প্রেমের_তাজমহল #পর্ব৫ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
184

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

“মায়াবতী”

ডাকটা কানে আসতেই আনায়ার মনে ধক করে উঠল। আশেপাশে তাকাল কিন্তু সন্দেহ জনক কাউকে পেল না। আনায়া ভাবল ও হয়তো বেশিই ভাবছে। এটা ওর ভাবনার ফল নাহলে সেই মানুষটা এখানে কোথা থেকে আসবে। যদিও এই শহরেই তো তার বসবাস। আনায়া নিজের মন থেকে সকল ভাবনা সরিয়ে জামা সিলেক্ট করায় মগ্ন হলো। কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে কানে আবারও ভেসে এলো একই সম্মোধন। আনায়া এবার নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। সারা দোকানে নজর বুলালো। কাউকেই পেল না। খুঁজতে খুঁজতে ও দোকান থেকে বের হলো। সাথে সাথেই ধাক্কা খেল এক শক্ত পক্ত মানুষের সাথে। আনায়া ধাক্কা খেয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিবে তার পূর্বেই এক জোড়া বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে আটকা পড়ে গেল। আনায়াও নিজেকে বাঁচাতে সামনের মানুষটার হুডির বুঁকের কাছটা খামচে ধরল। আনায়া চোখ মেলে চেয়ে দেখল মুখে মাস্ক লাগানো এক যুবক তার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আনায়া নিজের অবস্থান লক্ষ্য করে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হলো। যুবকটা তাকে এতটা কঠোর বন্ধনে বেঁধেছে সে চাইলেই তা ছিন্ন করতে পারছে না। ব্যর্থ হয়ে আনায়া কঠোর স্বরে বলল,
“ছাড়ুন। আর কতক্ষন এভাবে ধরে আর রাখবেন”

আনায়ার কথায় যুবকটির ধ্যান ফিরল। সে এতক্ষন ঘোরের মধ্যে ছিল। আনায়ার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে বলল,
“শুধু আমি যে তোমায় ধরে রেখেছি এমনটা কিন্ত নয়। আঁকড়ে ধরার প্রয়াস তোমার মাঝেও আছে”

আনায়া যুবকটির কথা বুঝতে না পেরে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে চাইল তার পানে। যুবকটি চোখের ইশারায় আনায়ার হাতের দিকে ইশারা করল। এখনো আনায়া যুবকটির হুডি আঁকড়ে ধরে রয়েছে। আনায়া সাথে সাথে হাত সরিয়ে ফেলল। কিন্তু তবুও যুবকটির মাঝে তাকে ছাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আনায়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখল অনেক মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর নিজেরও অসস্তি হচ্ছে।
“এবার তো ছাড়ুন। আশেপাশের মানুষ তাকিয়ে আছে। আমার অসস্তি হচ্ছে”

যুবকটি আনায়ার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল,
“তোমার অসস্তি হলেও আমার কিন্তু ভালোই লাগছে”

বলেই চোখ টিপ দিল। আনায়ার আর সহ্য হলো না। ইচ্ছে করছে ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে সরিয়ে দিতে। ও করলও তাই ধাক্কা দিয়ে যুবকটিকে সরিয়ে দিল। আশেপাশ থেকে তাকিয়ে থাকা মানুষদের উদ্দেশ্যে ধমকের স্বরে বলল,
“সিনেমা চলছে এখানে? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

এতক্ষনে নীলিমা আর মিহিও দোকানের বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে। ওরা এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো। নীলিমার উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাবি তোমাদের কেনাকাটা হলে চলো। আমার ভালো লাগছে না”

নীলিমা কিছু বলবে তার আগেই মিহি বলল,
“আমাদের তো এখনো কিছুই কিনা হয়নি আপু। এখনই চলে যাবে”

“আনায়া বোন আমার এরকম করে না। আজকে বেড়িয়েছি আবার কবে না কবে বের হব তার ঠিক নেই। আরো কিছুক্ষন থাকো প্লিজ”

“ঠিক আছে। যাও তোমাদের কি কি কেনা বাকি তা দেখো”

আনায়া দোকানের ভিতরে ঢুকতে নিবে এমন সময় আবার যুবকটি ওর হাত ধরল। আনায়া তাকিয়ে আবার যুবকটিতে দেখে মাথা গরম হয়ে গেল। বড় অ*সভ্য তো ছেলেটা। একটু আগে বা পড়ে যেতে নিয়েছিল বলে ধরেছিল এখন আবার হাত ধরছে কেন? আনায়া ঝাড়ি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আপনার সমস্যা কি? আবার হাত ধরছেন কেন? একটা অপরিচিত মেয়ের হাত ধরতে লজ্জা লাগে না”

“তোমার হাত ধরতে আবার লজ্জা কিসের। তুমি তো আমার ভবিষ্যত বউ”

যুবকটি নিজের মুখ থেকে মাস্ক সরালো। মুহূর্তের ব্যবধানে আবার মাস্ক পড়ে নিল। যুবকটি আর কেউ নয় স্বয়ং অর্ণব। আনায়া অবাক এই লোকটা ওর পিছু পিছু এখানেও চলে এসেছে। কিন্তু তার তো এখানে আসার কথা না। ও যেখানেই যাচ্ছে মানুষটা ওর পিছু পিছু চলে আসছে। এটা কি ডেস্টিনি নাকি পরিকল্পিত?
“আপনি এখানেও চলে এসেছেন? এখন কি শপিং মলেও রাজনীতি হয় নাকি?”

“আমি তো এখানে তোমার জন্য এসেছি”

আনায়া অবাক হলো। লোকটা ওর জন্য এসেছে মানে? ও কি তাকে আসতে বলেছে নাকি?
“আমার জন্য এসেছেন মানে? আমি কি আপনাকে আসতে বলেছি”

“উহু, তুমি আসতে বলনি কিন্তু আমি আমার দায়িত্ব বোধ থেকে এসেছি”

“দায়িত্ব বোধ?”

“এই যে তোমার মতো সুন্দরী একটা মেয়েকে যদি হাঁটতে হাঁটতে কোথাও হারিয়ে যায় তখন আমার কি হবে ভেবে দেখেছো? সেটা তুমি ভাববে কেন? সকল ভাবনা তো আমার। আর আমার সেই দায়িত্ব বোধ থেকেই আমি তোমাকে পাহারা দিতে এসেছি”

আনায়া হতাশ, পুরাই হতাশ। এই লোকের দায়িত্ব বোধের নমুনা দেখে ওর বিরক্ত লাগছে। এ নাকি আবার সংসদ সদস্য, আদোও কি কথা টা গ্রহণ যোগ্য? কে জানে? নীলিমা আর মিহি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দুস্টু মিষ্টি কথোপকথন শুনছিল আর হাসছিলো। মিহি আফসোসের সুরে বলল,
“আজ কেউ আমাদের পাহারা দিতে আসে না বলে আমরা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তার গাঁয়ে পড়তেও পারি না। আফসোস, বড়োই আফসোসের বিষয়”

নীলিমা আর অর্ণব মিহির কথায় হেসে দিল। আনায়া ওর পিঠে একটা চাপর দিয়ে বলল,
“বেশি আফসোস হলে বল কাকাই কে বলে তোকে বিদায় করি। তোর মতো শ*য়তান মেয়ে আমাদের বাড়িতে আর রাখা যাবে না”

“বললেই হলো নাকি। উল্টো তোমাকে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে আমি একা খান বাড়িতে রাজত্ব করবো”

“বকবক বাদ দিয়ে যা কিনার তাড়াতাড়ি কেন নাহলে তোদের ফেলেই আমি চলে যাবো”

নীলিমা আর মিহি ওদের কেনা কাঁটা করতে চলে গেল। ওরা চলে যেতেই অর্ণব আনায়ার হাত ধরে সামনের দিকে হাঁটা দিল।
“আজব আপনি আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?আপনি এরকম চোর টাইপ সাজ দিয়েছেন কেন?”

অর্ণব নিজের দিকে তাকাল। ওর পরনে কালো প্যান্ট, কালো হুডি, হাতে কালো রঙের ঘড়ির, পায়ে কালো সু। আনায়ার ওকে দেখে চোর মনে হচ্ছে?
“প্রথমত আমি তোমায় বেঁচে দিতে নিয়ে যাচ্ছি না, গেলেই দেখতে পারবে। দ্বিতীয়ত তুমি হয়তো “আশিয়ান সিকদার অর্ণবের” সম্পর্কে জানো না। এখানে যদি এভাবে না এসে সাধারণ ভাবে আসতাম তাহলে এখানে ভীড় লেগে যেত। আশেপাশের সব মেয়েরা আমাকে ঘিরে ধরতো। তখন নিশ্চয়ই তোমার ভালো লাগবে না? তোমার কথা ভেবেই আমি এভাবে এসেছি। আর তুমি আমাকে চোর বলছো”

আনায়া ভেঙিয়ে বলল,
“ভীড় জমে যাবে না ছাই। ভাব নেওয়া বন্ধ করুন। আর আমার জানা মতে চোররাই চুরি করার আগে নিজেকে পরিপূর্ণ আবৃত করে আসে যেন কেউ তাকে চিনতে না পারে তাই”

কথা বলতে বলতে ওরা অর্ণব আনায়া কে নিয়ে একটা চুরির দোকানে এল। দোকানদার কে বলল অনেক ধরনের রেশমি চুরি বের করতে। দোকানদার অনেক গুলো চুরি অর্ণবের সামনে রাখল। অর্ণব আনায়ার হাত নিজের হাতে নিয়ে নিজেই চুরি পড়িয়ে দেখছে কোনটা ওর হাতে সুন্দর লাগে। আনায়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অর্ণবের পাগলামো দেখছে। অর্ণব অনেক গুলো চুরি দোকানদার কে বলল প্যাক করে দিতে বলল। দোকানদার প্যাকিং করে একটা বড় বক্স ওদের সামনে রাখল। আনায়া লোকটা কাণ্ডে হতবাক। এতো গুলো চুরি দিয়ে ও কি করবে? লোকটার মাথার তার কি ছিঁড়ে গিয়েছে।
“আপনি কি পাগল ? এতো গুলো চুরি কিনলেন? এতো চুর দিয়ে আমি কি চুরির দোকান দিবো?”

“অবশ্যই আমি পাগল। তবে সেটা শুধু এবং শুধু তোমার জন্য। এই চুরি গুলো তুমি এখন পাবে না, আমাদের বিয়ের পড়ে পাবে। তুমি নিত্য নতুন চুরি পরে আমার সামনে ঘুরবে। আমি মুগদ্ধ নয়নে তোমাকে দেখবো। তোমার চুরির রিনঝিন শব্দে আমি মাতোয়ারা হবো”

“আপনি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকেন”

অর্ণব আনায়ার চোখে চেয়ে বলল,
“স্বপ্ন পূরণ হতে কতক্ষন?”

#চলবে?

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আপনার মূল্যবান মন্তব্য ব্যক্ত করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here