#তুমি_আছো_মনের_গহীনে
#পর্ব- ১৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহামের বুকে মেহেভীন লুটিয়ে পড়তেই,আরহাম অনুভব করলো মেহেভীন জ্ঞান হারিয়েছে। আরহাম কিছু না ভেবে মেহেভীনকে পাজকোলে তুলে নিলো।
বৃষ্টি থামার নামই নেই। আরহাম মেহেভীনকে নিয়েই,
গাড়ির দিকে ছুটে চলে এলো। মেহেভীনকে গাড়িতে শুয়িয়ে দিয়ে, আরহাম মেহেভীনের পাশে বসে,ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘আপনি গাড়ি স্টার্ট করুন। আরিয়ানের হসপিটালের দিকে গাড়িটা নিয়ে যান। ‘
‘ওকে স্যার। ‘
আরহাম নিজের গাঁয়ের ব্লেজারটা খুলে,মেহেভীনের গাঁয়ে জড়িয়ে নেয়,যেন মেহেভীনের ঠান্ডা না লাগে। আরহাম এইটাই বুঝতে পারছে না,স্টুপিড মেয়েটা এইভাবে এই অবস্হায় বৃষ্টিতে ভিজতে গেলো কেন? আরহাম বোতলটা বের করে, পানির ছিটা দিয়ে মেহেভীনের জ্ঞান ফিরানোর চেস্টা করছে। হাত-পা ও মালিশ করে দিচ্ছে, যেন জ্ঞানটা ফিরে আসে। তবুও মেহেভীনের জ্ঞান ফিরছে না। হাত-পা কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে মেহেভীনের। এইবার আরহামের কিছুটা ভয় হচ্ছে। মেহেভীনের কিছু হলো না তো? সে মেহেভীনের মাথাটা আস্তে করে, নিজের কোলে নিয়ে, বলতে লাগলো,
‘ এই মেয়ে উঠো। শুনতে পারছো তুমি? ‘
মেহেভীন কোনরকম প্রতিক্রিয়া করলো না। আরহাম চিন্তিত সুরে ড্রাইভারকে বললো,
‘মজনু একটু জোড়ে ড্রাইভ করো ফাস্ট। ‘
মজনু এর আগে আরহামকে এতোটা চিন্তিত হতে দেখিনি। পরক্ষনে ভাবলো নিজের স্ত্রী এইভাবে অজ্ঞান হয়ে থাকল, যে কোন যুবকই অস্হীরতায় ভুগবে। মজনু আবারো গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দেয়।
_________
আরিয়ান মেহেভীনের চেকাপ করে যাচ্ছে। আরহাম হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টি তার নীচে। মেহেভীনের জ্ঞান এখনো ফিরেনি। আরহাম আজকে মেহেভীনের ভার্সিটিতে যেয়ে জানতে পারে মেহেভীন নাকি আজকে ভার্সিটি আসেনি৷ তাই আরহাম বার বার মেহেভীনকে ফোন করে যাচ্ছিলো, তখন মেহেভীন ফোন ধরছিলো না। তাই আরহাম গাড়ি নিয়ে মেহেভীন খুঁজতে শুরু করে৷ ভাগ্যক্রমে মেহেভীনের সাথে তার পুকুরের পাশের মাঠে দেখা হয়ে যায়। আরহাম স্পষ্ট শুনেছিলো, মেহেভীনের সেই আর্তনাদ। কতটা কষ্টের মধ্যে একজন মানুষ থাকলে, এইভাবে কাঁদতে পারে। আরিয়ান মেহেভীনকে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে দেয়। অতঃপর আরিয়ান আরহামের কাছে এসে বলে,
‘ভাইয়া চিন্তা করিও না।মেহু এখন ঠিক আছে। ‘
‘জ্ঞান কখন ফিরবে? জানিস মেয়েটা কতটা স্টুপিড? এই অবস্হায় বৃষ্টিতে ভিজচ্ছিলো৷ ‘
আরিয়ান তার ভাইয়ের কথা শুনে হেঁসে বললো,
‘ভাইয়া মেহু অসুস্স এখনো তুমি তাকে বকাঝকা করবে?’
‘করবো না তো কি করবো আদর করবো? ‘
‘করো না তোমারই তো বউ। নকল–আসল ফ্যক্ট না ভাই। ‘
‘একটা থাপ্পড় খেলে তোর মাথা ঠিক হবে। এইরকম একটা টাইমেও তোর মজা না করলে হচ্ছে না। ওই স্টুপিড় মেয়েটার কিরকম অবস্হা এইটা বল? ‘
আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে ক্ষিন্ন গলায় বললো,
‘মেহু এখন প্রেগনেন্ট। এই অবস্হাতে কোনরকম প্রেশার তার শরীরের জন্যে ঠিক না। কিন্তু মেহুর মনের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝড় বয়ে চলেছে। কোন এক চাপা কষ্ট। যা প্রতিনিয়ত মেহুকে ঘিড়ে ধরেছে।যা মেহু কারো সাথেই শেয়ার করতে পারছে না। হয়তো অতীতের ক্ষতগুলোই আবারো জীবত হয়ে উঠেছে। এই কষ্টের প্রেশার গুলো মেহু ঠিক নিতে পারছে না। তাই সে সেন্সল্যাস হয়ে গেছে।যেখানে প্রেগনেন্ট অবস্হায় একটা মেয়েকে সবসময় হাঁসিখুশি থাকতে হয়, সেখানে মেহু কষ্টে ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে একপ্রকার। ভাই। ‘
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
আরহাম মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো কিছুক্ষন। আরিয়ান কি মনে করে যেন বললো,
‘ভাইয়া আমাকে এখন নেক্সট কেবিনে যেতে হবে পেশেন্ট দেখতে,তুমি না হয় ততক্ষনে মেহেভীনের পাশে বসো। ‘
আরিয়ান বেড়িয়ে যায়। আরহাম মেহেভীনের পাশে বসে। মেয়েটার মুখটা একেবারেই শুকিয়ে যায়। গোলাপি চিকন ঠোটজোড়া কেমন যেন নড়ছে। আরহাম বুঝতে পারছে, মেহেভীনের জ্ঞান ফিরে আসছে,কিন্তু মেহেভীন ঠিক কি বলতে চাইছে। আরহাম মেহেভীনের দিকে ঝুঁকতেই শুনতে পায় বিড়বিড় করে বলা, মেহেভীনের প্রতিটা বানী,
‘আমাকে এতোবার আঘাত করে কি এতো শান্তি পাও তুমি? জানো না? তোমার উপস্হিতি বার বার স্বরন করিয়ে দেয় তোমার করা প্রতিটা ছলনার কথা।
আমার হৃদয়টুকু যে বার বার ক্ষত হয়ে যায় পুরনো স্মৃতি মনে পড়লেই……
মেহেভীন আর কিছু বলতে পারলো না,পুনরায় চোখ-জোড়া বন্ধ করে ফেললো। মেহেভীন কথা শুনে আরহামের কেমন একটা কষ্ট হতে শুরু হলো।আরহাম বুঝতে পারলো, আরিয়ানের দেওয়া ইঞ্জেকশন এর জন্যেই মেহেভীনের জ্ঞান ফিরা সত্ত্বেও মেহেভীন পুনরায় ঘুমিয়ে পড়েছে।
_____________
বালিশে মুখ গুজে কেঁদে যাচ্ছে মায়রা। অভ্র তার ব্যাগটা বিছানায় ফেলে,মায়রার দিকে এগিয়ে আসতেই নিলেই,মায়রা তাতে বাঁধা চিৎকার দিয়ে বলে,
‘একদম আমার কাছে আসবে না অভ্র। কি ভেবেছো তুমি? তুমি মেহেভীনের সাথে দেখা করবে? অথচ আমি জানতে পারবো না? কেন দেখা করলে তুমি মেহেভীনের সাথে? ‘
অভ্র নিজের ঘড়ি খুলতে খুলতে বললো,
‘আমার মেহুর সাথে কিছু কথা বলার ছিলো,যা মেহুকে জানানো আমি প্রয়োজন বলে মনে করি। ‘
‘কি এমন কথা যে রাস্তায় এতো বড় ড্রামা করলে?’
‘সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই মায়রা। তুমি শুধু শুধু আমাকে ভূল বুঝেছো। ‘
মায়রা ধপ করে বসে দ্বিগুন উচুৃ্ঁ গলায়বলে,
‘ অভ্র আমি তোমার স্ত্রী অভ্র। সবকিছু জানার অধিকার আছে আমার। কোনভাবে তোমার প্রাক্তন প্রেমিকার প্রতি তোমার দরদ উতলে উঠছে না তো? যাকে সমাজ এখন তোমার রক্ষীতা বলে মনে করে। তা রক্ষীতাকে আবার প্রয়োজন নাকি? ‘
অভ্রের রাগ হচ্ছে প্রচন্ড। রাগে হাত-পা কাঁপছে। কতক্ষন ধরে মেয়েটাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু মেয়েটা তো বুঝতে চাইছেই না উল্টো অভ্রের উপর রাগ দেখিয়ে যাচ্ছে। অভ্র নিজের রাগ দমন করতে পারলো না। মায়রা আরো কিছু বলবেই,তার আগেই অভ্র মায়রার মুখ চেপে ধরে বলে,
‘ অনেক্ষন ধরে আমি সহ্য করছি। মনে রেখো আমি শুধুমাত্র তোমার স্বামী। কোন প্রাইভেট প্রোপারটি নই। আমার যার সঙ্গে ইচ্ছে তার সঙ্গে দেখা করবো। তুমি তাতে বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত দেওয়ার কেউ নও। স্ত্রী তুমি আমার। স্ত্রীর মতো থাকবে। ‘
এই প্রথম মায়রা অভ্রের চোখ তার জন্যে তীব্র রাগ ক্ষোভ দেখতে পারছে। আচ্ছা এই ক্ষোভ কী মেহেভীনকে বলা কটাক্ষ করা বানীর জন্যে? অভ্র মায়রাকে ছেড়ে,রাগে ফুশতে ফুশতে বেড়িয়ে যায়। মায়রা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অভ্রের মা আড়াল থেকে সবকিছুই দেখছেন। তিনি বুঝতে পারছেন তার সংসারটা কেমন ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে। খুব তারাতাড়িই অভ্রের সাথে কথা বলা জরুরী।
________
রুশা আজকে নীল রংয়ের একটি শাড়ি পড়েছে। অফিসের প্রায় সবাই চলে এসেছে,শুধুমাত্র আরহাম ছাড়া। রুশা ভাবলো আরহাম বোধহয় ট্রাফিক জ্যামে পড়েছে,তাই আসতে লেট হচ্ছে। তাহসান রুশাকে দেখে বললো,
‘বাহ রুশা তোমাকে দেখে আজ যথেষ্ট সুন্দর লাগছে।’
রুশা লজ্জা পেয়ে বলে,
‘কি যে বলেন না তাহসান ভাই। ‘
‘একদম ঠিক বলছি। আজ কত ছেলে তোমার এই রুপে ফিদা হয় শুধু দেখতে থাকো। ‘
”আরহাম স্যারই শুধু ফিদা হলে চলবে আর কাউকে লাগবে না। ‘
রুশা বিড়বিড় করে বললো কথাটি। তাহসান ভ্রু কুচকে বললো,
‘কিছু বললে? ‘
‘না মানে স্যার কখন আসবে? ‘
‘ফোন করো দেখো। ‘
‘আচ্ছা। ‘
_____________
আরহামের ফোন বেজে উঠতেই, আরহাম ফোনটা হাতে নিয়ে উঠতে নিলেই, আরহাম খেয়াল করে মেহেভীন আরহামের বাম হাতটা আকড়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। নার্স এই অবস্হা দেখে এসে বলে,
‘স্যার আমি ছাডিয়ে দিচ্ছি হাতটা। ‘
আরহাম তাতে বাঁধা দিয়ে বলে,
‘ দরকার নেই। এতে ওর ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। ‘
এইদিকে আরহামের ফোনটাও বেজে চলেছে। ফোনটা এইভাবে বাজতে থাকলে, মেহেভীনের ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে,তাই আরহাম ফোনটা কেটে দিয়ে রুশাকে ছোট্ট করে মেসেজ পাঠিয়ে বললো সে এখন আসতে পারছে না। তার জন্যে যেন অপেক্ষা না করা হয়। আরহামের এরুপ মেসেজে মনটা ছোট হয়ে যায় রুশার। আজ সব আয়োজনই তো আরহামকে ঘিড়ে ছিলো। আরহাম একটিবার আসলে কী খুব ক্ষতি হতো? কি এমন কাজে ব্যস্ত আরহাম? রুশা মন খারাপ করেই, কেক কাটতে চলে গেলো।
_____________
আরহাম তার এক হাত দিয়েই, ফোন টিপে যাচ্ছে এবং মেহেভীনকে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। ঘুমের মধ্যে আলতো হাঁসির রেখা দেখা যাচ্ছে মেয়েটার৷ মেয়েটার মুখে হাসিটাই যেন মানায় বড্ড।নার্স বলে গেছে কালকে সকালেই একেবারে মেহেভীনের ঘুম ভাঙ্গবে। আরহাম তার মাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে, সব ঘটনা। রাত প্রায় ১১টা বাজে আরিয়ান এখনো অন্য পেশেন্টদের দেখছে। আরহাম ফোন টিপতে টিপতে তার চোখে ভর করে একরাশ ঘুম।
_____
আরিয়ান সবার চেকাপ করে, মেহেভীনের কেবিনে ঢুকে। আরহাম এখনো কিছু খায়নি। রাতও হয়েছে বেশ। আরিয়ান ঠিক করেছিলো, দুই ভাই মিলে ক্যান্টিনে গিয়ে খেয়ে আসবে,কিন্তু আরিয়ান কেবিনে এসে সুন্দর এক মুহুর্তের সাক্ষ্যি হয়। আরহাম ও মেহেভীনে একে অপরের হাত ধরে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। মেহেভীন বিছানায় ঘুমিয়ে আছে এবং আরহাম চেয়ারেই ঘুমিয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আরহাম আজ বড্ড ক্লান্ত। দুজনকে দেখে আরিয়ান মৃদ্যু হাসলো।
চলবে….ইনশা-আল্লাহ 💖।
[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু]
[আগেই বলে দিচ্ছি এক্সাম তাই কয়েকদিন অনিয়মিত থাকবো লেখালিখিতে 🤕]