স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৫১

0
451

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৫১

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

হকচকালো মেয়েটা, একি বাসর ঘরে ঢুকেই কোনো কথা না বার্তা না জামা কাপড় খুলে ছোড়াছুড়ি শুরু করেছে কেন ছেলেটা? তবে কি এ এসেই অ্যাকশনে নেমে যাবে? ঢোক গিললো পূর্বাশা। হৃদয়ে অজানা আশঙ্কার সঞ্চার হলো মেয়েটার। পূর্বাশা নিজের বাড়ানো পা জোড়া আবার গুটিয়ে নিল। ঢোক গিলে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জায়ানের পানে। কি করতে চাইছে কি ছেলেটা? জায়ান লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেল পূর্বাশার দিকে, ধপ করে বসলো বিছানায় মেয়েটার পাশে। কেঁপে উঠলো পূর্বাশা। আড় চোখে একবার জায়ানকে পরখ করে নিজের স্থান থেকে একটু সরে বসলো। জায়ান দেখলো তা, কোনো কথা বার্তার আদান প্রদান না ঘটিয়েই হুট করে সে ধরলো পূর্বাশার হাত, টেনে তুলে বসালো তার কোলে। চকিত হলো পূর্বাশা। কন্ঠ থেকে কোনো শব্দ বের করার আগেই শক্ত করে জায়ান জড়িয়ে ধরলো মেয়েটাকে, অস্থির ভঙ্গিতে মুখ গুজলো তার ঘাড়ে। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল পূর্বাশার। নিজ অঙ্গে কোনো পুরুষের এত গভীর স্পর্শে ঝড় উঠলো মেয়েটার বক্ষস্থলে। অজানা অদ্ভুত এক শিহরণে শিউরে উঠলো পূর্বাশার সর্বাঙ্গ। অস্বস্তিতে আসফাস করে উঠলো মেয়েটা। আমতা আমতা করে বলল – কি করছেন কি ছাড়ুন আমাকে।

জায়ান ছাড়লো না পূর্বাশাকে। বরং আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল – এত কথা বলো না তো, আগে আমার হৃদয় শান্ত করতে দাও।

ভ্রু কুঁচকালো পূর্বাশা। এভাবে সা’পে’র মতো পেঁচিয়ে ধরে আবার হৃদয় ঠান্ডা হবে কিভাবে? পূর্বাশা ক্ষানিকটা অবাক কন্ঠেই বলল – মানে?

জায়ান আরও গাঢ়ভাবে মুখ ডুবালো পূর্বাশার ঘাড়ে। মৃদু কন্ঠে বলল – এই যে এতদিন তোমার থেকে দূরে ছিলাম হৃদয়টা অশান্ত হয়ে ছিল বড্ড। আজ তোমায় বুকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে তোমায় বুকে জড়িয়ে হৃদয়টা এখন ঠান্ডা, শীতলতা আর প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছে।

পূর্বাশা বলতে চাইলো কিছু কিন্তু জায়ান মুখ বন্ধ করলো তার। আলতোভাবে কামড় দিল মেয়েটার ঘাড়ে। শিউরে উঠলো পূর্বাশা। কন্ঠে কোনো শব্দ তোলার পরিবর্তে কন্ঠ রোধ হলো তার। চোখ মুখ খিচে খামচে ধরলো জায়ানের উদম বাহু। ছেলেটা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিল নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর সকল আঘাত। বেশ কিছুক্ষণ পূর্বাশার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিল জায়ান। অতঃপর ছেড়ে দিল মেয়েটাকে। নাক মুখ কুঁচকে বলল – তোমার এই ভারী পোশাক আর গহনায় খোঁচা লাগছে আমার শরীরে, পাল্টে এসো তাড়াতাড়ি।

পূর্বাশা চেয়ে দেখলো। সত্যিই তার পোশাকের চুমকি, পাথর আর গহনার খোঁচায় লাল লাল দাগ পড়ে গেছে জায়ানের ফর্সা বক্ষস্থল জুড়ে। দুই বাহুতেও নখের দাগ স্পষ্ট। মনে মনে খারাপ লাগলো পূর্বাশার তবে প্রকাশ করলো না সে। মুখ বাঁকিয়ে বলল – আমি তো পাল্টেই আসতাম আপনি আর সেই সুযোগ দিলেন কই। রুমে ঢুকেই পাঞ্জাবী খুলে এদিকে ছুঁড়ে মে’রে’ছে’ন, জুতা খুলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারপরে বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এসে জড়িয়ে ধরলেন।

জায়ান ভ্রু কুঁচকালো। কপালে ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন করলো – তোমাকে জড়িয়ে ধরতে আমাকে আগে থেকেই বলে কয়ে নিতে হবে?

– অবশ্যই।

– কোনো দিন না। আমি দুটো জিনিসে কখনও বলে কয়ে বা তোমার থেকে অনুমতি নিতে পারবো না। প্রথমটি হলো জড়িয়ে ধরায় আর দ্বিতীয়টি হলো চু’মু খাওয়ায়। আমার যখন ইচ্ছে হবে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো আর যখন ইচ্ছে হবে চু’মু খাবো, বুঝেছো?

এইটুকু বলে থামলো জায়ান। অতঃপর আবার বলল – যাও এখন ফ্রেশ হয়ে এসো।

তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল পূর্বাশা। এবার সে মা চাচিদের শিখানো নিয়মগুলোর চর্চা করতে চাইলো। সে নম্র কন্ঠে সালাম জানালো জায়ানকে, বলল – আসসালামুয়ালাইকুম।

– ওয়ালাইকুমুস সালাম।

সালামের উত্তরটা স্বাভাবিকভাবে দিলেও কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকালো সে অতঃপর বলল – হঠাৎ সালাম করলে যে?

– এটা নিয়ম।

পূর্বাশার স্বাভাবিক কন্ঠ। জায়ান নিজের ভ্রুদ্বয় কুঁচকে রেখেই বলল – কেমন নিয়ম?

– বাঙালি মুসলিম দম্পতিদের প্রথম রাতে অর্থাৎ বাসর রাতে ঘরে স্বামী প্রবেশ করলেই প্রথমে নাকি স্ত্রীকে তাকে সালাম করতে হয়। তারপর দুজনে ওযু করে নামাজের মাধ্যমে নতুন জীবন সূচনা করতে হয়।

জায়ান নিজের পা জোড়া দ্রুত এগিয়ে দিল পূর্বাশার পানে অতঃপর বলল – নাও সালাম করো।

পূর্বাশা চোখ দ্বয় ছোট ছোট করে তাকালো জায়ানের পানে তবে মুখে কিছু না বলে সালাম করে নিল। অতঃপর জায়ান নিজের পা দুটো সরিয়ে নিয়ে বলল – আচ্ছা এখন ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসো তাহলে নামাজ পড়বো আমরা।

পূর্বাশা কথা বাড়ালো না আর। ও বাড়ি থেকে আসার সময়ে সাথে করে আনা লাগেজটা খুঁজে একটা নরম থ্রী পিস বের করে নিয়ে তা নিয়ে ঢুকলো ওয়াশ রুমের ভিতরে। কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে। পূর্বাশা বেরিয়ে আসতেই জায়ান ঢুকলো ওয়াশ রুমে, ফ্রেশ হয়ে টিশার্ট শরীরে জড়িয়ে ওযু করে বেরিয়ে এলো। ততক্ষণে পূর্বাশাও পাশাপাশি দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে দিয়েছে। জায়ান এসেই নামাজে দাঁড়ালো, পূর্বাশাও তার সাথে সাথেই দাঁড়ালো পাশের জায়নামাজে। দু’জনে একসাথে নামাজ সম্পূর্ণ করে যার যার জায়নামাজ ভাজ করে গুছিয়ে বিছানায় এসে বসলো। জায়ান নিজের পকেট থেকে দুটো কাপল রিং বের করলো আস্তে ধীরে। পূর্বাশার হাত ধরে একটা রিং পড়িয়ে দিল মেয়েটার অনামিকা আঙ্গুলে। অন্যটাও তার হাতে দিয়ে বলল – আমার হাতে পড়িয়ে দাও।

পূর্বাশা দ্বিরুক্তি করলো না কোনো বাধ্য মেয়ের মতো পড়িয়ে দিল আংটিটা। জায়ান কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে নিজের হাতটা উল্টে পাল্টে দেখলো অতঃপর শুয়ে পড়লো বিছানায়। পূর্বাশা এখনও বসে রয়েছে বিছানার এক কোনে। মনের ভিতরে তীব্র অস্বস্তিবোধে নিয়ে দেখছে আশপাশটা সে। সে কোথায় ঘুমাবে? স্বামীর পাশেই তো স্ত্রীর ঘুমানোর নিয়ম। যেহেতু সে বিয়ে করেছে জায়ানকে সেহেতু তার পাশেই তো ঘুমানো উচিৎ তার। তবুও কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে পূর্বাশার। যতই স্বামী হোক না কেন এভাবে হঠাৎ একজন পুরুষের পাশে ঘুমানোতে একজন নারীর অস্বস্তি হওয়াটা স্বাভাবিক। পূর্বাশা ঢোক গিললো, মনের মধ্যে অস্বস্তি নিয়েই শুয়ে পড়লো জায়ানের পাশে। তবে তাদের মধ্যে অনেকটা ফাঁকা স্থান এখনও বিদ্যমান। পূর্বাশা বিছানায় শুতেই সে ফাঁকা স্থান মিটিয়ে দিল জায়ান। একটু এগিয়ে ঘনিষ্ট হলো সে মেয়েটার সাথে। পিছন দিক থেকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল পূর্বাশাকে। কেঁপে উঠলো মেয়েটা। ভয়, লজ্জা, সংকোচের এক মিশ্র অনুভূতিতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে সে। ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেও ঘুম আসলে তো। এভাবে যদি পিছন থেকে কোনো পুরুষ জড়িয়ে রাখে তবে ঘুম আসবে আর কি করে? পূর্বাশা হাঁসফাঁস শুরু করলো, হাসলো জায়ান। পূর্বাশার সাথে আর একটু ঘনিষ্ট হয়ে শুধালো – কি সমস্যা ঘুমাচ্ছো না কেন? নিশ্চই বাসর রাত নিয়ে চিন্তা করছো যে তোমার স্বামী আদর না করে ঘুমাচ্ছে কেন তাই না?

পূর্বাশা চুপ রইলো। মোড়ামোড়ি শুরু করলো জায়ানের বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু পারলো না, জায়ান মুখ গুজলো পূর্বাশার ঘাড়ে। মোহিত কন্ঠে বলল – চিন্তা করো না কৃষ্ণময়ী। চীনে পৌঁছে আমি একটুও অপেক্ষা করবো না যেদিন পৌছাবো সেদিনই বাসর সেড়ে ফেলবো।

কথাটা বলে একটু থামলো জায়ান আবার বলল – সমস্যা হলো কি এখানে বসে আবার কাল সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হবে। আমার আবার সারারাত বাসর সেড়ে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা পোষাবে না তাই বাসরটা আপাতত স্থগিত করে রাখলাম।

পূর্বাশার লজ্জা বাড়লো। ছেলেটা বাসর করবে না অথচ লজ্জা দিচ্ছে তাকে ঠিকঠাক মতো। পূর্বাশা আর বলল না কিছুই, নড়লোও না একটু। চুপচাপ ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো বিছানায়।

__________________________________

মধ্যরাত, চারদিকে নীরব নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে। ব্যস্ত শহরটা এই সময়ে শান্ত নীরব বেশ। দিনের আলোয় চলতে থাকা যানবাহনের শব্দ বা কোলাহল শোনা যাচ্ছে না কোনো হয়তো ঘুমিয়ে গেছে সবাই। সারাদিনের কার্যকলাপে ক্লান্তিভরা শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়। কিন্তু এই মধ্যরাতে ঘুমহীন দুই চোখ নিয়ে ছাদের ইট পাথরে পড়া এবারো থোবরো মেঝেটে শুয়ে আছে নক্ষত্র। এক হাত মাথার নিচে রেখে দৃষ্টিতে আকাশের পানে। কি সুন্দর গোল থালার মতো রূপালী এক চাঁদ আজ স্থান করে নিয়েছে আকাশের মধ্যভাগে। নিজের স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে ভরিয়ে তুলেছে প্রাকৃতিতে। এই স্নিগ্ধ আলো গায়ে মেখেই নক্ষত্রের ভালোবাসার মানুষটি হয়তো আজ অন্য কারো বক্ষে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। হৃদয়টা হু হু করে উঠলো ছেলেটার। নিজের একটা ভুলের কারনে যে সে এত বড় একটা শাস্তি পাবে কখনও কল্পনাও করেনি। নিজের একটা শুধুমাত্র একটা ভুলের কারনে আজ নিজের ভালোবাসা, সুখ, শান্তি সব হারিয়েছে সে। দু চোখ গড়িয়ে অশ্রু বিন্দুর আভাস মিললো নক্ষত্রের। সে তো আজ যায়নি পূর্বাশার বিয়েতে, নিজের চোখে দেখেনি পূর্বাশাকে অন্যকারো হতে তবুও যেন হৃদয়ের পীড়া কমছে না একটুও। ক্ষনে ক্ষনে তার বৃদ্ধি ঘটছে। নক্ষত্রের মা বাবা অনেক জোরাজুরি করলেও নিজের শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে আজ সে বাড়িতেই থেকে গেছে। আচ্ছা কি এমন হতো পূর্বাশা ঐ ভুলটা ক্ষমা করে দিয়ে তার হয়ে গেলে? হয়তো তবে সে একটু শান্তি পেত। নিজের ভালোবাসা হারানোর পীড়ায় এভাবে দহনের আগুনে জ্বলতে হতো না। নক্ষত্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আকাশের ঐ উজ্জ্বল চাঁদটার পানে। ধরা গলায় বলল – তোমার অভিশাপটা ফলতে আর পরঃজন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো না পূর্বা এ জন্মেই পূরণ হয়ে গেল। এই দেখো আজ আমি তোমার অবস্থানে, নিজের বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে কেমন নিথর হয়ে পড়ে রয়েছি। আচ্ছা পরঃজন্ম বলে কি সত্যিই কিছু আছে? হয়তো নেই, যদি থাকতো তবে কেন পরঃজন্মের উদ্দেশ্যে দেওয়া তোমার অভিশাপ এই জন্মেই আমাকে আঘাত করলো? এই জন্মে তো আমি অন্তত তোমাকে পেতে পারতাম।

_______________________________________

স্বার্থপর সময় বয়ে চলছে নিজের গতিতে। এরই মধ্যে গোটা একটা দিন কেটে গেল। আজ পূর্বাশার বউ ভাত। ওবাড়ি থেকে এ বাড়িতে লোকজন আসবে। ইতমধ্যেই পূর্বাশাকে সাজানো শুরু করে দিয়েছে। আর নিজেদের বাড়ির গেটের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তৃষাম অপেক্ষা করছে সেই গায়ে হলুদের দিন তাকে এবং চ্যাংকে কাঁদায় ফেলে দেওয়া মেয়েটিকে। সেদিনকার ওমন একটা অসম্মানের প্রতিশোধ যদি সে না নিতে পারে চীনে গিয়েও শান্তি পাবে না। জায়ানের বিয়ের দিনও ঐ মেয়েটার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার অনেক ইচ্ছে ছিল তার কিন্তু জুতো রেখে প্রতিশোধ নিতে ওঠার সাহস করতে পারেনি সে। আজ দেখা যাবে, মেয়েটাকে আজ নাকানিচোবানি না খাইয়ে যদি ছেড়ে দিয়েছে তবে তার নামও তৃষাম না।

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here