#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৫৩
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
[ প্রাপ্তবয়স্ক বা মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত ]
ব্যস্ত শহরের কোলাহল কমেনি এখনও। ঐ তো যানবাহনের তীব্র প্যা পো ধ্বনি শোনা যাচ্ছে এখনও। পূর্বাশা আর জায়ান রাতের খাবার সেড়ে ফেলেছে একটু আগেই। স্বামী স্ত্রী হাতে হাতে থালা বাসন সব ধুয়ে গুছিয়ে এসে বসলো টিভির সম্মুখে। পূর্বাশা টিভির রিমোর্টটা নিয়ে টিভি অন করতেই জায়ান একটু গা ঘেঁষে বসলো মেয়েটার পাশে। পূর্বাশা শিউরে উঠলো একটু। জায়ান আর তার মধ্যকার দূরত্ব বাড়িয়ে সে সরে বসলো একটু। জায়ানের যেন পছন্দ হলো না সে দূরত্ব। আবারও তার এবং পূর্বাশার মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে ছেলেটা গা ঘেঁষে বসলো স্ত্রীর। পূর্বাশা আবারও সরে বসতে চাইলো। স্বামীর সাথে দূরত্ব বাড়াতে উদ্যত হতেই জায়ান নিজের হাত বাড়িয়ে চেপে ধরলো মেয়েটার পাতলা নরম সুডৌল কোমড় খানা। কেঁপে উঠলো পূর্বাশা। হৃদপিন্ডটাও যেন লাফিয়ে উঠলো মুহুর্তে। ঢোক গিললো পূর্বাশা। তুতলিয়ে বলল – কককি করছেন কি? টিভি দেখছি তো।
জায়ান হাসলো। শক্ত হাতে পূর্বাশার কোমড় চেপে তাকে তুলে নিল নিজের কোলে। এক হাতে কোমড় চেপে এবং অন্য হাতে থুতনি ধরে পূর্বাশার মুখটা ফিরিয়ে নিল জায়ান নিজের পানে। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল – টিভি দেখতে হবে না তোমাকে। তুমি শুধু আমাকে দেখো।
পূর্বাশা এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। আড়ষ্ঠ কন্ঠে বলল – আপনাকে কেন দেখবো? আপনি কি কোনো দেখার বস্তু নাকি?
– আমি শুধুমাত্র তোমার জন্য দেখার, ভালোবাসা এবং আদরের বস্তু কিংবা মানব যা তুমি মনে করো।
পূর্বশা আড়ষ্ঠ হলো। হৃদস্পন্দনের গতিও তার অস্বাভাবিক। বিদ্যুৎ এ স্পৃষ্ট ব্যক্তির ন্যায় যেন থেকে থেকে কেঁপে উঠছে মেয়েটা। অজানা অদ্ভুত এক অনুভূতি যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে মেয়েটাকে। পূর্বাশা নিজেকে ছাড়াতে চাইলো জায়ানের বন্ধন থেকে। ইতস্তত কন্ঠে বলল – ছাড়ুন।
জায়ান ছাড়লো না। বরং আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো পূর্বাশাকে। মেয়েটার গলায় আলতো একটা কামড় দিয়ে বলল – ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি?
জায়ানের স্পর্শ গভীর হলো। অল্প সময়ের ব্যবধানেই বেশামাল করে তুললো মেয়েটাকে। পরম আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে খামচে ধরলো জায়ানের দুই বাহু। ছেলেটা আলতোভাবে কামড় দিল পূর্বাশার কানের নরম লতিতে। ঘোর লাগা কন্ঠে বলল – আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না কৃষ্ণময়ী। অনুমতি দিলে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতেও চাইছি না।
পূর্বাশা নাজুক দৃষ্টিতে তাকালো, বুঝলো সে স্বামীর হৃদয়ের আকুলতা। ছেলেটাকে কম অপেক্ষা তো করায়নি সে। বিয়ের পরও এতদিন জায়ান নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রয়েছে, পূর্বাশার উপরে জোর খাটায়নি কোনো। জায়ান স্বামী তার। তার উপরে সম্পূর্ণ অধিকার আছে ছেলেটার। পূর্বাশা উপেক্ষা করতে পারলো না জায়ানের আবদার। লাজুকভাবে মাথা রাখলো জায়ানের বক্ষে। জায়ান বুঝে নিল প্রিয়তমার উত্তর। ঠোঁট এলিয়ে হাসলো সে অতঃপর পূর্বাশাকে কোলে তুলে নিয়েই উঠে দাঁড়ালো। লম্বা লম্বা পা ফেলে ঢুকলো বেডরুমে। বেডরুমে বিছানো বড় লম্বা বিছানাটায় খুব সাবধানে শুইয়ে দিল জায়ান তার প্রিয়তমাকে। হাত তুলে নিজের ফর্সা শরীর থেকে টিশার্টটা খুলে ছুঁড়ে ফেললো মেঝেতে অতঃপর নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিল পূর্বাশার শরীরের উপরে। মুখ ডুবালো মেয়েটার গলায়। ছোট ছোট চুম্বনে উন্মাদ করে তুললো মেয়েটাকে। অন্ধকার, চার দেওয়ালে আবদ্ধ ঘরটা ভরে উঠছে দুজন নর নারীর ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে। এতদিন পরে আজ যেন পূর্নতা পেল দুটি হৃদয়, দুজন মানবের ভালোবাসা। দুজন মিলে পাড়ি দিল নতুন এক অধ্যায়।
______________________________________
মধ্যরাত, চারদিক নীরব নিস্তব্ধতায় ঢেকে গেছে। রাত্রির প্রথম ভাগে যে যানবাহনের কোলাহলের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো এখন আর শোনা যাচ্ছে তা। হয়তো সকলে যার যার কর্মের সমাপ্তি ঘটিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। শুধুমাত্র ঘুম নেই জায়ান এবং পূর্বাশার চোখে। জায়ান আধশোয়া হয়ে শুয়ে রয়েছে বিছানায় আর তার নগ্ন বক্ষে এলোমেলো চুলে স্থান করে নিয়েছে পূর্বাশা নামক রমনী। কক্ষজুড়ে পিনপতন নীরবতায় ঘেরা। বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে নিজেদের মধ্যাকার নিস্তব্ধতা ভাঙলো পূর্বাশা। কিছুটা উৎসুক কন্ঠে বলল – একটা প্রশ্ন ছিল।
জায়ান একটু ঝুঁকে চুমু খেল পূর্বাশার চুলের ভাঁজে অতঃপর বলল – কি?
– যে মেয়েটা আপনার চোখের বি’ষ ছিল, যাকে দেখতে পারতেন না একদম, কখনও কটু কথা বলতে ছাড়তেন না। পারলে তো দুই চার ঘা লাগিয়ে দিতেন সেই মেয়েকে এত ভালোবাসলেন কিভাবে?
জায়ান স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল – আমি নিজেও জানি না।
পূর্বাশা ভ্রু কুঁচকে শুধালো – কেন জানেন না?
জায়ান কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে ভাবলো। ভাবুক ভঙ্গিতেই বলল – আচ্ছা একটা কথা বলো তো।
– কি?
– আমি যদি তোমাকে চীনে আসার পরে প্রতিনিয়ত ওভাবে অপমান না করতাম, ওভাবে কষ্ট না দিতাম তবে কি তুমি শক্ত হতে পারতে? আজ যেমন মানুষ তোমাকে কোনো কটু বাক্য শোনালে শুদ্ধ বাক্যে তুমি জবাব দিতে পারো তখন তুমি দিতে পারতে? তোমার প্রথম জবাব দেওয়াটা কিন্তু আমার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল। আমাকে ঐ দিন পার্কেই কিন্তু প্রথম জবাব দিয়েছিলে তুমি।
পূর্বাশা মুখ তুললো জায়ানের বক্ষ থেকে। বড় বড় চোখ করে বলল – তবে কি আপনি আমাকে শক্ত করার জন্যই খারাপ ব্যবহার করতেন?
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল জায়ান। পূর্বাশাকে দুই হাতে আগলে নিয়ে বলল – সত্যি বলতে তেমন কোনো চিন্তা ভাবনা তখন আমার মধ্যে ছিল না। তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার পর থেকেই তোমার প্রতি আমি অন্যরকম একটা টান অনুভব করছিলাম। এদিকে নিজের বাবার প্রতি ঘৃ’না থেকে বাঙালি জাতির প্রতিই হৃদয়ে তীব্র এক বিদ্বেষ জন্মেছিল। না পারছিলাম তোমাকে হৃদয়ে স্থান দিয়ে গ্রহন করতে আর না পারছিলাম দূরে সরিয়ে রাখতে। সব মিলিয়ে নিজেই কেমন এক উন্মাদের ন্যায় হয়ে উঠেছিলাম। আর সেই উন্মাদ অনুভূতি থেকেই তোমাকে অপমান করতাম, কষ্ট দিতাম। তবে এই তোমাকে কষ্ট দিয়ে নিজে শান্তি পাইনি কখনও বরং দিন দিন আরও উন্মাদ হয়ে পড়ছিলাম। শেষে নিজের অনুভূতিগুলো যখন একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলাম তখন বুঝলাম আমার তোমাকে চাই, ভীষণভাবে চাই। যদিও তারপরও নিজেকে আটকানোর আপ্রান চেষ্টা চালিয়েছি তবে আমি পারিনি। কারন তুমি যে ততদিনে পুরোপুরিভাবে ঘায়েল করে দিয়েছিলে আমাকে।
পূর্বাশা শুনলো জায়ানের সব কথা। হৃদয়টা যেন প্রশান্তিতে ভরে উঠলো তার। এত ভালোবাসা, এত সুখও তার কপালে ছিল? ঐ যে কথায় আছে না,
“রাতের গভীর অন্ধকারের পরে দিনের উজ্জ্বল আলোর দেখা মিলে আর শত কষ্টের পর সুখের দেখা মিলে।”
তেমনি এই জায়ানও তার সুখ। ছোট বেলা থেকে কষ্ট পেতে পেতে এই জায়ান নামক কঠিন এক সুখের দেখা মিলেছে তার। যে সুখের আবেশে আজ সিক্ত সে।
______________________________________
ভোরের আলো ফুটেছে। চারদিকটা উজ্জ্বল আলোয় ভরে উঠেছে। ব্যস্ত শহরটার ব্যস্ততা বেড়েছে তাও স্পষ্ট। তবে কি আজ ঘুম ভাঙতে একটু বেশিই দেরী হলো পূর্বাশার। ফজরের নামাজ আদায় করে জায়ানের সাথে বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিয়েছিল পূর্বাশা। যার দরুন উঠতে উঠতে এই এত দেরী। মেয়েটা পিটপিট করে চোখ দুটো খুললো নিজের, ঘুম ভেঙেই চোখের সম্মুখে দেখতে পেল জায়ানের ঘুমন্ত মুখশ্রী। কি সুন্দর বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে লোকটা। উসকোখুসকো চুল, ঘুম ঘুম মুখশ্রীতে জায়ানকে দারুন লাগছে। এই পুরুষ পূর্বাশার স্বামী ভাবতেই চিত্ত যেন শীতল হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার। পূর্বাশা আর একটু গভীরভাবে দেখলো জায়ানকে, ঘুমানোর দরুন নাকের আশেপাশে তেল জমেছে। সূর্যের আলোয় তা চিক চিক করছে। পূর্বাশা হাসলো, হৃদয়ে ভয়ংকর এক ইচ্ছে জাগলো তার। তবে আজ আর নিজের কোনো ইচ্ছেকে দমালো না মেয়েটা। তাছাড়া জায়ান এখন ঘুমে। এই সময়টাই তার ইচ্ছে চরিতার্থ করার মূল সময়। ছেলেটা জেগে থাকা অবস্থায় যদি নিজের ইচ্ছে পূরণে অগ্রসর হয় পূর্বাশা তবে নির্ঘাত লজ্জায় পড়তে হবে তাকে। তাই আর না ভেবে একটু ঝুঁকে চু’মু খেল জায়ানের উঁচু নাকে। চু’রি করে পালানোর ন্যায় চু’মু খেয়ে পালাতে গেলে নিজেকে আবিষ্কার করলো জায়ানের পুরুষালী হাতের শক্তপোক্ত বাঁধনে। পূর্বাশা আলতোভাবে নিজের কোমড় থেকে হাত সরালো জায়ানের অতঃপর ওয়াশ রুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে। ক্ষানিক সময় নিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে বিছানার পানে তাকিয়ে সে দেখলো জায়ান এখনও ঘুমে। পূর্বাশা আর তুললো না ছেলেটাকে ঘুম থেকে। সে বরং রান্না ঘরে ঢুকলো কিছু রান্না করতে। প্রতি বেলা কি আর খাবার অর্ডার করে করে খাওয়া যায় নাকি। কাল সন্ধ্যায় জায়ান মোটামোটি একটা বাজার করে এনেছিল। সেইগুলো দিয়েই বরং এখন রান্না বসিয়ে দেওয়া যাক।
***
জায়ানের ঘুম ভাঙলো প্রায় বেলা তখন ১১ টার দিকে। ঘুম ভাঙতেই সে চোখ বন্ধ করতেই হাত বাড়িয়ে পাশে খুঁজলো পূর্বাশাকে কিন্তু মেয়েটাকে পেল না সে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো জায়ান। মেয়েটা নিশ্চই তাকে রেখে ঘুম থেকে উঠে গেছে? তাহলে তাকে ডাকলো না কেন। পিট পিট করে চোখ খুললো জায়ান। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো পূর্বাশা রুমে আছে কিনা, না নেই কোথাও। ঘুমু ঘুমু চোখ মুখেই ফ্রেশ না হয়েই সে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ড্রইং রুম থেকেই রান্নাঘরে বাসন কোসনের আওয়াজ কর্ণে ভেসে এলো তার। সময় ব্যয় না করে জায়ান এগিয়ে গেল রান্নাঘরের দিকে, দেখলো পূর্বাশা রান্না করছে কি যেন। নিঃশব্দে ছেলেটা রান্নাঘরে ঢুকলো, হাত বাড়িয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো পূর্বাশাকে। ঘাড়ে মুখ গুঁজে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল – আমাকে রেখে উঠলে কেন?
জায়ানের স্পর্শে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো পূর্বাশা। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল – ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তো তাই।
– তাহলে আমাকে ডাকতে।
– আপনার ঘুমে বিরক্ত করতে চাইনি।
জায়ান পূর্বাশার ঘাড় থেকে মাথা তুললো। ঠোঁট উল্টিয়ে বলল – কিন্তু ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখতে না পেয়ে আমি বেশি বিরক্ত হয়েছি।
পূর্বাশা কথা ঘুরতে চাইলো। আমতা আমতা আরে বলল – ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।
জায়ান গেল না। পূর্বাশারা সাথে আর একটু ঘনিষ্ট হয়ে বলল – আগে আমি চুমু খাব তারপর অন্য কিছু।
পূর্বাশা মুখ বাঁকালো। ভেংচি কেটে বলল – ইস ছিঃ এখনও দাঁত ব্রাশ করেননি। আপনার বাসি মুখে আমি কখনওই চুমু খাব না।
জায়ান হালসো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল – কিন্তু আমি খাব। আর এটা আমাকে রেখে তোমার আগে আগে ঘুম থেকে ওঠার শাস্তি।
পূর্বাশা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো জায়ানের বাঁধন থেকে কিছু জায়ান তাকে ছাড়লো না। দুই হাতে মুখটা শক্ত করে ধরে জোরপূর্বক চু’মু খেল মেয়েটার কপালে, দুই গালে, নাকে, ঠোঁটে অতঃপর সিটি বাজাতে বাজাতে হেলেদুলে বেরিয়ে গেল রান্নাঘর থেকে।
চলবে…….
ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link