স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৪৭

0
297

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৪৭

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

তৃষাম সন্দেহ প্রকাশ করলো জায়ানের কথায়। সন্দিহান কন্ঠে সে বলল – তোর আবার লাজ লজ্জাও আছে? এতদিন জানতাম না তো।

জায়ানের দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। কিন্তু এই মুহূর্তে সে চেপে যাচ্ছে সব। ঐ যে তৃষামকে কাজে লাগবে। নয়তো এতক্ষনে ব্যাটাকে নিজের গম্ভীর কন্ঠের দুই চার বাক্য শুনিয়ে দিত অনায়াসেই। জায়ান কন্ঠ নরম করল আবার অতঃপর বলল – কাজটা করে দিবি কখন।

– ভেবে দেখি।

– ভেবে দেখি না এখনই করতে হবে।

তৃষাম ঢোক গিললো। আনমনেই হাত চলে গেল তার নিজের গালে। চীনে আসার আগে কিছু দিন একটু সে ঘুরঘুর করতেছিল পাশের বাড়ির মেয়েটার পিছনে। সেই অপরাধে জাহিদ চৌধুরীর হাতে দাবাং মার্কা থাপ্পর খেয়ে উল্টে পড়েছিল ইট পথরে গড়া মেঝেতে। এবার তো ঘটকালি। এই ঘটকালিতে হাত লাগালে তো তার জীবন নির্ঘাত তেজপাতা। তবে এবার অবশ্য একটা দিক ভালো রয়েছে। সে চীনে আছে , তার বাবা মোবাইলের ভিতর থেকে নাগাল পাবে না তার। সুতরাং থাপ্পরটা থেকে বাঁচলো। কিন্তু টাকা! তার বাবা তার গালে থাপ্পর না মারতে পারার শোকে যে টাকা পাঠানো বন্ধ করবে আর দুই দিন পর কলেজের সামনে বাটি হাতে বসতে হবে তৃষামকে তখন। মানতে হবে ছেলেটার কল্পনা শক্তি ভীষন প্রখর। এই যে ভিক্ষাবৃত্তির কল্পনা করতেই তৃষামের চোখের সম্মুখে ভেসে উঠলো সে ছেঁড়া ফাটা জামা কাপড় পড়ে একটা ভাঙা বাটি হাতে তারই কলেজের সম্মুখে বসে আছে। আর রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা জনমানবকে করুন কন্ঠে বলছে – আফা গো ও আফা দুইডা টাকা দিয়া যান। দুই দিন ধইরা কিছু খাই নাই।

চোখে সামনে এমন ভয়ংকর দৃশ্য ভেসে উঠতে আঁতকে উঠলো তৃষাম। শুকনো ঢোক গিললো কয়েকটা। আমতা আমতা করে জায়ানকে বলল – এত তাড়াহুড়া কিসের? ধীরে ধীরে বলি।

জায়ান অধৈর্য্য হলো। ব্যস্ত কন্ঠে বলল – বউ পালিয়ে যাচ্ছে না তবে বউকে পালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।

ভ্রু কুঁচকালো তৃষাম, প্রশ্ন করলো – মানে?

– কিছু না, আমার কাজটা করে দে।

– এখন তো প্রায় দুপুর। ফুপি নিশ্চই রান্নাবান্নায় ব্যস্ত, আঙ্কেলও তার কাজে ব্যস্ত। তার থেকে বরং রাতে ঠান্ডা মাথায় কল করবো।

জায়ান বুঝলো তৃষামের কথা। খুব একটা ভুল বলেনি ছেলেটা। এসব কথা কি আর এভাবে যখন তখন বলা যায়? এসব বলতে হয় ঠান্ডা মাথায়। জায়ান মেনে নিল তৃষামের কথা‌। ঠান্ডা কন্ঠেই বলল – আচ্ছা রাতে বলিস।

__________________________________

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যার দেখা মিলেছে। সূর্যের চকচকে আলোক রশ্মি বিদায় নিয়ে পুরো শহর ভরে উঠেছে অথচ তৃষামের দেখা নেই কোন। জায়ান অশান্ত ভঙ্গিতে পায়চারী করছে হোস্টেল কক্ষে। ছেলেটা কি তাহলে জায়ানকে বোকা বানিয়ে পালালো? নির্ঘাত তাই। নয়তো সেই সকালের দিকে তার সাথে কথা বলে কলেজের নাম করে যে বের হলো আর এলো না। জায়ান ফুঁসে উঠলো। একবার হাতের কাছে পেলে তৃষামের দফা রফা করে ছাড়বে সে। কতদিন আর গা ঢাকা দিয়ে থাকবে? ফিরতে তো তাকে হবেই। কলেজ আর হোস্টেল ছেড়ে যাওয়ার জায়গা আছে নাকি আর।

***

চারদিকে যানবাহন আর জনসমাগমে ভরপুর। তৃষাম হাঁটছে রাস্তার পাশ ধরে। হোস্টেলে ফিরতেও তার ভয় লাগছে। গেলেই আবার জায়ান আষ্টেপৃষ্ঠে ধরবে তাকে। ঐ ব্যাটার পাল্লায় পরে জায়ানেল কাজটা করবেও বলে স্বীকার করেছে। এখন না করেও তো উপায় নেই। অবশ্য জায়ান যা সে যদি না বলেও থাকে তাহলে সেই না কে হ্যা তে রুপান্তর করেই ছাড়বে। তৃষামের এখন মনে হচ্ছে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হলো জায়ানকে বন্ধু করা। তারপর বন্ধু ছিল যাই ছিল এখন আবার ভাই। এ কেমন অবিচার তার প্রতি? তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল ছেলেকা। আজ আর হোস্টেলে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিল সে। বাহিরে হোটেলেই কাটিয়ে দিবে আজ রাতটা ভেবে নিল। কি একটা অবস্থা, ঐ ব’জ্জা’ত’টা’র জন্য তাকে এখন হোস্টেল রেখে হোটেলে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু কাল? কাল কি করবে সে? কাল তো হোস্টেলে ফিরতেই হবে। পরক্ষনেই তৃষামের মনটা আবার বলে উঠলো “ধুরও কাল কি হয় কাল দেখা যাবে, আজ তো শান্তিতে থাকা যাক।” যেমন ভাবনা তেমন কাজ। আশেপাশের অনেকটা হোটেল খুঁজে খুঁজে একটা হোটেল পছন্দ হলো তার। অবশ্য পছন্দ বলতে দামে পছন্দ হয়েছে। এখানে এক রাত থাকা খাওয়ার খরচ খুবই কম। আচ্ছা এত কম খরচ কেন? বোধগম্য হলো না তৃষামের। অতটা চিন্তা ভাবনাও সে করলো না। কম খরচ ভালোই হয়েছে। প্রয়োজনে আরও দুই চারটা দিন এখানে শান্তিতে গা ঢাকা দেওয়া যাবে। হোটেল ম্যানেজারের থেকে চাবি নিয়ে নিজ কক্ষে গেল তৃষাম। কক্ষে ঢুকে আশেপাশে তাকালো। নাহ একদম খারাপ না কক্ষটা। দামের তুলনায় বেশ ভালোই। পিঠে ঝুলানো ব্যাগটা হোটেল কক্ষের বিছানার উপরে রাখলো। অতঃপর ঢুকে গেল ওয়াশ রুমের মধ্যে। বাহ ওয়াশ রুমে দেখছি আবার বাথরোব ও আছে। বেশ অনেক্ষণ ধরে গরম পানিতে গোসল করলো তৃষাম। আহ কি শান্তি। এমন শান্তি দুই চার বছরে পেয়েছে বলে মনে হয় না। হোস্টেলে ঐ টুকু বাথরুমে কোনো রকমে গোসল করতে হয়। গোসল করে ওয়াশ রুম থাকা বাথরোবটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে, ধপ করে শুয়ে পড়লো নরম বিছানায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিল ছেলেটা।

____________________________________

মধ্যরাত, চারদিকে নীরব নিস্তব্ধতায় ঢাকা। কোলাহল পূর্ণ শহরটা একদম শান্ত এই মুহূর্তে। হয়তো চারপাশের লোকজন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাই। তৃষামও গভীর ঘুমে মগ্ন এই মুহূর্তে। এই শান্তিময় ঘুমের মধ্যে হঠাৎ দরজায় টোকা দিল তৃষামের। একবার দুইবার তিনবার অনাবরত দরজা ধাক্কাচ্ছে তারা। ঘুমের মধ্যেই বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে ফেললো তৃষাম। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো ছেলেটা। ঢুলু ঢুলু পায়ে এগিয়ে গেল দরজার কাছে। দরজাটা খুলতেই যেন চমকে উঠলো তৃষাম। তার সম্মুখে বেশ কয়েকজন পুলিশ দাঁড়ানো। একি এরা এখানে কেন? তাও এত রাতে এসে তার কক্ষের দরজা ধাক্কাচ্ছে। তৃষামের চোখে জড়ানো ঘুম ভাবটা উবে গেল নিমেষেই। ফাঁকা ঢোক গিলে শুধালো – আপনারা!

পুলিশগুলো পাত্তা দিল না তৃষামের কথায়। সবার সম্মুখে থাকা পুলিশটা চাইনিজ বাক্যে বলল – এটাকেও ধরে নিয়ে চল।

হকচকালো তৃষাম। সে কি এমন করেছে যার জন্য তাকে পুলিশ ধরে নিবে? হায় কপাল জায়ানের ভয়ে হোস্টেল ছেড়ে হোটেলে উঠলো। এখানে এসেও অশান্তি। কিন্তু এরা তাকে ধরে নিয়ে যেতে চাইছে কেন? তৃষাম অবাক কন্ঠেই বলল – আমাকে কেন ধরে নিয়ে যাবেন?

পুলিশ কোনো উত্তর দিল না তৃষামের কথার। উল্টো কক্ষে ঐ বাথরোব পড়ানো অবস্থাতেই তাকে টেনে হিচড়ে বাইরে নিয়ে এলো। তৃষাম কতবার চেঁচিয়ে তাকে ছাড়তে বলল কিন্তু পুলিশ তাকে ছাড়লো না। হোটেলের বাইরে আসতেই তৃষাম লক্ষ্য করলো তার মতো আরও কিছু ছেলে মেয়েকে ধরে আনা হয়েছে, সাথে হোটেল ম্যানেজার আর স্টাফকেও। তৃষামের আর বুঝতে বাকি রইলো না এই হোটেল কোনো অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত। আর এর জন্যই এত স্বল্প খরচে এখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সেই স্বল্প খরচের লো’ভে তৃষাম এবার চ্যাল চ্যালিয়ে জে’লে যাবে। তৃষাম একবার শেষ চেষ্টা করলো। নিজের স্বপক্ষে পুলিশকে বলল – স্যার আমি কিছু করিনি। আমি শুধুমাত্র এখানে থাকতে এসেছিলাম। আমি ভিনদেশী, এদেশে পড়তে এসেছি শুধু।

এরপরও পুলিশ শুনলো না তৃষামের কথা। টেনে হিচড়ে তুললো তাকে পুলিশের গাড়িতে। গাড়িতে উঠতে উঠতে তৃষাম আবার বলল – স্যার আমাকে অন্তত বাথরোবটা পাল্টে আসতে দিন। তারপর সেখানে নিয়ে যাবেন যাব।

পুলিশ প্রধান যেন তৃষামের উপর বিরক্ত হলো বেশ। একটা ধমক দিল তাকে। গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল – আর একটা কথা বললে একদম সারাজীবনের মতো জে’
লে পুরে দেব।

তৃষাম চুপসে গেল। বলল না আর কিছুই। ঐ বাথরোব পড়া অবস্থাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হলো পুলিশ স্টেশনে। স্টেশনে নিয়েই পুরে দেওয়া হলো তাকে জে’লে। একটু শান্তির জন্য হোটেলে গিয়ে কিনা আজকে জে’লে’র হাওয়া খেতে হচ্ছে। তৃষামের এই মুহূর্তে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এখন কি করবে সে? কিভাবে ছাড়া পাবে এখান থেকে। তার মোবাইলটাও তো পড়ে রয়েছে হোটেলে। পুলিশ কিছুই আনতে দেয়নি। মোবাইলের কথা মনে পড়তেই তৃষামের মনে পড়লো কিছু একটা। জে’লে’র গ্রীলের পাশে দাঁড়ানো পুলিশকে ডেকে তৃষাম বলল – আপনার মোবাইলটা একটু দিবেন স্যার?

এতগুলো পুলিশের মধ্যে এই একটা পুলিশ বোধহয় একটু ভালো পড়লো। সে নিজের মোবাইলটা এগিয়ে দিল তৃষামের দিকে। ছেলেটা মোবাইল পেতেই হন্তদন্ত হয়ে কল লাগালো জায়ানকে।

জায়ান ঘুমাচ্ছিলো। হঠাৎ তীব্র বেগে কানের কাছে মোবাইলটা বেজে ওঠায় বিরক্ত হলো সে। বালিশের পাশ হাতরে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো অপরিচিত নাম্বার। এত রাতে অপরিচিত নাম্বার দিয়ে আবার কে কল করছে? প্রথমবার ধরলো না জায়ান। কিন্তু এ লোক তো কল করা থামাচ্ছে না। কল দিয়েই যাচ্ছে একের পর এক। শেষে অনেকটা বিরক্ত হয়েই কলটা ধরলো জায়ান। মুখ খুলে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে শোনা তৃষামের কন্ঠস্বর। হন্তদন্ত হয়ে ছেলেটা বলল – ভাই আমাকে বাঁচা।

জায়ান ভ্রু কুঁচকালো। তার থেকে বাঁচতেই তো ছেলেটা গা ঢাকা দিয়েছিল। এখন কি আবার হলো যে কল করে এতটা ব্যাকুল কন্ঠে বলছে বাঁচাতে। বরাবরের মতোই গম্ভীর কন্ঠে জায়ান বলল – কি হয়েছে?

– বিশাল কাহিনী ভাই। অতকিছু বলার সময় নেই তুই তাড়াতাড়ি পুলিশ স্টেশনে চলে যায়।

কথাটা বলেই কল কাটলো তৃষাম। জায়ান চমকালো, এত রাতে ছেলেটা কল করে কেন পুলিশ স্টেশনে যেতে বলছে? থম মেরে কতক্ষন চেয়ে রইলো সে মোবাইলের পানে অতঃপর উঠলো বিছানা ছেড়ে। শরীরের টিশার্ট আর ট্রাউজার ছেড়ে শার্ট প্যান্ট পড়ে নিয়ে বেরিয়ে এলো কক্ষ থেকে। অনেক কষ্টে হোস্টেল কতৃপক্ষকে বুঝিয়ে শুনিয়ে হোস্টেলের বাইরে বেরুতে সক্ষম হলো। কলেজ থেকে পুলিশ স্টেশন খুব বেশি দূরে না হওয়ায় হেঁটে হেঁটেই পুলিশ স্টেশনে পৌঁছালো জায়ান। একজন নিম্ন পদে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করে গেল দারোগার কক্ষে। বেশ বিনয়ী কন্ঠে তাকে বলল – স্যার এখানে তৃষাম আছে?

দারোগা বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে তাকালো জায়ানের পানে অতঃপর বলল – একটু আগে হোটেল থেকে তুলে এনেছি ওটাকে।

জায়ান বরাবরের মতোই শান্ত। হোটেল শুনে খুব একটা চমকালো না সে। স্বাভাবিক কন্ঠেই শুধালো – কি কারনে স্যার?

দারোগা সব ঘটনা খুলে বলল। জায়ান মনযোগী হয়ে শুনলো সবটা অতঃপর বলল – আমি একটু ওর সাথে দেখা করতে পারি স্যার?

দারোগা অনুমতি দিল জায়ানকে। একজন পুলিশ সদস্য তাকে নিয়ে গেল জে’লে’র কাছে। জায়ানকে দেখেই বাথরোব পড়া তৃষাম ছুটে এলো তার পানে। ব্যগ্র কন্ঠে শুধালো – তুই এসেছিস ভাই। প্লীজ আমাকে এখান থেকে বের কর ভাই।

তৃষামের এই অবস্থা দেখে বড্ড হাসি পেল জায়ানের। তবে সে হাসলো না। এই অবস্থায় নিশ্চই হাসাটা দৃষ্টিকটু। অনেক কষ্টে নিজের হাসি চাপিয়ে জায়ান বলল – বের করতে পারি তবে আমার শর্ত আছে একটা।

_____

[ Note : তাড়াহুড়োতে রিচেক করার সুযোগ পাইনি আর পর্বটিতেও হয়তো একটু অগোছালো হয়েছে। আপনারা আজ একটু কষ্ট করে পড়ে নিয়েন।]

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here