তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💞 #পর্ব-৮ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
311

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💞
#পর্ব-৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্র ও মায়রার ডান্সের সময় বিভিন্ন ঘনিষ্ট মূহুর্তের ছবি মেহেভীনের ফোনে জ্বলজ্বল করছে। নিজের প্রাক্তন স্বামীর সাথে তার বর্তমান স্ত্রীর এতোটা ঘনিষ্ট মূহুর্তের ছবি দেখে কোন মেয়েই হয়তো নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। যেমন মেহেভীন এখন পারছে না। রাতের দিকে আরিয়ান ও তার মায়ের সাথে মেহেভীন ডিনার করে, আরহামের ঘরে চলে আসে। আরিয়ানের মা বেশ যত্ন করে মেহেভীনকে খায়িয়ে দিয়েছিলো। তখন মেহেভীনের চোখ ছলছল করে উঠেছিলো। আরিয়ানের মায়ের হাতে খেয়ে,কেন যেন মেহভীনের মনে হচ্ছিলো উনিই পারবেন, মেহেভীনের মায়ের অভাব পূরন করতে পারেনি। ভদ্র মহিটালি সত্যি অসাধারন। কেমন একদিনেই মেহেভীনকে আপন করে নিয়েছে। সারাদিন শুধু ‘বউমা একটু খাও। বউমা আস্তে ধীরে চলাফেরা করো।’ মেহেভীন বেশ ভালো লাগছিলো। মেহেভীন জানে এই ছোট্ট নাটকটা শুধুমাত্র কয়েকদিনের, কিন্তু তবুও কেন যেন আরিয়ানের মায়ের বলা ‘বউমা ‘ডাক টা তার খুব ভালো লাগে।
যেহুতু মেহেভীন এই বাড়িতে আরহামের বউয়ের পরিচয়ে আছে, তাই তাকে একপ্রকার বাধ্য হয়ে আরহাম নামক অচেনা যুবকের ঘরে থাকতে হবে।
মেহেভীন যখন আরহামের রুমে ঢুকে,তখনি তার ফোনের মেসেংজারে টুংটাং শব্দ হয়। মেহেভীন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তার ভার্সিটির এক বান্ধুবি
আলিসার মেসেজ। মেসেজ টা দেখতেই, মেহেভীনের চোখ থেকে দুফটো জল গড়িয়ে পড়ে। বিয়ের আসরে অভ্র এবং মায়রার কাপল পিকের কিছু ঘনিষ্ট মূহুর্তের ছবি তুলে,আলিসা মেহেভীনের মেসেঞ্জারে দিয়ে দেয়। মেহেভীন জানে তার কষ্টগুলোকে আরো বাড়িয়ে দিতেই, এইসব ছবি তাকে পাঠানো হয়েছে। আসল আজ-কাল বন্ধুগুলো বেশ স্বার্থপর হয়ে উঠেছে। বন্ধ নামক কিছু শত্রু তারা। মেহেভীনের এই কষ্টের সময় তার কষ্টকে যেন আরো বাড়িয়ে, পৈচাশিক আনন্দ পায় তার কিছু নামধারী বন্ধুগন।
বন্ধু নামক কিছু শত্রু সঠিক সময়ে ঠিকই আমাদের পিছন দিয়ে, আঘাত করে তাদের আসল চেহারা দেখিয়ে দেয়। মেহেভীন নিজেকে শক্ত করে নেয়।
না সব বন্ধু নামধারী নয়। এই দুনিয়াতে আজও আরিয়ানের মতো কিছু বন্ধু রয়েছে। যারা তাদের বন্ধুর সুখের সময় পাশে না থাকলেও, দুঃখের সময় ঠিকই ছায়ার মতো পাশে থাকে। কথাটি ভেবে মেহেভীন আলিসা নামক মেয়েটিকে ব্লক করে দেয়। এইসব বন্ধুদের কোন জায়গা নেই তার জীবনে।
সাথে সাথে দ্রুত তার ফেসবুক একাউন্টটি ডিয়েক্টিভ করে দেয়।

মেহেভীন আনমনে বলে উঠে,

‘যেখানে নিজের ভালোবাসার মানুষটাই ঠকায়, সেখানে বন্ধুবান্ধব মজা তো নিবেই। মুখোশের আড়ালে থাকা আমাদের অনেক বন্ধু শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে। সেই সময়টুকু চলে এলে,তারা তাদের মুখোশ উন্মোচন করে ফেলে। যেমন আজ আলিসা করলো।’

_______

অভ্র এখনো অফিসে বসে,ফোনের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাঁকিয়ে আছে। মেহেভীনের কোন খবর পাচ্ছে না সে। মেয়েটা কোথায় গেলো তা নিয়েও যথেষ্ট চিন্তিত অভ্র। যদিও এই চিন্তার কারণ অভ্র নিজেও জানেনা। ফেসবুকে হঠাৎ মেহেভীনকে এক্টিভ থাকতে দেখে,এক টুকরো আশার আলো খুঁজে পায় সে। কিন্তু তাও বেশিক্ষন স্হীর থাকে না তার। এক্টিভ হওয়ার কিছুক্ষন পরেই মেহেভীন তার ফেসবুক একাউন্ট ডিয়েক্টিভ করে দেয়। মেহেভীনের সাথে কথা বলে, আপাতত সে কোথায় আছে একটু জানতে পারতো অভ্র ফেসবুকের মাধ্যমে। কিন্তু সেই মাধ্যমটু্ুকুও মেহেভীন বন্ধ করে দিলো। আশাহত হয়ে অভ্র নিজের বাড়ির পথে হাটা দিলো।

এদিকে,

মেহেভীন ফোনটা রেখে দিয়ে, আরহামের ঘরটার দিকে এক পলক তাঁকায়। ঘরটার বেশিটভাগ অংশেই বিভিন্ন গিটারের কালেকশন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আরহাম তার বিশাল ঘরে বিভিন্ন গিটারের কালেকশন করতে বেশ পছন্দ করে।
চারপাশে আরহামের বিভিন্ন ছবির সমাগম। তার মধ্যে সব থেকে বেশি নজরকাড়া ছবি হলো মধ্যখানের ছবি। যেই ছবিটি মেহেভীন ড্রইংরুমেও দেখেছিলো। আচ্ছা লোকটা কার দিকে এতোটা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো? কোন মেয়ের দিকে? হয়তো।
যদি কোন মেয়ে হয়, তাহলে সে মেয়ে নিশ্চই খুব ভাগ্যবতী হবে । মেহেভীন আনমনে হেঁসে, ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘এইযে মিঃ আমি সত্যি সরি। এইভাবে আপনার ঘরে, মিথ্যে বউয়ের অভিনয়ে আমি থাকছি। বাট প্রমিজ কালকে থেকে ইন্টারভিউ দেওয়া শুরু করবো আমি। চাকরীটা পেলেই আমি চলে যাবো।
ততদিনে এই অভিনয়টা আমাকে করতেই হবে। বাট বিশ্বাস করুন আমি আপনার বিছানাতেও ঘুমাবো না। আপনি রাগ করবেন না হ্যা?’

মেহেভীন কথাটি বলেই,নীচের মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে।

অভ্র সারাদিন অফিস করে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে বারান্দায় কফি নিয়ে বসে পড়ে। কফিটা সে আজ নিজ হাতেই বানিয়েছে৷ তখনি মায়রা নামক রমনী তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

‘আমার ডার্লিংটা বুঝি এখনো আমার উপর রাগ করে আছে?’

অভ্র কোনরকম পতিক্রিয়া করেনা। সে তো অন্য এক চিন্তায় মগ্ন। বাড়িটার প্রতিটা কোনায় যেন আজ শুধুই নিস্তব্ধতা। সাথে অভ্রের মনটাও খা খা করে উঠছে। অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে মায়রা অভ্রের সামনে হাটু গেড়ে বসে, কানে হাত দিয়ে বলে,

‘আমি সত্যি সরি। আসলে ঘুমের সময় কখন কি বলে ফেলি তা নিজেও জানি না। ‘

অভ্র এইবারও চুপ। মায়রা অভ্রকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলে,

”এই অভ্র বেবী তুমি কি এখনো রাগ করে থাকবে? তুমি কি জানো না? তুমি রাগ করলে আমার বড্ড কষ্ট হয়। ‘

অভ্র তার ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে, মায়রার দিকে মিষ্টি হেঁসে বলে,

‘হুম সরি এক্সেপ্ট হবে,যদি তুমি এখন আমার জন্যে আরেক কাপ কফি নিয়ে আসো। ‘

”ওকে ডার্লিং তুমি জাস্ট বসো। আমি এখুনি আসছি। ‘

মায়রা কথাটি বলে অভ্রের কপালে চুমু খেয়ে, রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। সে কখনো রান্নাঘরে যায়নি, কিন্তু অভ্রকে ভালোবেসে সে যেখানে সব করতে পারে,সেখানে কফি বানানো তো সামান্য ব্যাপার। মায়রা চলে যেতেই অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মেহেভীন এই বাড়িতে নেই৷ অভ্রের কাছে নেই। অভ্রের থেকে অনেকটাই দূরে। কিন্তু এই দূরে থেকেও মেহেভীন অভ্রের জীবনে গভীরভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে, যা হয়তো অভ্র নিজেও জানে না।

_______________

সকাল সকাল আরিয়ানের সাথে মেহেভীন বেড়িয়ে পড়েছে। যদিও আরিয়ানের মা মেহেভীনকে এইসময় বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন,তবুও আরিয়ান কোনরকম তার মাকে বুঝিয়ে মেহেভীনকে নিয়ে বেড়িয়ে ভার্সিটি যাওয়ার কথা বলে। মেহেভীনের প্রেগ্ন্যাসির এখন ২ মাস চলে। সে অনুসারে মেহেভীন এখন নরমালভাবেই চলাফেরা করতে পারবে। মেহেভীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে,সে ভার্সিটির পাশে একটি ছোট–খাটো জব নিয়ে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। যেন আরিয়ানের বাড়িতে মিথ্যে বলে আশ্রয় নিয়ে, না থাকতে হয়। আরিয়ানও এই ব্যাপারে মেহেভীনকে যথেষ্ট সাপোর্ট করেছে। আরিয়ান আজ ঠিক করেছে, সে আজ নিজেই মেহেভীনকে সব জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে নিয়ে যাবে। তাই সে হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়েছে। মেহেভীনের এই অবস্হায় একা যাওয়াটা বেশ রিস্কি। যদিও মেহেভীন বার বার মানা করেছে,কে শুনে কার কথা? আরিয়ান যা ঠিক করেছে সে তাই করবে। যদিও মেহেভীন এই বিষয়ে বেশ গর্বিত। আরিয়ানের মতো এইরকম একটা ভাই সমতল্য বন্ধু পেয়ে। আজ সবাই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও, আরিয়ান তাকে নিজের বোনের মতো আগলে রেখেছে।
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

________

এয়ারপোর্টে লাগেজ হাতে নিয়ে বেড়িয়ে আসে আরহাম। নিজের দেশের মাটিতে পা দেওয়াতে, একপ্রকার শান্তি রয়েছে,যা অন্য কোন দেশে পাওয়া যায়না। আরহাম ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে প্রায় রাত ৯টা বাজে। আরহাম আজকে দেশে ফিরেছে,তা বাড়ির কেউই জানে না। আরহামের ধারণা মতে,আরিয়ান নিশ্চই এখনো হসপিটালে আছে। আরহামের মা ও এইসময় তার বান্ধুবিদের বাড়িতে থাকে। তারমধ্যে আরহামের বাবাও এখন চিটাগাং গিয়েছে তার কনফারেন্সের জন্যে।
এইটাই সুযোগ। এই সুযোগে আরহাম তার ঘরে গিয়ে, তার বাড়ির লোকদের চমকে দিবে। কথাটি ভেবে আরহাম মুচকি হেসে নিজের গাড়ি করে বেড়িয়ে যায় এয়ারপোর্ট থেকে। আরহাম আগে থেকেই তার ড্রাইভারকে বলে, তার গাড়ি আনিয়ে রেখেছিলো গোপনে।

__________

রাহেলা বেগম ঘরের এক কোনে বসে টিভি ছেড়ে নাটক দেখতে ব্যস্ত। বাড়িতে এখন কেউ নেই। এইটাই সুযোগ। কলিং বেল বেজে উঠতেই, রাহেলা বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তার টিভি দেখার সাধ গেলো। এইসময় আবার কে এলো? কথাটা ভাবতে ভাবতে রাহেলা দরজা খুলে, হা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সে অফুষ্টস্বরে বলে উঠে,

‘বড় ভাইজান। আফনে। ‘

আরহাম লাগেজটা নিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

‘কেন আমাকে এইসময় আশা করো নি বুঝি?’

‘ভাইজান আপনে হুডাত আইলেন যে? আফনে তাইলে কি সব খবর পাইয়া গেছেন? ‘

আরহাম বিরক্ত নিয়ে বলে,

‘কিসের খবর খালা? ভালো করে বলো। ‘

”আসলে হইছে কি অনেক বড় কান্ড ঘটছে…

রাহেলার কথার মাঝেই, আরহাম বললো,

”আচ্ছা খালা আপাতত আমি এখন শুনতে চাইনা। আমার প্রচন্ড টায়ার্ঢ লাগছে। একটা হট সাওয়ার না নিলে, আমার মাথা ব্যাথা যাবে না। তুমি বরং আমার জন্যে গ্রিন টি নিয়ে এসো ওকে?’

কথাটি বলেই আরহাম নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। রাহেলা পড়ে যায় চিন্তায়। তার বড় ভাইজানের বউ এসেছে অথচ তাকে বলার সুযোগটুকুও সে পেলো না। রাহেলার ভাবনার মাঝেই,সেখান মেহেভীন ও আরিয়ান উপস্হিত হয়। সব জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে দিতে বেশ রাত হয়ে গেছে তাদের। মেহেভীনকে দেখে রাহেলা বলে উঠে,

‘বড় ভাবি আইছেন নি?’

‘হুম। ‘

আরিয়ান এইবার মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘মেহু ওহ আই মিন ভাবি তুমি বরং ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। ‘

সকলের সামনে আরিয়ান মেহেভীনকে তুমি ও ভাবি বলে সন্মোধন করে। মেহেভীন সম্মতি জানিয়ে, আরহামের ঘরের দিকে যায়। আরিয়ান নিজের ঘরে চলে যায়। রাহেলা চুপ থাকে। বড় ভাইজান কাউকে কিছু না বলে এসেছে, তারমানে হয়তো বাড়ির লোককে চমকে দিতে চায়। বড় ভাবি ভাইজানের ঘরে গেলে হয়তো ভাবিও চমকে যাবে,তাই রাহেলা আরহামের বাড়িতে আসার বিষয়টি লুকিয়ে যায়।

এদিকে,

আরহাম নিজের ঘরের ঢুকেই,লাগেজটা পাশে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। কোন দিকে এখন তার খেয়াল নেই। প্রচন্ড টায়ার্ড সে। আরহাম ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর সেখানে মেহেভীন চলে আসে। সারাদিন এখানে সেখানে ইন্টারভিউ দিতে দিতে সেও আজ বড্ড টায়ার্ড। সে ব্যাগটা বিছানায় রেখে, আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের মাথার হিজাবটা খুলতে শুরু করে দেয়।

[এইবার কি হবে 🙊]

চলবে…..ইনশা-আল্লাহ 💞

গল্পটা সম্পূর্ন কাল্পনিক
[কেমন হয়েছে। জানাবেন কিন্তু]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here