স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৫৫

0
387

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৫৫

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আর এই লোক কিনা একটা মেসেজ করেও জানাতে পারেনি যে তার আসতে দেরী হবে বা কিছু। অসভ্য লোক একটা। তবে আজ এই জায়ানের বাড়ি ফেরা নিয়ে মেয়েটা একটা বিষয় বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে। সে ভীষণভাবে ভালোবাসে এই লোকটাকে। যদিও এই কথা সে আগেই উপলব্ধি করেছে তবে আজ যেন সেই অনুভূতিটা প্রচন্ড প্রখররূপ ধারন করেছিল জায়াকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে, ছেলেটার কোনো বিপদ আপদের ভয়ে। মনে হচ্ছিলো যেন দম বন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছিলো সে। সে না হয় নিজের ভিতরকার অনুভূতিগুলো অনুভব করতে সময় নেয় একটু। ছোট বেলা থেকে মানুষের তিরস্কার, বঞ্চনা, অপমানে হয়তো নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতেও ভয় পায় তাই বলে জায়ানও তাকে একটু বুঝবে না নাকি? খুব তো সারাক্ষণ ভালোবাসি ভালোবাসি করে বেড়ায়। তীব্র অভিমানেরা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরলো পূর্বাশাকে জায়ান অস্থির হয়ে উঠছে ক্রমেই। মেয়েটার কন্ঠে স্পষ্ট কান্নার আভাস। মেয়েটা কি তার জন্য তবে কাঁদছে? জায়ান ব্যস্ত হাতে ধাক্কা মারলো দরজায় অতঃপর বলল – তোমাকে কল করে জানাতে চেয়েছিলাম তো। কিন্তু কল করতে গিয়ে দেখি মোবাইলে চার্জ নেই একদম, বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে আমার দোষ কি বলো তো?

– মোবাইলে যে চার্জ নেই বেশি তা বাসায় থাকতে খেয়াল করেননি কেন? চার্জ দেননি কেন মোবাইলে?

জায়ান কন্ঠটা নরম করলো একটু। চোখে মুখে লাজুক ভাব ফুটিয়ে বলল – কাল থেকে তোমাকে আদর করতে করতে করতেই তো দিশেহারা আমি। এর মধ্যে আবার ঐ থার্ড পার্সন মোবাইলের দিকে নজর দিব কখন আমি?

পূর্বাশার কান গরম হলো। লোকটা যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছে? মনে হচ্ছে যেন দুনিয়াতে উনি একজনই আছেন যে বউকে আদর করেছে আর কেউ নেই। আর কেউ তো বউ আদর করে না। পূর্বাশা ভেংচি কাটলো উত্তর দিল না কোনো। ভিতর থেকে আর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অস্থির হলো জায়ান। অস্থির কন্ঠে সে বলল – আচ্ছা মানছি সব দোষ আমার, আমি ভুল করেছি। এখন দয়া করে দরজাটা খুলে আমাকে একটু ভিতরে নাও। এভাবে অবহেলা করে বাইরে ফেলে রেখো না।

পূর্বাশা ভ্রু কুঁচকালো। ভিতর থেকে গলা উঁচিয়ে বলল ৬ আপনাকে বাইরে ফেলে রেখেছি কোথায়? ঘরের ভিতরেই তো আছেন।

জায়ানের কন্ঠ শীতল হলো। ঠান্ডা অথচ করুন কন্ঠে বলল – বেডরুমে তো নেই।

– আমার জানামতে এ বাসায় একটা বেডরুম না। বরং তিন তিনটা বেডরুম আছে। একটা আমি আর কোবরা দখল করেছি বাকিগুলো আপনি গিয়ে দখল করুন, যান।

– না আমি তোমার সাথে এই বেডরুমে থাকবো।

– আজ রাতে আর তা হবে না। এটা আপনার আমাকে না জানিয়ে দেরী করে বাড়িতে ফেরার শাস্তি।

জায়ান কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে ভাবলো। উপায় খুঁজে বের করলো পূর্বাশাকে রুম থেকে বের করে আনার অতঃপর বলল – প্লীজ কৃষ্ণময়ী দরজাটা খোলো। আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। দয়া করে এবারের মতো মাফ করে দাও। এরপর থেকে কোথাও যাওয়ার আগে তোমাকে বলে যাব। তোমাকে না বলে এক পাও নড়বো না।

এসব কথায়ও যে খুব একটা কাজ হয়েছে তেমন নয়। মেয়েটা দরজা খোলেনি। যদিও তার উপর এমন তীব্র অধিকারবোধ, তাকে নিয়ে চিন্তা, দেরী করে বাড়ি ফেরায় অভিমান বিষয়গুলো প্রশান্তি দিচ্ছে জায়ানের হৃদয়ে আবার মেয়েটার এভাবে দেখা না পাওয়া, রুম আটকে বসে থাকা, কন্ঠে কান্নার আভাস অস্থির করে তুলছে বেচারাকে। জায়ান সময় নিয়ে একটু। অতঃপর গলা উঁচিয়ে বলল – আমি কিন্তু সেই দুপুর থেকে এখনও অব্দি খাইনি কিছুই।

পূর্বাশা চমকালো, লোকটা সেই দুপুর থেকে খায়নি কিছু? বুকের ভিতরটা মোচড় মেরে উঠলো মেয়েটার। যদিও সেও জায়ান ফিরলে একসাথে খাবে সেই আশায় তেমন কিছুই খায়নি তবুও টুকটাক হালকা খাবার খেয়েছে। পূর্বাশা নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলো না আর, গলে গেল নিমেষেই। প্রিয় মানুষটার কন্ঠে এমন কথা শুনে কি আর তার উপর রাগ ধরে রাখা যায় নাকি? পূর্বাশা কোবরাকে বিছানার উপর বসিয়ে রেখে দরজা খুললো। জায়ানের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল – ফ্রেশ হয়ে আসুন খেতে দিচ্ছি।

জায়ান উত্তর দিল না কোনো, হুট করে জড়িয়ে ধরলো পূর্বাশাকে। আদুরে কন্ঠে বলল – এত রাগ করছো কেন বউ? বলছি তো ভুল হয়ে গেছে আর হবে না। পূর্বাশ জায়ানকে ছাড়িয়ে দিতে চাইলো নিজের থেকে। থমথমে কন্ঠে বলল – রাগ করিনি আমি।

– মিথ্যা।

– যদি বুঝতেই পারছেন মিথ্যা তাহলে আবার জিজ্ঞেস কেন করছেন?

জায়ান নিজের মুখভঙ্গি পাল্টালো। পূর্বাশাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল – তুমি এভাবে আমার সাথে রাগ করে থাকতে পারো না জান। তুমি জানো না তুমি রাগ করলে আমার কষ্ট হয়।

পূর্বাশা ভেংচি কাটলো। মুখ বাঁকিয়ে বলল – তেমন রাগলামই তো না, তাতেই বলছেন কষ্ট হয়। তবে রাগলে কি করতেন?

জায়ান নিজের হাতের বাঁধন আগলা করলো একটু। পূর্বাশার মুখ পানে তাকিয়ে হেসে বলল – তবে তোমাকে ঠুস ঠাস কয়েকটা চুমু খেয়ে রাগ ভাঙিয়ে দিতাম।

– আমার বয়েই গেছে আপনার চুমুতে রাগ ভাঙতে ছাড়ুন তো এখন।

– না ছাড়বো না।

পূর্বাশা জোর করে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল জায়ানকে অতঃপর বলল – ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুন খেতে দিচ্ছি, দুপুর থেকে নাকি খাওয়া হয়নি আপনার।

কথাটা বলেই পূর্বাশা হাঁটা ধরলো ডাইনিং রুমে। জায়ানও পিছু পিছু এলো মেয়েটার। পিছন থেকে আলতোভাবে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বলল – খাইয়ে দিবে? তাহলে খাব।

– পারবো না। হাত মুখ ধুয়ে নিজে এসে খেয়ে নিল।

পূর্বাশার কাঠ কাঠ কন্ঠস্বর, শীতল হলো জায়ানের দৃষ্টি। মেয়েটাকে ছেড়ে দিল সে। ঠান্ডা কন্ঠে বলল – ঠিক আছে তবে আমিও খাবো না। আর ভুলে যেও না আমি কিন্তু দুপুর থেকে খাইনি কিছু।

পূর্বাশা সুরু দৃষ্টিতে তাকালো জায়ানের পানে। সে বেশ বুঝলো জায়ান তাকে ঠান্ডা কন্ঠে ব্ল্যা’ক’মে’ই’ল করছে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল পূর্বাশা অতঃপর বলল – ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাইয়ে দেব।

জায়ানের ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠলো। আর সময় ব্যয় না করে লম্বা লম্বা পায়ে সে হেঁটে গেল ওয়াশরুমের দিকে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে হবে তারপর বউয়ের হাতে খেতে হবে। ।

অল্প সময়ের মধ্যেই জায়ান ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়লো। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে পড়লো সে। পূর্বাশা এক প্লেটেই খাবার নিলো, সেখান থেকেই নিজেও খেল আর জায়ানকেও খাইয়ে দিল।

****

রাত বাড়লো। এতক্ষনের ব্যস্ত শহরটা এখন নীরব রূপ ধারন করেছে। যানবাহনেরর কোলাহলের ধ্বনি অনেকটাই কমে গেছে যদিও এখনও শোনা যাচ্ছে কিছুটা। জায়ান ঘুমানোর আগেকার নিজের সকল কর্ম সমাপ্ত করে শুয়ে পড়েছে বিছানায়। পূর্বাশাও নিজের কাজ সেরে বেরিয়ে এলো ওয়াশ রুম থেকে। রুমের আনাচে কানাচে একবার চোখ বুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে শুধালো – কোবরা কোথায়?

জায়ান ভাবলেশহীন, নির্বিকার ভঙ্গিতেই উত্তর দিল – ওকে ওর রুমে দিয়ে এসেছি।

পূর্বাশা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো জায়ানের পানে অতঃপর জিজ্ঞেস করলো – ওরও আলাদা রুম আছে?

– আগে ছিল না এখন আছে।

পূর্বাশার দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। তীক্ষ্ম কন্ঠে বলল – ওর টুকু ছোট একটা কুকুর ছানা। ও একা থাকতে পারবে না। ওকে আমি নিজে আসছি।

কথাটা বলেই মেয়েটা উদ্যত হলো কোবরাকে আনতে কিন্তু পারলো না। জায়ান হন্তদন্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, পিছন থেকে হাত টেনে ধরলো পূর্বাশার। মেয়েটা থমকে দাঁড়ালো। ভ্রু কুঁচকে তাকালো জায়ানের পানে। জায়ান মুখ বাঁকানো অতঃপর বলল – বাহ আসতে না আসতেই দেখছি ওই ব্যাটা তোমাকে ভালোই হাত করে নিয়েছে।

এইটুকু বলে থামলো জায়ান। পরক্ষনেই তীক্ষ্ম কন্ঠে বলল – দেখো আমি কিন্তু আমার আর তোমার মধ্যে থার্ড পার্সন কাউকে মানবো না কৃষ্ণময়ী।

জায়ানের কথায় ভ্রু কুঁচকালো পূর্বাশা। অবাক কন্ঠে শুধালো – থার্ড পার্সন কে?

– কেন কোবরা।

পূর্বাশার অবকতার রেশ যেন বাড়লো আরও। এই লোক কিনা শেষ পর্যন্ত একটা কুকুর ছানাকেও হিংসা করছে? এতদিন না হয় তার আশেপাশে আসা পুরুষ মানুষদের না হয় হিংসা করতো তাই বলে এখন কুকুরকেও। পূর্বাশা চোখ গরম করে বলল – আপনি শেষ পর্যন্ত কিনা একটা ছোট অবলা প্রানীকে হিংসা করছেন।

জায়ান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো পূর্বাশার পানে। তাচ্ছিল্য করে বলল – ও অবলা? এসেই কি সুন্দর আমার বউকে নিয়ে আমারই বেডরুমে ঢুকে পড়লো বেয়াদবটা।

আদুরে কন্ঠে বলল – আগে একটু আদর করে নেই তারপর ফ্রেশ হবো।

পূর্বাশা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না জায়ানের বাহু বন্ধন থেকে। মুখ বাঁকিয়ে বলল – ঢং, সারাদিন আমাকে বাসায় একা ফেলে এখন এসেছে ঢং করতে।

পূর্বাশা হেসে উঠলো জায়ানের কথায়। হেসে হেসেই বললো – ঠিক আপনার মতো।

জায়ানও মৃদু হাসলো পূর্বাশার সাথে অতঃপর হুট করেই কোলে তুলে নিল মেয়েটাকে। হকচকালো পূর্বাশা, ব্যস্ত কন্ঠে বলল – কি করছেন কি?

জায়ান উত্তর দিল না কোনো। পূর্বাশাকে নিয়ে ধপ করে ছুঁড়ে ফেললো বিছানার উপর অতঃপর নিজেও উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো মেয়েটার ছোটখাটো দেহটার উপরে। আলতোভাবে পূর্বাশার গালে চুমু খেয়ে বলল – আদর করছি।

পূর্বাশা মুখ ফুলালো। অভিমানী কন্ঠে বলল – সারাদিনে খবর নেই। এখন আসছে আদর দিতে।

জায়ান মৃদু হাসলো। চট করে মেয়েটার ওষ্ঠে একটা চুমু খেয়ে বলল – তাই তো। সারাদিনে আদর করতে পারিনি তো তোমাকে, এখন একটু বেশি আদর দিয়ে পুষিয়ে দিতে হচ্ছে দেখছি বিষয়টা।

কথাটা বলেই জায়ান মুখ ডুবালো পূর্বাশার গলার ভাঁজে।‌ ছোট ছোট চুমুতে সিক্ত করে তুললো মেয়েটাকে। মেয়েটাও বাঁধা দিল না জায়ানকে। নিজের স্বামীর ভালোবাসায় ধীরে ধীরে সিক্ত করে তুলতে শুরু করলো নিজেকে।

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here