স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৫৪

0
472

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৫৪

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

দিন খানেকের সমাপ্তি ঘটলো। এমনি বিয়ে বিয়ে করে অনেক দিন কলেজ থেকে ছুটি নেওয়া হয়েছে। এখন চীনে এসেও যদি সারা দিন রাত বাসায় বসে বসে কাঁটায় তবে তাদের নিজেদের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হবে না। তার উপর জায়ানের পরীক্ষা সামনে। তাই আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কলেজের জন্য একদম তৈরী হয়ে গেল জায়ান আর পূর্বাশা। দুজন একসাথেই এগিয়ে গেল দরজার দিকে। দরজার পাশে দাঁড় করানো জুতার সেল্ফ থেকে জুতা বের করে পড়তে শুরু করলো। জায়ানের পায়ে আটকানো জুতা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে সময় নিচ্ছে বেশ। পূর্বাশা দেরী করলো না। সাধারনত এক জোড়া স্লীপার পড়েই দরজা ঠেলে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো সে। জায়ান জায়ান জুতা পড়ছে পায়ে আর পূর্বাশা আগে ভাগে তার স্লীপার পড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। জায়ান ব্যস্ত হলো। পিছন থেকে পূর্বাশাকে ডেকে বলল – আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছো তুমি?

– আপনি আসুন ততক্ষণে আমি নিচে গিয়ে দাঁড়াই।

পূর্বাশার স্বাভাবিক কন্ঠস্বর, ব্যস্ত হলো জায়ান। দ্রুত হাত চালিয়ে জুতোর ফিতা বেঁধে নিল কোনোভাবে। অতঃপর হন্তদন্ত হয়ে গিয়ে দাঁড়ালো পূর্বাশার সম্মুখে। চোখ ছোট ছোট করে বলল – তাহলে আমার চু’মু কে দিবে?

পূর্বাশা ভ্রু কুঁচকালো। জায়ানের পানে সুরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল – কিসের চু’মু?

জায়ান অবাক হওয়ার ভান ধরলো। অবাক কন্ঠে বলল – তুমি জানো না স্বামী বা স্ত্রী বাইরে গেলে একে অপরকে চু’মু খেয়ে বের হতে হয়?

পূর্বাশার কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আরও কুঁচকে এলো যেন। এমন কথা তো সে কখনও শোনেনি। হ্যা এটা অনেকবার শুনেছে যে স্বামী অফিসে বা কোনো কর্মে বাহিরে যাওয়ার আগে স্ত্রীর ললাটে চুম্বন করে যায় কিন্তু এখানে তো তারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই একসাথে একই গন্তব্যে যাবে তবে কি তাদের জন্যও এই নিয়ম প্রযোজ্য? পূর্বাশার ভাবনার মধ্যেই জায়ান ঝুঁকে গেল তার পানে। নিজের মুখটা এগিয়ে বলল – নাও এখন ঝটপট চু’মু’টা দাও তো।

পূর্বাশা লাজুক হলো। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল – কোথায় দেব?

জায়ান হাসলো অতঃপর বলল – আমার চোখ, কান, নাক, কপাল, ঠোঁট সব খালি আছে। সব স্থানে এক একটা দিয়ে ফেলো।

পূর্বাশা মুখ বাঁকানো। ভেংচি কেটে বলল – একটা দেব। তার বেশি আর একটুও না।

জায়ান চট করে রাজি হয়ে গেল। নিজের ওষ্ঠদ্বয় উঁচু করে বলল – তাহলে সেই একটা এখানে দাও।

পূর্বাশা ছোট ছোট করে বলল – না গালে দেব।

– তাহলে নাক, কান, চোখ, গাল, ঠোঁট, কপাল সব স্থানে দিতে হবে। রাজি থাকলে গালে দাও, না রাজি থাকলে ঠোঁটে দাও।

পূর্বাশা ভাবলো একটু অতঃপর লাজুক ভঙ্গিতেই অগ্রসর হলো জায়ানের ওষ্ঠের পানে। আলতো একটা চুমু খেয়েই সরে আসতে চাইলো মেয়েটা কিন্তু পারলো না। পূর্বাশা নিজের ওষ্ঠ দ্বারা জায়ানের ওষ্ঠ স্পর্শ করতেই ছেলেটা দ্রুত হাত গলিয়ে দিল পূর্বাশার মাথার পিছনের দিকে। অতঃপর আলতো চু’মু’টা নিজের আয়ত্তে এনে দীর্ঘ করলো। অতঃপর পূর্বাশার হাত ধরে হাঁটা ধরলো কলেজের উদ্দেশ্যে।

***

ক্ষানিক বাদেই জায়ান আর পূর্বাশা কলেজে এসে উপস্থিত হলো। পূর্বাশা চাইলো জায়ানের হাতের বাঁধন থেকে নিজের হাতটা ছাড়াতে কিন্তু ছেলেটা দিল না। সে শক্ত করে ধরে রেখেছে মেয়েটার হাতটা। পূর্বাশা লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। যদিও চীনে এসব ঘটনা খুবই স্বাভাবিক তবুও পূর্বাশার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো মেয়েটা অতঃপর লাজুক ভঙ্গিতে বলল – হাত ছাড়ুন, সবাই কি ভাববে?

জায়ান কন্ঠ খাদে নামালো। পূর্বাশার পানে একটু ঝুঁকে বলল – তুমি ছাড়া আমাদের নিয়ে কারো এত ভাবার সময় নেই বুঝেছো? চুপচাপ আমার হাত ধরে হাঁটতে থাকো।

পূর্বাশা আর কথা বাড়ালো না। একটু এগিয়ে সামনে যেতেই দেখলো তৃষাম আর চ্যাং তাদের দিকেই আসছে। চ্যাং এর দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল জায়ান আর পূর্বাশার। চ্যাং সাদা টিশার্ট, সাজা লুঙ্গি, সাদা শু পড়ে কলেজে এসেছে। শেষ পর্যন্ত কিনা লুঙ্গি পড়ে কলেজে? ছেলেটার চোখ মুখে যেন খুশি আর ধরছে না। কারন আজ চীনের মেয়েরাও তার দিকে আড় চোখে দেখছে। হতে পারে তার এই উদ্ভট সাজ পোশাকের জন্য তাকে দেখছে কিন্তু দেখছে তো। জায়ানকে দেখেই চ্যাং দৌড় দিল তার দিকে। হঠাৎ লুঙ্গিতে পা বেঁধে রাস্তার মধ্যে উল্টে পড়লো ছেলেটা। হায় মান ইজ্জত! শেষে কিনা লুঙ্গি পড়ে কলেজে এসে উল্টে গেল চ্যাং মাছ? তৃষাম নিজের হাসি আর আটকে রাখতে পারলো না। হো হো করে হেসে উঠলো। চ্যাং অপ্রস্তুত হলো বেশ। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অনেকেই হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। ভাগ্যিস লুঙ্গিটা কোমড়ে বেশ আঁটসাট বেধে গিঁট দিয়ে পড়েছিল নয়তো এখন সবার সম্মুখে এই লুঙ্গি পড়ে এখন মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেত। তবে একটা বিষয়? গরমে এই লুঙ্গির থেকে আরাম দায়াক আর আছে নাকি কিছু? এই যে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়েও কেমন শীতলতা অনুভব করছে। বেশ সুন্দর হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা করেই এই পোশাক তৈরি করা হয়েছে নিশ্চই। চ্যাং মাটিতে ভর দিয়ে নিজে নিজেই উঠে দাঁড়ালো। হাত পা ঝেড়ে ধুলো ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল জায়ান আর পূর্বাশার পানে। কিন্তু এর মধ্যেই বাঁধলো আরেক বিপত্তি। হুট করেই বাতাস এলো। বসন্তের এই বাতাসেই উড়তে শুরু করলো চ্যাং এর লুঙ্গি। সামনে থেকে দুই হাতে চেপে ধরলেও পিছনের দিক তো ফাঁকা। কি এক মসিবত। এসেছিল লুঙ্গি পড়ে হাওয়া খেতে এখন হাওয়াতে তার লুঙ্গিই উড়ে যাওয়ার উপক্রম। চ্যাং আর জায়ান পূর্বাশার পানে গেল না। দুই হাতে লুঙ্গির দুই দিক চেপে দৌড় দিল হোস্টেলের পানে। জায়ান আর পূর্বাশা গোল গোল চোখে দেখলো শুধু সবটা। কিছু বলার ভাষাই যেন খুঁজে পেল না। সবটাই যেন মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল। তবে পূর্বাশার একটা কথা দারুনভাবে মনে পড়ে গেল। আজ থেকে বহুদিন আগে যখন সে বাংলাদেশে ছিল তখন তার ফেসবুক আইডিতে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছিল। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টকারী আইডির নাম ছিল – অল্প বাতাসে লুঙ্গি আকাশে।

সেদিন এমন অদ্ভুত আইডির নাম দেখে অবাক হয়েছিল কিন্তু আজ চ্যাং কে দিয়ে যেন সেই অদ্ভুত আইডির নামের প্রমান মিললো।

_______________________________________

রাত বেড়েছে। শহরটা ভরে উঠেছে সোডিয়ামের কৃত্রিম আলোর ছোঁয়ায়। এই উঁচু ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে লাল নীল আলোয় ভরপুর শহরটা যেন একটু ভিন্নরূপেই ধরা দিচ্ছে পূর্বাশার চক্ষে। মেয়েটা এক মগ কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করছে রাতের সুন্দর শরহটা, সাথে অপেক্ষা করছে জায়ানের। ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে জানান দিচ্ছে এই মুহূর্তে রাত সাড়ে এগারোটা প্রায় অথচ জায়ান বাসায় ফিরেনি। কলেজ থেকে বেরিয়ে বলল রেস্টুরেন্টের কি কাজে যেন তাকে একটু যেতে হবে, তাড়াতাড়িই চলে আসবে। এই তার তাড়াতাড়ি? সেই দুপুরে বেরিয়েছে এখন রাত সাড়ে এগারোটা। দেরি হলেও একটা কল করে বলবে তো। কল না করুক একটা মেসেজ তো করবে। তা না মোবাইলটাও বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। চিন্তা হয় তো নাকি? বিপদ বলে কয়ে আসে না। যদি কোনো বিপদ আপদ ঘটে থাকে ছেলেটার, ভাবতেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে পূর্বাশার। হাতের কাছের মোবাইলটা তুলে পূর্বাশা আবার কল লাগালো জায়ানের নাম্বারে, নাহ এখনও বন্ধ বলছে। পূর্বাশা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না বারান্দায়। চিন্তিত ভঙ্গিতেই কফির মগ নিয়ে এসে বসলো ড্রইং রুমে, ভাবলো তৃষামকে কল করবে। তবে সে কলটা আর করতে হলো না পূর্বাশার। তার আগেই মেয়েটার চিন্তায় ছাই দিয়ে একদম স্বশরীরে , সুস্থ, সবলভাবে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলো জায়ান। পূর্বাশা তাকালো সেদিকে। প্রাণে যেন প্রাণ ফিরে পেল মেয়েটা। দৌড়ে গিয়ে কাছে গেল জায়ানের। আবেগতাড়িত হয়ে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরলো না তাকে। কপট রাগ দেখিয়ে বলল – কোথায় ছিলেন আপনি? এত দেরী হলো কেন?

জায়ান হাসলো। নিচের দিকে তাকিয়ে আদুরে কন্ঠে ডাক দিল – কোবরা! কোবরা!

সাথে সাথেই জায়ানের টিশার্ট ফুড়ে গলার কাছ থেকে মুখ বের করলো শুভ্র রঙা এক চাইনিজ পুতুলের মতো কুকুর ছানা। পূর্বাশা অবাক হলো। ড্যাব ড্যাব করে তাকালো কুকুর ছানাটার পানে। এতক্ষন জায়ান ফিরে আসার খুশিতে তার টি শার্টের বুকের অংশটা যে উঁচু খেয়ালই তো করেনি। জায়ান নিজের টিশার্টের মধ্য থেকে ছোট্ট কুকুর ছানাকে বের করে দুই হাতে ধরলো। পূর্বাশার পানে বাড়িয়ে দিয়ে বলল – ও কোবরা। দেখো ইয়ানের থেকে সুন্দর না?

পূর্বাশার ভ্রু দ্বয় কুঁচকে এলো। একে তো দেরী করে বাড়ি ফিরেছে তার উপর জানায়নি পর্যন্ত। তার যে চিন্তা হবে তা কি একবরের জন্যও ভাবেনি জায়ান? হুট করে উধাও তারপর কোনো খোঁজ খবর ছাড়া এত ঘন্টা। ক্রোধে শরীর রি রি করে উঠলো পূর্বাশার। তবে এই ক্রোধ অবশ্যই সে এই ক্ষুদ্র প্রানীটার উপর দেখাতে পারে না। তাছাড়া কুকুর ছানাটা আসলেই ভীষন সুন্দর। এর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকার মতো কোনো উপায় নেই। পূর্বাশা ছো মেয়ে জায়ানের হাত থেকে নিয়ে নিল কোবরাকা। মুখ বাঁকিয়ে বলল – শুধু ইয়ান না, ও আপনার থেকেও সুন্দর।

কথাটা বলে আর সময় ব্যয় করলো না পূর্বাশা। হনহন করে হেঁটে ঢুকলো বেডরুমের দিকে। ঠাস করে আটকে দিল রুমের দরজাটা। জায়ান অবাক হলো যেন। ব্যস্ত পায়ে সেও হেঁটে গেল কক্ষের দরজার পানে। বদ্ধ দরজায় করাঘাত করে বলল – একি তুমি হুট করে রুমে ঢুকে দরজা আটকালে কেন?

সাথে সাথেই ভিতর থেকে পূর্বাশার ঝাঁঝালো কন্ঠ ভেসে এলো। রুক্ষ কন্ঠে মেয়েটা বলল – আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি আটকেছি।

– তাহলে আমাকে নিয়ে আটকাও।

পূর্বাশা ভ্রু কুঁচকালো। যাকে রাগ দেখিয়ে রুমের বাইরে রাখবে বলে দরজা আটকালো সে কিনা বলছে তাকে রুমে ঢুকিয়ে তারপর দরজা আটকাতে? দাঁতে দাঁত চাপলো মেয়েটা। শক্ত কন্ঠে বলল – আপনার আজ আর এই রুমে জায়গা হবে না। এতক্ষন যেখানে ছিলেন সেখানে যান।

– আমি তো কোবরাকে আনতে গিয়েছিলাম। এতদিন কলেজ আবার রেস্টুরেন্ট দুই দিক সামলে কোবরার ঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারছিলাম না তাই কোবরাকে আমার এক আন্টির কাছে রেখেছিলাম। এখন তুমি চলে এসেছো। আমার অবর্তমানে তুমি ওর দেখভাল করবে।‌ এই জন্য দেরী না করে ওকে নিয়ে এসেছি।

– তা কি আমাকে বলে গিয়েছিলেন? বলে যাননি তো। এত রাত হয়েছে এখন আসার সময় হয়েছে আপনার। অন্তত একটা কল বা মেসেজ করেও বলতে পারতেন আপনি কিন্তু না আপনি আর কিছুই করেননি। মানুষকে চিন্তায় ফেলতে তো আপনার ভালো লাগে।

শেষের বাক্যটা বলতে গিয়ে যেন ধরে এলো পূর্বাশার কন্ঠস্বর। কতটা চিন্তায় ছিল মেয়েটা জায়ানকে নিয়ে। মনের মধ্যে কত আজে বাজে আশঙ্কা করেছিল। উপর থেকে স্বাভাবিক থাকলেও জায়ান হীনা উন্মাদ হয়ে উঠেছিল সে। আর এই লোক কিনা একটা মেসেজ করেও জানাতে পারেনি যে তার আসতে দেরী হবে বা কিছু। অসভ্য লোক একটা।

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here