#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব২৪
#সারিকা_হোসাইন
******
টিকটিক শব্দ তুলে আকস্মিক নীরবতা ভেঙে ঘড়ির কাটা জানান দিলো এখন রাত বারোটা।জানালার ফাক গলিয়ে মৃদু চাঁদের আলো স্বর্গের কক্ষের মেঝেতে হুটোপুটি করছে।থেকে থেকে দমকা বাতাসে সাদা ফিনফিনে পর্দা গুলো উড়ুউড়ি করছে।চারপাশ নিস্তব্ধ, নিগূঢ়।
পিউ কিছুক্ষণ আগেই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছে।
এসির পাওয়ার কমিয়ে একটা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো স্বর্গ।
ত্রিশ মিনিট যুদ্ধ করেও চোখে ঘুম আনতে পারলো না সে।ইদানিং মুহিতের বুকে না শুলে ঘুম ই আসতে চায়না তার ।মুহিত নামক অস্তিত্ব তার সকল অভ্যাস বদ অভ্যাসে পরিণত করেছে দিনে দিনে।
আরো কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে বসলো স্বর্গ।
পিউকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে শব্দ না করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।এর পর পা টিপে টিপে দরজার দিকে এগুতে লাগলো।
আস্তে করে দরজা খুলে রুমের বাইরে এসে বাহির থেকে দরজা চাপিয়ে দিলো।
এদিকে নিজের প্রয়োজনীয় সকল কাজ গুছিয়ে ব্যাগ গুছাচ্ছে মুহিত।সকালে সে তার নিজের কোয়ার্টার এ ফিরে যাবে।এখানে থেকে কাজ করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে তার।নাফিজ মাহমুদ বা স্বর্গ কারো কাছেই এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চায়না মুহিত যার উত্তর তার জানা নেই।
নিজের বাসা থেকে যেই কাজ যতো কমফোর্টলি করা যায় অন্যের বাসায় সেটা ততোটাই আনইজি।
মায়ের জন্য মুহিত এতোদিন এখানে পরে ছিলো।নামিরা ফিরে এলে মুহিত সবাইকে নিয়ে তার বাবার পুরাতন বাড়িটাতে উঠবে।আবার একসাথে হেসে খেলে বাঁচবে তারা।
এবার যে পথের কাটা হয়ে সামনে দাঁড়াবে তাকেই মূল সমেত উপড়ে ফেলবে মুহিত।
যেই গ্লানি এই ছয় বছর টেনেছে তারা প্রত্যেকে ,তার আর পুনরাবৃত্তি হতে দেবেনা সে কিছুতেই।
দরজার সামনে কারো হাঁটার শব্দে সজাগ হলো মুহিত,
মৃদু শব্দে নক হতেই ঠোঁটে ফুটলো প্রাপ্তির হাসি।
দরজার ওপাশে কে আছে বুঝতে ন্যানো সেকেন্ড সময় ও লাগলো না তার।
সহসাই রুমের লাইট নিভিয়ে খুট করে দরজা খুলে হেচকা টানে কোলে তুলে ফেললো স্বর্গকে।
আদুরে বিড়ালের ন্যায় মুহিতের গলা জড়িয়ে ধরে থুতনিতে মুখ গুজলো স্বর্গ।
এর পর মুহিতের গলায় নাক ডুবিয়ে লম্বা এক নিঃশ্বাস নিলো।
মুহিতের গায়ের গন্ধে আপনা আপনি চোখ বন্ধ হয়ে এলো তার।এখন ভালো ঘুম হবে।
স্বর্গকে বিছানায় এনে বসিয়ে দিলো মুহিত।তার চলে যাওয়ার কথা এখনো বলেনি স্বর্গকে।
কিভাবে কথাটা শুরু করবে সেটাও জানেনা।
মুহিত জানে, চলে যাবার কথা শোনা মাত্রই মেয়েটা কষ্ট পেয়ে কেঁদে দিবে।কিন্তু মুহিতের যেতেই হবে।
আরো দুটো পথের কাঁটা এখনো তুলতে বাকী আছে যে।।
নীরবতা ভেঙে আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো মুহিত
―তুমি না বলেছিলে আজকে আসবে না?পিউ এর সাথে ঘুমুবে?
ঠোঁট উল্টালো স্বর্গ।এই মানুষটার সামনে আসলে তার যতো ধরনের বাচ্ছামো আছে সব করতে ইচ্ছে করে।
মুহিতের শার্টের বাটনে আঙ্গুল খুটতে খুটতে বললো
―তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছিলো না।
জানো এক ঘন্টা ধরে এভাবে চোখ বন্ধ করে রেখেছি আমি
বলেই হাত দিয়ে চোখ টিপে ধরে মুহিতকে দেখালো ।
মেয়েটির এমন কিউট ফেস দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠলো মুহিত।।
স্বর্গকে উদ্দেশ্য করে মুহিত বললো
―চলো আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।ভোর হবার আগেই চলে যাবে কেমন?
বড় বড় চোখ মেলে দুই ঠোঁট ফুলিয়ে স্বর্গ জবাব দিলো
―হু।
ডিম লাইট জ্বালিয়ে এসির পাওয়ার কমিয়ে কাঁথা জড়িয়ে স্বর্গকে বুকে টেনে শুয়ে পড়লো মুহিত।
এই মুহূর্তে যেনো তুলতুলে শরীরের এই উত্তাপ টাই প্রয়োজন ছিলো মুহিতের।
মুহিতের পেশীবহুল হাতের নীচে গুটিসুটি মেরে মুহিতের বুকে চুপ করে শুয়ে শুয়ে এক শয়তানি ফন্দি আটলো স্বর্গ।
হঠাৎই মুহিতের বাইসেপ পেশিতে কামড়ে ধরলো স্বর্গ।
অকস্মাৎ আক্রমণে ককিয়ে উঠলো মুহিত।
সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কামড়ে ধরেছে স্বর্গ।
ইদানিং নাকি মুহিত কে দেখলেই তার দাঁত কিড়মিড় করে কামড়ানোর জন্য।
দাঁত পিষে সবটা সহ্য করলো মুহিত।একদিকে মামাতো বোন,আবার প্রেমিকা তারমধ্যে বউ।এমন বাম্পার অফার পেতে প্ল্পহলে একটু কষ্ট তো সহ্য করতেই হবে।
কিছুক্ষণ বাদে মুখ সরিয়ে মুহিতের বুকে ঘাপটি মেরে রইলো স্বর্গ।
মুহিত নরম কন্ঠে জানতে চাইলো
–মাংস খাওয়া শেষ মনা?
স্বর্গ আস্তে করে বললো
―হুম।
স্বর্গকে একটু লজ্জা দিতে মুহিত আহ্লাদী স্বরে বলে উঠলো
―আমি তো সহ্য করে নিলাম।
এখন আমি যদি খেতে শুরু করি তুমি সহ্য করতে পারবে তো বউ?
মুহিতের মধুমাখা স্বরে তনুমন জ্বলে উঠলো স্বর্গের।লোকটা দিনে দিনে বদের হাড্ডিতে পরিণত হচ্ছে।
কিন্তু যতো যাই হোক আজকে সে মুহিতের কাছে কিছুতেই ধরা দিবেনা।
হঠাৎই কথা ঘুরাতে বলে উঠলো বিলি কেটে দাও ঘুম পেয়েছে।
স্বর্গের ঘুম ঘুম কন্ঠে বেসামাল হতে ইচ্ছে কাছে মুহিতের।
কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে স্বর্গকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
মুহিতের মনে হলো তার চলে যাবার ব্যাপারে স্বর্গকে এখন বলা টাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কিছুক্ষণ ইতস্তত করে মুহিত বলে উঠলো
―একটা কথা ছিলো।
“”হু বলো শুনছি
―আমি কাল ফিরে যাচ্ছি আমার কোয়ার্টার এ।
কথাটা শোনামাত্র লাফ দিয়ে বসে গেলো স্বর্গ।
অবাক হয়ে জানতে চাইলো
―চলে যাচ্ছ মানে?
স্বর্গের ডেসপারেট ভাব দেখে মুহিত স্বর্গকে কাছে টেনে নিজের কোলে বসালো।
এরপর নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো
―কিছু কাজ আছে,ওগুলো দ্রুত শেষ করে তোমাকে একবারে আমার কাছে নিয়ে যাবো।
মনে করো, সেই কাজ গুলোই দ্রুত শেষ করতে যাচ্ছি।
মুহিত চলে যাবে ভাবতেই মন ভার হলো স্বর্গের।যেহেতু মুহিত বলেছে তার কাজ আছে সেহেতু স্বর্গ কোনো ভাবেই বাধা দিবেনা মুহিত কে।আর মুহিত যেহেতু নিজে থেকে বলেনি কি কাজে যাচ্ছে তাই স্বর্গ ও আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে মুহিত কে বিব্রত করলো না।
ভেজা কন্ঠে মুহিত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনুরোধ করে বললো
―যেখানেই যাও আমার মুহিত কে অক্ষত অবস্থায় আমার কাছে ফেরত দিবে।
প্রমিস?
স্বর্গের কপালে অনেক গুলো চুমু খেয়ে মুহিত বললো
“”প্রমিস।
―――――
পেরিয়ে গেছে দুটো দিন আশরাফ চৌধুরী কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।রিপোর্টার, জনগণ, ছোট বড় ইউটিউবার সবাই মিলে ভিড় করে আছে আশরাফ চৌধুরীর বাড়ির সামনে।
একটা জলজ্যান্ত মানুষ গায়েব হয়ে গেলো নিমিষেই ,কেউ ই টের পেলো না?
যতো ধরনের যানবাহন আছে প্রত্যেকটা জায়গায় খুঁজ নেয়া হলো।আশরাফ চৌধুরীর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হলো
―ধরিয়ে দিন।
মুহিতের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো,
গেলো কোথায়?
হঠাৎই মুহিত সৌম্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
―ক্যাপ্টেন চলো আহিয়ান কে দেখে আসি।
বলেই বাঁকা হাসলো মুহিত।
*******
ঢাকার নামিদামি একটি হোটেলের বিলাসবহুল কক্ষে দুটো মেয়েকে নিয়ে ফুর্তিতে মেতেছে মন্ত্রী মোশতাক আহমেদ।
ফুর্তির সময় ফোন কলে ডিস্টার্ব করা একদম পছন্দ নয় তার।
তার মতে যে ব্যাক্তি প্রতিদিন নতুন দেহের স্বাদ না পেয়েছে তার জীবন বৃথা।
মনের মধ্যে আফসোস নিয়ে মরার কোনো সাধ নেই তার।যতদিন বাঁচবে ফুর্তি করেই বাঁচবে।
ক্ষমতা বড়ই ভয়ঙ্কর জিনিস।ক্ষমতা থাকলে টাকা থাকে আর টাকা থাকলে বাঘের চোখ ও কেনা যায়।
না হলে তার মতো এক বুড়ো চুষা আমের কাছে কচি হট মেয়ে গুলো শয্যাসঙ্গী হতে কেনো আসবে?
নিজের ক্ষমতার দাপটে নিজেই হো হো করে হেসে উঠলো।
দুটো মেয়ে বয়স বিশ কি বাইশ,খুবই ছোট ছোট পোশাকে মোশতাক আহমেদ এর গায়ে পরে ঢলাঢলি করছে আর মোশতাক আবেশে চোখ বন্ধ করে সুরা পানে ব্যাস্ত।
হঠাৎই খুট করে খুলে গেলো দরজা।
ঘরে প্রবেশ করলো তিনজন উঁচু,চওড়া,কালো কাপড় পরিহিত আগন্তুক।
হঠাৎ রুমের মধ্যে কারো আগমনে মেয়ে গুলো দৌড়ে বিছানার সাদা চাদরে নিজেকে আবৃত করলো।
হঠাৎ ই একজন কালো কাপড় পরিহিত লোক মেয়ে গুলোর উদ্দেশ্যে গর্জে উঠে বললো
―গেট আউট।
ভয়ে মেয়ে গুলো দ্রুত প্রস্থান করলো।
রুমে হঠাৎ কারো আগমনে ভড়কে গেলো মোশতাক আহমেদ।মুহূর্তেই নিজেকে ধাতস্থ করে বালিশের নিচে রাখা রিভলবার বের করে যুবক গুলোর দিকে তাক করলো।
রিভলবার ধরার স্টাইল দেখেই যুবক গুলো বুঝে গেলো এই লোক কোনোদিন একটা গুলি তো দূরে থাক ট্রিগার ই চাপে নি।
বন্দুক তাক করে মোশতাক বলতে থাকলো
―মুখের কাপড় খোল শুয়োরের বাচ্চা রা দেখি বুকের কতো পাটা।
বলা মাত্রই মুখের কাপড় খুললো তারা।
তাদের চেহারা দেখেই মোশতাক বলে উঠলো
―তুই বেঁচে আছিস?
হাসলো মুহিত,তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে বলে উঠলো
“”তুই কিসের মন্ত্রী?
এতো এতো ঘটনা হয়ে যাচ্ছে আমাকে ঘিরে তুই কিছুই জানিস না?
মোশতাক মুহিতের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।
হঠাৎই মেজর আদ্রিয়ান জোরে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো মোশতাক এর পেটে।
ঘুষি খেয়ে পেটের সব হাওয়া গালে জমা হলো,গাল ফুলিয়ে
“ওপ” শব্দ করে বসে পড়লো মোশতাক।হাত থেকে ছিটকে পড়লো ভারী রিভলবার।
ইন্টার কমে ফোন করার চেষ্টা করলো সে,সৌম্যের জন্য সেটাও পারলো না।
মুহিত গমগমে কন্ঠে সৌম্যকে আদেশ দিলো ওকে বাথটাবে শুইয়ে বেঁধে ফেলো।
দুজন সেনা সদস্যের শক্তির সাথে টিকতে পারলো না মোশতাক।তাকে চ্যাঙ্গদোলা করে তুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে অগ্রসর হলো মেজর আদ্রিয়ান আর সৌম্য।
মোশতাক মুখের ঠাট বজায় রেখে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে থাকলো।
―তোদের সবকটার চাকরি খেয়ে ফেলবো দেখিস,কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছিস?
―বেঁচে থাকলে তবেই তো চাকরি খাবি বলে উঠলো আদ্রিয়ান।
সেনাসদস্য দের এমন হেঁয়ালি কথা শুনে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারালো মোশতাক।
বাথটাবের পাশে থাকা কাঁচের বডি ওয়াশ এর বোতল দিয়ে মুহিতের মাথায় বাড়ি বসিয়ে দিলো।
হাত দিয়ে নিজেকে প্রটেক্ট করতে গিয়ে হাতের কব্জি থেকে উপর পর্যন্ত কেটে রক্ত বেরিয়ে গেলো মুহিতের।
রাগে চক্ষু লাল হয়ে গেলো মুহিতের।
ভাঙা টুকরো কুড়িয়ে মোশতাকের চোখ বরাবর বিধিয়ে দিতে উদ্দত হতেই চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো মোশতাক।
এইটুকু সাহস নিয়ে আমায় বাড়ি মেরেছিস?বলেই হা হা করে হাসলো মুহিত।
মোশতাক এর গায়ে আগুন ধরে যাচ্ছে মুহিতের হাসিতে।
নিজেকে নিজেই মনেমন গালাগাল দিয়ে যাচ্ছে সিকিউরিটি ছাড়া কেনো এসেছে সেটা ভেবে।
সিকিউরিটি সাথে থাকলে মুহিতের তেরোটা বাজিয়ে ছেড়ে দিতো আজকে সে।
সামান্য মেজর হয়ে তাকে বাথ টাবের সাথে বেঁধে ফেলে ?
হঠাৎই স্কচটেপ আটকে দেয় মোশতাকের মুখে মুহিত।এবার মোশতাকের ভয় করতে শুরু করে।
কি করতে চাইছে এই মেজর?
মুহিত আগ্নেয়গিরির লাভার ন্যায় রক্ত চক্ষু নিয়ে মোশতাকের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে
―তুই ই সেদিন আমার মা কে বাথটাবে চুবিয়ে দিয়েছিলি নাহ?
কুকর্মের সকল স্মৃতি হাতড়ে মনে পড়ে যায় মোশতাকের ছয় বছর আগের সেই ঘটনা।
আশরাফ চৌধুরীর কথা মতো আদনান ওয়াসিফ এর বাড়িতে তারা হানা দেয়।
ড্রয়িংরুমে বসে ছিলো আদনান ওয়াসিফ আর তার ছোট বাচ্চা ছেলেটা।
তাদের কে হত্যার সময় দূতলা থেকে আদনান ওয়াসিফের স্ত্রী দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে আর চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে।
সকলেই যখন বাপ ছেলেকে নিয়ে পড়ে আছে তখন মোশতাক দৌড়ে গিয়ে খাবলে ধরে মিসেস তারিনের হাত।
সপাটে গালে চড় মেরে সিঁড়িতে ফেলে দেয় তাকে।
এর পর চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে দুতলায় নিয়ে গিয়ে কি করবে ভাবতে থাকে।
হঠাৎই ওয়াশরুমের খোলা দরজা তার নজরে পড়ে।তৎক্ষণাৎ এক শয়তানি বুদ্ধি চাপে তার মাথায়। ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে শাড়ীর আঁচল দিয়ে শক্ত করে মিসেস তারিনের দুই হাত বেঁধে ফেলে।
মহিলা অনেক কাকুতি মিনতি করছিলো তার বাচ্চাটার জন্য।
কিন্তু মোশতাকের শক্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছিলো না।
মহিলার আর্তনাদে মোশতাকের কান ধরে গেলো।
পকেট থেকে টেপ বের করে মুখে লাগিয়ে দিয়ে বাথ টাবে ধাক্কা মারে।
সিরামিকের শূন্য বাথ টাবে চিৎ হয়ে পড়তেই মাথা ফেটে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মিসেস তারিন।
মোশতাক দ্রুততার সহিত বাথ টাবের কল চালু দিয়ে বেরিয়ে চলে আসে।
মোশতাকের ধ্যান ভাঙে পানি পড়ার শব্দে।
ভয়ে চোখ বড় হয়ে যায় মোশতাকের।মুখে উম উম করে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে সে ।হাত পা এমন ভাবে বাধা হয়েছে, ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো মোশতাক শুধু উল্টা পাল্টা করে যাচ্ছে কিন্তু দাঁড়াতে পারছে না।
টাকা, ক্ষমতা,কিছুই যেনো আজ তার কাজে আসছে না।
মুহিত বেদনা জড়িত কন্ঠে বলতে থাকে
―তোরা আমাদের পুরো পরিবার শেষ করে দিয়েছিস।আমার মাকে জিন্দা লাশ বানিয়ে রেখেছিস।ঠিক সময়ে আমরা না এলে মা ও হয়তো বাবা আর ছোট ভাইয়ের মতো হারিয়ে যেতো।তোদের জন্য আমার বোনটা ছয় বছর ধরে বাংলাদেশে আসতে পারেনা।
হিসেব না চুকে কিভাবে তোকে ছাড়বো বল?
মিনিট দশেক বাদেই স্বচ্ছ পানিতে পরিপূর্ণ হলো বাথটাব।মুহিত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মোশতাকের বুকে পাড়া দিয়ে ধরলো।তলিয়ে গেলো মোশতাক।
মিনিট দুয়েক বাদে ছেড়ে দিলো,ভেসে উঠে যেনো বেঁচে ফিরলো মোশতাক।
এমন কঠিন দম বন্ধকর মৃত্যু কে চাইবে?
মনে মনে ভাবলো মোশতাক বেঁচে ফিরলে সকল খারাপ কাজ বাদ দিয়ে ভালো হয়ে যাবে।
কিন্তু এই মেজর কি সেই সুযোগ তাকে দিবে?
মোশতাক কে দ্বিতীয় বার পানিতে ডুবানোর আগে মুহিত তেজী কন্ঠে বলে উঠলো
―তোকে আমি মেরে ফেলবো রে মন্ত্রী।
তুই তোর এই ক্ষমতার জেরে কতো মানুসের ক্ষতি করেছিস তুই নিজেও জানিস না।তোর লালসা মিটাতে ভার্সিটির মেয়েদের পর্যন্ত ছাড় দিস নি তুই। তুই দেশের ভবিষ্যৎ কি গড়বি?তুই আরো ভবিষ্যত নষ্ট করছিস।
কতোজন কে পাচার করেছিস আশরাফ এর সাথে মিলে?
ক্রুদ্ধ হয়ে জানতে চাইলো আদ্রিয়ান।
তুই বেঁচে থাকলেই বরং দেশ ও দেশের মানুষের ক্ষতি।
তার চেয়ে তুই মরে যা।কারন তুই সমাজের জঞ্জাল।
আর জঞ্জাল সাফ করাই আমাদের দায়িত্ব বলে উঠলো সৌম্য।
মুহিত দুই হাত দিয়ে বাথটাব ভর্তি পানিতে চুবিয়ে চেপে ধরলো মোশতাক কে।তড়পাতে থাকলো মোশতাক।মুহিতের মাথায় যেনো খুন চেপে গিয়েছে।মোশতাক এর প্রাণবায়ুর বিনিময়ে ই যেনো মুহিতের শান্তি মিলবে।
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে চোখ বড় হয়ে গেলো মোশতাকের।তার শেষ নিঃশ্বাসের সাথে পানি ভুরকি কাটলো।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ভেসে উঠলো পানির উপরে।
শেষ হয়ে গেলো তাদের আরেকটি গোপন মিশন।
দ্রুততার সাথে হাত পায়ের বাধন খুলে দিয়ে,মুখের টেপ তুলে বাথরুম পরিষ্কার করে সব কিছু ঠিকঠাক করে নিথর মোশতাক কে ফেলে চলে গেলো তারা।
এবার আশরাফ চৌধুরীর পালা।
কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিবে তাকে মুহিত।
#চলবে।
রেসপন্স করবেন সবাই ❤️