প্রেমের_তাজমহল #পর্ব৩ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
215

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

“আপনি? এখানে?”

“তোমাকে অনেক মিস করছিলাম তাই চলে এলাম। তুমি এখানে কি করছো?”

আনায়ার মাথায় দুস্টু বুদ্ধি হানা দিল। ও ইশারায় অর্ণবকে কাছে আসতে বলল। অর্ণব কাছে আসতেই মিষ্টি হেসে বলল,
“প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছি”

“শোনো মেয়ে তোমার জীবনে প্রেমিক বলো আর ভালোবাসাই বলো সব শুধু এক জনই হবে। সে আশিয়ান সিকদার অর্ণব”

হটাৎ আনমনা হয়ে গেল আনায়া। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠল কিছু স্মৃতি। প্রেমিক? আদোও কি অর্ণব সাহেব তার একমাত্র প্রেমিক হতে পারবে নাকি তার আগেও কারো বিচরণ ছিলো আনায়ার হৃদয়ে? আনায়া অর্ণবের দিকে চাইল। লোকটা ওর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আনায়া ভেবে পায় না লোকটার এভাবে চেয়ে থাকার কারণ। আনায়া এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল,
“যদি আপনার আগে কেউ প্রেমিক হয়ে থাকে?তখন”

অর্ণব মুখটা আনায়ার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস কর বল,
“আমি জানি তোমার একজন প্রেমিক ছিলো কিন্তু সে তোমার প্রেমিক হয়েও প্রেমিক না, ভুল মানুষ”

আনায়া অর্ণবের কথায় থতমত খেয়ে গেল। অর্ণব কিভাবে জানলে ওর প্রেমিক ছিলো? তার সম্পর্কে ও আর অর্ষা ছাড়া আর কেউ জানার কথা না। তাহলে? অর্ণব কি আন্দাজে বলছে। হয়তো হতেও পারে।
“আপনি কিভাবে জানলেন সে ভুল মানুষ?”

“তুমি নিজেই একদিন জানতে পারবে”

আনায়া আর মাথা ঘামালো না। দুজনের মাঝে নীরবতা। নীরবে কেটে গেল কিছু মুহুর্ত। আনায়ার জন্য সময়টা অপেক্ষার হলেও অর্ণবের জন্য সময়টা প্ৰিয় মানুষ পাশে থাকার। প্ৰিয় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে অনুভব করার। সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে আনায়া প্ৰশ্ন করল,
“আপনি আদোও এমপি তো? নাকি ভুয়া এমপি”

অর্ণব আনায়ার প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাল। শেষমেষ মেয়েটা ওকে ভুয়া এমপি বলল। মেয়েটা কি জানে যে ও বিপুল ভোট প্রতিপক্ষ কে হারিয়ে জয়ী হয়েছে? না, জানে না বোধ হয়। জানলে এভাবে বলতো না।
“এরকম মনে হওয়ার কারণ?”

“এইযে সারাদিন আমার পিছু পিছু ঘুরছেন। এমপিদের তো অনেক কাজ থাকে। আপনি সত্যিকারের এমপি হলে নিশ্চয়ই আমার পিছু পিছু ঘুরতেন না”

“তোমার ধারণা ভুল মেয়ে। আমি একজন সংসদ সদস্য। কিন্তু তাই বলে কি আমি তোমার পিছু ঘুরতে পারবো না? দেখতে দেখতে বয়স ত্রিশের কোঠায় পৌউছলো এখন তোমার পিছু না ঘুরলে দেখা যাবে দাদা হওয়ার বয়সে আমাকে বাবা হতে হবে”

আনায়া বিরবির করে বলল,
“অসভ্য”

এর মাঝেই আনায়ার নজর গেল রেস্টুরেন্ট এর গেটের দিকে। ওর ফ্রেন্ডস রা গেট দিয়ে ঢুকছে। আনায়া ওদের দেখে খুশি হলো। যাক অবশেষে ওরা এল।
“আপনি থাকেন। আমার ফ্রেন্ডরা চলে এসেছে”

অর্ণবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রস্থান করল। আনায়া এক বার পিছু ফিরলে দেখতে পেত একজোড়া আঁখি ওর পানে কতটা মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে।

আনায়া বন্ধুদের সাথে অনেকটা সময় কাটালো। এতদিন পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ওর মনটা হাল্কা হয়ে গেল। বন্ধুদের মাঝে অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই একজনের তো বেবিও আছে। বন্ধুদের মাঝে আনায়াই অবিবাহিত বাকি সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। অর্ষার আকদ হয়েছে বিয়ে কিছু দিন পর। অর্ষার এক কথা সে তার বেস্ট ফ্রেন্ড কে ছাড়া বিয়ে করবে না। মেয়েটা আনায়াকে বড্ড ভালোবাসে। আড্ডা চলা কালীন সবাই আনায়াকে এক সাথে হামলা করল,
“বিয়ে করছিস কবে?”

আনায়া ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
“খুব তাড়াতাড়ি”

অর্ষা অবাক চোখে তাকাল আনায়ার পানে। তার চোখে প্রশ্ন। সত্যিই কি আনায়া বিয়ে করবে? তাও খুব তাড়াতাড়ি? আনায়া ওকে আসস্থ করল ও অর্ষাকে বলবে। অর্ষা সবার সামনে আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।

ডিনারের সময় সবাই যার যার মতো খাচ্ছে। টেবিলে পিন পতন নীরবতা। আনায়া বাবার পাশে বসেছে। আশরাফ সাহেব মেয়েকে বড্ড ভালোবাসেন। ছেলেদের ভালোবাসে না তেমনটা নয়। কিন্তু মেয়ে পাশে বসে না খেলে তার কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তাই আনায়া সব সময় বাবার পাশেই বসে। হটাৎ আশরাফ সাহেবের কণ্ঠ শোনা গেল,
“আনায়া মা কি ভাবলে?”

“কোন বিষয়ে?”

“অর্ণবের সাথে তোমায় বিয়ের বেপারে”

“ভাবার জন্য আমার কিছু সময় চাই”

আশরাফ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
“তুমি যতটা সময় নিতে চাও নিতে পারো। বাবা হিসেবে আমি বলবো অর্ণব খুবই ভালো ছেলে। বাকিটা তোমার ইচ্ছে। আমি কখনো কোনো বিষয়ে তোমাদের জোর করিনি আর করতেও চাই না। আমি চাই তোমরা খুশি থাকো”

আনায়ার মনটা খুশিতে ভরে গেল। ঠোঁটের কোনো হাসি ফুটে উঠল। ওর নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় এরকম একটা সাপোর্টিভ পরিবার পেয়ে।

আনায়া, মাহির, মিহি আর নীলিমা ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মিহি অর্ণবের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকে একটা ফটো বের করে আনায়ার সামনে ধরে বলল,
“আপু তুমি না সত্যিই বোকা। নাহলে এতো সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেকে বিয়ে না করে তাকে ওয়েটিং লিস্ট এ ঝুলিয়ে রাখো। দেখে কি সুন্দর চোখ, জিম করা বডি, চোখে চশমা, ঠোঁটে মুচকি হাসি। হায় এই হাসিতে মা*র গায়ি মেয়”

আনায়া রাগী চোখে মিহির দিকে তাকাল। ধমকে উঠে বলল,
“আমাকে তোর বোকা মনে হয়? থা*প্পড়িয়ে গাল লাল করে দিবো ফা*জিল। আর তোর যদি লোকটাকে এতই ভালো লাগে তাহলে বল কাকাই কে বলে তার সাথে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করি”

“আ*স্তা*গফি*রু*ল্লাহ। কি বলো এসব। তাকে তো আমার জিজু হিসেবে ভালো লাগে। আর সে আমাকে না তোমাকে পছন্দ করে। তাইতো সেদিন যাওয়ার আগে তোমার উদ্দেশ্যে চোখ টিপ দিয়েছিলো”

কথাটা বলেই মিহি আর নীলিমা হেসে উঠল। আনায়ার এদের হাসি দেখে গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। তাই উঠে নিজের রুমে দিকে হাঁটা দিল। নীলিমা পিছু ডেকে বলল,
“আরে নন্দিনী চলে যাচ্ছ যে?”

মিহি পাশ থেকে টিটকিরি মেরে বলল,
“ভাবি আপু লজ্জা পেয়েছে। দেখোনা ওর গাল লাল হয়ে গেছে”

আনায়া হাঁটা থামিয়ে পিছু ফিরে আরেকবার ওদের দিকে রাগী লুকে তাকাল। অতঃপর ধূপধাপ শব্দ করে নিজের ঘরে চলে এল। আনায়া যেতেই নীলিমা আর মিহি শব্দ করে হেসে দিল।

আনায় ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। আলমারির কাছে যেয়ে গুপ্ত জায়গা হতে একটা চিঠি বের করল,

“প্ৰিয় মায়াবতী,
তোমার ওই ঝিল চোখের মায়ায় আমি ডুবতে চাই বারংবার । তোমার ওই মায়াবী চোখ জোড়া আমার বুকে উত্তাল সমুদ্রের ন্যায় ঢেউ সৃষ্টি করে। তোমার ঔ তীক্ষ্ণ চাহনি আমার বুক এফর ওফর করে ফেল। এক অদ্ভুত নেশা জাগে মনে। তোমার নেশা। তুমি কি আমার পার্মানেন্ট নেশা হবে?”

আমি তোমার উত্তরের আশায় রইলাম মায়াবতী

ইতি
তোমার গোপন প্রেমিক

আনায়া চিঠিটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিল। চিঠি গুলো পড়লে তার মনে শান্তি লাগে। ও বারবার প্রেমে পড়ে যায় চিঠির। কিন্তু যখনই তার মুখটা চোখে সামনে ভেসে উঠে তখন মনে ঘৃ*ণা জাগে। তিক্ত স্মৃতি ভেসে ওঠে মনের কোণে। ও এই জীবনে মানুষটার মুখোমুখি হতে চায় না।

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here