প্রেমের_তাজমহল #পর্ব১২ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
148

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব১২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

গভীর রাত, নিকষ কালো আঁধার কাটিয়ে ধরণীতে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে চাঁদ। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আনায়া। এতক্ষন অতীত স্মরণে মগ্ন ছিল। হটাৎ ধ্যান ভেঙ্গে যেতেই নিজের অবস্থান খেয়াল হলো। রাত অনেক হয়েছে তবে আনায়ার সেই খেয়াল নেই। হাত বারিয়ে পাশে থাকা ফোনটা নিয়ে সময় দেখল একটা বেজে ছত্রিশ মিনিট। আনায়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখল চাঁদের আলোয় আলোকিত ধরণী। তার জীবনেও যদি এক ফালি আলো নিয়ে কারো আগমন ঘটতো, কাটিয়ে দিতো সকল আঁধার। তবে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত? সত্যি কি কেউ নেই যে আনায়ার জীবনে আলো নিয়ে আসবে। তাকে এই অতীত নামক আঁধার থেকে মুক্তি দিবে। মনে কোণে উঁকি দিল ‘আশিয়ান সিকদার অর্ণব’ নামটা। আনায়ার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে মানুষটাকে আঁকড়ে ধরে অতীত ভুলে নতুন করে সব শুরু করতে। মানুষটার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে তার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয়। প্রেম? প্রেম যে অভিশপ্ত। আনায়া মাথা থেকে সকল ভাবনাকে বিদায় দিল। এখন ওর ঘুমানো উচিত রাত অনেক হয়েছে।

ভয়ানক স্বপ্ন দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসল আনায়া। ওর গাঁ বেয়ে ঘাম ঝরছে। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা ওর। আশেপাশে লক্ষ্য করে বোঝার চেষ্টা করলো ও কোথায় আছে। নিজেকে নিজের ঘরে দেখে কিছুটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। পাশে টেবিলের ওপর রাখা গ্লাসে পানি নিয়ে ধক ধক করে খেয়ে নিল । এখন কিছুটা ভালো লাগছে। অনেকটা সময় নিয়ে নিজেকে সামলালো। এটা নিছক স্বপ্ন ছাড়া কিছু না, আর স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না। নিজেকে এই বুঝ দিয়ে আনায়া ফ্রেশ হতে চলে গেল।

থাই গ্লাসের পাশে দাঁড়িয়ে আনায়া বাহিরের পরিবেশ দেখছে। পাশে রাখা চায়ের কাপ অবহেলায় পড়ে রয়েছে। চা টা এতক্ষনে বোধ হয় ঠান্ডা হয়ে গেছে। আনায়ার সেদিকে বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই। ওর মনটা আজ খুবই অশান্ত। কোনো কাজেই ওর মন বসছে না। কিছুতেই স্বপ্নের কথা ভুলতে পারছে না। মন আনচান আনচান করছে। আচমকা কাল রাতে নিশানের পাঠানো ম্যাসেজ এর কথা মনে পড়ল। নিশান ওর কাছের মানুষ বলতে অর্ণব কে বুজিয়েছে। তার মানে নিশান কি অর্ণবের কোনো ক্ষতি করবে? করতেও পারে, ওই নিকৃষ্ট মানুষটার দ্বারা সবই সম্ভব। আনায়া সময় ব্যায় না করে দ্রুত ডায়াল করলো অর্ণবের নাম্বারে। বাজতে বাজতে ফোন কেটে গেল। কেউ রিসিভ করছে না। আনায়ার ভয় হতে শুরু করলো। নিশান অর্ণবের কিছু করেনি তো? আনায়া পুনরায় অর্ণবের নাম্বারে ডায়াল করলো। এইবারও বাজতে বাজতে কল কেটে গেল। আনায়ার চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিছু হলো নাতো। ও লাগাতার ফোন দেওয়া শুরু করলো অর্ণবের নাম্বারে। ষষ্ঠ বারের বেলায় ফোন তুলল।
ওপর পাশ থেকে তাপস বলল,
“হ্যালো, কে বলছেন?”

আনায়া হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনার স্যার কোথায়? সে কেমন আছে? তার কি কিছু হয়েছে? ফোন তুলছে না কেন? কি হলো কথা বলছেন না কেন? জবাব দিন”

আনায়ার এতো এতো প্রশ্নে তাপস বেচারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। কোনো রকম নিজেকে সামলে বলল,
“ম্যাম স্যার মিটিংয়ে আছেন। স্যার একদম সুস্থ আছে। তার কিছুই হয় নি। মিটিংয়ে থাকা কালীন ফোন সাইলেন্ট থাকে তাই খেয়াল করেনি”

“আপনি আপনার স্যার কে ডাকেন। বলেন আমার তার সাথে কথা আছে”

তাপস আনায়াকে লাইনে থাকতে বলে অর্ণবের কাছে গেল। অর্ণব পার্টি অফিসে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ব্যাস্ত। তাপস অর্ণবের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“স্যার আপনার ফোন এসেছে, কথা বলুন”

অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুমি জানোনা আমি মিটিংয়ের সময় ফোন রিসিভ করি না, ইডিয়েট। কল কেটে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দেও, যার প্রয়োজন পরবে সে পরে আবার কল করবে”

“স্যার একবার আমার কথা তো শুনুন”

“আর একটা কথা বললে তোমার চাকরি নট করে দিবো আমি”

তাপস অসহায় মুখ করে বাহিরে বেরিয়ে এলো। আনায়াকে অর্ণবের বলা কথা গুলো বলতেই আনায়া রাগী কণ্ঠে বলল,
“আপনার স্যার এর মিটিংয়ের গুল্লি মারি, ওনাকেও বলুন আগে আমার ফোন রিসিভ করতে। নাহলে আমি আপনার মাথা ফাটিয়ে ফেলবো”

তাপস বেচারা পড়েছে ফাঁসাদে। একজন বলছে চাকরি নট করে দিবে, আরেকজন বলছে মাথা ফাটিয়ে ফেলবে। তাপস করবে তো কি করবে? তাপস আবার অর্ণবের কাছে গেল। অর্ণব ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তাপস সেটা তোয়াক্কা না করে বলল,
“স্যার ম্যাম ফোন দিয়েছে। আপনার সাথে এখনই কথা বলতে চাইছে। আমি তাকে বলেছি আপনি বিজি আপনাকে ডিসটার্ব করা যাবে না কিন্তু ম্যাম বলেছে আপনাকে না বললে ম্যাম আমার মাথা ফাটিয়ে দিবে”

অর্ণব চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“তোমার মাথা ফাটানোই দরকার, ইডিয়েট। আগে বলবে তো যে তোমার ম্যাম ফোন দিয়েছে। তাহলেই এতো কিছু হতো না”

অর্ণব ‘এক্সকিউজ মি’ বলে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে নিজের কেবিনে গেল। ডায়াল করল আনায়ার নাম্বারে। সাথে সাথে রিসিভ হলো, মনে হচ্ছে ওপর পাশের ব্যক্তি ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিল তার অপেক্ষায়। অর্ণব কিছু বলবে তার আগেই আনায়া রাগী কণ্ঠে বলা শুরু করল,
“কোথায় থাকেন সারাক্ষন যে ফোন দিলে পাওয়া যায় না? কোনো মহাভারত অশুদ্ধ করছিলেন?”

অর্ণব দুস্টু হেসে জিজ্ঞেস করল,
“হটাৎ প্রেয়সীর এতটা উতলা হয়ে আমাকে খোঁজার কারণ কি?”

আনায়া অশান্ত স্বরে বলল,
“আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই, এখনই”

“এখনই?”

“হ্যাঁ, কোনো? কোনো সমস্যা?”

“না, কোনো সমস্যা নেই। প্রেয়সীর জন্য অর্ণব সিকদার সব সময়ই ফ্রি থাকে”

অতঃপর দুস্টুমির ছলে বলল,
“প্রেয়সীর ডাক কখনো উপেক্ষা করতে নেই, বলা তো যায় না প্রিয়সী কখনো খুশি হয়ে দু চারটা চুমু দিলেও দিতে পারে”

আনায়া বিড়বিড় করে বলল,
“অ*সভ্য পুরুষ”

আনায়া কল কেটে অর্ণবকে লোকেশন ম্যাসেজ করে দিল। নিজেকে ঠিকঠাক করে কাউকে কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে একাই বেরিয়ে গেল।

শুনশান রাস্তায় আনায়া গাড়ি থামিয়ে বসে অর্ণবের অপেক্ষা করছে। অর্ণবের গাড়ি আনায়ার গাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দার করালো। অর্ণবের গাড়ি থামতে দেখে আনায়া গাড়ির ভিতর থেকে বের হলো। অর্ণব এগিয়ে এদিকেই আসছে। আনায়া এক ধ্যানে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদা পাঞ্জাবীতে অর্ণবকে আনায়ার নিকট অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। আনায়ার কি হলো ও নিজেও জানে না অর্ণব ওর সামনে এসে দাঁড়াতেই আনায়া ওকে জড়িয়ে ধরল। অর্ণব মুহূর্তের মাঝে ভরকে গেল। কি থেকে কি হলো বুঝতে সময় লাগলো। নিজেকে সামলে যখন দেখল আনায়া ওকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরেছে এটা ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না। ও ভেবে পেল না ওর কি করা উচিত। ও কি আনায়াকে জড়িয়ে ধরবে? ভাবতে ভাবতে ও নিজেও আনায়াকে জড়িয়ে ধরল।

আনায়া অর্ণব একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আনায়া আর অর্ণব যখন দুজনাতে মত্ত তখনই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল।

#চলবে?

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here