প্রেমের_তাজমহল #পর্ব১০ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
155

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব১০
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আকাশে কালো মেঘের ঘন ঘটা। আনায়ার মনেও বিষাদের ঘন ছায়া। আকাশের কালো মেঘ বৃষ্টি রূপে বর্ষিত হলেও আনায়া নামক রমণীর বিষাদেরা কখনো ঝরে পড়ে না। তাদের যে ঝরতে মানা আছে। কঠোর বিধি নিষেধ। আনায়া এই বিষাদ বিলাসের মাঝে এক পাশলা বৃষ্টি রূপে হানা দিল অর্ণব নামক পুরুষটির ভাবনা। মানুষটা কাল রাতের পর আর কোনো খবর নিল না। না দিল ফোন আর না দেখা দিল সামনাসামনি। আনায়া কি অর্ণবকে মিস করছে? মিস করা কি অস্বাভাবিক কিছু? যেই মানুষটা বিগত কয়েকদিন যাবত ওর সকল খবর রাখছে, ওকে সময় দিচ্ছে হটাৎ করে মানুষটার অভাব বোধ করা অস্বাভাবিক কিছু না। আনায়া ফোন হাতে তুলে নিল অর্ণবকে ফোন করার উদ্দেশ্যে। নাম্বার ডায়াল করতে যেয়েও করলো না। ওর অসস্তি হচ্ছে। সকল ভাবনার অবসান ঘটিয়ে অর্ণবের নাম্বারে কল দিল। মুহূর্তে মেয়েলি মিষ্টি কণ্ঠে জানান দিল ওপর পাশের ব্যক্তিটি ব্যাস্ত আছে। আনায়া হতাশ হয়ে ফোনটা পাশে রেখে দিল। মুহূর্তের ব্যবধানে পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠল। আনায়া স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলে “অসভ্য লোক” নামটা ভেসে উঠেছে। আনায়ার মনে অভিমান জেগে উঠল। না সে ফোন ধরবে না। কেন ধরবে একটু আগে মানুষটা ব্যাস্ততা দেখিয়েছে এখন ও নিজেও ব্যস্ততা দেখাবে। ধরবে না ফোন। বাজতে বাজতে এক সময় কেটে গেল। এভাবে তিনবার বাজার পর আনায়ার মনে দয়া হলো। ফোন রিসিভ করে চুপচাপ কানে ধরে বসে রইল। অর্ণব কিছুক্ষন নীরবে প্রিয়সীর নিশ্বাসের শব্দ শুনলো।
“প্রিয়সীর অভিমান হয়েছে বুঝি?”

“ব্যস্ত মানুষের কি সময় আছে কারো অভিমানের খোঁজ নেওয়ার?”

“যার পুরো সময় প্রিয়সীর জন্য বরাদ্দ করা সে কিভাবে না জেনে থাকবে প্রিয়সীর অভিমান বার্তা। ব্যস্ততা তার না প্রিয়সীর”

“মোটেও না”

“ব্যস্ত না হলে প্রথম বারেই কল রিসিভ হতো, চতুর্থ বারে নয়”

“আপনি আমাকে চার বার কখন ফোন দিলেন? আমার ফোনে তো ৩টা কল এসেছে, তৃতীয় বারের বেলায় আমি রিসিভ করলাম”

“তারমানে?”

আনায়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তারমানে?”

“আমাদের ভালোভবাসার টান এতো বেশি যে একই সময় দূর থেকেও আমরা একে অপরকে মিস করছি”

“ভালোবাসা?”

“নেই বুঝি?”

আনায়া বেখেয়ালে বলল,
“থাকার কথা ছিলো কি?”

“হতে কতক্ষন?”

আনায়া কথা ঘুরাতে বলল,
“আপনার কাজ নেই? এই আপনাকে এমপি বানিয়েছে কে? আপনি আবার ভোট চুরি করে এমপি হননি তো?”

“তোমার মনের রাজা হওয়ার নির্বাচন হলে আমি ভোট চুরি করতেও রাজি আছি”

অর্ণব আনায়ার সাথে কথা বলছে এমন সময় তাপস এসে বলল,
“ভাই মিটিংয়ের সময় হয়ে গেছে”

অর্ণবের মুখ থেকে ‘চ’ সূচক শব্দ বের হলো। ধমকের সুরে বলল,
“তোদের জন্য কি এখন আমি শান্তি মতো ফোনেও কথা বলতে পারবো না?”

তাপস কিছু না বলে অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইল। নিজে এই সময় মিটিং ডেকে এখন ওর মতো বেচারা একটা ছেলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। নিজের হয়ে সাফাই গাইতে গেলে অর্ণব দিবে এক রাম ধমক তাই চুপ করেই রইল। অর্ণব আনায়াকে বিদায় দিয়ে মিটিংয়ে গেল।

আঁধারে নিমজ্জিত ঘরে রকিং চেয়ারে দুলছে এক যুবক। মস্তিষ্কে চলছে তার জ*ঘন্য লীলাখেলা। পরিকল্পনায় আছে কারো বিনাশ ঘটানো। এক ধফা পরিকল্পনা শেষে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠল। কি জঘন্য সেই হাসি। হাসিতে রয়েছে প্রতিশোধের নেশা, কাউকে ধ্বংস করার বিশ্রী নিয়ত। কারো কাছ থেকে তার প্ৰিয় সকল কিছু ছিনিয়ে নেয়ার নেশা । যেই নেশায় বুদ হয়ে আছে সে। আদোও কি সে তার পরিকল্পনায় সফল হবে? নাকি সব ভেস্তে দিয়ে পুনরায় জিতে যাবে প্রতিপক্ষ? কি হবে সেটা তো নিয়তির খেল।

রাতের ঘুটঘুটে আঁধারে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আনায়া। মৃদু বাতাস বইছে যা আনায়ার মনে প্রশান্তির ছোঁয়া দিচ্ছে। কারো হয়তো আনায়ার প্রশান্তি পছন্দ হলো না। ফোনে ম্যাসেজের টোন বেজে উঠল। আনায়া ফোন হাতে নিয়ে দেখল,
“ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম তোমায়, তবে শুনলে না। তাই অপেক্ষা করো নিজের কাছের মানুষের করুন রূপ দেখার জন্য”

আনায়ার বুঝতে দেরি হলো না বার্তাটা কে পাঠিয়েছে। আনায়া হতাশ, এই অতীত কি কখনো তার পিছু ছাড়বে না। সে যত চায় অতীত থেকে বেরিয়ে আসতে অতীত ওকে ততটাই ঘিরে ধরে। সে তো চলে গিয়েছিলো ওকে অপমান, অবহেলা করে। তবে কেন আবার ফিরে আসতে চাইছে? আনায়া তো তার ক্ষতি করেনি তবে? সে নিজেই এসেছিলো, আবার নিজের ইচ্ছেতে চলে গিয়েছে। মাঝে দিয়ে গিয়েছে এক মুঠো বিষাদের স্মৃতি। কিন্তু বার্তায় কাছের মানুষ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? অর্ণবকে? আনায়া ভেবে পেল না। ও হন্তদন্ত হয়ে যেই নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে সেই নাম্বারে কল দিল। কিন্তু ওকে হতাশ হতে হলো। নাম্বারটা বন্ধ। আনায়া সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নিল। আর যাই হোক ও চায় না ওর জন্য কারো ক্ষতি হোক। আনায়া ডুব দিল অতীতের পাতায়।

অতীত,
সদ্য নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ন হয়েছে আনায়া। বাবা-মা, দুই ভাই, বন্ধু বান্ধব, পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত কিশোরী সে। বাবা-মায়ের আল্লাদ, ভাইদের ভালোবাসা সব কিছু নিয়ে তার জীবন খুবই সুন্দর ভাবে চলছিলো।
হটাৎ আগমন ঘটলো এক চিঠির মালিকের। সাইন্স এর ছাত্রী ছিলো আনায়া। একদিন রাতের বেলা ম্যাথ করার জন্য উচ্চতর গণিত বই খুলতেই বেরিয়ে এলো একটা খাম। আনায়া খামটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন ওলোটপালোট করে দেখল কারো নাম লিখা আছে কি না। কিন্তু কোনো নাম বা ঠিকানা কিছুই পেল না। আনায়া ভেবে পাচ্ছে না ওর বইয়ের মধ্যে খাম কোথা থেকে এলো। অনেক ভেবেও কিছু না পেয়ে আনায়া খামটা টেবিলের ড্রায়ারে রেখে দিল। কাউকে যে খামের বিষয়ে বলবে সেরকম কাউকে খুঁজে পেল না। তখন চট করে মাথায় ওর বেস্ট ফ্রেন্ড অর্ষার নামটা এলো।

পরের দিন স্কুলে যেয়ে আনায়া সবার প্রথম অর্ষাকে চিঠির কথা বলল। অর্ষা কিছুক্ষন ভেবে বলল,
“খামটা কোথায়? দেখা দেখি”

আনায়া ঠোঁট উল্টে বলল,
“খামটা তো এখন আমার কাছে নেই”

“তাহলে কোথায়?”

“বাসায় রেখে এসেছি”

“কালকে মনে করে নিয়ে আসিস”

“ঠিক আছে”

আনায়া বাসায় এসে সাথে সাথে চিঠিটা স্কুল ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে রাখল। পরের দিন টিফিনের সময় দুই বান্ধবী মাঠের এক কোনায় বসল খামটা নিয়ে। অর্ষা কিছুক্ষণ খামটা দেখল। অতঃপর ছিড়তে নিবে এমন সময় আনায়া আতকে উঠে বলল,
“কি করছিস? কার না কার চিঠি ছিড়ছিস কোনো?”

“আরে বুদ্ধু দেখছিস না বাহিরে তো কিছুই লেখা নেই। হয়তো ভিতরে কিছু লিখা থাকতে পারে”

আনায়া আর বাধা দিল না। অর্ষা খামটা ছিড়তেই খামের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো এক খানা চিঠি। অর্ষা চিঠিটা না খুলে উল্টেপাল্টে দেখলো কারো নাম লিখা আছে কি না। কিন্তু বরাবরের মতো হতাশ হতে হলো ওদের। অর্ষা চিঠিটা খুলল পড়ে জন্য। আনায়া অসহায় মুখে বলল,
“অন্যের চিঠি খোলাটা কি ঠিক হবে?”

অর্ষা ওকে ধমক দিয়ে বলল,
“দেখছিস না কারো নাম নেই তাহলে অন্যের চিঠি কিভাবে হবে? এমন ও তো হতে পারে এটা তোর চিঠি”

আনায়া অবাক হয়ে বলল,
“আমার চিঠি কিভাবে হবে? আর কেই বা আমাকে চিঠি দিবে”

অর্ষা দুস্টু হেসে বলল,
“হতে পারে তোর কোনো আশিক”

আনায়া ওর মাথায় চাটি মেরে বলল,
“আমি টেনশনে ম*রে যাচ্ছি আর তুই মজা নিচ্ছিস?”

“তোমাকে কেউ বইয়ের ভাজে চিঠি দিবে আর আমি সত্যি বললেই দোষ। যত দোষ নন্দ ঘোষ”

“বকবক বাদ দিয়ে চিঠিটা পড়, দেখ কি লিখা আছে”

অর্ষা খুব মন দিয়ে চিঠিটা পড়া শুরু করলো। এক যুবকের তার মায়াবতীকে নিয়ে লেখা অব্যক্ত কিছু অনুভূতি। মায়াবতীকে প্রথম বার দেখে তার যে অনুভূতি হয়েছে, মায়াবতীর চোখের মায়ায় পড়ে তার নাজেহাল অবস্থা, এরূপ আরো প্রেমময় কিছু অনুভূতি যা সে এই চিঠিতে প্রকাশ করেছে। অর্ষা চিঠিটা পড়ছিলো আর আনায়া তার পাশে বসে মন্ত্র মুগ্ধের মতো শুনছিলো। চিঠিটা পড়া শেষে অর্ষা আনায়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“এই মায়াবতী টা কে রে?”

“আমি কিভাবে বলবো? তুই যেখানে আমিও সেখানে”

অর্ষা ভাবুক হয়ে বলল,
“আমার তো মনে হয় মায়াবতী টা অন্য কেউ না, তুই”

“পা*গ*ল হয়েছিস? কার না কার চিঠি”

“দেখা যাক কার চিঠি”

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here