তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল #পর্ব_২২ #সারিকা_হোসাইন®

0
220

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_২২
#সারিকা_হোসাইন®

[নৃশংস হত্যার বর্ণনা আছে]

মুশুলধারে ধরনীতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ভারী বর্ষনের দল।থেকে থেকে বিকট শব্দে বড় বড় বাজ পড়ছে।ভারী বর্ষনের কারনে কোনো মানুষ জন ঘর থেকে বাহির হয়নি আজ।বৃষ্টি আর বজ্রপাত দুটো মিলিয়ে মনে হচ্ছে যেনো সাক্ষাৎ যমদূত ধরনীতে তান্ডব চালাচ্ছে।

ভাঙা একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে লোহার চেয়ারে শক্ত করে মুড়িয়ে বাধা হয়েছে গেট কিপার খলিল কে।খলিলের মুখ স্কচ টেপ দিয়ে আটকানো।
আগাগোড়া কালো কাপড়ে মোড়ানো এক দানবের মতো ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আছে খলিলের সামনে।বজ্রপাতের ঝলকানি তে তার অবয়ব বোঝা যাচ্ছে কিন্তু চেহারা স্পষ্ট নয়।
সবেই হুশ ফিরেছে খলিলের।হুশ ফিরেই নিজের এহেন দুর্দশা আর সামনে দাঁড়ানো আগন্তুক কে দেখে রূহ কেঁপে উঠলো খলিলের।

হঠাৎই ছটফট করতে লাগলো খলিল।কিন্তু হাত পা শক্ত করে বাধা।এক বিন্দু নড়ার শক্তি নেই।মুখে অনেক কথাই বলতে চাইলো।সেটাও পারলো না।
খলিলের ছটফটানি দেখে হা হা করে হেসে উঠলো যুবক।

পাশেই বিকট শব্দে বাজ পড়লো।কেঁপে উঠলো খলিল।আজ কি তার জীবনের লীলা খেলা সাঙ্গ হতে যাচ্ছে তবে?

ভয়ের আতংক খলিলের চোখে স্পষ্ট।এটাই চেয়েছিলো মুহিত।
তার কলিজার টুকরা ভাইকে এই নির্দয় খলিল গলা টিপে হত্যা করেছে।
শুধু তাই নয় মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে কথা বলার,চিল্লানোর সুযোগ টা পর্যন্ত দেয়নি।

যেই মুকিত কে বাড়ির কোনো সদস্য ফুলের টোকা পর্যন্ত দেয়নি,সেই মুকিত কে এই জানোয়ার চিপে চিপে মেরেছে।

কতোটা কষ্ট পেয়েছে মুকিত?
মুকিতের করুন চেহারা মনে পড়তেই আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে উঠলো মুহিত।

মুখের কাপড় সরিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে হাটু মুড়ে খলিলের সামনে বসলো।

মুহিতের চেহারা দেখেই খলিলের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।

মুহিতের পাশেই দুটো ব্যাটারি আর কিছু ক্লিপ যুক্ত তার রয়েছে।

খলিলের উদ্দেশ্যে মুহিত বলে উঠলো
―ভয় করছে খলিল চাচা?

খলিল মাথা দিয়ে ইশারায় বুঝালো সে ভয় পাচ্ছে।
মুহিত হাসতে হাসতে বললো
“”ভয় পাওয়ানোর জন্যই তো এতো আয়োজন খলিল চাচা।
আপনি ভয় না পেলে তো আমার সব কষ্ট বৃথা।

কথা বলতে বলতে মুহিত ক্লিপ গুলো ব্যাটারি তে লাগিয়ে নিলো।এর পর খলিলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
―এগুলো দিয়ে আপনাকে ইলেকট্রিক শক দেবো খলিল চাচা।সেই শক খেয়ে আপনি তড়পাবেন আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় উপভোগ করবো।

কেমন মজা হবে তাই না?

মুহিতের এসব কথায় পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো খলিলের।
মুহিত উঠে দাঁড়ালো,এক টানে খুলে ফেললো খলিলের মুখের টেপ।

খলিল হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
আমাকে কেনো ধরে এনেছেন স্যার?আমার অপরাধ কি?

খলিলের প্রশ্ন শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো মুহিতের ।
কতো বড় সাহস,আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে?

পায়ের ভারী বুট দিয়ে পিষে ধরলো খলিলের পা,
ব্যাথায় গগন বিদারী চিৎকার করে উঠলো খলিল।
মুহিত হাসতে হাসতে বললো

―জোরে জোরে চিৎকার কর খলিল।
আমার মাসুম ভাইকে তো তুই চিৎকার করতে দিস নি।
কিন্তু আমি তোকে সেই সুযোগ দিলাম।
তুই যতো চিৎকার করবি আমি ততো শান্তি পাবো।

তোর জন্য আজকে ছয় বছর ধরে আমি ভাইয়া ডাক শুনি না।

দোকানে কতো ভালো ভালো খেলনা,চকলেট ,জামা কাপড় দেখি,কিন্তু কিনতে পারিনা।কারন যাকে এগুলো কিনে দেবো সেই ই নেই।তুই তাকে শেষ করে দিয়েছিস।

বুকের এই খান টাতে কতো কষ্ট হয় জানিস?

তুই এটা কিভাবে করেছিস খলিল?

ওর নিষ্পাপ চোখের জ্বলে কি তোর মন একটুও গলেনি?
তুলার মতো ধবধবে সুন্দর গলায় কিভাবে তোর ওই কুৎসিত হাত দিয়েছিস খলিল?

দুই হাতের সাহায্যে মুহিত খলিল কে ইঙ্গিত দিয়ে বুঝালো
―এতোটুক বয়স থেকে কোলে পিঠে করে আগলে রেখেছি ওকে আমরা।কোনো দিন আহ শব্দ টুকু করতে দেইনি।

আর তুই তাকেই এতো কষ্ট দিয়ে মারলি?
চোখের জল মুছে মুহিত খলিল কে প্রশ্ন করলো
―তুই কিভাবে মরবি ডিসাইড কর।
চারশত চল্লিশ ভোল্টের শক খেয়ে মরবি নাকি শ্বাসরোধ হয়ে মরবি?

খলিল ভয়ে কেঁদে কেঁদে মিথ্যে বলে বাঁচার আকুতি জানিয়ে যাচ্ছে শুধু।
খলিলের এসব মিথ্যে নাটকে রাগ ধরে গেলো মুহিতের সারা শরীরে।

বৈদ্যুতিক তারের দুটো মাথা লাগিয়ে দিলো লোহার চেয়ারের সাথে লাগানো কটকা তে।
দোলে উঠলো খলিল।তার সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠছে শুধু।
শক দেয়া বন্ধ করে মুহিত আবার খলিলের উদ্দেশ্যে বললো
“”কেমন লাগলো?””
“”আবার দেবো?””

খলিল ভারসাম্য হীনের মতো শুধু তাকিয়ে দেখছে সব কিছু,মুখে কিছুই বলতে পারছে না।সে চোখের সামনে সাক্ষাৎ যমদূত দেখতে পাচ্ছে।

মুহিত আবার শক দিলো।

খলিলের শরীর আবার ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।এই বয়সে এতো শক নিতে পারলো না খলিল,নিমিষেই মুখ দিয়ে লালা ছুটে গেলো তার,মিনিট পাঁচেক পরেই মৃত্যু কে আলিঙ্গন করে নিলো খলিল।

খলিলের নিস্তেজ হয়ে যাওয়া দেহের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলো মুহিত।
দুই হাতের আঙ্গুল এর সাহায্যে চোখে জমা জল মুছে
ক্যাপ্টেন সৌম্য বলে হুংকার দিয়ে উঠলো মুহিত।

বাধ্য ভৃত্যের ন্যায় দৌড়ে এলো সৌম্য।
গমগমে কন্ঠে মুহিত বলে উঠলো

―ভোর হবার আগে জায়গা ক্লিয়ার করে আগের মতো করে রাখবে।
যেনো ঘটনা কিছুই ঘটেনি।

সৌম্য কন্ঠ খাদে ফেলে মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করলো
―স্যার লাশ কি করবো?

মুহিত কিছুক্ষণ মৌন থেকে স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো
―রাস্তার পাশে যেই বড় ইলেকট্রিক খাম্বা রয়েছে সেখানে সব ব্যাবস্থা করা আছে।জাস্ট শুইয়ে দিয়ে আসবে।

সকালে যে কেউ ভাববে বজ্রপাতে পরে মারা গেছে।
বলে এলবো ক্রাচে ভর দিয়ে প্রস্থান নিলো মুহিত।

―――――――

রাত এগারোটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট,বজ্রপাত কমে গিয়ে ঝুপঝুপ করে মোটা মোটা বৃষ্টির ফোটা পড়ছে শুধু।
নিজের ঘর টাকে মন মতো গুছিয়ে নিলো স্বর্গ।
সকালেই মুহিত ফিরে আসবে হসপিটাল থেকে।
মুহিতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় রাঙা হলো স্বর্গের ধবধবে সাদা গাল।

নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবে সে মুহিতের সামনে?

আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে স্বর্গ।
অনেক হয়েছে নিজের মনের সাথে নিজের অভিনয়ের যুদ্ধ।নিজেকে শক্ত প্রমান করতে গিয়ে বহু কষ্টে গিলে ফেলেছে সকল কান্না,অভিযোগ, অনুযোগ।
হসপিটালে বাকি দশ জন ডাক্তারের মতো নিজেকে মুহিতের সামনে উপস্থাপন করেছে নিজেকে।

আর কতোদিন চলবে নিজের সাথে নিজের এই কানামাছি?
মুহিত কে একান্তে পেলে নিজেকে এভাবে ধরে রাখতে পারবে তো সে?

ভাবনার সুতো ছিড়লো হঠাৎ দরজায় নকের আওয়াজে

এই টাইমে কেউ আশার কথা নয়।
বাপী জরুরী কাজে চিটাগাং গিয়েছে,মাম্মা তো ঘড়ির কাটা দশের ঘরে যেতেই ঘুমে কাত।
আর সুখ?
সেও তো মিলিটারি একাডেমী তে ফিরে গেছে বিকেলে।
তাহলে কে এলো?
এতো সিকিউরিটি, ক্যামেরা ফাঁকি দিয়ে চোর ও তো আসতে পারবে না।
তবুও ভয় হলো স্বর্গের মনে।

ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়।
এক পা দু পা করে এগিয়ে দরজা অল্প খুলতেই অতি পরিচিত পুরুষালী গন্ধ ভুরভুর করে নাসারন্ধ্রে বাড়ি খেলো।

নিমিষেই বুক ধক করে উঠলো,মন ভারী হলো,চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো জ্বল।
দরজা ঠেলে কক্ষে প্রবেশ করলো মুহিত।

বহু কষ্টে শক্তি সঞ্চয় করে দরজা আটকে দিলো স্বর্গ।
এলো মেলো পায়ে মুহিতের সামনে এসে দাড়ালো।
মুহিতের চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই ঝাপটে ধরলো মুহিত কে।

বাইরের বর্ষনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকলো স্বর্গের অক্ষি বর্ষণ।বেহায়া মন আর নেত্র কোনোটাকেই আর আয়ত্তে আনা গেলো না।

গলার স্লিং খুলে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো স্বর্গকে মুহিত।

কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেলো স্বর্গের।

শুরু হলো নানান অভিযোগ অনুযোগ।

―তুমি আমাকে ধোকা দিয়েছো মুহিত,
অন্ধের মতো শুধু নিজের পথেই হেঁটেছো অথচ তোমার সাথে যে আরেক জনের জীবন জুড়েছে সেটা ভেবে দেখোনি।
আমি কক্ষনো তোমাকে ক্ষমা করবো না।

তুমি আমার কথা একবারো কেনো ভাবলে না?
যদি তুমি ফিরে না আসতে আর ?
আমি কোথায় যেতাম কি করতাম?
তুমি এতো বড় অন্যায় কিভাবে করলে আমার সাথে?

এই কয়েকটা দিন আমার কাছে কয়েক হাজার বছরের মতো ঠেকেছে।আমার বুকে অনেক কষ্ট হয়েছে মুহিত!
প্রতি মুহূর্তে আমার নিজেকে শেষ করে দেবার ইচ্ছে জেগেছে।
তুমি কখনো বুঝতেই পারলে না আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি!

অসহায় এর মতো কাঁদতে কাঁদতে স্বর্গ হাটু মুড়ে মুহিতের পা জড়িয়ে ধরে বসে পড়লো।

প্লিজ মুহিত আমাকে ছেড়ে আর কখনো কোথাও যেওনা।
আমি বাঁচতে পারবো না,মরে যাবো।সহ্য করতে পারিনা আমি।
বুকের এইখানে অনেক ব্যাথা করে।দম বন্ধ লাগে।

স্বর্গের এমন কান্না দেখে মুহিতের নেত্র বেয়ে ফোটায় ফোটায় টুপটুপ করে গড়িয়ে পড়লো জল।
সত্যি ই তো,সে তো স্বার্থপর এর মতো কাজ করেছে।
মুহিত যদি আর না ফিরতো কোনোদিন?
ফুলের মতো পবিত্র মেয়েটা সারাটা জীবন বিধবার তকমা গায়ে জড়িয়ে বেঁচে থাকতো।
প্রতিশোধ পরায়নতা তাকে এতো অন্ধ কিভাবে করলো?

মুহিত ওয়াসিফ যে তার পিতার আদর্শে আদর্শায়িত ,তার মতো বিচক্ষণ মানুষের দ্বারা এতবড় ভুল কিভাবে হলো?

বহু কষ্টে উপুড় হয়ে টেনে তুললো স্বর্গকে।
বুকের সাথে মিশিয়ে কপালে,চোখে,মুখে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো।
আবার বুকে চেপে ধরলো।
স্বর্গের মাথায় চুমু খেয়ে আহত কন্ঠে বলে উঠলো
―সরি বউ,অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
এই দেখো আমি কান ধরেছি।
জীবনেও আর কখনো এমন ভুল হবেনা।

ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে স্বর্গ।
স্বর্গের এহেন কান্না মুহিতের বুকের শেলের মতো বিধছে।
কন্ঠে সকল দরদ ঢেলে স্বর্গের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

―ক্ষমা করে দে না জান!

―তুই ক্ষমা না করলে আমি নিজেকে কঠিন শাস্তি দিবো।

সাথে সাথেই স্বর্গ তার কোমল হাতের তালু দিয়ে ছাপিয়ে ধরলো মুহিতের হাত।
অসহায় নেত্রে তাকিয়ে থাকলো মুহিতের মুখের পানে।
স্বর্গের তুলতুলে নরম হাতের পিঠে,তালুতে চুমু খেলো মুহিত।

রজনীগন্ধার স্টিকের মতো লম্বা আঙ্গুল গুলো তে আস্তে করে কামড়ে ধরলো।
শিউরে উঠলো স্বর্গ।
গলা জড়িয়ে ধরলো মুহিতের।
জানালার গ্রিল গলিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা এসে সামান্য ভিজিয়ে দিলো দুজন কে।
বেসামাল হলো মুহিত।
স্বর্গের চোখের গড়িয়ে পড়া জ্বল শুষে নিলো ঠোঁট দিয়ে।
উত্তাল হলো বুকের মাঝে জমানো ভালোবাসা।
দুজনে ডুব দিলো ভালোবাসার সুধা আস্বাদনে।

―――――
বিমর্ষ মনে নিজের বরাদ্দকৃত রুমে বসে আছে সৌম্য।আজ দুদিন ধরে না পিউ ফোন তুলছে না দেখা করছে।
চারপাশে এতো সহিংসতা যা মনের ভীতি বাড়িয়েই দেয় শুধু।
যেই পিউ এক মিনিট ও সৌম্যের সাথে কথা না বললে পাগল হয়ে যায়,সেই পিউ আজ দুদিন ধরে ফোন অফ করে রেখেছে।
বুকের ভেতর জলোচ্ছাস বয়ে যাচ্ছে সৌম্যের।
সারাক্ষন মন টা কু ডেকে চলেছে।
নিজের কার্য সাধন করতে গিয়ে নিজের প্রাণ প্রিয়ার ক্ষতি করে ফেললো না তো?

নাসের হায়দার সাংঘাতিক একজন মানুষ।টাকা পয়সাই তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
নিশ্চয় কিছু জানতে পেরে পিউকে কিছু করে দিয়েছে।
নাহ আর এক মুহূর্ত দেরি করা যাবেনা।
মেজর মুহিত কে সব কিছু জানাতে হবে।

চিন্তিত মুখে গায়ে ইউনিফর্ম জড়িয়ে ডিউটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো ক্যাপ্টেন সৌম্য শাহরিয়ার।

―――――
দুদিন পর খলিলের লাশ পাওয়া গিয়েছে বড় রাস্তার মোড়ের বৈদ্যুতিক খাম্বার নীচে।বজ্রপাতে মারা গিয়েছে সে।মাথার চুল গুলো সহ পুড়ে গেছে।বিশ্রী রকম কালো হয়ে গিয়েছে তার লাশ।
আজকে বাদ জোহর তার জানাজা।
নিমিষেই কোয়ার্টারের প্রত্যেকটা মানুষের কানে পৌঁছে গেলো এই খবর।
ক্রুর হাসলো মুহিত।
নেক্সট নাসের হায়দার এর পালা।
তাকে মুহিত শাস্তি দিবেনা।
তার শাস্তির ব্যাবস্থা ভিন্ন।
তাকে দেশদ্রোহীতার শাস্তি দেয়ার ব্যাবস্থা করবে মুহিত নিজে।
আজীবন জেলে পচে মরবে সে।
মনে মনে এসব ভাবতেই কফি খেতে খেতে আনমনে হেসে উঠলো মুহিত।
পাশেই নাফিজ আর স্বর্গ ব্রেকফাস্ট করছিলো।
মুহিতের আচমকা এমন হাসি তাদের সুবিধার ঠেকলো না।তবুও কেউ কিছুই প্রশ্ন করলো না মুহিত কে।
হঠাৎ ই মুহিতের ফোন ভো ভো আওয়াজ তুলে ভাইব্রেট হতে লাগলো।
ক্যাপ্টেন সৌম্যের কল দেখে দ্রুত তা রিসিভ করে কানে তুললো।
ওপাশ থেকে সৌম্যের আহত আওয়াজ ভেসে উঠলো
―স্যার আজ তিন দিন ধরে পিউ এর কোনো খুঁজ পাচ্ছিনা।
যা বুঝার বুঝে গেলো মুহিত।

দুদিন রেস্ট নিয়ে নাসের হায়দার এর বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলো।কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে আজকে রাতেই একশনে নামতে হবে।
সৌম্য কে আস্বস্ত করে ফোন কেটে দিলো মুহিত।

―――――
ক্রিমিনাল ভিজিটিং রুমে বসে আছে স্বর্গ আর মুহিত।আহিয়ান কে দেখার জন্য এসেছে তারা।মুহিত যখন শুনেছে আহিয়ান এর মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে তখন থেকেই দেখা করার চেষ্টা করেছে,কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য পারেনি।

কিছুক্ষন পর দুজন কারারক্ষী আহিয়ান কে ধরে আনলো।
আহিয়ানের এমন সূচনীয় অবস্থা দেখে কোথাও একটু মন খারাপ হলো মুহিতের।
মুহিতকে দেখে আহিয়ান যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।দৌড়ে এসে মুহিত কে জাপ্টে ধরলো।
মেজর মুহিত ওয়াসিফ,আমি জানতাম তুমি আসবে।তোমাকে আমি আগেই দেখে নিয়েছি।
পাপার বিনাশ তোমার হাতে ই হবে তাইনা বলো?
এতো স্মার্ট একটা ছেলে কেমন হয়ে গেছে নিমিষেই।মুহিতের মনে হঠাৎই এক দয়া এলো।
সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে আহিয়ান কে আরেকটা চান্স দেবে মুহিত।সে জন্য তার যা যা করতে হয় সব করবে।

স্বর্গের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক মানুষের মতো করে বলে উঠলো
―স্বর্গ তুমি মলিন হয়ে গেছো, তোমাকে এমন ভালো লাগেনা।
তুমি সবসময় প্রাণবন্ত থাকবে ঠিক আছে?

ভিজিটিং আওয়ার শেষ হতেই মুহিত ,স্বর্গ উঠে দাঁড়ালো।
কারারক্ষী আহিয়ান কে বগল দাবা করে ধরে নিয়ে যেতে উদ্দত হলো।
হঠাৎই আহিয়ান ডেকে উঠলো
―স্বর্গ!
পিছন ফিরে তাকালো স্বর্গ।
মৃদু হেসে আহিয়ান বলে উঠলো
―আমি তোমাকে সত্যি ই আমার করে পেতে ছিলাম।
কিন্তু উপায় টা ছিলো অপরাধের।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here