প্রেমের_তাজমহল #পর্ব৪ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
230

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

ক্লান্ত বিকেলে আকাশে অল্প পরিসরে মেঘের আনাগোনা। বাতাসে মিষ্টি একটা ঘ্রান ভেসে আসছে যেমনটা বৃষ্টি আসার আগে পরিবেশে পাওয়া যায়। আনায়া তার ব্যালকনিতে বসে চোখ বুঝে বাতাসের সাথে আসা ঘ্রানটা অনুভব করছে। পরিবেশটা অনুভব করার মতোই। আনায়া অধির আগ্রহের সাথে বসে আছে কখন বৃষ্টি আসবে আর সে তা গায়ে মাখবে। আনায়ার চোখ বুজে থাকার মাঝেই ঝিরিঝিরি শব্দে বৃষ্টি পড়া শুরু করল। জানালার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে হাত বাহিরে বের করল আনায়া। হাতের ওপর পড়া বৃষ্টির পানি গুলো মুখের ছিটাচ্ছে। হটাৎ কিছু মনে পড়তেই আনায়া দৌড়ে ঘরে এলো। চুরির বক্স থেকে দুই হাত ভর্তি রেশমি চুরি পরে আবার বেলকনিতে গেল। হাত বাড়িয়ে দিল বিষ্টিকে ছোয়ার প্রয়াসে। বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দের সাথে চুরির রিনঝিন শব্দটা যেন মাদকতার সৃষ্টি করছে। আনায়া বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে হাত নাড়াচ্ছে আর খিল খিল করে হাসছে। মনে হচ্ছে ও আবার ওর কিশোরী বয়সের ফিরে যাচ্ছে। কিশোরী বয়সে বৃষ্টি হলেই ছুঁটে চলে যেত ছাদে। যতক্ষণ বৃষ্টি হত ততক্ষন ভিজতো। মাঝে মাঝে জ্বরও চলে আসতো। তবুও ওকে কেউ বৃষ্টিটে ভিজা থেকে এটাকে পারতো না।

আনায়ার বাড়ির সামনে গাড়ির ভিতর থেকে এক যুবক মুগ্ধ নয়নে চেয়ে দেখছে আনায়া নামক রমণীর বৃষ্টিবিলাস। বৃষ্টির মাঝে রমণীর চুরির রিনঝিন শব্দ তাকে এক ঘরের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। এই রমণী যদি ভুলেও জানতে পারতো তার চুরির রিনঝিন শব্দ কারো মনে ঝড়ো হাওয়ার সৃষ্টি করে তাহলে হয়তো কখনোই এরূপ কাজ করতো না। যুবকটির এখন বৃষ্টির প্রতি অনেক হিং*সে কাজ করছে। এই যে বৃষ্টি নীরবে তার প্রিয়সীকে ছুঁয়ে দিচ্ছে সেটা তার একটুও সহ্য হচ্ছে না। তার প্রিয়সীকে কেন অন্য কেউ ছুঁয়ে দিবে? অন্য কারো আগমনে প্রিয়সীর ঠোঁটের ভাঁজে কেন হাসি ফুটে উঠবে? এসব ভাবনার মাঝেই কেউ একজন বলে উঠল,
“স্যার, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে মিটিংয়ে সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে”

জরুরি মিটিং থাকায় এই বৃষ্টির মাঝেই অর্ণব বেরিয়েছে। আনায়ার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কি মনে করে যেন তাকিয়েছিল। এই তাকানোই যেন তার জন্য সর্বনাশ ডেকে নিয়ে এল। ড্রাইভিং সিটে বসা তাপস কে দ্রুত গাড়ি থামাতে বলল। অতঃপর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বৃষ্টি বিলাসী প্রিয়সীর পানে। প্রিয়াসীর নেশায় ডুবে ভুলে বসেছিল সব কিছু। তার পি এ তাপস এর ডাকে হুস ফিরল। হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল। এখন যাওয়া দরকার নাহলে সত্যিই দেরি হয়ে যাবে।
“গাড়ি স্টার্ট না দিয়ে এখনো বসে আছো কেন? আমার দিকে এভাবে বেক্কলের মতো হা করে তাকিয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি চলো”

তাপস অর্ণবের এরূপ আচারণে পুরো বেক্কেল হয়ে গেছে। একটু আগেই অর্ণবই তো তাকে গাড়ি থামাতে বলল। আর এখন তাকে বকছে। তার স্যার তার সাথে এরূপটা করতে পারলো?মনে এক আকাশ দুঃখ নিয়ে তাপস গাড়ি স্টার্ট দিল।

বৃষ্টি শেষে আনায়া ঘরে প্রবেশ করল। গায়ের জামা বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজে গেছে, দ্রুত পরিবর্তন করা প্রয়োজন। আনায়া জামার তাক থেকে একটা জামা টান দিতেই তার ভিতর থেকে একটা কাগজ পড়লো। আনায়া কাগজটি তুলে হাতে নিল। তার কাপড়ের ভাঁজে কাগজ কোথা থেকে আসবে। কৌতহল হচ্ছে মনে, কৌতূহলের বসে কাগজটা খুলল।

“প্ৰিয় মায়াবতী”
বিষ্টির টিপ টিপ ফোঁটা যখন ধরণীতে ঝরে পড়বে। তখন তুমি গাঁয়ে আটপৌরে ভাবে লাল শাড়ি জরিও। চোখে গাঢ় কাজল। হাতে রেশমি চুরি, বেলি ভুল দিয়ে খোপা বেধো চুল। সাথে থাকবে নুপুরের রুণঝুন শব্দ। আমি তোমার চরণ নিজের উরুর ওপর রেখে যতনে তা রাঙিয়ে দিবো লাল আলতায়। অতঃপর তোমার ওই নেশালো চরণে একে দিবো গভীর এক চুম্বন। তুমি লাজে রাঙা হয়ে ছুটে পালাবে ছাদের দিকে। আমিও ছুটবো তোমার পিছু পিছু। তখন হওয়ায় তোমার ওই দিঘল আঁচল উড়বে, পরিবেশে তোমার নুপুরের রুণঝুন শব্দের প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়বে । তুমি খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিকে গাঁয়ে মাখবে আর আমি তোমার রূপে বারেবার মুগদ্ধ হবো। বৃষ্টির তোপে তোমার ওষ্ঠ যুগল যখন শীতল হয়ে আসবে তখন আমি নিশ্চুপে তোমার ওই গোলাপ রঙা ওষ্ঠদয়ে উষ্ণতা ছুঁইয়ে দিবো। তুমি লজ্জায় নিজেকে মুড়িয়ে নিবে। আমি মুগদ্ধ চোখে তোমায় দেখবো নয়ন ভরে

ইতি
তোমার গোপন প্রেমিক

আনায়া চিঠিটা বুঁকের মাঝে জড়িয়ে নিল। মনে পড়ে গেল পুরোনো কথা। কিশোরী বয়সে চিঠিটা পড়ে সেকি লজ্জা পেয়েছিল সে। তার গাল গুলো লজ্জায় রাঙা হয়ে গিয়েছিল। মনে মনে চিঠির পুরুষটিকে “অসভ্য পুরুষ” নামে আখ্যা দিয়েছিলো। ওকে ব্লাসিং করতে দেখে অর্ষা ওকে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,
“কিরে তুই এরকম ব্লাসিং করছিস কেন? তোর গাল গুলো তো পাকা টমেটোর মতো হয়ে যাচ্ছে”

লাজুক আনায়া তখন কিছু বলতে পারেনি অর্ষা কে।কি বলবে ও, ওতো তখন চিঠির পুরুষের ভাবনায় বিভোর ছিল। সেই লাজুক আনায়া এখন আর নেই। সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করেছে। ওর মনে প্রশ্ন জাগলো সব চিঠি তো ও গোপন ড্রায়ারে রেখেছিল, তাহলে এটা এখানে এল কিভাবে? হয়তো মনের ভুলে রয়ে গেছে। বুক চিরে বেরিয়ে এল দীর্ঘনিশ্বাস। কাগজটা গোপনা ড্রয়ারে রেখে চলে গেল ফ্রেশ হতে।

নীলিমা আর মিহির জোড়া জুড়িতে আনায়াকে শপিং এ আসতো হলো। ওর কোনো ইচ্ছার ছিলো না আসার। দুজনে ওকে ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে।
“তোমাদের শপিং করা দরকার তোমরা আসতে। আমাকে ধরে বেঁধে নিয়ে এলে কেন?”

নীলিমা বলল,
“বাড়িতে মেয়ে বলতে তুমি, আমি আর মিহি। আমরা রোদে শপিং করবো আর তুমি বাড়িতে বসে থাকবে তা তো হবে না ননদিনি। আর তুমি কেমন মেয়ে, সব মেয়ে যেখানে শপিং করার জন্য বায়না ধরে সেখানে তোমাকে ধরে বেঁধে নিয়ে আসতে হয়?”

মিহি ভেংচি কেটে বলল,
“ওতো মেয়ের কাতারেই পড়ে না ভাবি। নাহলে যেখানে সব মেয়েরা অর্ণব সিকদারের পিছনে পা*গল সেখানে ও তাকে ও পাত্তাই দিচ্ছে না”

আনায়া মিহির পিঠে ঠাস করে একটা থা*প্পড় লাগিয়ে দিল।
“আমি তোর বড় ভুলে যাস না। বড় বোনের সম্পর্কে এসব বলতে মুখে আটকায় না?”

মিহি পিঠ ডলতে ডলতে বলল,
“তুমি আমার পিঠটা জ্বালিয়ে দিলে। তোমার মনে কি একটুও মায়া দয়া নেই। সবার জন্য না হলেও আমার জন্য আর অর্ণব ভাইয়ার জন্য হলেও একটু তো মায়া করা শিখো”

“আমার মনে অনেক মায়া দয়া আছে। কিন্তু সেটা তোর আর তোর অর্ণব ভাইয়ার জন্য এক ফোটাও নেই”

এভাবেই ঝগড়া করতে করতে ওরা পৌঁছে গেল শপিং মলে। ড্রেসের দোকানে যেয়ে যে যার মতো ড্রেস দেখছে। আনায়ার কিছু কিনার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নীলমা জোর করার কিছু জামা দেখছে। কিন্তু কোনোটাই ওর পছন্দ হচ্ছে না। হটাৎ কানে ভেসে এল একটা মিষ্টি ডাক,
“মায়াবতী”

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না যেন। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here