#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৮
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
সূর্যের ঝলমলে আলোয় উজ্জ্বল ধরণী। শুক্রবার সবার ছুটির দিন। আনায়া সোফায় শুয়ে টিভিতে মুভি দেখছিলো। আবির এসে ওর পাশে বসল। ওর হাত থেকে টিভির রিমোট নিয়ে নিল। আনায়ার মেজাজ খারাপ হলো।
“কি হলো রিমোট নিলি কেন? দেখছিস না মুভি দেখছি”
আবির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বলল,
“মুভি দেখে কি করবি? নিউজ দেখ, দেশের খবর রাখ”
“নিউজ দেখে কি হবে? তোর বন্ধু যে দেশের এমপি সে দেশ এমনিও রসাতলে যাবে অমনিও রসাতলে যাবে”
“তোর ভবিষ্যত বরের সম্পর্কে এসব বলতে তোর বিবেকে বাঁধলো না?”
আনায়া দাঁত কেলিয়ে বলল,
“সত্যি কথা বলতে আমার একটুও বিবেকে বাধে না। আর সেটা যদি হয় তোর এমপি বন্ধুর বিষয়ে তাহলে তো আরো আগেই বিবেকে বাধে না”
আবির চ্যানেল চেঞ্জ করে নিউজ চ্যানেল দিল। নিউজে দেখাচ্ছে কিছু এমপি মন্ত্রী সভায় বক্তৃতা দিচ্ছে। তাঁদের মাঝে আনায়ার চোখ গিয়ে আটকালো সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত সুদর্শন, সুঠামদেহী অর্ণবের ওপর। অর্ণবের পরনে সাদা পাঞ্জাবী পায়জামা, পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। অর্ণবের ফর্সা হাতে কালো ঘড়ির যেন ফুটে উঠেছে। চোখে রোদ চশমা পরিহিত অর্ণবকে পুরো মুভির হিরোদের মতো লাগছে। আনায়ার মাঝে মাঝে মনে হয় অর্ণবের এমপি না হলে মুভির হিরো হওয়ারা দরকার ছিলো। হয়তো ভুলে হিরো হতে যেয়ে এমপি হয়ে গেছে। আনায়া কথাটা ভেবে মনে মনে হাসল। অর্ণব মাইক হাতে নিল বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। আনায়া অধির আগ্রহে বসে আছে অর্ণবের বক্তৃতা শোনার জন্য। লোকটা ওর সামনে যেমন হাস্যজ্জল রাজনীতির ময়দানে কি সে তেমনি? আনায়ার ধারণা ভুল প্রমান করে অর্ণব গম্ভীর কণ্ঠে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করল। আনায়া মনোযোগ দিয়ে অর্ণবের কথা গুলো শুনছে। অর্ণবের কথা বলার ধরণে মনে হচ্ছে একজন এমপি কথা বলছে। কিন্তু আনায়ার সামনে তার ব্যক্তিত্ব আলাদা। অর্ণব যখন আনায়ার সামনে থাকে তখন এক অন্য অর্ণবকে লক্ষ্য করা যায়। যার মধ্যে কেয়ারিং, হাস্যজ্জল, দুস্টু সত্তা দেখা যায়। মিহি শব্দ ধপ করে আনায়ার পাশের সোফায় বসল। আনায়ার সেদিকে ধ্যান নেই। ও তো অর্ণবকে দেখায় মগ্ন। মিহি হাল্কা কাশি দিয়ে বলল,
“প্রেমে পড়ে গেলে নাকি আপু?”
“হ্যাঁ”
এতক্ষনে আনায়ার ধ্যান ভাঙলো। মিহির কথা ওর কর্ণগোচর হয়নি।
“কিছু বললি?”
মিহি শব্দ করে হেসে দিল ওর সাথে আবিরও যোগ দিল। আনায়া হটাৎ দুজনের হাসির কারণ বুঝতে পারল না। মিহি আর আবির হাসছে আনায়া বেক্কেলের মতো ওদের হাসি দেখছে। কিন্তু দুজনের হাসি থামার নামই নিচ্ছে না। আনায়ার রাগ হলো। কি এমন হয়েছে যে এতো হাসছে দুজন।
“আজব! কি এমন হলো যে দুজন একেবারে হাসতে হাসতে ম*রেই যাচ্ছ?”
মিহি হাসি থামানের চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হয়ে আবার হেসে দিল। নীলিমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ওদের দুজনকে হাসতে দেখে বলল,
“তোরা এভাবে হাসছিস যে? একটু পর তো হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাবি”
মিহি হাসি থামিয়ে বলল,
“আর বলো না ভাবি। আপু মনোযোগ দিয়ে টিভিতে অর্ণব ভাইয়ার বক্তৃতা শুনছিলো। আমি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম ‘প্রেমে পড়ে গেলে নাকি আপু?”। আপু ভাইয়াকে দেখায় এতটাই মগ্ন ছিলো যে আমার প্রশ্ন ঠিক মতো না শুনেই “হ্যাঁ” বলে দিল”
এবার মিহিদের সাথে নীলিমাও যোগ দিল। আনায়ার এখন নিজেকে নিজেরই থা*পড়াতে ইচ্ছে করছে। কেন যে ও ওই অ*সভ্য লোকটাকে এতো মনোযোগ দিয়ে দেখতে গেল। না ও অর্ণবের দিকে এতটা মগ্ন হতো না এরা ওকে নিয়ে মজা করতো।
নীলিমা হাসতে হাসতে বলল,
“বেচারি ভুলে সত্যিই কথা বলে ফেলেছে তাই জন্য তোমার ওকে নিয়ে হাসবে এটা কিন্তু মোটেই ঠিক না”
“ভাবি শেষ পর্যন্ত তুমিও শুরু করলে”
“ঠিক আছে আর মজা করবো না”
নীলিমা আনায়ার থুতনিতে ধরে বলল,
“ননদিনি ঘটনা কি সত্যি? তবে কি অতি তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে সানাই বাজতে চলেছে?”
“তোমরা ওই আশায়ই বসে থাকো”
আনায়া গট গট পায়ে নিজের ঘরে চলে এল। সোজা ব্যালকনি চলে গেল। ফুরফুরে বাতাস বইছে। ফুরফুরে বাতাসে আনায়ার মনটাও ফুরফুরে হয়ে গেল। ভাবনায় উঁকি মারছে অর্ণব নামক সুদর্শন পুরুষ। মানুষটা চমৎকার ব্যক্তিত্তের অধিকারী। এইযে একজন সংসদ সদস্য হয়েও আনায়াকে সময় দিতে সে একটুও ভুলে না। হুটহাট উদয় হয়। আনায়া মাঝে মাঝে চমকায়। মাঝে মাঝে খুব করে ইচ্ছে করে মানুষটার প্রেমে পড়তে। এতটা কেয়ারিং একজন পুরুষের প্রেমে পড়তে কে না চাইবে? কিন্তু অতীত স্মরণ হলে আনায়া পিছিয়ে আসে। বিষাদের স্মৃতি গুলো তারা করে। তখন ভালোবাসা আর পুরুষ মানুষ দুটোর প্রতি ঘৃ*ণা চলে আসে। আনায়া মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সব মানুষ এক না, তুবও কোনো যেন কথাটা নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারে না। ভয় হয়, যদি অতীতের পুনরাবৃত্তি হয় তখন? তাই আনায়া সামনে পা বাড়াতে গিয়েও নিজেকে গুটিয়ে নেয়। বিষাদ যে বড্ড ভয়ংকর। সেই ভয়ঙ্কর বিষাদে নিজেকে আর ভাসাতে চায় না। আনায়ার ভাবনার মাঝে পাশে রাখা ফোনে টুং করে শব্দ হলো। আনায়ার ধ্যান ভাঙলো। আনায়া ফোন অন করে চোখের সামনে ধরল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল হুমকি স্বরূপ বার্তা।
“আকাশে বোধ হয় বেশি উড়ছো, পাখি। ডানা কিন্তু খুব শীঘ্রই ছেটে দিবো। অর্ণব সিকদারের থেকে দূরে থাকো। নাহলে ভবিষতে যা হবে সেটা তোমার বা তার কারো জন্যই ভালো হবে না”
বার্তাটা দেখে আনায়ার ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে গেল। কে পাঠালো এমন বার্তা? বিষয়টা আনায়াকে ভাবাচ্ছে। চট করে আনায়ার মাথায় নিশান নামকটা এল। নিশান পাঠায়নিতো? কিন্তু ও আনায়ার নাম্বার পাবে কোথা থেকে? আনায়া নাম্বারটায় কল দিল। ফোন রিসিভ হলো না। বাজতে বাজতে কেটে গেল। আনায়া নাম্বারটা ব্লক করে দিল। এরকম ছোটো খাটো হুমকিতে আর যাই হোক সেহেরিশ আনায়া ভয় পায় না। পূর্বের আনায়া হলে হয়তো ভয় পেত।
রাতে খাবার খেয়ে আনায়া ঘরে এসেছে। এর মধ্যে খাটের পাশে রাখা ওর ফোন বেজে উঠল। আনায়া ফোন হাতে নিয়ে দেখল স্ক্রিনে “অসভ্য লোক” নামটা জ্বল জ্বল করছে। আনায়ার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। আনায়া ফোন রিসিভ করার আগেই কেটে গেল। মুহূর্তের ব্যবধানে আবারও ফোন বেজে উঠল আনায়া দেরি না করে রিসিভ করল। ওপাশ থেকে অর্ণবের সুমধুর স্বরে সালাম শোনা গেল। আনায়া সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যাস্ত মানুষ ফ্রি হলেন কখন”
“ব্যস্ততা তো থাকবেই সংসদ সদস্য বলে কথা। কিন্তু আনায়া নামক রমণীর জন্য আমি সব সময় ফ্রি। সে যখন চাইবে তখনই আমাকে পাবে”
আনায়া কোনো উত্তর করল না। অর্ণব পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
“মন খারাপ?”
“না”
অর্ণব দুস্টু হেসে জিজ্ঞেস করল,
“আমায় মিস করছো বুঝি?”
“যদি বলি হ্যাঁ”
“খুশিতে আমি পাগল হয়ে যাবো”
আনায়া দুঃখী হওয়ার ভান করে বলল,
“শুধু এবং শুধু মাত্র এই জন্যই আমি আপনাকে মিস করছি না। যদি এই খুশিতে আপনি পাগল হয়ে যান তখন এদেশের কি হবে?”
ওপর পাশ থেকে অর্ণবের হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রাণ খোলা হাসি যাকে বলে।
“তুমি আমার যে একটু হলেও আমার কথা ভাবো বিষয়টা জেনে ভালো লাগলো। এই ভালো লাগাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে আমার নামে ‘কবুল’ পড়ে ফেল তাহলেই তো হয়”
“অসভ্য পুরুষ”
#চলবে?
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটি কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না যেন। ধন্যবাদ )