#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৬
#Raiha_Zubair_Ripti
ভার্সিটি শেষ হতেই রুয়াত রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। রোহান মাঠেই ছাউনি তে বসে ছিলো গিটার হাতে ফ্রেন্ডদের সাথে। মূলত সে বসে অপেক্ষা করছিলো রুয়াতের ছুটির। রুয়াত কে ক্লাস থেকে বের হতে দেখেই তৎক্ষনাৎ ই ছাউনি থেকে বের হয়ে আসে রুয়াতের পেছন।
-“ হেই রুয়াত।
রুয়াত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো৷ রোহান কে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসলো।
-“ হোয়াট?
-“ রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছো?
-“ হ্যাঁ।
রোহান হাঁটা ধরলো সামনের দিকে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একটা রিকশা নিয়ে ফিরলো। রুয়াতের সামনে রিকশা টাকে দাঁড় করিয়ে বলল-
-“ এই রিকশাওয়ালা মামা উনাকে স্ট্যান্ড অব্দি পৌঁছে দিয়ে আসবা।
এমনিতেই রুয়াতের তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে সেজন্য রোহানের আনা রিকশাতে উঠে চলে গেলো। স্ট্যান্ডে পৌঁছে রিকশাওয়ালা কে ভাড়া দিতে চাইলে রিকশাওয়ালা বলেন-
-“ ভাড়া দিয়ে দিছে মামায়।
রুয়াত তবুও সাধলো। কিন্তু নিলো না। বাস চলে আসায় রুয়াত আর সাধলো না। আবার ভার্সিটি আসলে লোকটাকে টাকা টা দিয়ে দিবে।
শাফায়াত ভার্সিটি থেকে বের হতেই দেখে সেদিনের সেই ছেলেটা বাহিরে মুখে হাসি লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে। শাফায়াত এক নজর সেই মুখের দিকে তাকিয়ে চলে আসলো।
রোহান ঘুরে ভার্সিটির ভেতরে চলে আসলো। এতো খুশি, আনন্দ লাগছে কেনো? রোহান ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে নেহালের হাত থেকে গিটার টা নিয়ে গান ধরলো-
তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালো বাসবো না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্প টা পুরনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
নেহাল সহ ওর সব ফ্রেন্ড মুগ্ধ হয়ে শুনলো রোহানের গান। রোহান গিটারে সুর তুলছে আর মুখে লেগে আছে সেই মাতাল করা হাসি। চোখের সামনে ভাসছে রুয়াতে মুখ খানা। কিভাবে কি হয়ে গেলো চোখের নিমিষেই!
রুয়াতের বাসায় আসতে আসতে সাড়ে তিনটা বেজে যায়। সার ঘরে মা বোন কে বসে থাকতে দেখে কাঁধের ব্যাগ টা সোফায় রেখে বসে পড়ে। সামিরা শিকদার মেয়েকে দেখে বলেন-
-“ রুমে যা গিয়ে দেখ কোন শাড়িটা পছন্দ হয়।
রুয়াত অবাক হয়ে বলল-
-“ কিসের শাড়ি মা?
-“ কিসের আবার বিয়ের। যা দেখে আয়।
রুয়াত রুমে আসলো। বিছানায় চারটা শাড়ি। বেনারসি দুটো লাল আর কমলা, আর একটা হলুদের শাড়ি। বেনারাসি দুটো দেখে দুটো হাতে নিয়ে নিচে আসে। সামিরা শিকদার এর সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ বেনারসি দুটো ক্যান মা?
সামিরা শিকদার বড় মেয়ের দিকে তাকালো। রজনী অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সামিরা শিকদার ছোট মেয়েকে টেনে সাইডে নিয়ে যায়।
-“ যে কোনো একটা পছন্দ কর। সেখানে দুটো থাকুক আর তিনটে।
রুয়াত লাল বেনারসি টা পছন্দ করলো। ওটা হাতে নিয়ে ফের রুমে আসলো। সামিরা শিকদার কমলা রঙের বেনারসি টা নিয়ে নিজের রুমে রেখে আসলেন।
আর দুদিন বাদে ছোট মেয়ের বিয়ে। ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা। আত্মীয় স্বজন বলতে দু একজন আসবে। বাড়িঘর তেমন সাজানো হয় নি বিশেষ কারনে। খুবই সিম্পল ভাবে বিয়ে যেমন কাবিন করার সময় হয় তেমন ভাবেই। কবির শিকদার তিন দিনের ছুটি নিবেন অফিস থেকে সেজন্য আজ বেশি করে কাজ করে রাখছেন অফিসে।
রুয়াত বেলকনিতে বসে আছে। কানে তার হেডফোন। ফোনে বাজছে গান। দুদিন পর বিয়ে অথচ হবু স্বামীর সাথে তেমন একটা কথাবার্তা হয় না। বিয়ের পর স্বাভাবিক সম্পর্কে যেতে কত সময় লাগবে কে জানে।
কথাটা ভাবতেই ফোনে ফোনকল আসে। রুয়াত ভাবে শাফায়াত এর ফোন কল। তাই কিছু টা হাসি আসে মুখে। কিন্তু পরক্ষণে আননোন নম্বর দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে। ফোন ধরলো না রুয়াত। কেটে গেলো ফোন। রুয়াত রেলিঙের উপর দু হাত দিয়ে মাথা ঠেকিয়ে দেয়। আবার ফোন বেজে উঠে। রুয়াত এবার রিসিভ করে।
-“ হ্যালো রুয়াত।
রুয়াত ভ্রু কুঁচকায়।
-“ কে?
ফোনের ওপাশ থেকে রোহান বলে-
-“ আমি রোহান।
রুয়াত বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
-“ আমার ফোন নম্বর কোথায় পাইছেন?
-“ কালেক্ট করছি অফিস থেকে।
-“ ফোন কেনো দিয়েছেন?
-“ এমনি মনে হলো ঘুমানোর আহে এখন তোমার কন্ঠস্বর টা একটু শোনা উচিত।
রুয়াত ফোন কেটে দিলো। যার কন্ঠ স্বর শোনার জন্য ফোনের অপেক্ষায় আছে সে ফোন দেয় না। আরেকজন তার কন্ঠের স্বর শোনার জন্য ফোন দিচ্ছে!
রোহান কেটে দেওয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইশ মেয়েটা কি বুঝতে পারছে রোহান নামক ছেলেটা মারাত্মক ভাবে ভালোবেসে ফেলছে তাকে!
নিজের রুমে বসে আছে শাফায়াত। সামনেই বসে আছে সাদমান। সাদমান শাফায়ত এর বিয়ের সাদা পাঞ্জাবি টা মেলে ধরেছে।
-“ ব্রো পাঞ্জাবি টা অনেক সিম্পল। বিয়ে তে কেউ সিম্পল পড়ে?
শাফায়াত তাকালো সাদমানের দিকে।
-“ আমি পড়ি।
-“ রসকষহীন কাঠখোট্টা মানুষ তুমি। সবার থেকে ভিন্ন রসেরই তো হবে।
-“ জানিস ই তো তাহলে বলছিস কেনো।
-“ এবার তো নিজেকে বদলাও। বিয়ে করছো তুমি। রোমান্টিক হতে শিখো।
শাফায়াত ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ তুই শিখাবি আমায়? তোর থেকে শিখতে হবে? রোমান্স কি আমি তোর সাথে করবো?
-“ আরে কি যে বলো না ব্রো। আমি কেনো শিখাবো। আর আমি কি গে* নাকি?
-“ তাহলে রোমান্টিক হতে তুই কেনো বলছিস? বলবে আমার বউ তোর ভাবি।
-“ আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে বলা। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
দু হাত জোর করে বলল সাদমান। শাফায়াত ল্যাপটপ টা কোল থেকে নামিয়ে হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলে-
-“ আমার রুম থেকে যা এখন। আর আমার বিয়ের পরপরই আমেরিকা ব্যাক করবি।
সাদমান বসা থেকে উঠে বলে-
-“ নো ওয়ে ব্রো। আমি বিয়ে না করে আমেরিকা ব্যাক করছি না। সোজা বউ নিয়ে চলে যাব।
-“ তোর মতো বেকার ছেলের কাছে কোন মেয়ের বাবা তার মেয়ে কে দিবে শুনি?
-“ মেয়ে যদি একান্ত নাই দেয় কোনো মেয়ের বাবা তোমার শালিকা কে নিয়ে আসবো।
শাফায়াত সাদমান কে রুমে থেকে ঠেলে বের করতে করতে বলে-
-“ আমি জেনেশুনে আমার শালিকার জীবন নষ্ট করবো না তোর মতো বেকারের হাতে তুলে দিয়ে।
সাদমান দরজায় এক হাত দিয়ে বলে-
-“ অপমান্স করলে ব্রো আমায়!
-“ হ্যাঁ করলাম।
-“ সময় আমারও আসবে।
-“ আমিও চাই তোর সময় আসুক অতিশীঘ্র আমেরিকা যাওয়ার।
সাদমান মুখ বেঁকিয়ে চলে গেলো। শাফায়াত দরজা আঁটকে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
———————-
পরের দিন শেষ বিকালের দিকে ঝুম বৃষ্টির আবির্ভাব হলো। আত্মীয়রা বলতে রুয়াতের ফুপি এসেছে তার ছেলে কে নিয়ে।ছেলের বয়স দশ বছর। আর কোনো আত্মীয় আসে নি। কাল গায়ে হলুদ রুয়াতের। আজ এমন বৃষ্টি তে ভিষণ বিরক্ত শিকদার বাড়ির মানুষ। রুয়াত আর রজনী জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। রুয়াতের ডান হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বৃষ্টির পানি গুলো কে ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য। রজনী নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। এমনই এক ঝুম বৃষ্টির দিনেই তো সেই প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা হয়েছিল রজনীর। আচ্ছা অপ্রিয় ঘৃণিতর তালিকায় থাকা মানুষ টা কেমন আছে? যার জন্য রজনী কে ছেড়ে দিয়েছিল তাকে কি পেয়েছে সে? একটা বার ও সে রজনীর দিক টা ভেবে দেখলো না! সে বুঝলো না রজনীর মনের ব্যাথা! আজ ও সে গুমরে ম’রে। সত্যি টা মেনে নিতেই পারে না। এই অপূর্ণতার জীবন কে সে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। কি এমন ক্ষতি তো স্রষ্টার তাকে পূর্ণতার চাদরে মুড়িয়ে দিলে। ভালোই তো বেসেছিল নওফিল কে। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ঐ মানুষটার হাত ধরেছিল। আর সে কি করলো? মাঝ রাস্তায় এসে হাত টা ছেড়ে দিলো! বুক টা কি একটুর জন্য ও কাঁপেনি সেদিন নওফিলের? পুরুষ মানুষের ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়? তার করা সেদিনের একটা ভুলের জন্য যে রজনী আজও সাফার করছে মারাত্মক ভাবে সেটা কি নওফিল জানে? এই সাফারের শেষ টা কোথায় কে জানে! সুস্থ স্বাভাবিক একটা মানুষ কে নওফিল অসুস্থ বানিয়ে ছাড়লো!
রুয়াত জানালা হুট করে নিচের দিকে তাকাতেই থমকে যায়। রোহান দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তার বাসার নিচে। দৃষ্টি রুয়াতের রুমের জানালার দিকে। রুয়াত তড়িঘড়ি করে জানালা বন্ধ করে দিলো। রজনীর হাত টেনে বিছানায় বসলো। রুয়াতের অস্বাভাবিক কর্ম কাণ্ড দেখে রজনী কপালে সূক্ষ্ম দু ভাজ পড়লো।
-“ কি হয়েছে তোর? মনে হলো কাউকে নিচে দেখে চোরের মতো টেনে নিয়ে আসলি।
রুয়াত হাসার চেষ্টা করে বলে-
-“ না না তেমন কিছু না। বৃষ্টি আর ভালো লাগছে না সেজন্য।
-“ ওহ্ আচ্ছা।
-“ হুম।
রোহানের উপর জাস্ট বিরক্ত হচ্ছে রুয়াত। রোহান রুয়াতের বাসার নিচে ছাতা মাথায় করে দাঁড়িয়ে আছে।
রুয়াত কে আজ ভার্সিটি তে দেখতে না পেয়ে রুয়াতের ক্লাস ফ্রেন্ডের থেকে রুয়াতের বাসার এড্রেস নিয়ে এক নজর দেখার জন্য চলে আসে। রুয়াত কে জানালার বাহিরে হাত বের করে বৃষ্টির পানি ছুঁতে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো রুয়াতের দিকে। কি এমন আছে এই মেয়ের মধ্যে যে তাকে এতো টানে!
#চলবে?
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/