রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ২৯

0
169

রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

২৯
[ কপি করা নিষেদ্ধ ]
সন্ধ্যারাত আটটা ত্রিশের ঘরে। সারাদিন প্রহরের তপ্ত রোদে শরীর জ্বালা পুড়া করলেও এই ভর সন্ধ্যার আকাশে জ্বলজ্বল করা তাঁরা নিচে স্নিগ্ধ ধরনী ঠান্ডা হওয়া বইছে। ভ্যাপসা গরমের তমাট ভাবটা আর নেই। শীতল পরিবেশে! শীতল হওয়ায়। মন-শরীর জুড়ানো জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এই শীতল পরিবেশও রিদের মতোন মেজাজ মানুষের মন ঠান্ডা হওয়া হয়তো সম্ভব না। রুক্ষ হাতে সেই কখন থেকে স্টিয়ারিং চেপে ড্রাইভ করছে সে। চোয়াল শক্ত ক্ষিপ্ত মেজাজ! ডানহাতে জ্বলজ্বল করছে তাজা রক্তের কাটা দাগটা। এই কাটা জায়গার রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে কিনা, বুঝতে পারছে না পাশে সিটে বসা রাদিফ। সে অপরাধী নেয় ভাইয়ের পাশে চুপচাপ বসে উসখুস করছে। পিছনের সিটে যথারীতি আসিফ বসা। আসিফের অবস্থা রাদিফের মতোন অপরাধী না হলেও সে সাংঘাতিক ভয়ে আছে রিদের ড্রাইভিং করা নিয়ে। রিদ রাগে মেজাজ হারিয়ে আবার এক্সিডেন্ট করে না বসে। আসিফ আল্লাহ! আল্লাহ! করে নিজের জানটা হাতে নিয়ে বসে আছে। কি একটা অবস্থা তাঁর। পারছে না হাউমাউ করে কাঁদতে রিদের ভয়ে। আবার রিদকেও কিছু বলতে পারছে না। তাহলে রাদিফের উপর হওয়া সবটা রাগ সোজা আসিফের উপর দিয়ে চলে যাবে। সেজন্য আসিফ এক প্রকার বাঁধ্য হয়েই চুপ রইল। তবে রাদিফ অপরাধী মুখ করে চুপিচুপি বারবার রিদের আহত হাত গুলো দিকে তাকাচ্ছে। রিদ দক্ষ হাতে ড্রাইভিংয়ে হাত চালানোর জন্য তার বাহুর মাংসপেশি ফুলে কালো শার্টে উপর দিয়ে ঠিকরে ছিঁড়ে বের চাচ্ছে বডি। কুইনে গুটানো শার্টের হাত গুলোও এলোমেলো। কালো শার্টের উপর রক্তের ছিঁটা ছিঁটা গুলো কালো দাগ হয়ে আছে। তখনকার অফিসের পরিপাটি রিদ খান আর নেই। এখন বেশ উগ্র আর ভিলেন টাইপের মনে হচ্ছে তাঁকে। যাঁকে এক দেখায় মানুষ বলবে সে মারামারিতে ওস্তাদ। রাদিফ শুকনো গলায় ঢুক গিলল। ভয়ার্ত চোখ আওড়াল রিদের বামহাতের দামি রোলেক্স ঘড়িটার দিকে। কাঁচ ভেঙ্গে তেঁতলে গেছে ঘড়িটার। আর সেই কাঁচ ভাঙ্গা রিদের হাতের শিরায় ঢুকে কাটা ছিঁড়ার মতোন দাগ হয়েছে। রাদিফের বেশ মায়া হলো বড় ভাইয়ের জন্য। আজ ওর জন্য রিদ আবারও মারামারিতে জড়াল। মা শুনলে নিশ্চয়ই রাদিফকে বকবে? কিন্তু রাদিফ বা কি করবে? ওহ কি জানতো নাকি হঠাৎ এমন হামলা হবে ওর উপর? কি ভয়ানক একটা পরিস্থিতিতে ফেঁসে গিয়েছিল সে। যদি সময় মতো রিদ ভাই না আসতো তাহলে হয়তো আজ রাদিফের মৃত্যু হতো আর নয়তো শত্রুরা ওকে ভয়ংকর ভাবে আহত করে রাস্তায় ফেলে যেত। এমনইতে রিদের আসার আগে লোক গুলোর সাথে ধস্তাধস্তি করে পালাতে চেয়ে বেশ আঘাত পেয়েছে সে। গুন্ডা লোক গুলোও সংখ্যা বেশ ছিল। প্রায় বিশ-পঁচিশের মতোন হবে। এতো গুলো লোকের সাথে সে আর ডাইভার একা পেরে উঠবে না বলেই পালাতে গিয়ে তারাও আহত হলো। রাদিফের তো গায়ে হলুদ পাঞ্জাবিটা জায়গা জায়গায় ছিঁড়ে রক্তের দাগ লেগে আছে। সাথে রাদিফের কপালে, গালে, গলা, হাতে, বুকে, পেটে প্রায় অনেক জায়গায় কাটা ছিঁড়ার দাগ হয়েছে। রাদিফ অপরাধী নেয় ভারি নিশ্বাস ফেলল। আজকের ঝামেলাটা মূলত তাদের বাবা নিহাল খানের রাজনৈতিক শত্রুতা ধরে করা হয়েছিল রাদিফের উপর। বংশ পরম্পরায় রাদিফদের পরিবারের সকলেই রাজনৈতিকের সাথে জড়িত। বলতে গেলে বাপ, দাদা, বড়ো বাবা সকলেই রাজনৈতিক করতো। এই সূত্রে রিদও এসবে জড়িত। রাদিফ জড়িত আছে তবে খুব কম। বাবা নিহাল খানের ইলেকশনের কাজে ছাড়া তাঁকে আর দেখা যায় না এসবে। মূলত তারা একটা রাজনৈতিক পরিবারের বংশধর। আর সেজন্য তাদের গোপন শত্রুর সংখ্যাও বেশি। রাদিফ মূলত এসব রাজনৈতিকে বেশি একটা জড়ায় না। কিন্তু সরাসরি রিদের ক্ষতি করতে পারছে না বলেই রাদিফকে দূর্বল পয়েন্ট বানিয়ে মারতে চেয়েছিল। সময় মতো রিদ চলে আসায় এই যাত্রায় প্রাণে বাঁচল সে। রাদিফ বেশি ভাগ সময়ই দেশের বাহিরে থাকে পড়াশোনার জন্য, পেশায় সেও একজন ডাক্তার। এবার ডাক্তারী ইন্টার্নশীপ করছে। রাফিদ দেশে যখন আসে তখন বাবা, মা আর ভাইয়ের বাসায় দৌড়াদৌড়ি করে দিন কাটায়। আসলে তাদের বাবা-মার সম্পর্কের অবনতির জন্য রিদ-রাদিফ দুই ভাই বাবা-মার সঙ্গে একত্রে থাকতে পারে না। তাদের সুন্দর পরিবারটা একত্রে হয়েও আজ বিছিন্ন। রাদিফ হতাশার ভারি শ্বাস ফেলে রিদকে উদ্দেশ্য করে অপরাধী গলায় শুধালো…

‘ ভাই তোমার কাটা হাতে এখনো রক্ত পরছে। ব্যান্ডেজ করা দরকার। তুমি গাড়িটা আসিফকে চালাতে দাও। আমি তোমার হাতের ব্যান্ডেজটা করে দেয়।

রাদিফের কথা থামতে থামতে বেশ জোরে ব্রেক কষলো রিদ। হঠাৎ ব্রেক কষায় পিছন থেকে আসিফ আর সামনে থেকে রাদিফ দুজনই সামনে ঝুঁকে গেল মূহুর্তে। তাড়াহুড়োয় দুজনে ঠিক হয়ে বসার আগেই রিদ শক্ত চোয়ালে স্টিয়ারিং চেপে বলল…

‘ বের হ!

তাড়াহুড়োয় রাদিফ, আসিফ দুজনেই সোজা হয়ে বসল। আসিফ তো ভয়ে একদলা থুতুও বুকে ছিটিয়ে নিল। জানটা তার হাতে চলে এসেছিল হঠাৎ রিদের ব্রেক কষায়। মনে হয়েছিল এই বুঝি ইন্না-লিল্লাহ পড়বে নিজের। ভাগ্যের ফেরে আজ সে বেঁচে গেল। কিন্তু আর কিছুক্ষণ রিদ ভাই এভাবে হঠাৎ হঠাৎ ব্রেক কষে গাড়ি চালালে, গাড়ি এক্সিডেন্ট হওয়ার আগে, কখন কি হবে? সেই ভেবে টেনশনে টেনশনে সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে। আসিফের আকাশ কুসুম চিন্তার ধ্যান কাটলো রাদিফের অধৈর্য্য গলায়। রিদকে শুধিয়ে রাদিফ বলল…

‘ মানে? কি হয়েছে ভাই? বের হবো কেন?

স্টিয়ারিং শক্ত হাতে চেপে দাঁত কিরমির করে রিদ একই গলায় বলল…

‘ আই সেইড বোথ আর আউট নাউ!

রিদের রাগ বুঝে আসিফ আর কোনো কিছু চিন্তা না করেই পিছনে দরজা খোলে লাফিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু রাদিফ তারপরও রিদের সঙ্গে থাকতে চেয়ে বলল…

‘ ভাই আমি একটু থাকি-না তোমার সাথে।

‘ নো -নেভার, আউট!

অজ্ঞাত রিদের ধমক খেয়ে রাদিফ গাড়ি থেকে নেমে দেখল ওরা ফাহাদদের বাড়ির গেইটের সামনে। মাথার উপর ফেইরি লাইটের ছাঁদ। বিয়ে বাড়ির হৈচৈ গান বাজনা কানে আসছে তাদের। আসিফ, রাদিফ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে রিদকে এক পলক দেখে এগোল বাড়ির ভিতরের দিকে। রিদ তখনো জেদ ধরে গাড়িতে বসে অপেক্ষা করলো নিজের রাগ কমার। গরম মেজাজ নিয়ে বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে আরও মেজাজ খারাপ হবে তাঁর, এতো মানুষের ভিড় দেখে। রিদ এই মূহুর্তে ভুলেও এসব বিয়ের ঝামেলায় আসতো না। বউটা আজ যদি এই বিয়ে বাড়িতে না থাকতো তাহলে সেও আর ফিরে আসত না। কিন্তু বেহায়া মনটাকে সে এসব বুঝাতে পারছে না। বউটার জন্য এই বাড়িতে মনটা পড়ে আছে বলে সে বাধ্য হয়ে মনের পিছু পিছু এখানে এসেছে। নয়তো সে কক্ষনো এতো বেহায়া হতো না। তার বেহায়া মন আর তার বেয়াদব বউ দু’টোই, তার কথা শুনে না। খালি অবাধ্যের মতোন একটা আরেকটাকে খোঁজে। রিদ পরপর ভারি শ্বাস টেনে নিজের রাগ কমাতে চেয়েও ব্যথ হলো। কিছুক্ষণ দম ধরে বসেও রইল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। উল্টো অকারণে আরও মেজাজ খারাপ হলো তাঁর। রিদের এই বালের মেজাজটা চট করে খারাপ হয়ে যায়। একবার মাথা গরম হয়ে গেলে তৎক্ষনাৎ শান্তও হতে পারে না সে। সময় লাগে। রিদ সিটে বসে গাড়ির ড্রয়ার খুলে একটুকরো সাদা রুমাল নিয়ে ডানহাতে কাটা জায়গায় পেঁচাল। রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে কিনা জানা নেই। তবে মূহুর্তে সাদা রুমালে লাল রক্ত দাগ হয়ে গেল। রিদ ক্ষিপ্ত মেজাজে বামহাতের ভাঙ্গা ঘড়িটা খুলে ছুড়ে ফেলল গাড়ির সিটে। ততক্ষণে রাদিফ, আসিফ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করা শেষ। কাউকে আর দেখা যাচ্ছে না। রিদ গাড়িটা ঘুরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকাল তবে পার্কিং এরিয়াতে নিয়ে গেল না। বরং বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার রাস্তায় গাড়িটা দাঁড় করাল ফেইরি লাইটেট ছাঁদের নিচে। এদিকটা একটু আবছায়া অন্ধকার আছে। মানুষের আনাগোনা কম। সেজন্য গাড়িটা এখানে দাঁড় করাল রিদ। বউয়ের সাথে দেখা করে সে আবার চলে যাবে তাই। রিদ দক্ষ হাতে গাড়ির দরজা ঠেলে বের হলো। মেজাজি ভঙ্গিতে ঠাস করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে সামনে এগোল। দৃষ্টি তার তখনো বামহাতের শিরার কাটা ছিঁড়া জায়গার উপর। রিদ গাড়ি থেকে নেমে দুই কি তিন কদম সামনে এগোল। চার কদম ফেলবে এরই মধ্যে কেউ ঝড়ের গতিতে পা ফেরে রিদের কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরলো। আকস্মিক ঘটনায় এতে রিদ তাল হারাল। তার ঐ দুই তিন কদম সামনে বাড়ানো পা গুলো মূহুর্তে পিছু হেঁটে ধারাম করে গাড়ির বন্ধ দরজাতে ভারি খেল পিঠ। এতোটা জোরেসোরে খেল যে রিদের পিঠের ধাক্কায় পুরো গাড়িসহ নড়ে উঠলো তক্ষুনি। রিদ চোখ খিঁচে বন্ধ করলো। তাঁর পিঠে ব্যথা পেল। কিন্তু মায়া তখনো পা ফেরে রিদের কোলে বসে রইল গলায় মুখ ডুবিয়ে। রাগান্বিত রিদ এক মূহুর্তের জন্য নিজের রাগ ভুলে গেল। বিস্ফোরণের হতবিহ্বল হয়ে বুঝার চেষ্টা করলো আসলে কি হয়েছে তার সাথে? কে তার কোলে? রিদের রুমাল বাঁধা হাতটা অটোমেটিকলি চলে গেল মায়ার কোমরে। বেশ তব্দা খাওয়ার মতোন ঘোরে মাঝে রইল রিদ। তারপর বেশ কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল তার এটা বুঝতে যে, আসলে কি হয়েছে তার সাথে। সবটা বুঝতে পেরেই রিদের রাগ পুনরায় তিলমিলিয়ে উঠলো। ক্ষিপ্ত মেজাজ আরও ক্ষিপ্ত হলো। কোথা থেকে কোন উটকো ঝামেলা এসে তার কোলে চড়েছে। এতো বড় সাহস? রিদের ক্ষিপ্ত হাত তক্ষুনি চালান হলো মায়ার হাতে। শক্ত হাতে মায়াকে কোল থেকে সরাতে চাইলে মায়া মূহুর্তে রিদের সেই হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলতে ফেলতে ‘উহু’ শব্দ করলো নাকচ করে। রিদের হাত থামে। থমকে যাওয়া ভঙ্গিতে তার বুক কেঁপে ওঠে বউয়ের উপস্থিত বুঝে। শক্ত হাতটা মূহুর্তে নরম হয়ে আসল। তিলমিলিয়ে উঠা রাগটা পানি পানি হলো। ঘোর থেকে বেড়িয়ে এবার বেকুব বনে গেল। তার বউ যে এই অসময়ে তার বুকে হামলে করে চড়বে সেটা রিদের ঘুণাক্ষরেও ধারণাতে ছিল না। রিদের পিঠ শিরশির করছে ব্যথায়। গাড়ির বন্ধ দরজার সঙ্গে ভারি খেয়েছে ভালোই জোরে। সেই পিঠ ব্যথা নিয়েই মায়াকে দু’হাতে জড়িয়ে নিল। এই প্রথম রিদের মায়াকে জড়িয়ে ধরা তাও এতোটা কাছ থেকে। মায়ার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই। দুজন দুজনকে এই প্রথম আলিঙ্গন করলো। রিদের বেয়াদব মন তো বউয়ের পাল্লায় পরে বুকের ভিতর লাফিয়ে বেড়াচ্ছে নেচে-কুঁদে। খুশিতে কখন না জানি লাফ দিয়ে বুক থেকে বেড়িয়ে যায়।

রিদ মায়ার কোমর চেপে চেপে একটু উপরে তুলল। কোল থেকে মায়ার পা পিছলে যাচ্ছি বলে রিদ দু’হাতে মায়াকে জড়িয়ে ধরে মায়ার ভর নিজের বলিষ্ঠ হাতে নিল। মায়া তখনো দু’হাতে রিদের গলা জড়িয়ে সেখানে মুখ ডুবিয়ে বসে। সাড়াশব্দ দুজনের কারও নেই। অনুভবে দুজনই নিশ্চুপ। রিদের একটা হাত মায়ার কোমরে তো অন্যটা সোজা চলে গেল মায়ার খোঁপা করা চুলের মুষ্টিতে। রিদ মায়ার খোঁপা করা চুল মুষ্টিবদ্ধ করে পিছন টানল। মায়াকে নিজের মুখোমুখি করতে মায়া চুলের ব্যথায় নাক মুখ কুঁচকে চোখ বন্ধ করে রইল। তারপরও উফ’ শব্দ করলো না। রিদ মায়ার মুখের উপর ঝুঁকেই তাঁর অশান্ত চোখ আওড়িয়ে তাকাল মায়ার বন্ধ দু’চোখের কম্পিত পাতার দিকে। তারপর চোখ ঘুরাল মায়া গালের পড়া দুই গাছি চুলে দিকে, তারপর নাক, এরপর মায়ার টকটকে লাল কম্পিত ঠোঁটের দিকে। সেই অশান্ত দৃষ্টি পরপর ঘুরে চলল মায়ার থুঁতি বেয়ে খালি গলার দিকে। এরপর আরও একটু নিচে। মায়ার গায়ের বাসন্তী রঙ্গা শাড়িটা সাথে যেন মায়ার গায়ের রঙটাও মিলে গিয়ে জ্বলজ্বল করে উঠলো রিদের চোখে। রিদ অনুভূতি শূন্য চোখে আবারও মায়ার গলা থেকে দৃষ্টি ঘুরাল মায়ার টকটকে লাল ঠোঁটের দিকে তারপর কম্পিত চোখের পাতার দিকে। রিদের শ্বাস যেমন মায়ার মুখে আছড়ে পড়ছে ঠিক তেমনই মায়ার শ্বাসও রিদ নিজের উপর অনুভব করলো। রিদের হঠাৎ ভিষণ রকমের নেগেটিভ ফিল হলো। বাড়াবাড়ি করে বউকে নিজের সাথে পিষে ফেলতে মন চাইল। হয়তো সে সিডিউস হচ্ছে। রিদ উত্তেজনায় কামুন হয়ে ঠাস করে মায়াকে ঘুরিয়ে গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকাল। মায়ার পিঠ গাড়ির বন্ধ দরজার সাথে ঠেকে যেতেই রিদ মায়ার মুখোমুখি হয়ে ঝুঁকে পড়ল। মায়ার খোঁপা থাকা রিদের হাতটা এবার আরও শক্ত হলো। মায়ার খোঁপা দেওয়া গাঁদাফুল মালা রিদ শক্ত হাতে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে রাগে দাঁত পিষে বলে…

‘ হিজাব কই তোর?

মায়া ব্যথা পেল। তারপরও মুখে উফ শব্দ বের হলো না। বরং সেভাবেই পরে রইল রিদের গলা জড়িয়ে গাড়িতে পিঠ ঠেকে। রিদের গাঁদা ফুলের মালাটা ছিঁড়তে গিয়ে মায়ার চুলসহ খোঁপা খোলে যায়। অল্প কিছু চুলও সেই মালার টানে ছিঁড়ে রিদের হাতে আসে। মায়া খুবই আস্তে করে কম্পিত গলায় কোনো রকমের বলল।
‘ আপু হলুদে জন্য পড়া হয়নি।

‘ আপুর হলুদের জন্য তোকে কে লাইসেন্স দিয়েছে আমার অবাধ্য হওয়ার? তোকে বলেছিলাম না আমার সস্তা জিনিস পছন্দ না। হিজাব পরিস নি কেন?

মায়া কথা বলল না। বরং চোখ বন্ধ করেই সেভাবে পরে রইল রিদের সাথে মিশে। রিদ মায়ার শরীরের কম্পন টের পেল। মায়ার চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও একই শক্ত গলায় বলল..

‘ কোলে চড়েছিস কেন? আমি যদি কিছু করে দেয়। তাহলে কাঁদবি?

মায়া তীব্র লজ্জায় মূহুর্তের রিদের হাতের মধ্যে দিয়ে গলায় জড়িয়ে ধরে মুখ ডুবাল। রিদ মায়ার লজ্জার আঁচ করতে পেয়েই বলল…

‘ আমি নেগেটিভ ফিল করছি রিত।

বলতে বলতে রিদ দু’হাতে মায়াকে জড়িয়ে ধরে ঘনিষ্ঠ হতে চাইল। হয়েও গিয়েছিল। কিন্তু এরমধ্যে আরাফ খান কোথা থেকে বাগড়া দিয়ে খাক ছেড়ে রিদ’ রিদ’ বলে ডাকতে ডাকতে এদিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আরাফ খানের ডাকে হুশ ফিরে মায়ার। অস্থির নেয় তাড়াহুড়ো করে রিদের কোল থেকে নেমে পালাতে চাইলে রিদ মায়ার বাহু টেনে ক্ষিপ্ত মেজাজে শুধালো…

‘ কোথাও যাবা না। আমার মন ভরেনি। কাছে আসো।

আবারও একই ভাবে আরাফ খানের খাঁক ছাড়া ডাকে মায়ার ভয়ে উত্তেজিত হয়ে ছটফটিয়ে রিদের হাত থেকে নিজের বাহু ছাড়াতে চেয়ে অস্থির হয়ে বলল…

‘ প্লিজ ছাড়ুন! দাদাভাই এদিকেই আসছে।
‘ আসুক।
‘ প্লিজ!
‘ না।

আরাফ খানকে নিকটে আসতে দেখে মায়া ভয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে রিদকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে অন্যপথে দৌড়াল। রিদের তখনকার মায়ার খোঁপা ফুল ছিঁড়ে দেওয়ায় মায়ার হাঁটু সামান চুল গুলো দৌড়ের তালে দোল খেল। রিদ ক্ষিপ্ত মেজাজে পিছন থেকে মায়ার দৌড়ে চলে যাওয়া দেখল। বউটা তার ঝড়ের গতিতে এসে রিদকে এলোমেলো করে দিয়ে আবার হওয়ার বেগে পালিয়ে গেল। রিদের ক্ষিপ্ত মেজাজ আর ক্ষিপ্ত হলো যখন আরাফ খান ডাকতে ডাকতে রিদের নিকটে এসে দাঁড়াল। আরাফ খান কিছু বলবে তার আগেই রিদ রাগে কটমট করে বলল…

‘ তোমার টাইমিং সেন্স বড্ড খারাপ দাদাভাই। আই জাস্ট হেইট দ্যাট।

আরাফ খান রিদের খোঁজে এগিয়ে এসেছিল রাদিফের সম্পর্কে জিগ্যেসা করতে। রাদিফের উপরের কারা হামলা করেছিল সেটা জানতে। আসিফ বলেছিল, রিদ গেইটের সামনে গাড়িতে বসা। সেজন্য তিনি এগিয়ে এসেছিল এদিকটায়। রিদকেও খোঁজে পেল। কিন্তু রিদ উনার টাইমিং সেন্স নিয়ে কথা বলার মানেটা তিনি বুঝল না। সেজন্য তিনি অবুঝ গলায় রিদকে শুধিয়ে জানতে চাইল…

‘ আমার টাইমিং সেন্স খারাপ মানে? কি করছি আমি?

রিদ দাঁত পিষে বলল…
‘ অনেক কিছু করেছ। আমার পারসোনাল মোমেন্টে
বাগড়া দিয়েছ। ইউ ডিস্ট্রাব মি দাদাভাই।

রিদের কথায় কেমন বেকুব বনে গেল আরাফ খান। তার পরমূহুর্তে নাক মুখ কুঁচকাল। উনি রিদের পার্সোনাল মোমেন্টে কিভাবে ঢুকল? রিদ এমন ভাবে বলছে যেন রিদ তার বউয়ের সাথে ছিল আর তিনি এসে তাদের রোমান্সের মধ্যে ঢুকে পড়ছেন। আরাফ খান অনেকটা ব্যঙ্গ করে রিদকে খোঁচা মেরে বলল…

‘ তোর আবার পারসোনাল মোমেন্ট! এমন ভাবে বলছিস যেন বউয়ের সাথে ছিলি এতক্ষণ।

‘ হ্যাঁ।
রিদের সোজাসাপ্টা কথায় তিনি আবারও বিশ্বাস করলো না রিদকে। বরং ভ্রু উচু করে বলল…

‘ কি হ্যাঁ? আমারে মুরগী বানাস?
‘ না।
‘ তাহলে তোর বউ কোত্থেকে আসবে?
রিদ পাল্টা প্রশ্ন করে বলল…
‘ তোমার বউ কোত্থেকে আসল?
‘ আমি তো বিয়ে করেছি।
‘ তাহলে আমিও করেছি।

রিদের কথায় যেন আরাফ খান বেশ মজা পেল। মুখে কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে রিদকে খোঁচা মেরে গর্ব করে বলল….

‘ তোর কি মনে হয়? তুই আমাকে এতো সহজে মুরগী বানাতে পারবি? পারবি না তো। আমার চুল কিন্তু এমনই এমনই পাকে নাই বুঝলি। বেশ কটুক্তি করতে করতে পাকিয়েছি।

আরাফ খানের গর্বিত গলার কথায় রিদ কপাল কুঁচকে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে, দু’হাত পকেটে গুজে স্টংলি দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল…

‘ তোমার বুদ্ধির লেভেল সত্যি অসাধারণ দাদাভাই। প্রশংসা না করলেই নয়। সেজন্য তোমাকে আমার কষ্ট করে আর মুরগী বানাতে হবে না। তুমি নিজেই মুরগ হয়ে বসে আছো।

রিদের খোঁচা মারা কথায় থমথমে খেয়ে গেল তিনি। আরাফ খান প্রতিবার রিদকে বিরক্ত করতে মজা পায় বলেই তিনি সবসময় রিদের পথ আঁটকে দাঁড়ায়। রিদও বিরক্ত হয়। এজন্য উনার আনন্দ হওয়াটা বেশ থাকে। কিন্তু আজ তিনি রিদকে বিরক্ত করতে গিয়ে যেন নিজেই হেনস্ত হচ্ছে। উনি রিদের কাছে জানতে চেয়ে বলল…

‘ তাহলে তোর বউটা কে শুনি?
‘ এই বিয়ে বাড়িতে সবচেয়ে সুন্দর নারীটি আমার বউ। এবার সরো।

রিদের কথায় তৎক্ষনাৎ আরাফ খান আহাজারি করে বলতে লাগলো…

‘ সর্বনাশ! রিদ তুই কি আমার বউয়ের উপরে নজর দিয়েছিস?

রিদ আরাফ খানের কথায় বিরক্তি গলা ঝেড়ে বলল…

‘ তোমার ওমন বুড়ী বউয়ের প্রতি নট ইন্ট্রেস্ট দাদাভাই। তোমার থেকে সুন্দর বউ আমার আছে। এবার সরো। বউয়ের কাছে যাব।

রিদ আরাফ খানকে পাশ কাটাতে চাইলে তিনি আবারও তাড়াহুড়োয় হাতে লাঠিটা উঁচিয়ে রিদকে বাঁধা দিতে দিতে বলল।

‘ আরে শুননা। যাস কই। কথা তো শুনে যাবি নাকি?
‘ পারব না। সরো!
‘ আরে শুননা। এমন করিস কেন?
‘ দাদাভাই আমি বিরক্ত হচ্ছি।
‘ আরে বাহ সাব্বাশ। কাজের কাজ করছিস একটা। তুই আরও বিরক্ত হ। আমি দেখি। তুই বিরক্ত হস বলেই তো আমি আসি তোর কাছে। নয়তো কি আসতাম বল?

রিদ রাগে এবার সত্যি সত্যি আরাফ খানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আরাফ খান হাসতে হাসতে রিদের চলে যাওয়া দেখল আর ভাবল। কিছুক্ষণ আগেও তিনি বুক ব্যথার কতো নাটক করলো। আয়নকে নিজের কাছে আটকে রাখল। হেনা খানকে ব্যস্ত রাখল। মূলত তিনি সবার প্রথমেই জানতে পেরেছিল রাদিফ ঝামেলায় পরেছে। বিষয়টা হেনা খানে কানে যাওয়ার আগে আগে তিনি এই নাটক করলো যাতে হেনা খান উনাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷ উনিই আসিফকে দিয়ে রিদকে খবর পাঠিয়েছিল রাদিফের উপর হামলা হওয়ার বিষয়ে। রিদ নিজের ভাইকে বাঁচিয়ে নিবে সেটা উনি জানত। হয়েছিলও তাই। তবে উনার বউ আর মেয়েদের চিল্লা-চিল্লিতে যেন বিয়ে বাড়ি আনন্দ নষ্ট না হয় সেজন্য তিনি কৌশলে বুক ব্যথার নাটকটা করল। কিন্তু রিদকে বিরক্ত করতে উনার বরাবরই আনন্দ লাগে, মজা পায়। বাড়িতে উনার কথায় রিদ ছাড়া আর কেউ বিরক্ত হয়না বলেই তিনি বারবার রিদের কাছে আসেন। কিন্তু তিনি এবার বেশ কয়েক দিন ধরে লক্ষ করছে রিদ কেমন বউ বউ করছে কথায় কথায়। আসলেই রিদের বউ আছে নাকি রিদ মিথ্যা বলে বেড়াচ্ছে বিষয়টা বুঝতে পারছে না তিনি। রিদ মিথ্যা বলে না সেটা তিনি জানেন। কিন্তু রিদের মতোন ঠ্যাডা মানুষ গোপনে বিয়ে করেছে সেটাও বিশ্বাস হচ্ছে না উনার। উনি কি শশীকে একবার জিগ্যেসা করে দেখবে দুজন আসলেই বিয়ে করে নিয়েছে কিনা?
~
আজ বাতাসের তোরে শুধু প্রেমময় গন্ধটায় ভাসল। দৃষ্টিতে দৃষ্টির মিলন। রিদ ধুপধাপ পায়ে ছাঁদে উঠতে উঠতে নিরব চোখ ঘুরিয়ে মায়ার সন্ধান করলো। এতো ভিড়ের মানুষের মাঝে মায়াকে আশেপাশে কোথাও দেখতে না পেয়ে কপাল কুঁচকাল। সে ফ্রেশ হয়ে এসেছে মাত্র। তবে গায়ের পোষাকটা পাল্টায় নি। বউটা চলে গেলে সেও চলে যাবে নিজ বাসায়। এখানে থাকবে না। রিদ কপাল কুঁচকে ছাঁদের এক কোণায় সফট ড্রিঙ্কের এরিয়াতে গিয়ে দাঁড়াল। ওয়াটার থেকে লেমন জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে আবারও চারদিকে অনুসন্ধানের চোখ ঘুরাল গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে। রিদের অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে মায়াকে দেখা গেল বেশ কয়েক মিনিট পরেই। ছাঁদে সিঁড়ি বেয়ে শ্রেয়ার সাথে উপরে উঠেছে। রিদের খোলে দেওয়া তখনকার চুল গুলোতে মায়া আবারও খোঁপা করে সেখানে লাল টকটকে গোলাপ গজিয়েছে। দু’হাতে গাঁদাফুলের মালাটাও ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে। রিদ বুঝল বউ তার আবারও পরিপাটি হয়ে এসেছে। রিদের নিভে যাওয়া খিদাটা আবারও জাগল বউকে কাছে পাওয়ার। হাতের লেমন জুসের গ্লাসটায় চুমুক দিতে দিতে মায়ার দিকে কেবল শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল। মায়া শ্রেয়ার পিছন পিছন স্টেজে দিকে হাঁটতে হাঁটতে ঘাড় বেঁকে রিদের দিকে তাকাতেই মূহুর্তে চোখাচোখি হলো দু’জনের। লজ্জায় মায়া নুইয়ে পড়ল। তৎক্ষনাৎ নত মস্তিষ্কের হয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিল রিদের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাওয়াতে। উফ কি লজ্জা! লজ্জায় আড়ষ্ট হওয়া মায়া নিজের শাড়ির আঁচলে আঙ্গুল পেঁচাতে পেঁচাতে শ্রেয়ার পিছনে হেঁটে আবারও ঘাড় বেঁকে তাকাল রিদের দিকে। পুনরায় রিদের শান্ত চোখে চোখ মিলতে মায়া আবারও সেই একই কাজ করলো। এবার মায়া সরাসরি তাকাল না বারবার রিদের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাওয়াতে। বরং মায়ার আঁড়চোখে রিদকে দেখে হাঁটতে লাগলে হঠাৎই আকস্মিক ধাক্কা খায় শ্রেয়ার পিঠের সাথে। মায়া নাক শ্রেয়ার মাথায় ঠুকে যেতেই হকচকিয়ে নাকে হাত ঘঁষে মায়া। এতক্ষণ মায়া অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটায় হঠাৎ শ্রেয়ার দাঁড়িয়ে যাওয়াটা লক্ষ করেনি ওহ। রিদের সামনে এমন কান্ড ঘটায় মায়া লজ্জায় পড়ল। একহাতে নাক ঘঁষতে ঘঁষতে শ্রেয়ার দিকে তাকাতে শ্রেয়াও পিছন ফিরে মায়াকে কপাট গলায় বলল…

‘ কিরে বইন? দিনে দুপুরে প্রতিবন্ধীদের মতো ধাক্কা খাচ্ছিস কেন? কোনো সমস্যা?

মায়া মাথা নাড়িয়ে না বুঝাল। ওর কোনো সমস্যা নেই। অবুঝ শ্রেয়া বুঝল না মায়া মতিগতি। বরং স্বাভাবিক নেয় মায়ার বাহু টেনে কাঁধ জড়িয়ে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল…

‘ পিছনে হাঁটছিস কেন? চল আমার সাথে।

মায়াকে নিয়ে শ্রেয়া স্টেজের একপাশে কোণায় দাঁড়াল। সামনে স্টেজে একদল ছেলে-মেয়ে গ্রুপ ডান্স করছে। শ্রেয়া হাতের তালি দিতে দিতে হৈচৈ করে সেই ডান্স এনজয় করছে। মায়াও হাতে মিলাচ্ছে। তবে সে উৎফুল্লর নয়। বরং ভিষণ অমনোযোগী। সকল মনোযোগ এই মূহুর্তে ছাঁদের অপর কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা রিদের দিকে। রিদের অবস্থাও সেইম। হাতের গ্লাসটায় চুমুক দিচ্ছে আর মায়ার দিকে সেই তখন থেকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মায়া যতবার রিদের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে ততবারই দৃষ্টিতে দৃষ্টির মিল ঘটছে আর মায়া লজ্জা পাচ্ছে। রিদ খুবই মনোযোগ দিয়ে মায়ার সেই লজ্জা মিশ্রিত মুখটা পরখ করছে। আয়ন সবে এসেছিল ছাঁদে জুইয়ের খুঁজে। এতক্ষণ রাদিফ, আসিফের ব্যান্ডেজ করেছিল। সকল ঝামেলা মিটিয়ে মাত্র অবসর হলো। জুইয়ের সাথে তার দেখা করার কথা ছিল সেই সন্ধ্যার দিকে, অথচ এখন রাত নয়টা বাজতে চলল এখনো সে দেখা করতে পারেনি। এর মাঝে আয়ন ছাঁদে উঠার সময় নিচে আরিফকে দেখেছিল ডাইভারকে বলতে তাদের যাওয়ার গাড়ি গুলো বের করতে। হয়তো এখন চলেও যাবে তাঁরা। যাওয়ার আগে জুইয়ের সাথে একটু দেখা করা দরকার আয়নের। আয়ন কপালের একপাশ চুলকে জুইয়ের খোঁজ করতে গিয়ে দেখলো সেঁজুতির পাশে জুই দাঁড়িয়ে ডান্স এনজয় করছে। আয়ন সেদিকে এগোতে গিয়েও এগোল না। আশেপাশের মানুষের ভিড় বেশি। এই মূহুর্তে জুইকে ডেকে দেখা করাটা ভালো দেখাবে না বলে আয়ন মত বদলাল। ফিরে আসতে চেয়ে চোখ পড়লো মায়ার দিকে। আয়ন হাল্কা কপাল কুঁচকাল। মায়ার মতিগতি বুঝার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করলো মায়াকে। দেখা গেল মায়া অকারণে বারবার লজ্জায় সিঁটিয়ে যাচ্ছে আবারও মিটমিট করে হেঁসে কোণায় তাকাচ্ছে। আয়ন মায়ার লজ্জা আর মিটমিট হাসির সুর ধরে চট করে বুঝে গেল আজ প্রকৃতিতে প্রেমের লক্ষণ। কিন্তু মায়ার এতো প্রেম আর ভাবসাব কার সাথে? রিদ কি জানে তার বউ প্রেমে পড়েছে অন্য কারও? যদি জানে তাহলে তান্ডব তো আজ একটা এখানে হয়েই যাবে নিশ্চিত। আয়ন মায়ার দৃষ্টি অনুসরণ করলো। কে জানের মায়া দয়া ছেড়ে রিদ খানের বউয়ের দিকে নজর দিলো সেটা দেখতে চাইল। তারপর চট করে ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ার দৃষ্টি অনুযায়ী ছাঁদে কোণায় তাকাতেই দেখল রিদ দাঁড়িয়ে লেমন জুসের গ্লাসটা নিয়ে। আয়ন মূহুর্তে হেঁসে ফেলল। আগুন দুইদিক থেকেই লেগেছে তাহলে। সে এবার একটু কেরোসিন ডেলে আগুনটা নাহয় আরও বাড়িয়ে দিল। আয়ন স্টেজের দিকে না গিয়ে উল্টো পথে রিদের কাছে গেল। রিদের পাশাপাশি দাঁড়াতে দাঁড়াতে হেয়ালি করে বলল…

‘ কিরে ভাই? যেভাবে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে বউকে চোখ দিয়ে প্রেগন্যান্ট করে ফেলবি। কু-নজর দিস কেন? চোখ সরা।

রিদ অনেকটা বিরক্তি নিয়ে আয়নের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও চোখ ঘুরাল মায়ার উপর। আয়ন রিদের দৃষ্টি অনুসরণ করে মায়াকে দেখল সেও। তারপর পুনরায় রিদের দিকে তাকাল। কিছু একটা ভাবতে আয়নের মনে একটা প্রশ্ন জাগল। মায়া কি রিদের ব্যাপারে সব জেনে গেছে? কিন্তু কিভাবে? রিদ কি সব বলে দিয়েছে? ভাবনাটা আয়নের মাথায় আসতে চট করে রিদকে প্রশ্ন করে জানতে চেয়ে বলল আয়ন….

‘ মায়া কি তোদের সম্পর্কের কথা জেনে গেছে রিদ?

রিদ মায়ার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে অন্যমনা গলায় বলল…

‘ বুঝতে পারছি না তো। তবে মতিগতি তো তাই বলছে।

‘ কিছু বলেনি মায়া?
‘ না।
‘ তুই জানতে চেয়েছিলি?
‘ না।
‘ তাহলে?
‘ কিছু না।
‘ মায়া কি কিছু না জেনেই তোর সাথে প্রেম করছে?

রিদ তৎক্ষনাৎ আয়নকে উত্তর না দিয়ে চট করে তাকাল আয়নের মুখের দিকে। ওরা প্রেম করছে মানে? রিদ কোতুহল নিয়ে জানতে চেয়ে আয়নকে বলল।

‘ আমরা প্রেম করছি?
রিদের কথায় আয়ন স্বতঃস্ফুতীর সাথে বলল।

‘ হ্যাঁ তোদের দুজনের মতিগতি তো তাই বলছে। এই মূহুর্তে তোদের দুজনকে যেকেউ দেখলে বলে দিবে তোদের মধ্যে গভীর প্রেম-ট্রেমের সম্পর্ক চলছে।

রিদ সামনে ঘুরে মায়ার দিকে তাকিয়ে গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলল…

‘ হুম।
আয়ন রিদের দিকে একটা ভ্রুর উঁচিয়ে তাকিয়ে বলল..
‘ হুম কি? তোরা কি সত্যিই রিলেশনে আছিস রিদ?

‘ আমি বলতে পারছি না। সব ম্যাডামে জানেন। ম্যাডামকে গিয়ে জিগ্যেসা কর সে আমার সাথে রিলেশনে আছে কিনা।

রিদের ঘুরপ্যাঁচের কথায় আয়ন বুঝতে পারলো রিদ এখনো নিজের সম্পর্কে মায়াকে কিছু বলেনি। কিন্তু মায়ার রিদের প্রতি হঠাৎ এই আকর্ষণটা কিসের যদি না চিনে রিদকে? নাকি মায়া জানে রিদের সম্পর্কে? শুধু রিদই বুঝতে পারছে না মায়া রিদকে চিনতে পেরেছে কিনা? আচ্ছা রিদ যদি জানে মায়া তাঁর স্বামীকে চিনতে পেরেছে তাহলে রিদ কি করবে? ঐদিকে শশীকে নিয়েও রিদের পরিবারের বিয়ের কথা হচ্ছে। আয়ন সেটা নিচ থেকে শুনে এসেছে। ফাহাদের বিয়েটা হয়ে গেলেই রিদ আর শশীর বিয়েতে হাত দিবেন হেনা খান। তাহলে মায়ার কি হবে? আয়নের মনে একটা প্রশ্ন জাগলে সে কৌতূহলে রিদকে প্রশ্ন করে বলে…

‘ যদি জানিস মায়া তোকে চিনতে পেরেছে তাহলে কি করবি?

‘ সংসার করব।
‘ মানে তুই সংসার করবি?
‘ হ্যাঁ।
‘ যদি মায়া না মানে। তোর সাথে সম্পর্ক ভাঙতে চাই তাহলে? যেতে দিবি?

[ কাল রাতে গল্প লেখতে লেখতে ফোন হাতে নিয়েই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। সেজন্য কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি বলে দুঃখীত। সকালে উঠে দেখি মোবাইল আমার মাথার নিচে। সারাদিন দিন ব্যস্ত ছিলাম। একটু আগে ফ্রি হয়ে রি-চেক করে এখন পোস্ট করলাম।]

এই গ্রুপে গল্প সম্পর্কিত আপডেট দেওয়া হয়। আড্ডা হয়। চাইলে জয়েন হয়ে থাকতে পারেন। বা গল্প নিয়ে কোনো সমস্যা হলে মডারেটস ভাইয়া, আপুদের বললে তাঁরা সমাধান করে দিবে। ধন্যবাদ সবাইকে। গল্প সম্পর্কিত আলোচনা সমালোচনার গ্রুপ https://www.facebook.com/groups/565066277893177/?ref=shaমায়ার~গল্পবিলাস

#চলিত….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here