমুক দিতে নিয়ে ছুড়ে ফেললেন মেঝেতে।
এই মেজরের জন্য তার অনেক কাজ আটকে রয়েছে।
যেখানে পুলিশ পর্যন্ত তাকে সমীহ করে চলে সেখানে এই দুটাকার মেজর তাকে পদে পদে নাজেহাল করে ছাড়ছে।
এই মেজরের জন্য তার যতো টাকা লস হয়েছে সব মেজরের চামড়া তুলে উসুল করবেন মনে মনে এই ভাবনা ভেবে ফেললেন আশরাফ চৌধুরী।
★★★
কাজী অফিসে বসে আছে স্বর্গ আর মুহিত।কিছুক্ষণ পরেই তারা একটি পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে।এর পর দুজন দুজনের সকল দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলবে।কেউ আঙ্গুল তুলতে পারবে না তাদের প্রতি।কোনো পাপবোধ থাকবে না।
থাকবে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
কিছুক্ষণ পর কাজী সমস্ত পেপার রেডি করে দুজনের উদ্দেশ্যে পান খেতে খেতে নির্দেশ দিলেন――
“”এখানে সই করুন।””
স্বর্গের যেনো আর তর সইছে না।মুহিতের ব্যাপারে সে সবসময়ই ডেসপারেট।এই মুহূর্ত থেকে মুহিত তার ব্যাক্তিগত মানুষ হবে,নিজের স্বামী,সেই সুযোগ কিভাবে হাতছাড়া করবে স্বর্গ?
কাজীর হাত থেকে পেপার টেনে নিয়ে ঘষঘস করে এক সেকেন্ডে সই করে মুহিতের দিকে এগিয়ে দিলো।
স্বর্গের এমন খসখস করে সই করতে দেখে কাজীর নাকে মুখে পানের রস উঠে গেলো।পানি খেয়েও তার কাশি কমলো না।চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো।
বাঁকা হেসে মুহিত সই করে কাজীকে সব বুঝিয়ে দিয়ে স্বর্গের হাত ধরে বেরিয়ে এলো।
মনে মনে কাজী স্বর্গকে বেশরম খেতাবে ভূষিত করলো।
*********
এখানে তিন দিনের জন্য এসেছে মুহিত।স্বর্গ যদি আরো থাকতে চায় তবে মুহিত এক দিন ছুটি বাড়াতে পারবে।
এখানে প্রতিটা সেকেন্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ।যেই কাজে মুহিত এসেছে সেটা করেই তাকে ব্যাক করতে হবে।
এখন স্বর্গকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে মুহিত কাজে বের হবে।কখন ফিরবে সে জানেনা।
বাকি দুই ক্যাপ্টেন মেজর আদ্রিয়ান কে নিয়ে জঙ্গল কটেজে উঠেছে,মুহিত নিউলি ম্যারেড প্লাস স্বর্গের কম্ফোর্টের জন্য সে গ্র্যান্ড সুলতান এ উঠেছে।
হোটেলে ঢুকতেই তাদের ওয়েলকাম ড্রিংকস দিয়ে ওয়েলকাম করা হলো।
এই হোটেল টা বড় রিসোর্ট এর মতো, ভেতরে সকল ব্যাবস্থাই আছে।সুইমিংপুল,গল্ফ খেলার মাঠ,কিডস জোন,জিম সেন্টার, বাহারি ফুলের গাছ,বিশাল বড় বড় নারিকেল গাছ সাথে পাহাড় কেটে সিঁড়ি করা রাস্তা।
সবকিছু এক নিমিষেই স্বর্গকে মুগ্ধ করে ফেললো।
কিন্তু লম্বা জার্নির জন্য স্বর্গ কে মুহিত জোর করে ধরে রুমে নিয়ে গেলো।
ধবধবে সাদা বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছিটানো,আর মাঝখানে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে একটা লাভ বানানো,লাল গোলাপের স্টিক রাখা ফ্লাওয়ার ভ্যাসে।
আলফাব্যাটস বেলুন দিয়ে লিখা লাভ ইউ স্বর্গ।
সব কিছুই স্বর্গের মন ছুঁয়ে গেলো।
ভালো লাগায়, ভালোবাসায় মুহিত কে জড়িয়ে ধরলো স্বর্গ।
মুহিত স্বর্গের মাথায় হাত বুলিয়ে দ্রুত ফ্রেস হতে তাড়া দিলো।
স্বর্গ ফ্রেস হয়ে এলে মুহিত ও ফ্রেস হতে চলে যায়,ফিরে আসে মিনিট দশেক পর।এসেই পোশাক পাল্টে স্বর্গকে বিশ্রাম নিতে বলে বেরিয়ে যায়।
মিনিট দুয়েক পরেই আবার রুমে ব্যাক এসে সতর্কতা বাণী দিয়ে যায় স্বর্গকে।
―বাবু আমি সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো,তুমি ঘুমানোর ট্রাই করো, একা একা বাইরে যেও না, কিছু লাগলে ইন্টারকমে কল করবে রিশিপশন থেকে হেল্প করবে।বলে স্বর্গের কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায়।
জিপ নিয়ে মেজর আদ্রিয়ান কে সঙ্গে নিয়ে মৌলভীবাজার বর্ডার এ পৌঁছুলো মুহিত।এখান থেকেই তাকে গুপ্তধন খুঁজে বের করতে হবে।চারপাশে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।বড় বড় গাছপালার জন্য জায়গাটা আরো ঘুটঘুটে লাগছে।মাঝে মাঝে দুই একটা বন্য পশু পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে।
মেজর আদ্রিয়ান আর মুহিত টর্চ জেলে দুজন দুই পাশে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো।
মিনিট দশেক খোঁজাখুঁজি করার পর কাঙ্খিত জিনিস পেয়ে দুজনের মুখের হাসি ই প্রশস্ত হলো।
বাকী কাজ কাল দেখা যাবে।
তাড়া দেখিয়ে মুহিত হাসকি কন্ঠে বলে উঠলো――
―তো মেজর আদ্রিয়ান হোটেলে ফেরা যাক?
―সিউর মেজর মুহিত ওয়াসিফ
লেটস গো।
●●●●
আজকের রাত টা মুহিত আর স্বর্গের জন্য একটা স্পেশাল রাত হতে যাচ্ছে।
মুহিতকে স্বর্গ নিজের সব দিক থেকে হ্যাপি করে দেবে আজ।
ইন্টারকমে কল করে স্বর্গ রুমটাকে সাজানোর প্ল্যানিং করলো।সাথে নিজেকেও মুহিতের জন্য তৈরি করলো।
****
প্রচুর গাছপালা, পাহাড়,আর মেঘালয় পর্বতের প্রভাবে প্রায় ই বৃষ্টি হয় মৌলভীবাজারে।
আজকের আবহাওয়া টা খুব সুন্দর।
মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে সাথে ঠান্ডা বাতাস।
স্বর্গ পুরো রুমটা মোমবাতির আলোতে সাজিয়েছে,সাথে মুহিতের প্রিয় ফুল লাল গোলাপ আর রজনী গন্ধা।
আজ স্বর্গ নিজের মন মতো সেজেছে।তার রূপে মুহিত কে আজ ডুবে মরতে হবে।কেনো অন্য মেয়ের সাথে সেদিন কফিশপে বসেছিলো তার শোধ তুলবে আজ।
স্বর্গ কালো রঙের একটা পাতলা জর্জেট শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে স্লিভলেস ব্লাউজ পরে নিলো,সাথে ম্যাচিং করে ডায়মন্ড এর সেট পরলো।স্ট্রেইট চুলগুলো কার্লি করে ছেড়ে দিলো কাঁধের দুই পাশে।ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক, চোখের ঘন পাপড়িতে মাসকারা,মোটা করে কাজল দিয়ে ব্লাশন দিয়ে সাজ কমপ্লিট করলো।
মেদহীন কোমরে গোল্ডেন কালারের বেলি চেইন পরে নিলো।
একটু আগে মুহিত কল করেছিলো, বলেছে দশ মিনিটের মধ্যে ফিরবে।
সব কিছু গুছিয়ে রাখতেই দরজায় নকের শব্দ হলো।
দরজায় নকের শব্দে স্বর্গের বুক ধাকধাক করছে,নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।তার মানে মুহিত এসেছে।
দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো স্বর্গ।
পুরো রুম অন্ধকার করে রেখেছে স্বর্গ,মুহিত স্মিত হাসলো।
তার মানে বউ স্পেশাল কিছু রেখেছে।
স্বর্গকে আসছি বলে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে মুহিত ফ্রেস হতে চলে যায়।
স্বর্গ দিশলাই এর সাহায্যে ক্যান্ডেল গুলো জ্বালিয়ে দেয়।সুগন্ধি যুক্ত মোমবাতি তে আগুন দিতেই পুরো কক্ষ জুড়ে মন পাগল করা সুন্দর গন্ধ ভেসে বেড়াতে লাগলো।
মিনিট দশেক পর শাওয়ার নিয়ে বের হলো মুহিত।
গায়ে সাদা শার্ট আর লোজ সাদা প্যান্ট পরে বেরিয়ে এলো মুহিত।
সামনের চুল গুলো কপালে দুই এক গাছি করে পড়ে রয়েছে।
গলার নীচে থুতনিতে মুক্তার মতো বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে,মোমের আলোতে স্বর্গের কাছে সেগুলোকে হীরে মনে হচ্ছে।
――――
মুহিতের দিকে নেশাক্ত নজরে মুহিতের সামনে এসে দাঁড়ায় স্বর্গ।
নিজের প্রেয়সীর এমন আগুন ঝরা রূপে দিশা হারালো মুহিত।
হারিয়ে ফেললো মুখের ভাষা।
স্বর্গ মুহিতের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন একে দিলো।
সম্বিৎ ফিরে পেলো মুহিত।
সহসাই স্বর্গের কোমর চেপে ধরলো শক্ত করে।
দখল নিলো স্বর্গের ঠোঁট।
মুহিতের সাথে তাল মিলিয়ে চললো স্বর্গ।
কাঁধ থেকে হাত চলে আসলো মুহিতের শার্টের বাটনে।
এক এক করে সব গুলো বোতাম খুলে ফেললো স্বর্গ।
মুহিত শার্ট খুলে ছুড়ে মারলো মেঝেতে।
বৃষ্টির বেগ আরো বেড়ে চললো সাথে উত্তাল হলো দুজন মানব মানবী।
স্বর্গকে এক ঝটকায় কোলে তুলে ফেললো মুহিত,শুইয়ে দিলো নরম ফুলের বিছানায়।ঝাঁপিয়ে পড়লো মুহিত স্বর্গের উপরে।
আজ কোনো বাধা নেই,কোনো পাপবোধ নেই।
আজ তারা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ,স্বামী স্ত্রী।
স্বর্গের গলার ভাঁজে মুখ গুঁজে দিলো মুহিত,ছোট ছোট চুম্বনে ভরিয়ে দিলো গলা।
মুহিতের উষ্ণ স্পর্শে কেঁপে উঠছে স্বর্গ।
নিজের কন্ট্রোল হারালো মুহিত,হাতের বিচরণ হলো অবাধ্য।
স্বর্গের বক্ষে মুখ গুঁজে দিলো মুহিত,আস্তে আস্তে চলে এলো নাভীরন্দ্রের কাছে।উত্তপ্ত চুমু দিলো মেদহীন কোমরে।সাথে পেটে, কাঁধে,বক্ষে,পিঠে অসংখ্য লাভ বাইটস।
স্বর্গ নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।চরম আকুতি নিয়ে মাদকতার সুরে মুহিতকে আহবান জানালো স্বর্গকে সুখে ভাসাতে।
মুহিত বাধ্য দাসের ন্যায় আজ্ঞা পালনে সায় দিলো।
প্রথমবারের চেষ্টায় ককিয়ে উঠলো স্বর্গ,মুহিত স্বর্গের দিকে আহত দৃষ্টি দিয়ে সরে আসতে চাইলো।
জড়িয়ে ধরলো স্বর্গ।
ভেসে গেলো সুখের রাজ্যে,স্বর্গের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো জল।সেই জল শুষে নিলো মুহিত।
আদিম খেলায় মত্ত হলো দুজন নর–নারী।
~~~~~~
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভেঙে গেলো মুহিতের।নিজের বাহুডোরে স্বর্গের নিষ্পাপ মুখমন্ডল দেখে মনে সুখের হাওয়া দোলা দিলো।
স্বর্গের নগ্ন পিঠ দেখে আঁতকে উঠলো মুহিত। সারা পিঠে লালচে জখমের দাগ। ,নিজের অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে স্বর্গকে।মুহিতের বুক থেকে সরিয়ে স্বর্গকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলো মুহিত।
পানির ছোয়া লাগা মাত্রই সারা শরীর জলে উঠলো মুহিতের।
কষ্টের বদলে সুখ অনুভূতি হলো মুহিতের।
প্রশস্ত হাসলো মুহিত।
মেয়েটা তাকে যেই সুখ গত রাতে দিয়েছে এই সুখ কি মুহিত তার এই ত্রিশ বছরের জীবনে কোনো দিন পেয়েছে?
মুহিত শাওয়ার নিয়ে এসে স্বর্গকে ডেকে তুললো,গোসল করে দ্রুত রেডি হতে বললো স্বর্গকে,আজ ঘুরতে নিয়ে যাবে।
কিন্তু স্বর্গ চোখ মেলে তাকাতেই পারছেনা।
এক রাতেই কেমন চেহারা মলিন হয়ে গেছে।মুহিতের অনেক মায়া হলো স্বর্গের জন্য।
স্বর্গ বহু কষ্টে উঠতে নিলে ব্যাথায় আবার শুয়ে পড়ে।
বিচলিত হয়ে মুহিত স্বর্গের গায়ের ব্ল্যাঙকেট টান দিতেই মুখে আধার নেমে আসে।পুরো শরীর লালচে জখমে ভরে আছে।
স্বর্গকে জড়িয়ে ধরে সরি বললো মুহিত।
এক্ষুনি মেডিসিন এনে দিচ্ছি জান, খেলেই ব্যাথা কমে যাবে।
স্বর্গের কপালে চুমু দিয়ে মুহিত আবার স্বর্গকে শুইয়ে দিলো।
রুমের অবস্থা এমন হয়ে আছে যেনো ঝড়,টর্নেডো,সাইক্লোন, সব কিছু এই রুমের উপর দিয়েই বয়ে গেছে।
মুহিত সব কিছু গুছিয়ে বাইরে চলে আসলো মেডিসিন কিনতে।
সাথে মেজর আদ্রিয়ান কে ফোন দিয়ে বললো ―
―চলুন মেজর আদ্রিয়ান শিকার ধরা যাক তবে।
বলেই বাঁকা হাসলো মুহিত।
#চলবে।