স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৪৯

0
316

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৪৯

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

জায়ানরা বাংলাদেশে ফেরার পরই জায়ান, তৃষাম আর চ্যাং গেল তৃষামদের বাড়িতে আর পূর্বাশা গেল তাদের বাড়িতে। যেহেতু অল্প দিনের মধ্যেই তাদের বিয়ে তাই যতই আত্মীয়তার সম্পর্ক হোক না কেন নিশ্চই একে অপরের বাড়িতে থাকাটা শোভা পায় না। সুতরাং নিজের ইচ্ছ না থাকা সত্ত্বেও জায়ানকে যেতে হলো আলাদা বাড়িতে।

****

রাতের আঁধার লেগেছে ধরনীতে। লাল, নীল, সবুজ মরিচ বাতির আলোয় ঝিকিমিকি ঝিকিমিকি করছে আজ পূর্বাশাদের বাড়িটা। উৎসবের আমেজ মেতে উঠেছে পুরো বাড়ি।‌ আজ জায়ান আর পূর্বাশার গায়ে হলুদ যে। দেশে ফেরার তিন দিনের মধ্যেই তাদের গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে আর তার পরের দিনই বিয়ে। মূলত জায়ান পূর্বাশাদের স্বল্প ছুটির কারনেই এত অল্প সময়েই সব আয়োজন করা হয়েছে। এখন কথা হলো এত তাড়াহুড়ো করে বিয়ের কি দরকার ছিল, আর কিছু বছর পর ঠান্ডা মাথায় বিয়ে করলেই তো পারতো তাই না। কিন্তু না এই তর জায়ানের সইলে তো। বিয়ের জন্য তর সইলো না জায়ানের আর সবার লাঠি ছোটা সহ্য করে তার বিয়ে ঠিক করলো তৃষাম। সে যাই হোক। জায়ান আর পূর্বাশার গায়ে হলুদ এক বাড়িতেই অর্থাৎ পূর্বাশাদের বাড়িতে এক সাথে আয়োজন করা হয়েছে। যেহেতু তাদের বেশিরভাগ আত্মীয় স্বজনই এক তাই আলাদা আলাদা স্থানে দুইবার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আত্মীয়দের ভোগান্তিতে ফেলতে চায়নি।

মাগরিবের নামাজ শেষ হওয়ার পর পরই জায়নদের বাড়ি থেকে গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে সকলে চলে এসেছে পূর্বাশাদের বাড়িতে। জায়ানকে ইতমধ্যে স্টেজেও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। হলুদের উপরে হালকা সবুজ রঙা কারুকাজ বিশিষ্ট পাঞ্জাবী পড়ানো হয়েছে আজ ছেলেটাকে। হয়তো তার চেহারাতে কিছুটা ভিনদেশী ছাপ স্পষ্ট তবে এই পোশাকে তাকে মানিয়েছে দারুন। ফর্সা শরীরে হলুদ রঙটা ফুটে উঠেছে জ্বলজ্বল করে। অবশ্য আজ চ্যাং আর তৃষামও কম যাচ্ছে না। তারাও নিজেদের হলুদ রঙা পাঞ্জাবীতে সাজিয়েছে। জায়ান বাঙালিদের প্রতি টানে আগেও কয়েকবার পাঞ্জাবী পরিধান করলেও চ্যাং এই প্রথম। সারাজীবন ঐ শার্ট, প্যান্ট, টিশার্ট ছেড়ে নতুন পোশাক পড়ে বেশ উৎফুল্ল সে।

জায়ান নিশ্চুপভাবে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অবলোকন করছে চারপাশটা। আশেপাশে কম বেশি সবাইকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু পূর্বাশা কোথায়? মেয়েটার দেখা মেলেনি সেই চীন থেকে দেশে ফেরার পর একবারও। ফোনে যে দুই দন্ড ভালোভাবে কথা বলবে তাও এই বিয়ের কেনাকাটা, ব্যস্ততার কারনে বলে উঠতে পারেনি। ঐ তো পূর্বাশার ছোট বোন পূর্ণতা। কতগুলো মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করছে কি নিয়ে যেন। ওর কাছে কি জিজ্ঞেস করবে পূর্বাশার কথা। কিন্তু এভাবে জিজ্ঞেস করতেও কেমন একটা লজ্জাবোধ লাগছে জায়ানের। হাজার হলেও সেই নতুন জামাই। যাক শেষ পর্যন্ত আর নিজের লজ্জা বিসর্জন দিয়ে পূর্বাশার কথা জিজ্ঞেস করতে হয়নি জায়ানের। তার আগেই দুজন নারী দুপাশ থেকে ধরে স্টেজে নিয়ে এলো পূর্বাশাকে। মেয়েটা লজ্জায় মস্তক নত করে রেখেছে। জায়ান তাকালো পূর্বাশার পানে। মেয়েটার পানে তাকাতেই হা হয়ে গেল সে। হলুদ রঙা এক খানা শাড়ি বাঙালি স্টাইলে পড়নো হয়েছে পূর্বাশাকে, সাথে হাতে কানে গলায় কাঁচা ফুলের গহনার সমহার, মুখে অতিরিক্ত মেকআপের আভাস নেই, ঠোঁটেও হালকা রঙা লিপস্টিক। পূর্বাশার লম্বা কালো চুলগুলোও পিঠজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার ভাঁজে ভাঁজে আবার গোলাপ আর হলুদ গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে ভীষন। কে বলেছে কৃষ্ণবর্না নারীকে কখনও সুন্দর লাগে না? এই তো পূর্বাশাকে সুন্দর লাগছে, ভীষন সুন্দর লাগছে। জায়ানের দৃষ্টিতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম নারী লাগছে পূর্বাশাকে। কি স্নিগ্ধ লাগছে এই মুহুর্তে মেয়েটাকে তা ভাষায় প্রকাশ্য নয়। ভাষায় এই রূপের বর্ণনা জায়ান না করতে পারলেও তার হৃদয় সাথে সাথেই স্বাগতিক কন্ঠে জানান দিল – আমার স্নিগ্ধ প্রিয়া।

পূর্বাশাকে বসানো হয়েছে জায়ানের পাশেই। মেয়েটার মুখশ্রীতে আজ লাজুকতার ছাপ। জায়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসলো একটু অতঃপর গা ঘেঁষে বসলো পূর্বাশার। পূর্বাশা হাঁসফাঁস করে উঠলো। একটু সরে যেতে চাইলো অন্যপাশে। কিন্তু পারলো না। জায়ান তার এক বাড়িয়ে সকলের অগোচরে ধরলো পূর্বাশার এক হাত। যদিও তার ইচ্ছে ছিল পূর্বাশার কোমড়ে হাত দেওয়ার কিন্তু তা সে করেনি। আর তো একটা দিনের ব্যাপার তারপর পূর্বাশার উপরে সম্পূর্ণ অধিকার থাকবে জায়ানের। তখনই না হয় ছুঁয়ে দেওয়া যাবে মেয়েটাকে। তার আগে শুধু শুধু নিজের অধিকার চর্চা করার দরকার আছে কি? জায়ান একটু ঝুঁকলো পূর্বাশার পানে কন্ঠটা খাদে নামিয়ে বলল – তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে কৃষ্ণময়ী।

পূর্বাশা চোখ তুলে তাকালো জায়ানের পানে। পরক্ষনেই আবার চোখ জোড়া নামিয়ে নিল সে। নিজের ভিতরে থাকা লজ্জা যেন আরও কয়েক গুণে মেয়েটার।

****

বিয়ে বাড়ির চারদিকে ছেলে মেয়েদের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে অল্প বয়সী অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের সংখ্যাটাই যেন একটু বেশি। অবশ্য বিয়ে বাড়ি এদেরই তো মজা করার এবং আনন্দ করার স্থান। সেই অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদের মাঝে আবার সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চ্যাং আর তৃষাম ঘুরছে পুরো বিয়ে বাড়িময়। মেয়েরা কি সুন্দর ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে তাদের পানে। এমনিতেও বর্তমান কালে বাঙালি মেয়েরা বেশিরভাগ চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ান পুরুষদের দিকে নাকি আসক্ত। তার সবচেয়ে জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো এই চ্যাং আর তৃষাম। চীনে পাত্তা না পাওয়া এই দুই পুরুষ ঝাড়ের দিনে আম কুড়ানোর মতো করে কি সুন্দর বাঙালী নারীদের পাত্তা কুড়াচ্ছে। যদিও তৃষাম বাঙালি, চেহারাও বাঙালিদের মতো তবে এতদিন চীনে থাকতে থাকতে গায়ের রং টা প্রায়ই তাদের মতো হয়ে গিয়েছে। দুই বন্ধু মিলে ভীষণভাবে উপভোগ করছে বিয়ে বাড়িদের নারীদের এমন প্রেমময় দৃষ্টি। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতেই হঠাৎ একটা মেয়ে এসে দাঁড়ালো তৃষাম আর চ্যাং এর সম্মুখে। তৃষাম প্রথমে একটু ভরকে গেলেও পরক্ষনেই আনন্দিত হলো। হৃদয় উৎফুল্ল হয়ে উঠলো তার। এতদিনে বুঝি তার সিঙ্গেল থাকার রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে। ভাব নিয়ে মাথার পিছনের দিকে চুলগুলো ঠেলে দুই ওষ্ঠ ফাঁক করলো কিছু বলার জন্য কিন্তু তার মুখ বন্ধ করিয়ে মেয়েটা লাজুক স্বরে বলল – সোয়াদি খা।

মেয়েটার মুখে এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকালো তৃষাম। এটা কি বলল মেয়েটা? প্রথমে তো সোয়াদি এইটুকু শুনে ভেবেছিল তাকে *** ভাই বলে গালি দিবে কিন্তু পরক্ষনে খা টুকু শুনে তার ভাবনার পরিবর্তন হলো। কিন্তু এটা কোন ভাষা? জীবনে বাংলা ভাষায় সোয়াদি খা এর ব্যবহার তো শোনেনি তৃষাম। ছেলেটা নিজের ভ্রু দ্বয় কুঁচকে রেখেই শুধালো – কি বললেন?

তৃষামের কথায় মেয়েটাও এবার ভ্রু কুঁচকালো। কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলল – চাইনিজ ভাষায় হ্যালো বললাম আপনাদের।

তৃষাম অবাক হলো। অবাক সুরেই বলল – বাপের জন্মে আমি চাইনিজ ভাষায় হ্যালো কে সোয়াদি খা টা বলতে শুনিনি।

মেয়েটা মুখ বাঁকালো। তিরস্কার করে বলল – এত বছর চীনে থেকেও আপনি চাইনিজ ভাষায় হ্যালোকে কি বলে জানলেন না। আপনি চীনে থাকেন কেন?

তৃষাম অপমানিত বোধ করলো। এই মেয়েটা তাকে এভাবে অপমান করলো? কোন ভাষা না কোন ভাষা বলে চাইনিজ বলে চালিয়ে দিতে চাইছে? তৃষাম মোবাইল বের করলো। গুগল ট্রান্সলেট থেকে সার্চ “সোয়াদি খা” এর মানে বের করে মোবাইলটা ধরলো মেয়েটার সম্মুখে। ভেংচি কেটে বলল – “সোয়াদি খা” হলো থাইল্যান্ডে ভাষা অর্থাৎ থাই ভাষায় হ্যালোকে “সোয়াদি খা” বলে। আর চাইনিজ ভাষায় হ্যালো কে “নী হাও” বলে। কোথা থেকে না কোথা থেকে অল্প একটু শিখে এসে তা চাইনিজ বলে দাবি করে আমাকে অপমান করছেন? এর জন্যই বলে “অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী।”

তৃষামের কথায় মেয়েটা কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। কোন দেশি ভাষা না জেনেই সে এখানে কথা বলতে এসেছিল? ধুর যা হওয়ার হয়ে গেছে তবে তারা হারা যাবে না কিছুতেই। এই লোকের সম্মুখে নিজের অপ্রস্তুত ভাবটা তুলে ধরা যাবে না। মেয়েটা স্বাভাবিক করলো নিজেকে অতঃপর চ্যাংকে দেখিয়ে বলল – সে যাই হোক আপনি এই চাইনিজটার সাথে আমার সেটিং করিয়ে দিন তো।

তৃষ্ণায় রাগলো কিছুটা। একে তো এই মেয়ে তাকে অপমান করলো তার উপর ভেবেছিল এই মেয়েকে দিয়েই তার সিঙ্গেল জীবনের ইতি টানবে কিন্তু এ এসেছে চ্যাংয়ের সাথে তার সেটিং করাতে? তৃষাম ধমকে উঠলো। ধমকের সুরে বলল – হোপ, যা সর তো এখান থেকে। ছেলে দেখলেই গায়ে লাফ দিয়ে উঠতে চায়।

লজ্জায় অপমানে মেয়েটার মুখটা থমথমে আকার ধারন করলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – তোকে তো আমি পরে দেখে নেব উড়চুঙ্গা।

কথাটা বলেই মেয়েটা চলে গেল। তৃষামের মুখটা যেন হা হয়ে গেল। কি বলে গেল মেয়েটা তাকে? উড়চুঙ্গা! সে উড়চুঙ্গা? তৃষাম ফুঁসে উঠে পিছু ডাকলো মেয়েটার। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – যা যা তোর যা খুশি করে নে গান্ধি পোকা।

মেয়েটার আর কন্ঠ শোনা গেল না। তৃষাম ক্রোধে ফোঁস ফোঁস করতে করতেই সম্মুখের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। কিছুটা যেতেই হঠাৎ কাঁদার মধ্যে পা পিছলে পড়লো তৃষাম আর চ্যাং। হকচকালো তারা, বিয়ে বাড়িতে কাঁদা পানি আসলো কোথা থেকে? আশেপাশে তাকিয়ে তৃষাম দেখলো কতগুলো মেয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। তার মধ্যে একটু আগের সেই মেয়েটাও দাঁড়িয়ে রয়েছে। তৃষামের আর বুঝতে বাকি রইলো না এসব কার কাজ। দাঁতে দাঁত চাপলো ছেলেটা। তবে কিছু বলল না। বিয়ে বাড়ির এই ভরা সমাজে সে ঝামেলা চাইলো না কোনো। কিন্তু এটাকে তো সে পরে দেখে নিবে। ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতেই কাদাপানি থেকে উঠে দাঁড়ালো তৃষাম। চ্যাং কেও হাত ধরে উঠিয়ে দাঁড় করালো। নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখলো কাঁদা পানিতে পুরো মাখামাখি অবস্থা তাদের। হলুদের অনুষ্ঠানে এসেছে, অনুষ্ঠান শেষ হলে আবার চলে যাবে। জামা কাপড়ও তো আনেনি কোনো। এখন কি করবে? এই অবস্থায় তো তার অনুষ্ঠানে এতগুলো মানুষের মধ্যে থাকা যায় না। চ্যাং কে নিয়ে তৃষাম তাই গেল ভিতরে। পাখি বেগমকে বলে করে কিছু জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করলো তারা। পাখি বেগমও তাড়াহুড়ো করে তাদের হাতে জামা কাপড়গুলো তুলে দিতেই একটা কক্ষে চলে এলো তৃষাম আর চ্যাং। কক্ষে এসেই চোখ যেন কপালে উঠলো তৃষামের। এ কি? এ তো লুঙ্গি আর টি শার্ট। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে শেষে কিনা লুঙ্গি পড়তে হবে? চ্যাং ও অবাক চোখে হাতে তুললো একটা লুঙ্গি। মালার মতো করে গলায় দিয়ে বলল – এটা কি তৃষাম?

তৃষাম জবাব দিল না কোনো। হন্তদন্ত হয়ে আবার খোঁজ লাগালো পাখি বেগমের। কিন্তু বাড়িতে এত মানুষের মধ্যে কোথাও খুঁজে পেল না তাকে। অগত্যা লুঙ্গি আর টি শার্টই পড়া শুরু করলো তৃষাম। চ্যাং ও তার দেখা দেখি লুঙ্গি পড়তে শুরু করলো। কিন্তু পারলো না, বারবার খুলে যাচ্ছে। শেষে তৃষাম বাধ্য হয়ে শক্ত করে গিঁট দিয়ে লুঙ্গি পড়িয়ে দিল চ্যাং কে। সাথে সাথেই চেঁচিয়ে উঠলো ছেলেটা। গলার স্বর বাড়িয়ে বলল – নিচ থেকে হাওয়া ঢুকছে তৃষাম, হাওয়া ঢুকছে।

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here