#তুমি_আছো_মনের_গহীনে
#পর্ব-১৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
সকালের মিষ্টি আলো মুখে পড়তেই,মেহেভীন নিজের হাত জোড়া আরহামের হাতের মুঠোতে আবিষ্কার করে। আরহাম ঘাড় কাত করে চেয়ারে বসে,ঘুমাচ্ছে মেহেভীনের হাত জোড়াটা শক্ত করে ধরে। মেহেভীন হাত দুটো ছাড়াতে নিলে,আরহাম আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে ঘুমাতে থাকে। মেহেভীন আরহাম এমন স্পর্শে কেমন যেন শরীরটায় আলাদা শিহরন বয়ে যাচ্ছে। মেহেভীন ঠোট ভিজিয়ে চারপাশ টা ভালো করে দেখে নেয়। সে এখন হসপিটালে রয়েছে,কিন্তু উদ্ভুদ বিষয় হলো মেহেভীন বুঝতে পারছে না সে এখানে কেন? কি হয়েছিলো তার সাথে। আরহাম মেহেভীনের হাতদুটো একেবারে এমনভাবে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে,যেন একটু হাল্কা করলেই মেহেভীন যেন পালিয়ে যাবে।মেহেভীনের এইবার অস্বস্হিতে পড়ে যাচ্ছে। মেহেভীনের ভাবনার মধ্যে ফোড়ন কেটে,একজন নার্স নক করে আসে। মেহেভীন এবং আরহামকে দেখে মুচকি হেসে বলে,
‘গুড মর্নিং ম্যাম। ‘
মেহেভীন ও কোনরকম গুড মর্নিং জানায়। নার্স আরহামকে দেখে বললেন,
‘স্যার এখনো ঘুম থেকে উঠেননি? অবশ্য না উঠারই কথা। সারারাত উনি সজাগ ছিলেন,একপ্রকার বলতে গেলে। বার বার ঘুম থেকে উঠে উনি আপনাকে দেখেছেন, যে আপনি ঠিক আছেন কিনা।
আপনি তো উনার হাত ধরে ঘুমাচ্ছিলেন,তাই স্যার না খেয়ে চেয়ারেই ঘুমিয়ে থাকে,যেন আপনার অসুবিধা না হয়। আপনাকে দেওয়া স্যালাইন শেষ হলে, উনি নিজে ডক্টরদের মাঝরাতে ফোন করে ডেকে,আবারো আপনাকে স্যালাইন দেওয়ানোর ব্যবস্হা করেছে।সত্যি ম্যাম আপনি বড্ড লাকি এইরকম কেয়ারিং হাজবেন্ড পেয়ে। ‘
নার্সের কথা শুনে মেহেভীন আরো এক দফা অস্বস্হিতে পড়ে যাচ্ছে। সে তো জানে আরহাম তার নকল স্বামী। মেহেভীন ও তার সন্তানকে সে তার দায়িত্ব মনে করে, তাইতো এতোটা যত্ন করছে। এতোটা আগলে রাখছে। মেহেভীন কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকালো। সত্যি মানুষটা বড্ড ভালো। মেহেভীন পরিচয়টুকুই যার কাছে ছিলোই না, সে আজকে মেহেভীনের কত খেয়াল রাখছে। মেহেভীন আস্তে ধীরে আরহামের দিকে ঝুঁকে নিজের হাত টা ছাড়াতে নিলে,আরহামের চোখ খুলে যায়। দুজনেই অদ্ভুদভাবে দুজনের কাছে চলে আসে,দুজনের নিঃশ্বাসেই যেন দুজন গুনতে পারছে। মেহেভীন হাত এখনো আরহামের হাতে।
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
আরিয়ান কেবিনে এসে এইরকম দৃশ্য দেখে মুচকি হাসে। সে হাল্কা করে কেশে উঠে। আরিয়ানকে দেখে দুজনেই দুজনের থেক দূরে সরে আসে। আরিয়ান ঠোট টিপে আসে। দুদুবার এইরকম দৃশ্য দেখতে পেল সে,তার চোখ যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান পুনরায় হাল্কা কেশে বলে,
‘ভাই তোরা এতো প্যাকিনড হস না। জাস্ট চিল।
আমি তেমন কিছুই দেখিনি। ‘
আরহাম উঠে দাড়িয়ে বললো,
” প্রথমত বয়স্কদের মতো বার বার কাশা–কাশি করা বন্ধ কর।’
আরিয়ান মাথা নাড়ায়। আরহাম এইবার কন্ঠটাকে পুনরায় গম্ভীর করে, মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আরিয়ান ফার্স্ট অফ অল এই স্টুপিড় মেয়েটাকে বলে দে, যেন কালকের মতো সেম ঘটনা আবারো যেন রিপিট না করে,তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ খাবে না। জাস্ট একটা স্টুপিড গার্ল!’
কথাটি বলেই আরহাম গটগট করে বেড়িয়ে যায়। আরহাম বেড়িয়ে যেতেই মেহেভীন নাক উচু করে বলে,
‘ দেখলি আরিয়ান? লোকটা কত্ত বাজে। কি এমন করেছি যে, সবসময় আমাকে স্টুপিড বলে। বেশরম লোক একটা। ‘
আরিয়ান মেহেভীনের পাশে বসে,মেহেভীনের নাকটা টেনে বলে,
‘ আরে লিটেল সিস তুই এতো চেতস কে? আমার ভাই তো এইরকম একটু। কেউ একটু এদিক-সেদিক করলেই ভাইরা রেগে যায়। বুঝিসই তো ভাইয়ার সবকিছুতে পারফেক্ট হওয়া চাই। ‘
মেহেভীন মুখ বেকিয়ে বললো,
‘ এখন আসল কাহিনী বল। ‘
‘কি কাহিনী? ‘
‘ আমি এখানে কি করে? ‘
‘বলছি দাঁড়া। ‘
আরিয়ান শুরু থেকে সবকিছু খুলে বলে মেহেভীনকে। সব শুনে মেহেভীন মাথা নিচু করে ফেলে। এখন তার আস্তে আস্তে সবকিছুই মনে পড়ে যাচ্ছে। মেহেভীন এতোটাই ভেঙ্গে পড়ে ছিলো যে, আরহামকে সেই অবস্হায় পেয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিলো। সেই অবস্হা মনে পড়তেই মেহেভীনের মুখে আরেকদফা লজ্জা এসে ভর করে। আরিয়ান ভ্রু কুচকু বলে,
‘কিরে তুই হঠাৎ লজ্জা পাচ্ছিস কেন? ‘
মেহেভীন কিছু বলবে তার আগেই, আরহাম এসে বলে,
‘ আরিয়ান চল এইবার। হসপিটালে সব বিল আমি মিটিয়ে দিয়ে এসেছি। ‘
আরিয়ান মেহেভীনের দিকে আরেকটা ঘেসে বলে,
‘সব তো বুঝলাম ভাই,কিন্তু আমার এই লিটেল সিস টা এতো লজ্জা পাচ্ছে কেন? একদম নতুন বউয়ের মতো? কিরে ভাই বল তোর নতুন বউকে থুরি নকল বউকে কেমন লাগছে? ‘
‘আরিয়ান তুই থামবি? ‘
কথাটি বলে মেহেভীন আরিয়ানকে ঘুসি মারে৷ আরিয়ান হেঁসে উঠে।
যদিও আরিয়ান ঠাট্টার সুরে কথাটা বলেছে,তবুও আরিয়ানের কথা অনুসরন করে আরহাম এক পলক মেহেভীনের দিকে তাকায়। কেমন একটা লজ্জা এসে ভর করেছে মেয়েটির মুখশ্রীতে। নারীদের সৌন্দর্য দ্বিগুন বৃদ্ধি করে তুলে তাদের লজ্জামাখা মুখশী। আরহামের কাছে মনে হচ্ছে স্টুপিড মেয়েটা তার লজ্জাকে কাজে লাগিয়ে, নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার প্রচেস্টায় আছি৷ পরক্ষনেই আপনমনে আরহাম তার চোখ সরিয়ে ফেলে। নিজের উদ্ভুট চিন্তাকে বাদ দিয়ে, আরহাম বললো,
‘তোরা আয়। আমি নীচে গাড়িটা পার্ক করছি৷ ‘
___________[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
অভ্র নিজের ঘরে ল্যাপটপে বসে,কলম ঘুড়াচ্ছে। যতক্ষন পর্যন্ত মেহেভীন কোথায় আছে? কার সাথে আছে সেই খবরটা পাওয়া না পর্যন্ত অভ্র শান্ত হতে পারছে না। অভ্র মনে মনে পন করে সে ঠিকই মেহেভীনের সাথে যে করেই হোক সে দেখা করবে এবং মেহেভীনকে তার কথা শুনতেই হবে। ইশর৷ বেগম ছেলেকে এইভাবে অস্হির হতে দেখে মুচকি হাসেন। তিনি বুঝলেন কালকে মায়রার সাথে কথা কাটাকাটির জন্যে, অভ্র নিশ্চয় অশান্তিতে আছে এই বিষয়টা নিয়ে। অভ্রের পাশে কফির কাপ টা রেখে, তিনি বললেন,
‘ অভ্র বাবা!’
‘হুম ‘
‘ তোর মন খারাপ কেন? ‘
‘তেমন কিছু না মা। অফিসের কাজ ছিলো তাই আর কি।’
অভ্রের মা তার ছেলের পাশে বসে বললেন,
‘মা হই আমি তোর। এইটুকু বুঝি। বুঝলি? মায়রাকে গিয়ে এক্ষুনি সরি বল। জানিস মেয়েটা এখনো কিছু খায় নি? যা গিয়ে একটু খাইয়ি দিয়ে আয়। ‘
অভ্র বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
‘ মা আমার যথেষ্ট কাজ আছে। এইসব ন্যাকামি করার সময় আমার নেই। ‘
‘অভ্র এইসব কি বলছিস? এখন এইসব ন্যাকামি লাগছে তোর কাছে?বিয়ের আগে তুই মায়রাকে এই বাড়িতে এনে কতবার নিজের হাতে খায়িয়েছিস মনে আছে? ‘
অভ্র কথাটি শুনে চুপ হয়ে যায়। হ্যা বিয়ের আগে সে অনেক যত্ন করে মায়রাকে খায়িয়ে দিতো। মেহেভীন শুধু দূর থেকে দেখেই যেত তার ভালোবাসার মানুষটি, তার স্বামী অন্য নারীকে কতটা ভালোবাসার সহিত খায়িয়ে দিচ্ছে। মেহেভীন অভ্রের সামনে কাদতো না, সে নিজের ঘরে কাঁদতো। অভ্র কেন যেন টের পেতো
মেহেভীনের কান্না। সেই কান্নাগুলোও অভ্রের কাছে নেকামি মনে হতো, আজ মায়রাকেও তার ন্যাকা মনে হচ্ছে। তাহলে বিয়ের পরেই কি মায়রার প্রতি ভালোবাসা রং টা হালকা হতে শুরু করলো? নিজেকে প্রশ্ন করে বসে অভ্র।
অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে,এইবার অভ্রের মা আদেশের সুরে বলে,
‘ অভ্র তুমি কী এখন আমার কথাও শুনবে না? কি হয়েছে টা কি তোমার? আমাকে খুলে বলবে? আমার তো মনে হচ্ছে পুরনো প্রেম জেগে উঠছে তোমার। যদি তা হয়, ভূলেও তা ভাব্বে না। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। এই আমি বলে দিলাম। ‘
মায়ের কথা শুনে অভ্র মাথা নিচু করে ফেলে। ইশরা বেগম রাগ নিয়ে বেড়িয়ে য়ায়। অভ্র মাথা নিচু করেই, মায়রার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। মায়রা একটা শর্ট স্লিভ কটনের টি-শার্ট এবং একটা জিন্স পড়ে, বের হচ্ছিলো। অভ্রকে দেখে সে থেমে যায়। অভ্র বললো,
‘কোথায় যাচ্ছো? ‘
‘সব প্রশ্নের উত্তর আমি তোমার দিতে প্রয়োজন বোধ করিনা। জাস্ট এইটুকু জেনে রাখো দু-একদিনের মধ্যে একটা চূড়ান্ত ফয়সালা করবো আমি। ‘
মায়রার কথাটা অভ্র বুঝলো না। মায়রা বেড়িয়ে গেলো।
______
মুখ কালো করে বসে আছে মেহেভীন। আরহাম বলে গেছে যেন, এক পা ও না রাখে দুধটুকু না খাওয়া পর্যন্ত। কিন্তু মেহেভীন কিছুতেই দুধ খাবে না। সারাদিন শুধু বকে, আর শুধু বিচ্ছিরি মার্কা দুধ খেতে বলে। মেহেভীন আরহামকে কিছুক্ষন বকে। আরহাম মা মেহেভীনের মুখটো শুকনো দেখে বলে,
‘মেহু মা আমার। মুখটা এইরকম করে রেখেছো কেন? ‘
‘তো কী করবো? উনি সবসময় আমাকে বকেন। বিচ্ছিরি খেতে এই দুধটা কী আদোও খাওয়া যায়? ‘
আরহামের মা হেসে বলে,
‘ পাগলি মেয়ে আমার। আমার ছেলেটা তোমাদের অনাগত সন্তান এবং তোমার জন্যে কতটা চিন্তিত দেখছো না? তাই তো এতো বকা-ঝোকা মা। ‘
‘তোমাদের অনাগত সন্তান ‘ শব্দটি মেহেভীনের কানে ভাজছে। তার সন্তানটা তো আরহামের নয় কিন্তু সবাই জানে এই সন্তানটি আরহামের। সকলের কাছে যখন এই সন্তানের আসল পরিচয় প্রকাশ পাবে, তখন কি হবে এর ভবিষ্যৎ৷ এইসব ভাবলেই মেহেভীনের চিন্তা বেড়ে যায়।
আরহামের মা আবারো বললেন,
‘এমনিতেও দুধটা খেতে ভালো না লাগলেও,তোমার যে খেতে হবে মা। তোমার শরীর কতটা দূর্বল জানো তো? অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলে সারারাত। এইটা কি বেবীর জন্যে ক্ষতিকর না? ‘
আরহাম মায়ের কথা শুনে মেহেভীন মাথা নাড়ায়। আরহামের মায়ের কথা শুনে, দুধটুকু মুখে দেয়। আরহামের মা রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হয়। সাথে সাথে মেহেভীন দৌড়ে মুখের দুধটুকু ফেলে দেয়। এমনতেই এই অবস্হায় সে কিচ্ছু খেতে পারছে না। বলতে গেলে রুচি টাই উঠে গেছে,সেখান দুধটুকু তার কাছে সব থেকে জঘন্য পানিও বলে মনে হচ্ছে। মেহেভীন একটা ফন্দি আটলো। আরহামের ঘরের বারান্দায় গেলো। সেখানে আপাতত কেউ নাই। রাহেলা এবং ড্রাইভার একে-অপরের দিকে কেমন যেন লজ্জা করে তাকিয়ে আছে তাও বাগানের এক কোনে। মেহেভীন তাতে গুরুত্ব না দিয়ে, দুধটুকু ফেলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গো বাজখাই গলায় কেউ বললো,
‘ হাও রিডিউকিউলাস। ডেম ইট। কে করলো? এই কাজ? ‘
এইরকম গলা শুনে, মেহেভীনের পুরো বিশ্বাস হয়ে গেলো সে ভুল ক্রমে আরহামের উপর দুধ ফেলে দিয়েছে।
মজনু রাহেলার হাত ধরবে, তার আগেই রাহেলা ‘বড় ভাইজান গো ‘ বলে দৌড়ে চলে গেলো। মজনু চোখ বন্ধ করে হাত ধরতে গিয়ে, আক্কাসের হাতে চুমু দিয়ে ফেলে। আক্কাস হলো বাড়ির কেয়ারটেকার। মজনু তার হাতে এইভাবে চুমু খাওয়ায়, আক্কাস চিল্লিয়ে উঠে। মজনু চোখ খুলে দেখে আক্কাস। মজনু বলে,
‘তুই? রাহেলা কই? ‘
‘শালা তুই আগে বল। তুই আমার হাতে চুমু খাইলি কে? ঘরে কি তোর বাপ -ভাই নাই? ছিহ। ‘
মজনু কি বলবে বুঝতে পারছে না।
রাহেলা আরহামের কাছে এসে মুখ চেপে ধরে। আরহাম যেন রাগে কাঁপছে একপ্রকার। আরহামের মাথা থেকে দুধ টুপ টুপ করে আরহামের মুখে এসে গড়িয়ে পড়ছে। আরহামের পুরো ব্লেজারে দুধ লেগে আছে। আরহাম রক্তচক্ষু নিয়ে উপরের দিকে তাকাতেই সর্বপ্রথম তার চোখ যায় মেহেভীনের দিকে। মেহেভীন বিড়বিড় করে বলে,
‘ যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ভাগ মেহু। ‘
মেহেভীন ভৌ দৌড় দেয়। আরহাম রাগে চিৎকার করে বলে,
‘ ইউ স্টুপিড গার্ল।’
চলবে 🐸!!
[মুই কি লিখছি। মুই নিজেই জানি না। ওই আপ্নারা এখানে দাঁড়াইয়া কিতা করেন? তাড়তাড়ি কমেন্ত করে জানান কেমন হইছে 😋]