#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব১৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে অর্ণবের শখের গাড়িতে। অর্ণব নিশ্চল চোখে সেদিকে তাকিয়ে আছে। ওর বুকে গুটিসুটি মেরে মুখ গুঁজে রয়েছে আনায়া। বিস্ফোরণ এর শব্দে অর্ণব আনায়া কে নিয়ে আনায়ার গাড়ির পাশে সরে আসল। অর্ণব আনায়াকে নিজের থেকে সরাতে চাইলো। কিন্তু দেখল মেয়েটা ওকে অনেক শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে। অর্ণব আনায়াকে নিয়েই আশেপাশে তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করলো কোথায় বিস্ফোরণ হয়েছে তখনই নিজের চোখের সামনে শখের গাড়িটাকে দাউদাউ করে জ্বলতে দেখল। আনায়া বিস্ফোরণের শব্দে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে অর্ণবকে। ও এখনো মুখ তুলে দেখেনি। এর মাঝে কোথা থেকে দৌড়ে এলো তাপস। এসে হন্তদন্ত হয়ে বলল,
“স্যার আপনারা ঠিক আছেন তো? কিছু হয়নি তো আপনাদের?”
তাপসকে সামনে দেখতেই অর্ণবের টনক নড়লো। ওর সাথে যে তাপসও এসেছিলো সেটা ওর মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। অর্ণব নিজেকে সামলে বলল,
“আমরা ঠিক আছি। তুমি ঠিক আছো তো? তুমি না গাড়িতে ছিলে?”
“আপনি নামার পর আমি গাড়িতেই বসে ছিলাম। হটাৎ একটা ফোন এলো, গাড়িতে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছিলো না তাই আমি গাড়ি থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে কথা বলছিলাম। হটাৎ বিস্ফোরণের শব্দে তাকিয়ে দেখি গাড়িতে আগুন ধরে গেছে”
“সবাই সেফ আছি এতেই আলহামদুলিল্লাহ। গাড়ি একটা গেছে আরেকটা কেনা যাবে”
অর্ণব তাপসকে বলল ফায়ার সির্ভিস কে ফোন দিতে সাথে ওর দলের লোকেদের ফোন দিতে। তাপস ওদের থেকে একটু দূরে যেতেই অর্ণব আনায়ার পানে চাইল। মেয়েটা এখনো একই ভাবে ওর বুকে মিশে আছে। অর্ণব খেয়াল করলো আনায়া কাঁপছে। অর্ণব আনায়াকে ডাকলো,
“আনায়া, এই আনায়া। কি হয়েছে তোমার? এভাবে কাঁপছো কেন? ভয় পেয়েছো? কি হয়েছে বলো আমাকে?”
আনায়া কোনো উত্তর করলো না। অর্ণব আনায়াকে নিজের থেকে সরাতে গেল। অর্ণব আনায়াকে নিজের থেকে সরিয়ে দাঁড় করাতে যাবে তার আগেই আনায়া হেলে পরে যেতে নিল। অর্ণব সাথে সাথে ওকে ধরে ফেলল। অর্ণব লক্ষ্য করলো আনায়ার চোখ বন্ধ। অর্ণব আনায়াকে কলে তুলে নিল ওকে ওর গাড়িতে বসিয়ে পানি খুঁজা শুরু করল। অর্ণব অনবরত পানির ঝাপ্টা দিয়ে যাচ্ছে আনায়ার মুখে কিন্তু ওর চোখ খোলার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অর্ণব আনায়ার গালে হাত দিয়ে ডাকছে,
“আনায়া, এই মেয়ে। চোখ খুলো। চোখ খুলছো না কেন?”
আনায়ার কোনো সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। অর্ণব তাপস কে বলল এদিকটা দেখতে ও আনায়াকে নিয়ে যাচ্ছে। অর্ণব আনায়াকে ঠিক ভাবে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসল। আনায়ার মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে দিল খুব সাবধানতার সহিত। অর্ণব ওর পার্সোনাল ডক্টর কে কল করে আনায়েদের বাড়িতে আসতে বলল।
আনায়ার মা আশালতা বেগম ও নীলিমা অর্ণবের কোলে আনায়াকে দেখে ছুটে আসলেন। অর্ণব আনায়াকে নিয়ে সোফায় শুয়ে দিল। আশালতা বেগম আনায়াকে এরকম অবচেতন অবস্থায় দেখে অর্ণবকে প্রশ্ন করলো,
“অর্ণব বাবা কি হয়েছে আনায়ার? ওকে তুমি এভাবে কোলে করে নিয়ে এলো? ও না সকালে অফিসে গেল, তোমার সাথে ওর কোথায় দেখা হয়েছে? আর ওর অবস্থাই বা এমন কেন?”
“আন্টি ও অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমি ডক্টর কে ফোন দিয়েছি উনি কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে”
নীলিমা অর্ণবকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
“অর্ণব তুমি ওকে নিয়ে ওপরে ওর রুমে গিয়ে শুইয়ে দাও বাকি কথা পরেও শোনা যাবে”
অর্ণব আনায়াকে কোলে তুলে ওপরে ওঠা শুরু করল। আশালতা বেগম আর নীলিমাও ওদের পিছু পিছু গেল। অর্ণব খুব সাবধানে আনায়াকে বিছানায় শুইয়ে দিল। এর মাঝেই ডক্টর চলে এলো। ডক্টর আনায়াকে চেক করছে। অর্ণব চিন্তিত হয়ে পায়চারি করছে। ডক্টরের চেকাপ শেষ হতেই অর্ণব জিজ্ঞেস করলো,
“ডক্টর আঙ্কেল ওর সিরিয়াস কিছু হয়েছে কি? হটাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল কেন? কোনো সমস্যা?”
“রিলেক্স অর্ণব, এতটা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। ও হয়তো কোনো কিছু দেখে অনেক বেশি ভয় পেয়েছে তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমি সেলাইন দিয়ে যাচ্ছি কিছুক্ষনের মধ্যে ওর জ্ঞান ফিরে আসবে”
ডক্টর আনায়াকে সেলাইন লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল। অর্ণব এক পলক চাইলো আনায়ার মুখের দিকে। অতঃপর নীলিমা আর আশালতা বেগমকে ওর খেয়াল রাখতে বলে চলে গেল। আশালতা বেগম জিজ্ঞেস করেছিলেন আনায়ার কি হয়েছে? সুস্থ মেয়েটা কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেল? অর্ণব ওনাকে বুঝিয়ে বলল ওর কাজ আছে বাকি কথা ও আবিরকে বলে দিবে ওর কাছ থেকে জেনে নিতে। অর্ণব আর এক মুহুর্ত দেরি না করে বেরিয়ে এলো আনায়াদের বাড়ি থেকে। আনায়াদের বাড়ির সামনে আগে থেকেই ওর জন্য গাড়ি রাখা ছিলো। ও তাপসকে বলে দিয়েছিলো ওর জন্য গাড়ি পাঠাতে। অর্ণব গাড়িতে বসে কল করলো কাউকে।
“দুই ঘন্টা সময় দিলাম তোমাকে এর মধ্যে আমাকে জানাবে আমার গাড়ি ব্লাস্ট হলো কিভাবে? দুইঘন্টা মানে দুইঘন্টা মনে থাকে যেন”
অর্ণব কল কেটে ডায়াল করলো আবিরের নাম্বারে। আবির ফোন রিসিভ করতেই ওকে বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,
“আনায়া অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো ওকে আমি বাসায় দিয়ে এসেছি। আন্টি বার বার আমাকে ওর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করছিলো আমি বলেছি তোর থেকে জেনে নিতে। তুই কোনো মতে ওদিকটা সামলে নিস। আমাকে ফ্রি হয়ে তোকে সব কিছু বলবো”
“বনুর কি হয়েছে? ও না অফিসে ছিলো, তুই ওকে কোথায় পেলি”
অর্ণব ওকে ধমক দিয়ে বলল,
“বললাম তো ফ্রি হয়ে বলবো। এদিকে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে, তুই ওদিকটা সামলে নিস”
অর্ণব আবিরকে কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দিল। ওর মাথায় একটাই চিন্তা হটাৎ করে গাড়িটা এভাবে ব্লাস্ট হওয়ার কারণ কি? এটা কি চক্রান্ত? শিওর না হয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। অর্ণব ব্লাস্ট হওয়ার জায়গায় চলে এসেছে। এতক্ষনে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। শুনশান রাস্তা হওয়ায় কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। আশেপাশে মিডিয়ার লোকের অভাব নেই। এমপির গাড়ি ব্লাস্ট হয়েছে বলে কথা সব নিউজ রিপোর্টার নিউজ করতে আসবে এটাই স্বাভাবিক। অর্ণব গাড়ির ভিতর থেকে ওর শখের গাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখছে। অর্ণব তাপসকে ফোন করে ডেকে বলল এইদিকটা সামলাতে ওর কিছু ভালো লাগছে না।
আনায়ার জ্ঞান ফিরেছে অনেকক্ষন হয়েছে। জ্ঞান ফিরার পড় সবাই অনেক জিজ্ঞাসা করেছে কিন্তু আনায়া মুখ খুলেনি। ও এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে। সবাই ওকে এটা ওটা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছে আবির ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলেছে আনায়াকে কিছু জিজ্ঞেস করতে না। ওকে রেস্ট নিতে দিতে, যেন ও নিজেকে সামলে নিতে পারে। আশালতা বেগম মেয়েকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে গেছেন। আনায়া এখনো একই ভঙ্গিতে বসে আছে। ওর চোখের সামনে এখনো ব্লাস্ট হওয়ার ঘটনা ভাসছে। কল্পনা হচ্ছে যদি তখন অর্ণব গাড়িতে থাকতো তাহলে ওর কি অবস্থা হতো? ভাবতেই আনায়ার গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।
অন্ধকারে আছন্ন ঘরে এক যুবক রকিং চেয়ারে বসে পাশে রাখা টেবিলে আঘাত করে বলল,
“সিট্। এবারের মতোও বেঁচে গেল । শা*লার কই মাছের জান”
অতঃপর বিশ্রী হাসি দিয়ে বলল,
“কিন্তু পরের বার আর বেঁচে ফিরতে পারবে না। আমি ওকে ধ্বংস করে দিবো, ধ্বংস”
#চলবে?
( দেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ )