নিশীভাতি #৬২তম_পর্ব

0
169

#নিশীভাতি
#৬২তম_পর্ব

দুদিন বাদে পুলিশ এলো তল্লাশীতে। সারা বাড়ি তল্লাশী করে অবশেষের পুকুরের পাশের ঝোঁপের গর্তে পাওয়া গেলো একটি রক্তমাখা চাইনিজ চপার। হাবিলদার একটি রুমালে পেঁচিয়ে এস.আই এর কাছে চপারটি নিয়ে এলো। এস.আই এর কপালে প্রখর ভাঁজ পড়লো। উপস্থিত সকলের মাঝে উত্তেজনার জন্ম নিলো। হুমায়রা, ইলহা এবং আতিয়া খাতুনের মুখে ভীতি জন্মালো। এই অ’স্ত্র তাদের ঘরে কি করে এলো? তাও পুকুরের পাশে গর্ত করে রাখা। এস.আই গম্ভীর স্বরে বললো,
“ফরেন্সিকে পাঠাও। এই রক্ত আর কাওছারের রক্ত মিলে কি না। আর কোনো ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায় কি না”

হাবিলদার “জি স্যার” বলে অ’স্ত্রখানা একটি জিপার ব্যাগের ভেতর রাখলো। এস.আই সাহেব এবার সবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। বাড়ির কর্তা রাশাদ সেখানে উপস্থিত ছিলো। রাশাদের উদ্দেশ্যে সে শুধালো,
“চপারটি আপনার বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে রাশাদ সাহেব। এ বিষয়ে আপনার কি বক্তব্য?”
“আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না”
“আপনার বাড়িতে নিশ্চয়ই অন্য কেউ অ’স্ত্র পুতে রাখবে না। দেখুন সন্দেহের তালিকায় কিন্তু আপনারা সবাই প্রথম থেকেই আছেন। যদি চপারের ব্লাড আর কাওছারের ব্লাড ম্যাচ করে তাহলে কিন্তু আমরা নিশ্চিত হবো এই খু’নে এই বাড়ির কেউ ই জড়িত। আমরা এরেস্ট ওয়ারেন্ট বের করতে বাধ্য হবো কিন্তু”
“আপনারা পুলিশ, তদন্ত করা দায়িত্ব আপনাদের। করুন তদন্ত”

নিরস স্বরে উত্তর দিলো রাশাদ। তার উত্তরে অপ্রসন্ন হলেন এস.আই। ক্ষীপ্র স্বরে বলল,
“আগামীবার ওয়ারেন্টসহ ই আসবো”

রাশাদের মুখাবয়ব অবিচলিত, শান্ত। তাকে খুব একটা উদ্বিগ্ন দেখা গেলো না। আশেপাশের জড়ো হওয়া মানুষের মাঝে কৌতুহল। তাহলে কি রাশাদ ই কাওছারকে খু’ন করলো। প্রশ্নের উত্তরটা সন্দেহরুপে বিরাজ করলো তাদের মাঝে। পুলিশ অপেক্ষা করলো না। বেরিয়ে পড়লেন গাড়ি নিয়ে। পুলিশ যেতেই ইলহা ভীত স্বরে শুধালো,
“আমাদের পুকুর থেকে ঐ বৃহদাকার ছু’রিটা পাওয়া গেলো কি করে?”

ইলহার মাঝে বেশ উদ্বিগ্নতা দেখা গেলো। গর্ভাবস্থায় সামান্য ব্যাপারেই ভয় তীব্ররুপ ধারণ করে, এখানে তো ভয়ের কারণ বিশাল। অথচ রাশাদ শান্ত। বিস্ময়, কৌতুহল কিছুই নেই তার মাঝে। যেনো সে জানতো এমনটাই হবে। তার ঘর থেকেই চপারটা পাওয়া যাবে। ইলহাকে পানি এগিয়ে দিলো হুমায়রা। মৃদু সান্ত্বনা দিয়ে বললো,
“ভাবি, চিন্তা কর না”

কিন্তু কথাটা নিজের মনকেই শান্ত করতে পারছে না। দ্রুত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুব পীড়া দিচ্ছে। ফাইজান গতকাল ঢাকা গিয়েছে। বিকালের দিকে হুট করেই নাদিম এলো। গুরুত্বপূর্ণ পার্টির কাজে তাকে যেতে হয়েছে। এর মাঝেই এমন কিছু ঘটলো। সব কিছুই যেনো পরিকল্পিত। হুমায়রার সন্দেহটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে খুব বাজে কিছু ঘটতে চলেছে। কিন্তু কি?

*****

স্বচ্ছ বিকেলের কড়া রোদ থাই গ্লাস ভেদ করে প্রবেশ করছে ঘরে। মোজাইকের মাটিটা একেবারে শীতল হয়ে আছে এসির তাপমাত্রায়। ঘরের তাপমাত্রা বাইশ। অথচ বাহিরে যেনো লাভা গলে পড়ছে। ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো ফরিদ। চেয়ার টেনে বসলো সে। বাহিরের গরম থেকে একেবারে শীতলতায় প্রবেশ করায় সমস্ত শরীর এক লহমায় শীতল হয়ে গেছে। সম্মুখে বসা পুরুষ তাকে দেখেই হাসলো। সম্ভাষণ করে বললেন,
“অবশেষে দেখা দিলেন?”
“এত অনুরোধ ফেলি কি করে?”

লোকটির সাথে মিলিয়ে হাসলো ফরিদ। লোকটির চেয়ারের পেছনে বৃহদাকার একটি ফ্রেম। তাতে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চাদর নেওয়া অবস্থায় কেতাব চৌধুরীর ছবি। ফরিদ একবার ছবিটির দিকে তাকালো। নিজের একমাত্র অর্জন যেনো চিৎকার করে দেখানো হচ্ছে। ফরিদ নিঃশব্দে হাসলো। চুলগুলো পেছনে টেনে বলল,
“এবার বলুন, আমার মতো ভৃত্যের সাথে আপনার কি কাজ?”
“এলেন ই তো মাত্র, এখন ই কাজের কথা বলবো? একটু আপ্যায়ন করার সুযোগ দিন”
“নিজের ভাই থেকে আপনি বেশ অনেক আলাদা জব্বার সাহেব। আজ অবধি কেতাব সাহেব আমাকে পান খাওয়ার অফারও দেন নি”
“ভাইছা একটু রাগী মানুষ, আমি তেমন না। মাটির সাথে মিশে থাকতেই আমি পছন্দ করি। দর্প জিনিসটা একেবারেই আমার মাঝে নাই”
“মাটির সাথে থাকেন নাকি মাটিতে মিশিয়ে দিতে বেশি পছন্দ করেন?”

জব্বার কুৎসিত করে হাসলো। তার হলদেটে দাঁত দেখা গেলো সেই হাসিতে। হাত ডলতে ডলতে কাঁচুমাচু করে বলল,
“আমি কিন্তু নিজ হাতে কিছুই করি নাই, ভাইছার আদেশ মাইনেই কাজ করিছি। আমার ভাইছাও আমাকে খুব পছন্দ করেন। আমার উপর তার বিশ্বাস অনেক। রাজনীতিতে বিশ্বাসটা অনেক দরকার। কারণ শত্রু কখন ছোবল দিবো বোঝা দায়। এই যে দেহেন ফাইজান, বয়সের তুলনায় বেশি আত্মবিশ্বাসী। ওর ধারণা ওরে কেউ দমাইতে পারবো না। কিন্তু এইডা ভুল। বুঝি না আপনার মতো মানুষ তার পাশে থাহা সত্ত্বেও হে ভুল করে। আপনে কি কম সইছেন? ওর জন্য আপনের বোনডাও অকালে চইলে গেছে। তবুও কদর করে না আপনার”
“আপনি এগুলো বলতেই ডেকেছেন আমাকে? দেখুন, প্রতিমন্ত্রীর সেক্রেটারি হিসেবে আমার কাজ কম নয়। তাই আমার সময় নষ্ট করবেন না”
“জানি, জানি। খাড়ান একটু চায়ের ব্যাবস্থা করি”

বলেই জব্বার সাহেব “হুসনেয়ারা” বলে কাওকে ডাকলো। একজন পরিপাটি শাড়ি পড়া মহিলা চা বিস্কিট নিয়ে এলেন। ফরিদ তার দিকে তাকিয়ে রইলো। কেনো যেনো চেনা চেনা লাগছে। মনে পড়ছে না মানুষটিকে কোথায় দেখেছে সে।

******

বহু দিন পর নিজের অফিসে এসেছে ফাইজান। অনেকগুলো কাগজে তার সই প্রয়োজন। কাজগুলো অনেক পিছিয়ে গেছে। অনেকগুলো বিল জড় হয়ে আছে এক মাসের। তার একান্ত সচিবের দুজনের একজন ফরিদ, অপরজন তানভীর নামক একজন ব্যক্তি। গতমাসে তার একবার অস্ট্রেলিয়া ট্যুর ছিলো। কিন্তু দূর্ঘটনায় সেটা বাতিল হয়েছে। মন্ত্রাণালয়ের অনেক কাজ ই তাই এলোমেলো হয়ে আছে। তানভীর প্রথমেই অনেকগুলো চেক এ সই নিলো ফাইজানের। এর মাঝেই তার ফোনটা বেজে উঠলো, একাগ্রতার মাঝে ছেদ পড়লো বাজে ভাবে। একনজর ফোনে বুলিয়েই সে আবার কাজে মনোনিবেশ করলো। বাজতে বাজতে একটা সময় ফোনটা থেমে গেলো। তানভীর মৃদু স্বরে বললো,
“স্যার আপনি ফোনটা ধরুন, আমি পড়ে আসছি”
“ফোনটা জরুরি নয় এখন। কিন্তু কাজগুলো এখন ই কথা জরুরি”

তানভীর কথা বাড়ালো না। অপরদিকে ফোনদাতা ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলো। ভাবলো মানুষটি বোধহয় খুব ব্যস্ত।

******

মধ্যরাত। জানালার শিক গলে প্রবেশ করছে উষ্ণ বাতাস। সেই বাতাসে নড়ছে ময়লা পর্দাটা। রাশাদ পর্দাটা সরিয়ে দাঁড়ালো। তার দৃষ্টি নিগূঢ় আঁধার নিবদ্ধ। ইলহা ঘুমে। খায় নি মেয়েটি ঠিক ভাবে। যা খেয়েছে তাই উগড়ে দিয়েছে। কোমল মুখখানা মুর্ছা গেছে ধকল। এখন একটু ঘুমাচ্ছে। রাশাদ এক পল দেখলো স্ত্রীকে। পরমুহুর্তেই দৃষ্টি বাহিরে সরিয়ে দিলো। দৃষ্টি ম্লান, চিন্তার মেঘ মস্তিষ্কে। অনেককিছু একত্রে হচ্ছে। কিন্তু এর মাঝে সব থেকে বেশি ভাবাচ্ছে ইলহা। মেয়েটি এই তো অবস্থায় এই ধকলগুলো কি নিতে পারবে! রাশাদ জানালা থেকে সরে এলো। বসলো ইলহার পাশে। কাথাটা সরে গেছে। সেটা ঠিক করে দিতেই খেয়াল করলো মেয়েটি অস্পষ্ট স্বরে কিছু বিরবির করছে। নেত্রপল্লবগুলো ভেজা। মুখখানা মলিন। রাশাদ একটু নড়ে চড়ে উঠলো। হাতটা মুখে রাখতেই চমকে চোখ মেললো ইলহা। তাকে দেখেই দ্রুত তার হাতখানা ধরে ফেললো। ব্যাথিত স্বরে বললো,
“আমি আপনাকে কোথাও যেতে দিবো না। আপনি আমার কাছে থাকুন”

ইলহার কপালে ঘামের পরদ। ঠোঁটের উপরে জমেছে ভয়ের স্তর। সে কাঁপছে। তার এমন অবস্থাতে হতবিহ্বল হলো রাশাদ। অবাক স্বরে বললো,
“আমি তো আপনার কাছেই আছি। কোথাও যাচ্ছি না”
“কিন্তু ওরা তো আপনাকে নিয়ে যাবে”
“কারা নিয়ে যাবে?”

রাশাদের কথায় ঘোর থেকে বাস্তবে ফিরলো ইলহা। শরীর কাপছে এখনো। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেললো কিছু সময়। তারপর ধীর গলায় বললো,
“আমার ভয় হচ্ছে নাতীসাহেব। খুব ভয় হচ্ছে”

রাশাদ এক মুহূর্ত দেরি না করে বুকে মিশিয়ে নিলো ইলহার ক্ষুদ্র শরীরটাকে। এখনো ঈষৎ কাঁপুনি আছে। একটা সময় পর ক্ষান্ত হলো মেয়েটি। তবে রাশাদকে ছাড়লো না। শক্ত করে তার কোমড়ের কাপড় ধরে রাখলো। রাশাদ এক হাতে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“আমি কোথাও যাবো না, আপনাকে আর আমার মেয়েকে ছেড়ে আমি কোথায় যাবো বলুন?”

ইলহা তার বুক থেকে মুখ তুললো। মৃদু স্বরে শুধালো,
“মেয়ে হবে, জানলেন কি করে?”
“মন বলছে, আমার মেয়ে হবে”
“ছেলে হলে বুঝি আদর করবেন না”
“সেটা কি বলেছি? তবে আমি চাই আমার যেনো মেয়ে হোক। নিন এবার ঘুমান”
“এভাবে থাকি আরো কিছুক্ষণ”

ইলহার নিষ্পাপ আকুতি ফেলাতে পারলো না রাশাদ। বুক মাথাটা চেপে ধরে বসে রইলো। একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটি। রাশাদ তবুও তাকে আগলে রাখলো। মলিন স্বরে বললো,
“আপনার থেকে বেশ কিছুদিন আমার দূরে থাকতে হবে ইলহা, তখন নিজেকে এবং আমাদের সন্তানকে দেখে রাখার দায়িত্ব আপনার। হাল ছাড়বেন না। আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। আমি ঠিক ফিরবো”

*******

শুক্রবার বিকালে ঢাকা থেকে গ্রামে এলো ফাইজান। এই কয়দিন হুমায়রার সাথে তার যোগাযোগ হয় নি। হুমায়রা ফোন করলেও ধরে নি সে। বিকালের ম্লান রোদে পুকুরের পাশে বসে ছিলো হুমায়রা। কোলে বকুল ফুল। একটি সুতোয় গাঁথছিলো সে। দাদীর হাকে ছুটে আসতেই দেখলো ফাইজান এসেছে। কিন্তু হুমায়রার মাঝে খুব একটা প্রসন্নতা দেখা গেলো না। মানুষটির মাঝে কিছু পরিবর্তন লক্ষ হচ্ছে যেনো। হুমায়রাকে যেনো এড়িয়ে যাচ্ছে সে। আতিয়া খাতুন বললেন,
“হা করে কিতা দেহোস, জামাইরে ঘরে নিয়ে যা”

হুমায়রা মাথা নেড়ে বাধ্য মেয়ের মত কাজটি করলো। ফাইজান তার ঘরে প্রবেশ করতেই সে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আপনি আমার ফোন ধরেন নি কেনো এই কয়দিন, খুব ব্যস্ত ছিলেন বুঝি?”
“হ্যা, একমাসের কাজ তিনদিনে করেছি। ব্যস্ত তো ছিলাম”

হুমায়রা আর কিছু শুধালো না। ফাইজান পালটা শুধালো,
“রেজিস্ট্রেশন করতে কলেজে গিয়েছিলে?”
“রবিবার করবো”
“করে ফেলো। আর পড়াশোনা করো, পরীক্ষা তো খুব দূরে না”

হুমায়রা ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো। ফাইজান একবার চাইলো হুমায়রার দিকে। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো,
“আমি আসলেই ব্যস্ত ছিলাম”
“আমাদের বাড়ি থেকে অ’স্ত্র পাওয়া গেছে”

বিনা ভনীয় কথাটা বলল হুমায়রা। ফাইজানের মুখ খানিকটা শক্ত হলো। ধীর স্বরে বললো,
“হ্যা আমি জানি। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে”
“ওহ”

হুমায়রা আর কিছু শুধালো না। ফাইজানও কথা বাড়ালো না। নিচু স্বরে বললো,
“আমি একটু ঘুমাবো হুমায়রা। মাথা ব্যাথা করছে। মাথাটা টিপে দিবে”

হুমায়রা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দোলালো।ফাইজান শুয়ে পড়লো। শুয়ে পড়তেই রাজ্যের ঘুম জড়ো হলো তার নেত্রপল্লবে। বুজে এলো তা। হুমায়রা পাশেই বসে রইলো। নরম হাতেই আস্তে আস্তে টিপে দিলো ফাইজানের কপাল। ফলে একটা সময় নির্বিঘ্ন ঘুমে লিপ্ত হলো ফাইজান।

******

রবিবার সকালটি খুব বাজে রুপ নিলো। ফরেন্সিক রিপোর্টে চপারের রক্তের সাথে কাওছারের রক্ত ম্যাচ করেছে। শুধু তাই নয়। এই ছুরি দিয়েই যে কাওছারের খুন হয়েছে সেটাও প্রমাণিত হয়েছে। শুধু কোনো ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায় নি। সন্দেহের তালিকায় সবচেয়ে উপরে ছিলো রাশাদ। কারণ কাওছারের খুনের রাতে সেই ঘরে ফিরে নি। ফিরেছে রাত তিনটের পর। যদিও এই কথাটি প্রথমে লুকায়িত ছিলো। কিন্তু সবার সাথে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছিলো। তাই রাশাদকে কাস্টেডিতে নেওয়া হবে আজ। যদিও সন্দেহ সবার উপরেই, কিন্তু কোনো লাশটিকে ভাগ করার সময় যে বল প্রয়োজন তা একটা উনিশ বছরের মেয়ে অথবা একটি অন্তঃসত্ত্বা নারী বা একজন ষাটোর্ধ্ব নারীর হবে না। তাই সন্দেহের তীর রাশাদের উপরই রয়েছে। ফাইজান সেখানে উপস্থিত ছিলো। রাশাদের হাতে হাতকড়া পড়ানো হলো। হুমায়রা বাঁধা দিতে নিলেই ফাইজান তার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
“পুলিশকে তার করতে দেও”
“উনারা ভাইজানকে নিয়ে যাচ্ছে। ভাইজান কিছু করে নি”
“সেটা সময় আসলেই জানা যাবে”

ভাইজানকে পুলিশের গাড়িতে উঠতে ততটা পীড়া দিলো না যতটা ফাইজানের নির্লিপ্ত আচারণ লাগলো। এদিকে চাপ নিতে না পাড়ায় ইলহা জ্ঞান হারালো। রাশাদ যাবার সময় শুধু একটা কথাই বলেছিলো,
“ইলহার খেয়াল রাখিস”

আতিয়া খাতুন স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তার সংসারে কার নজর লাগলো। একটু কি সুখ পাবে না সে!

******

ঘরে এসেই উকিলের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো ফাইজান। কথা শেষে ফোন রাখতেই হুমায়রা প্রশ্ন ছুড়লো,
“ওরা আমার ভাইজানকে নিয়ে গেল। আপনি কিছু করলেন না কেন?”
“আমি কি করতাম?”

কঠিন স্বরে প্রশ্ন ছুড়লো ফাইজান। হুমায়রা বাকহারা হল। কিছু বলার পূর্বেই ফাইজান বললো,
“সবকিছুর একটা ওয়ে আছে হুমায়রা। আমরা সেই সেই নিয়মের দাস। আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি। উনি রাশাদ সাহেবের বেলের ব্যবস্থা করছেন”
“আপনারও ধারণা ভাইজান খুন করেছে”
“সেটা সময় বলবে হুমায়রা। ধৈর্য্য ধরো”

হুমায়রা কথা বাড়ালো না। অভিমান হলো খুব। সে জানে ফাইজান চাইলে সে ভাইজানকে ছাড়িয়ে আনতে পারে। কিন্তু ফাইজান এতো নির্লিপ্ত কেনো!

*****

রাশাদের বেল হলো না। কিন্তু এর মাঝেই মিডিয়াতে কেউ এই খবর লিক করে দিলো। ফলে হেডলাইন হলো, “প্রতিমন্ত্রী ফাইজান ইকবালের স্ত্রীর বড় ভাই জনাব রাশাদুল ইসলাম গ্রেফতার”…..

এই খবরে ফোনের পর ফোন আসতে শুরু হলো। কিছুক্ষণবাদে গাড়ি আসতেই ফাইজান বেরিয়ে পড়লো। যাবার আগে হুমায়রাকে বলে গেলো,
” কলেজ ব্যাতীত কোথাও যাবে না”

*****

মিডিয়া এবং সাংবাদিকের ভীড় জমেছে পার্টি অফিসের সামনে। প্রশ্নের মুখোমুখি দুবার হয়েছে ফাইজান। কিন্তু নিপুন ভাবে তাদের এড়িয়ে পার্টি অফিসে প্রবেশ করেছে। প্রবীন নেতাদের জমায়েত হয়েছে। ফাইজানের জন্য নাকি পার্টির নাম খারাপ হচ্ছে৷ এর মাঝে দু-তিন বার হুমায়রার ফোন এসেছে। কিন্তু মিটিং এর জন্য ধরতে পারে নি। বিকালের তপ্ত রোদ ধীরে ধীরে শুষে নিচ্ছে সন্ধ্যের গাড়ত্ব। পিয়ন খাবার নিয়ে এসেছে। মোটামুটি সব কিছু এখন আন্ডার কন্ট্রোল। এর মাঝেই ফরিদ ছুটে এল। নক ছাড়াই কেবিনে ঢুকে পড়লো ফাইজানের। সে হাপাচ্ছে। ত্রস্ত কণ্ঠে বললো,
“আমার মনে হচ্ছে হুমায়রা কোনো বিপদে পড়েছে”

তার কথায় কপাল কুঞ্চিত হলো ফাইজানের। বিরক্ত কন্ঠে বললো,
“মানে?”

কিছু বলার পূর্বেই ফাইজানের ফোন বেজে উঠলো। অচেনা নম্বর। ফাইজান ফোনটি ধরতেই আতিয়া খাতুন বৃদ্ধ স্বর কানে আসলো,
“জামাই, বুবু তো বাড়ি ফিরে নাই এখনো”

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here