স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৪৬

0
449

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৪৬

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

ক্যাপশনে লিখে দিল –

“উইথ মাই পার্সনাল পোলার বি’য়া’র” ( আমার ব্যক্তিগত সাদা ভাল্লুকের সাথে )

এই পোস্টের মানে বুঝতে খুব একটা সময় লাগলো না জায়ানের। হয়তো মেয়েটা এখনও অব্দি সরাসরিভাবে জয়ানকে বলেনি ভালোবাসে। তবে আজ এই পোস্টের মাধ্যমে নিজের উত্তর জানাতেও বাকি রাখেনি কিছু। জায়ান কেবলই নিজের হোস্টেল কক্ষে ঢুকে শরীরের জড়িয়ে রাখা শীত পোশাকটা খুলতে উদ্যত হয়েছিল কিন্তু তার মধ্যেই চ্যাং এসে তার মোবাইলটা ধরলো জায়ানের সম্মুখে। হুট করে এমন একটা পোস্ট সম্মুখে পড়তে চিত্ত আন্দোলিত হলো। ঠোঁটের কোনে সূক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠলো নিজের অজান্তেই। আধখোলা শীত পোশাকটা আবারও জড়িয়ে নিল শরীরে। যেভাবে এসেছিল আবার সেভাবেই বেরিয়ে গেল বাইরে।

ক্ষানিক সময় নিয়ে জায়ান গিয়ে পৌঁছালো পূর্বাশার হোস্টেলের সম্মুখে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল লাগালো পূর্বাশাকে। একবার রিং হতেই কলটা ধরলো মেয়েটা। কল ধরতেই তেমন কোনো ইতিউতি না করে জায়ান বলল – নিচে এসো।

পূর্বাশা ভ্রু কুঁচকালো। কপালে ভাঁজ ফেলে শুধালো – একটু আগেই তো এলাম এখন আবার কি?

– আসতে বলেছি এসো এত কথা কিসের?

কথাটা বলেই ধুপ করে কলটা কেটে দিল জায়ান। বিরক্তিতে চোখ মুখ খিচে এলো পূর্বাশার। বিরক্তি নিয়েই সে বেরিয়ে এলো বাইরে। জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো – কি সমস্যা?

জায়ান চোখ তুলে তাকালো মেয়েটার পানে। কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে এক দৃষ্টিতে সে দেখলো মেয়েটাকে অতঃপর হুট করেই জড়িয়ে ধরলো পূর্বাশাকে। চকিত হলো মেয়েটা। এই ছেলেটার হুট হাট জনসম্মুখে এই জড়িয়ে ধরার অভ্যাস আর গেল না। লাজে রাঙা হলো মেয়েটা। এদিক ওদিক আড় চোখে দৃষ্টি ফেলে দেখলো আশেপাশের মানুষগুলো কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাদের পানেই তাকিয়ে রয়েছে। অপ্রস্তুত হলো মেয়েটা। আমতা আমতা করে বলল – কি করেছেন কি ছাড়ুন আমাকে। মানুষ দেখছে তো।

জায়ান ছাড়লো না পূর্বাশাকে। একটু ঝুঁকে আলতোভাবে সে চুমু খেল মেয়েটার চুলের ভাঁজে অতঃপর বলল – এটা চীন, এখানে এমন ঘটনা দুধভাত। এখানে কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে জড়িয়ে ধরলে কেউ কিছু মনে করে না।

কথাটা বলে একটু থামলো জায়ান অতঃপর আবার বলল – আজ যা করলে তাতে এই টুকু উপহার তো আমার কাছ থেকে তোমার প্রাপ্প কৃষ্ণময়ী।

জায়ানের কথায় তার বক্ষ থেকে বিড়াল ছানার মতো একটু মুখ তুললো পূর্বাশা। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল – কি করেছি আমি?

– এই যে নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করলে। আমার ভালোবাসার দাবি গ্রহন করলে।

পূর্বাশা অবাক হলো যেন। অবাক কন্ঠেই বলল – আমি আবার কখন আপনার ভালোবাসার দাবি গ্রহন করলাম?

জায়ান হাসলো। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে পূর্বাশার করা পোস্টটা দেখালো তাকে অতঃপর বলল – এর পরও বলবে তুমি আমার ভালোবাসার দাবি গ্রহন করোনি? আমাকে ভালোবাসো না।

পূর্বাশা যেন লজ্জিত হলো। তবে পরক্ষনেই গম্ভীর হলো মেয়েটার মুখশ্রী। জায়ানের বাহুবন্ধন থেকে জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল মেয়েটা। জায়ান অবাক হলো। ভ্রু কুঁচকে শুধালো – কি হয়েছে?

পূর্বাশা আড় চোখে তাকালো জায়ানের পানে। বেশ ঠান্ডা কন্ঠেই বলল – আমি আপনার ভালোবাসি মেনে নিচ্ছি কিন্তু আপনার সাথে কোনো প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছুক নই।

জায়ানের কুঁচকানো ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল আরও। সন্দিহান কন্ঠে শুধালো – মানে?

– মানে খুব সহজ। আমি বিবাহ বহির্ভূত কোনো সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছুক নই। একবার যেভাবেই হোক আমি ঠকেছি, প্রতারিত হয়েছি আপনার তা অজানা নয়। আমি আপনাকে বিশ্বাস করি, ভরসা করি তবুও কোনো অনিশ্চিত সম্পর্কে আমি জড়াতে চাইছি না। আমি এমন কোনো সম্পর্কের মায়াজালে নিজেকে ফেলতে চাইছি না যেখানে প্রতিনিয়ত আমার হারানোর ভয় থাকবে, যেকোনো সময়ে একে অন্যকে ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে, সামাজিক কোনো স্বীকৃতি থাকবে না, চাইলেই আমি তার বক্ষে মাথা রেখে নিজের দুঃখ বিসর্জন দিতে পারবো না।

কথাগুলো বলে একটু থামলো পূর্বাশা অতঃপর আবার বলল – আমি নিশ্চয়তা বিহীন কোনো সম্পর্ক চাই না। প্রয়োজনে আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য। যখন মনে করবেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন একমাত্র তখনই ভালোবাসার দাবি নিয়ে আমার সম্মুখে দাঁড়াবেন। আমি সেদিন আপনাকে ফেরাবো না, নির্দিধায় গ্রহন করবো আপনার ভালোবাসা।

জায়ান শুনলো পূর্বাশার সব কথাগুলো। চট করে উঠে সে বলল – চলো তাহলে এখনই বিয়ে করে ফেলি।

পূর্বাশা শীতল দৃষ্টিতে তাকালো জায়ানের পানে অতঃপর বলল – এভাবে নয়। আপনার পরিবার আমার পরিবার রাজী করিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করবো আমরা।

জায়ান চিন্তিত হলো। চিন্তিত সুরেই বলল – কিন্তু তা এখন কিভাবে সম্ভব?

– আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য।

বেশ শীতল কন্ঠে কথাটা বলেই পূর্বাশা আর দাঁড়ালো না ঐ স্থানে। পিছন ঘুরে চলে গেল হোস্টেলের ভিতরে আর জায়ানকে যেন ফেলে গেল অথৈ সমুদ্রের মধ্যভাগে। এই মুহূর্তে সে পূর্বাশাকে বিয়ে কিভাবে করবে? আর বিয়ে না করেও তো উপায় নেই। পূর্বাশা হয়তো বলেছে অপেক্ষা করবে সে তবুও হারানোর ভয় একটা থেকেই যায়। এমনিই নক্ষত্র আর ইয়ান ওত পেতে রয়েছে। তারা যখনই জানতে পারবে জায়ান আর পূর্বাশার সম্পর্কটার কোনো নাম নেই তখনই তো ওরা পূর্বাশাকে পটানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবে। তাছাড়া যতদিন সে অপেক্ষা করবে ততদিনে ঐ নক্ষত্র আর ইয়ানের মতো আরও জনসংখ্যার উদয় হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এই মুহূর্তে মিসেস শীওকে বললে তিনি অবশ্যই বিয়ে করার অনুমতি দিবেন কিন্তু পূর্বাশার বাবা মা? তারা কি এত সহজে মেনে নিবে পূর্বাশার বিয়ে? কেবল কিছুদিন আগে জায়ানের সাথে পরিচয় ঘটলো তাদের। এখন পর্যন্ত না তারা জায়ানকে ভালোভাবে চিনে আর জায়ান তাদের সাথে ভালোভাবে পরিচিত হয়ে উঠতে পেরেছে। এর মধ্যে এমন একটা প্রস্তাব রাখলে না শেষে হিতে বিপরীত কিছু ঘটে। জায়ান অস্তির ভঙ্গিতে কিছু সময় নিয়ে ভাবলো অতঃপর চলে এলো হোস্টেলে।

তৃষাম তৈরী হয়ে কেবল বের হচ্ছিলো কলেজের উদ্দেশ্যে। ঠিক তখনই তার পথ আগলে দাঁড়ালো জায়ান। তৃষাম ভ্রু কুঁচকালো। চোখ ছোট ছোট করে বলল – এভাবে ন’ষ্ট পুরুষদের মতো পথ আগলে দাঁড়িয়েছিস কেন?

তৃষামের এমন কথায় কপালে ভাঁজ পড়লো জায়ানের। ভিতরে ভিতরে ক্রোধে ফুঁসে উঠলেও বাহিরে প্রকাশ করলো না। কারন এই মুহূর্তে তৃষামকে প্রয়োজন জায়ানের। শুধু শুধু ছেলেটাকে ক্ষেপিয়ে দিলে লস তারই হবে। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে দমন করলো জায়ান অতঃপর নরম কন্ঠে বলল – তোর সাথে কিছু কথা আছে।

জায়ানের নরম কন্ঠে যেন আঁতকে উঠলো তৃষাম। হৃদপিন্ডটা লাফিয়ে উঠলো দ্রুত গতিতে। এই কন্ঠের মানে তৃষামের খুব ভালোভাবেই জানা। নিশ্চই কোনো ঘাপলা আছে। কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কার্যে তৃষামকে যখন প্রয়োজন পড়ে একমাত্র তখনই জায়ানের এমন কন্ঠস্বর শোনা যায়। আর জায়ানের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বলতে তৃষামের গলায় ফাঁস। তৃষাম ঢোক গিললো। দ্রুত জায়ানের সম্মুখ থেকে কেটে পড়তে বলল – আআমার কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই, এসে বরং তোর কথা শুনবো।

কথাটা বলেই তৃষাম চলে যেতে উদ্যত হলো। জায়ান আবার তার পথ আগলে দাঁড়ালো। মলিন কন্ঠে বলল – আমার জীবনের থেকে তোর কলেজ বড় হয়ে গেল তৃষাম?

তৃষামের মায়া হলো। এই মায়ায় পড়েই সে প্রতিবার গলায় ফাঁ’স পড়ে মরতে মরতে বেঁচে যায়। তবুও মায়া ছাড়তে পারে না। দয়ার শরীর যে তার। তৃষাম তাকালো জায়ানের পানে অতঃপর বলল – কি বলবি বল।

– আমি বিয়ে করবো।

তৃষাম ভরকে গেল। চোখ দুটো বড় বড় আকার ধারন করলো। এতক্ষন জীবন ম’র’নে’র কথা বলে এখন বলছে বিয়ের কথা? এর মাথা টাথা খারাপ হয়েছে নাকি? এখন অব্দি তাদের পড়াশোনা শেষ হয়নি। এখনও এক বছরের মতো আছে কোর্স সম্পূর্ণ করতে। আর এই ছেলে কিনা এখনই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে? তৃষাম অবাক কন্ঠেই বলল – পাগল হয়েছিস তুই?

– এখনও হইনি তবে তোর বোনকে বিয়ে করতে না পারলে শীঘ্রই পাগল হবো।

তৃষাম চোখে হাসলো। একটু ক্ষেপিয়ে দিতে চাইলো জায়ানকে। মুখ বাঁকিয়ে সে শুধালো – পূর্বাশা শুধু আমার বোন না সম্পর্কে তোরও বোন হয়।

সাথে সাথেই তেতে উঠলো জায়ান। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – ও আমার হবু বউ। আর একবার ঐ বোন জাতীয় কোনো শব্দ মুখে আনবি তো তোর দাঁত ভেঙে ফেলবো।

পরক্ষনেই আবার নিজেকে সামলে নিল জায়ান। নরম কন্ঠে বলল – আমার এখন পূর্বাশাকে বিয়ে করা খুব প্রয়োজন।

– তো করবি কে বারন করেছে?

– তাহলে তুই বিয়ের জন্য ওর পরিবার ম্যানেজ করে দে।

তৃষাম চমকালো। সে ম্যানেজ করবে মানে কি? বিয়ে করবে জায়ান আর পূর্বাশা আর মাঝ খান থেকে পরিবার ম্যানেজ করাতে গিয়ে দুই চারটা চড় থাপ্পর খাবে সে? এ কাজ সে পারবে না, কিছুতেই না। তৃষাম তো প্রায় ভুলেই বসেছিল এ ব্যাটা তাকে ফাঁ’সি’র দড়িতে জুলাতে এসেছে। এই মুহূর্তে জায়ান আর পূর্বাশার বিয়ের ঘটকালি করা ছাড়া তার জন্য বিপজ্জনক আর কি হতে পারে? পড়াশোনা শেষ না করে তাও এই মুহূর্তে বাড়িতে নিজের না হোক অন্যের বিয়ের কথা তোলা মানেই তৃষামের বাবা জাহিদ চৌধুরীর শক্তপোক্ত হাতের ঠাস করে একটা থাপ্পর তার গালে পড়া। তৃষাম সাথে সাথে নাকোচ করে দিল জায়ানের কথা। তুতলিয়ে বলল – আআআআমি পারবো না।

– সাত দিনের জন্য হংকং ট্রিপ ফ্রী।

– তবুও পারবো না।

– এ মাসের তোর সব প্রজেক্টগুলো আমি সম্পূর্ণ করে দেব।

তৃষাম ভ্রু কুঁচকালো। জায়ানের পানে সুরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল – তুই আমাকে লোভ দেখাচ্ছিস?

– সেদিনের সেই রেস্টুরেন্টে তিন বেলা ফ্রী খাওয়াবো।

– আমি লোভী নই জায়ান।

– আমার আর পূর্বাশার বিয়ের পরই সুন্দর একটা মেয়ে খুঁজে যেভাবে হোক তোর বিয়েরও ব্যবস্থা করবো।

– কি করতে হবে বলে ফেল।

জায়ান বিস্তর হাসলো। যাক অবশেষে ছেলেটা মেনেছে তার কথা। এখন যত দ্রুত সম্ভব তৃষামকে দ্বারা নিজের কাজ হাসিল করে নিতে হবে। নয়তো পরে এই ব্যাটা আবার পাল্টি খেলে জায়গায় উল্টে পড়তে হবে। জায়ান দেরী করলো না আর। নিজের পরিকল্পনা খুলে বলল তৃষামকে। তৃষাম সবটা শুনে ভ্রু কুঁচকালো। সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকালো জায়ানের পানে অতঃপর বলল – এ কাজ তো তুইও করতে পারিস আমাকে কি প্রয়োজন।

জায়ান লাজুক হাসলো। মাথা চুলকে বলল – নিজের বিয়ের কথা নিজে এভাবে কিভাবে বলবো বলে তো। লাজ লজ্জা বলেও তো একটা কথা আছে।

তৃষাম সন্দেহ প্রকাশ করলো জায়ানের কথায়। সন্দিহান কন্ঠে সে বলল – তোর আবার লাজ লজ্জাও আছে? এতদিন জানতাম না তো।

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here