প্রেমের_তাজমহল #পর্ব১১ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
145

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব১১
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

সেদিনের চিঠির ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে আরো এক সপ্তাহ। এর মধ্যে আর কোনো চিঠি পায়নি আনায়া। তাই ও ধরে নিয়েছে হয়তো চিঠিটা অন্য কারো। ভুলে ওর বইয়ের ভিতর চলে এসেছে। কিন্তু ওর ধারণাকে ভুল প্রমান করে তার পরের দিন ওর কেমিস্ট্রি বইয়ের ভাঁজে একটা খাম পেল। আনায়া ভাবতে বসল বইয়ের ভাজে চিঠি কিভাবে এলো। আজকে ক্লাসের পুরোটা সময় ওর কাছেই বই ছিলো তাহলে চিঠিটা আসলো কোথা থেকে? আনায়া, অর্ষা আর মেহের এক বেঞ্চে বসেছিল। কেমিস্ট্রি ক্লাসে মেহের বই না আনায় ওর সাথে বই শেয়ার করেছিল আনায়া। এছাড়া আর কেউ বই ধরেছিলো বলে মনে হচ্ছে না। আনায়া চিঠিটা বইয়ের ভাঁজেই রেখে দিল। কাল স্কুলে গিয়ে অর্ষা কে দেখাবে তাই। পরের দিন যথারীতি দুই বান্ধবী চিঠি খুলল পড়ার জন্য। এই চিঠিতেও যুবকের তার মায়াবতীকে নিয়ে লেখা অনুভূতিতে ভরা। চিঠি পড়া শেষ করে অর্ষা সন্ধিহান দৃষ্টিতে আনায়ার দিকে তাকাল।
“কি হলো এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”

“তোর মুখে মায়া খুঁজছি যেই মায়ার পরে এক যুবকের নাজেহাল অবস্থা, সেই মায়া”

“পা*গ*ল হলি নাকি?

“পা*গ*ল আমি না তোমার এই চিঠির প্রেমিক হয়েছে বান্ধবী”

“তুই শিওর যে এটা আমারই চিঠি?”

অর্ষা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
“আজকের চিঠি পড়ার পর আমি গ্যারেন্টি দিয়ে বলবো এই চিঠি তোর জন্য লিখা হয়েছে। যে দিয়েছে সে তোকেই দিয়েছে”

“কিন্তু এখন আমি কি করবো?”

“কি আর করার আছে। সে চিঠি দিবে আর তুই চিঠি পড়বি”

বলে দুস্টু হাসি দিলো। আনায়ার গাঁ জ্বলে উঠল। ও ধুপ করে কিল বসিয়ে দিলো অর্ষার পিঠে। অর্ষা পিঠ ডলতে ডলতে বলল,
“সত্যি কথার দাম নাই”

“তোকে এতো বেশি সত্য বলতে কে বলেছে?”

ক্লাসের সময় হয়ে যাওয়ায় দুজনে ক্লাসে চলে গেল। এভাবেই চলতে লাগলো আনায়ার দিন। হটাৎ হটাৎ বইয়ের ভাজে চিঠি পাওয়া। আনায়া খুব মনোযোগ দিয়ে চিঠি গুলো পড়তো। চিঠির মাঝে ডুবে রইতো। মানুষটার লেখা পড়লে মনে হয় মানুষটা তার অনেক কাছের, অনেক আপন । আনায়া দিনে কয়েক বার চিঠি পড়তো।আনায়া প্রতি নিয়ত মানুষটার লেখার প্রেমে পরে, মানুষটার হাতে লিখা প্রতিটা শব্দ ওকে আকর্ষিত করে। প্রতিটা শব্দকে ঘিরে রয়েছে মুগদ্ধতার মেলা। ধীরে ধীরে আনায়া চিঠির মায়ায়, মানুষটার মায়ার জড়িয়ে যাচ্ছে। যেই মায়া ভয়ংকর। ধ্বংস করে দিতে পারে ওর নিজের সত্তা। তবুও আনায়া বারে বার মানুষটার লিখার প্রেমে পরে। নিজেকে আটাকাতে পারে না ধ্বংসের থেকে। ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে ধ্বংসলীলার পানে।

মাঝে হটাৎ করে চিঠি পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পনেরো দিন হয়ে গেছে তবুও আনায়া কোনো চিঠি পেল না। ভাবলো হয়তো কোনো বইয়ের ভাঁজে রয়ে গেছে খেয়াল হয়নি। আনায়া তৎক্ষণাৎ তন্ন তন্ন করে সকল বই খুজলো কিন্তু কিছুই পেল না। হতাশ হয়ে বিছানায় বসল। সাত দিনের মাঝেই যেখানে নতুন চিঠি আসে সেখানে পনেরো দিনেও এলোনা বিষয়টা আনায়াকে ভাবাচ্ছে। আনায়ার কেমন পা*গ*ল পা*গ*ল অবস্থা। মানুষটাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। মানুষটা সুস্থ, স্বাভাবিক আছে তো? নাকি অসুস্থ? আনায়া কিছু ভেবে পাচ্ছে না।

পরের দিন স্কুলে গিয়ে অর্ষাকে সব বলল। অর্ষা ওকে সান্তনা দিয়ে বলল,
“এতটা উতলা হোস না। আরো কিছুদিন অপেক্ষা কর দেখ কোনো চিঠি আসে কি না”

আনায়া চুপচাপ শুনলো। কথার কোনো প্রতি উত্তর করলো না। ওর মন ভালো নেই। মানুষটার কথা মনে পড়ছে বারেবার। আনায়া চেষ্টা করলো তার ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার। কিন্তু কথায় আছে না আমরা যখন কোনো কিছু ভোলার চেষ্টা তখন সেই জিনিসটা আমাদের আরো বেশি করে মনে পরে আনায়ার অবস্থাও তেমন। আনায়া কোনো ভাবেই চিঠির চিন্তা মাথা থেকে বের করতে পারছে না।

এভাবেই পার হলো দুইদিন। এই দুইদিন আনায়ার খুবই খারাপ গেছে। সারাদিন মন খারাপ ছিলো। দিনে কয়েকবার বই খাতা খুঁজতো চিঠির আশায়। কিন্তু বরাবরই ওকে নিরাশ হতে হতো। কিন্তু তবুও আনায়া আশা ছাড়েনি। রাতে মন খারাপ নিয়েই আনায়া পড়তে বসেছে। উচ্চতর গণিত বইয়ের ত্রিকোণমিতি অধ্যায় বের করলো। সাথে সাথে ওর চোখ চকচক করে উঠলো। একটা খাম রাখা আছে সেখানে। আনায়া দেরি না করে দ্রুত খামটা নিয়ে খুলল। অন্য দিন অর্ষাকে নিয়ে খুললেও আজকে যেন ওর তর সইছে না।

“প্ৰিয় মায়াবতী”
কেমন আছো? আশা করি ভালো আছো। ভালো থাকারই কথা কেননা আমি সারাদিন যে তোমার সুস্থতাই প্রার্থনা করি। তোমার সকল অসুখ আমার হোক আর আমার সকল সুখ তোমার হোক। এতদিন চিঠি দেয়নি বলে মিস করেছো আমায়? হয়তো করেছো,নয়তো না। তুমি আমায় মিস করলেও আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবো আর না করলেও আমি তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবো। আসলে এতদিন আমি খুব অসুস্থ ছিলাম তাই তোমার কথা স্মরণ এলেও তোমাকে চিঠি দিতে পারিনি। তার জন্য সরি। চিঠি না দেওয়া রাগ করেছো বুঝি? তাহলে তোমার জন্য এই দু’লাইন ,
“লক্ষী শোনা রাগ করেনা,
একটু হাসো প্লিজ”

গেয়ে সোনাতে পারলাম না তাই লিখে দিলাম। ‘একটু হাসো প্লিজজজ’। তুমি হাসছো তাই না? এভাবেই সব সময় হাসি খুশি থাকবে। তোমার ঠোঁটের কোণে ওই মিষ্টি হাসি যেন সব সময় থাকে। তুমি কি জানো তোমাকে হাসলে কতটা সুন্দর লাগে? তোমার হাসিতে কারো বুকে প্রশান্তি বয়ে যায়। তার হৃদস্পন্দন মুহূর্তেই অস্বাভাবিক হয়ে যায়। জানবে কিভাবে তোমাকে তো তো কখনো বলাই হয়নি। কোনো একদিন তোমাকে সামনে বসিয়ে আমি তৃষ্ণার্থ নয়নে দেখিবো তোমায়। রাখিব মন কুঠুরিতে বন্ধি করে। হবে কি আমার মন কুঠুরির বন্দিনী?

ইতি,
তোমার গোপন প্রেমিক

আনায়া চিঠিটা কয়েকবার পড়লো। সত্যিই ওর ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মিষ্টি হাসি। আনায়া চিঠিটা কিছুক্ষন বুঁকের মাঝে জড়িয়ে রাখল। চিঠি পাওয়ার খুশিতে কিছুক্ষন লাফালাফি করলো। ওর মনের আঙিনায় জমা সকল কালো মেঘ মুহূর্তেই কেটে গেছে। মনে বইছে খুশির দোলা। ওর তর সইছে না অর্ষাকে জানানোর জন্য । দৌড়ে বাবা-মায়ের রুমে যেয়ে ওর আম্মুর ফোন থেকে অর্ষার নাম্বারে কল দিল। অর্ষা ফোন রিসিভ করতেই আনায়া ওকে কিছু বলতেনা দিয়ে বলা শুরু করলো,
“দোস্ত আমি আজ অনেক খুশি। অনেক অনেক খুশি”

অর্ষা ভাবনায় পড়ে গেল। সারাদিন মন মরা হয়ে থাকা আনায়ার কি এমন হলো যে বেচারি এতো খুশি? অর্ষা কৌতূহল ধরে না রেখে প্রশ্ন করেই ফেলল,
“হটাৎ কি এমন হলো এতো খুশি? সারাদিন তো মুখটা পেঁচার মতো করে রেখেছিলি। খুশির খবর আমাকেও বল আমিও একটু খুশি হই”

“পেয়েছি”

“কি পেয়েছিস?”

“চিঠি”

“অবশেষে তার চিঠি এলো, তোর সকল অপেক্ষার অবসান ঘটলো”

“হ্যাঁ। আমি অধির আগ্রহে বসে ছিলাম তার চিঠির”

“আমি তোকে বলেছিলাম মন খারাপ না করে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে। দেখলি অবশেষে এলো তো। কিন্তু এতদিন চিঠি না দেওয়ার কারণ কি ছিলো?”

আনায়া মন খারাপ করে বলল,
“উনি এতদিন অসুস্থ ছিলো তাই চিঠি লিখতে পারেনি”

“উনি?”

কিশোরী আনায়া লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল। অর্ষাকে কাল স্কুলে দেখা হবে বলে কল কেটে দিল। ‘উনি’ শব্দটা বার কয়েক মনে মনে উচ্চারণ করলো। অতঃপর নিজেই লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল।

#চলবে?

(দেরিতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটি কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না যেন। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here