প্রেমের_তাজমহল #পর্ব৬ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
169

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৬
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আনায়া বাড়িতে শুয়ে বসে দিন পার করছে তাই ভাবল সে তাদের বিজনেস জয়েন করবে। আনায়া কানাডায় থাকা অবস্থায় ফ্রি সময়ে বিজনেসে বাবা-ভাইদের সাহায্য করতো। ও সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করে যেন বিষাদ ওকে ছুঁতে না পারে। কিন্তু চাইলেই কি আমরা বিষাদের থেকে মুক্তি পেতে পারি? আনায়ার অবস্থাও তাই। এতো গুলো বছরে ও নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে।
আনায়া অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। ওর বাবা-ভাইয়েরা চলে গেছে অনেক আগেই। অফিসে আজকে একটা মিটিং থাকায় আনায়া দেরি করে যাচ্ছে। তৈরি হয়ে আনায়া অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ল।

আনায়া নিজের কেবিনে বসে আছে। আর কিছুক্ষন পরেই মিটিং শুরু হবে। আয়নার সামনে যেয়ে শেষ বারের মতো নিজেকে দেখে নিল। নতুন একটা কোম্পানির সাথে আজ তাঁদের মিটিং। আনায়া ভিতরে ভিতরে কিছুটা ভয় পাচ্ছে। ভয়কে পাত্তা না দিয়ে মিটিং রুমের দিকে অগ্রসর হলো। মিটিং রুমে ঢুকে আনায়ার সব দিকে লক্ষ্য দিল। আকস্নাৎ ওর চোখ আটকে গেল একটা মানুষের মুখশ্রীতে। সেই মানুষটা এতো বছর পর। আনায়ার মনে এক রাশ ঘৃ*ণা চলে এল। আনায়া ভাবল চলে যাবে কিন্তু আজকের মিটিং টা খুবই গুরুত্ব পূর্ন তাই সে চাইলেও যেতে পারবে না। আনায়া নিজেকে সামলে ওর জন্য বরাদ্দ জায়গায় বসে পড়ল।

অপরদিকে নিশান নামক মানুষটার মুখে বাঁকা হাসি। সে আনায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আনায়ার লোকটার তাকানোতে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে নিশানের চোখে মরিচের গুঁড়ো ডলে দিতে। কিন্তু চাইলেই সব সম্ভব না। তাই আনায়া দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে। নিজের প্রেজেন্টশনের সময় টুকু বাদে বাকিটা সময় আনায়া চুপচাপ ছিলো। অবশেষে নিশানদের কোম্পানিরে সাথে আনায়েদের ডিল ফাইনাল হলো। আনায়া মনে মনে কিছু ভাবল। ওর ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি। সামনে কি কিছু হতে চলেছে?

অহনা ক্লাস শেষে বান্ধবীদের সাথে ঘোরাঘুরি করতে বেরিয়েছে। সব বান্ধবীরা মিলে কথা বলছে আর হাঁটছে। অহনা কথা বলতে বলতে কখন রাস্তায় চলে এসেছে তার খেয়াল নেই। হটাৎ ওর সামনে একটা গাড়ি জোরে ব্রেক করল। অহনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

আবির কিছু কাজে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল। হটাৎ কাউকে রাস্তার মাঝে দেখে সাথে সাথেই ব্রেক কষে। ওর মাথায় আগুন ধরে গেল। কোনো মানুষ কিভাবে এই মাঝ রাস্তায় আসতে পারে? কনসেন্স কি ঘোরা চড়াতে গিয়েছে? আবির রেগে গাড়ি থেকে বেরোলো। এতক্ষনে অহনার ফ্রেন্ডরা আসে ওকে সামলে নিয়েছে।
“সমস্যা কি? চোখে দেখতে পান না? হাঁটার সময় কমনসেন্স কোথায় থাকে?”

অহনা আবিরের দিকে ফিরল। আবির মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে কিছু বলবে তার আগেই মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেল। মেয়েটার মুখে ভীতি লেগে আছে। এতেও যেন মেয়েটারে মুখে এক মায়া লেগে আছে। আবিরের অহনাকে চিনতে একটুও ভুল হলো না। অর্ণবের ছোটো বোন অহনা। কিন্তু ওর তো বাড়ির গাড়িতে আশা যাওয়ার কথা। ও এখানে কি করছে?
“অহনা তুমি? তুমি এখানে কি করছো? রাস্তায় হাঁটার সময় দেখে হাটবে তো”

অহনা সামনে তাকিয়ে দেখলে আবির দাঁড়িয়ে। এতক্ষন মনের ভিতর থাকা ভয়টা যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।
“আসলে ভাইয়া আমি আজকে একটু ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। দুঃখিত আমি খেয়াল করিনি কখন হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মাঝে চলে এসেছি”

আবির ধমকে বলল,
“তা খেয়াল করবে কেন? চোখ তো আকাশে নিয়ে হাঁটো”

অহনা মাথা নিচু করে বলল,
“দুঃখিত ভাইয়া”

“অর্ণব জানে তুমি গাড়ি ছাড়া রাস্তায় এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছ?”

অহনা আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে ভাইয়া জানে না। আমি আম্মুকে বলে এসেছি”

“গাড়িতে উঠো বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি”

“আমি ঘোরাঘুরি শেষে বাসায় চলে যাবো। আপনি যেই কাজে যাচ্ছিলেন সেখানে যান’

“তুমি গিয়ে গাড়িতে বসবে নাকি আমাকে অর্ণবকে ফোন দিবো?”

অহনা অসহায় চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“প্লিজ আবির ভাই, ভাইয়া কে ফোন দিবেন না”

আবির দুই হাত বুকে গুঁজে বলল,
“ঠিক আছে আমি অর্ণবকে ফোন দিবো না। তুমি ভদ্র মেয়ের মতো গাড়িতে যেয়ে বসো তাহলেই হবে”

অহনার আবিরের ওপর রাগ হচ্ছে কিন্তু সেটা প্রকাশ করা যাবে না। মনে মনে আবিরকে বকছে। তুই ভাইয়ার বন্ধু, ভাইয়ার সাথে ঘুরবি ফিরবি, আড্ডা দিবি। মাঝে মাঝে বাসায় এসে দাওয়াত খেয়ে যাবি। তুই কেন ভাইয়ার বোনকে শাসন করবি? তোকে কি আমারে ভাইয়া আমার পাহারাদার হিসেবে রেখেছে নাকি? অহনা মনে মনে এগুলো বললেও আবিরের সামনে বলার সাহস নেই। মানুষটা দেখতে খুবই ভদ্র আর রেগে গেলে অভদ্ররে শেষ। যদিও কখনো অহনার সাথে সাথে রাগ দেখায় নি কিন্তু ও একবার আবিরকে মারামারি করতে দেখেছিল। কি নৃ*শং*স ভাবে একটা ছেলেকে মেরেছিলো। এর পর থেকে ও আবিরকে প্রচুর ভয় পায়।
“ভাবনার রানী ভাবনা শেষ হলে কৃপা করে গাড়িতে গিয়ে বসুন”

অহনা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এল। ভাগ্য ভালো একজন মানুষ ওপর জন মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে না। নাহলে অহনা মনে মনে এতক্ষন আবিরকে যা বলেছে সেটা শুনলে নিশ্চয়ই আবির ওকে উত্তম- মাধ্যম দিতো। অহনা ভদ্র মেয়ের মতো গাড়িতে যেয়ে বসে পড়ল। বাকি রাস্তা কেউ কোনো কথা বলল না। আবির অর্ণবদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।
“এরপর বাড়ির গাড়ি ছাড়া কোথাও যাবে না। ঘুরতে যেতো ইচ্ছে হলে অর্ণবকে বলবে ও নিয়ে যাবে। ও যদি ব্যাস্ত থাকে তাহলে আমাকে বলবে আমি নিয়ে যাবো, তাও কোথাও একা যাবে না”

অহনা ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নেড়ে শায় জানিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল। আবির নিজের কাজে চলে গেল। আবির চলে যেতেই অহনা মনে মনে বলল,
“আসছে, তার কথা আমার শুনে চলতে হবে। একা কোথাও যাবে না, আমি কি বাচ্চা যে হারিয়ে যাবো। আমি তো বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যাবোই যাবো, দেখি আপনি কি করতে পারেন”

অর্ণব পার্টি অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে অবস্থান করছে। আকস্নাৎ পাশে থাকা ফোনটা ঝংকার তুলে বেজে উঠল। অর্ণব ফোনের দিকে একবার তাকালো অতঃপর রাগী চোখে তাপসের দিকে তাকালো। তাপস কানে ধরে সরি বুঝালো। অর্ণবের মিটিংয়েরে সময় বিরক্ত করা পছন্দ নয়। তাই মিটিংয়ের সময় ফোন সাইলেন্ট রাখে। মিটিংয়ের সময় ফোন তাপস এর কাছেই থাকে। ও আজকে মিটিংয়ে ঢোকার পূর্বে ফোন সাইলেন্ট করতে ভুলে গিয়েছিল।কলকারীর নাম না দেখেই কলটা কেটে দিল। মুহূর্তের ব্যবধানে ফোনটা আবার বেজে উঠল। অর্ণবের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ফোন করা ব্যক্তিকে ঝাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফোনটা হাতে নিল। স্ক্রিনে ভেসে উঠা নামটা দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল। এখন এই সময়ে এই মানুষটার ফোন? ফোন রিসিভ করে কানে ধরল। ওপর পাশের ব্যক্তিটির কথা শুনে রাগে অর্ণবের হাতের রগ ফুলে উঠল। সাথে মুখে বাঁকা হাসি।
“ওর দিকে নজর রাখ আমি কিছুক্ষনের মাঝে আসছি”

ওপর পাশের ব্যক্তিকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোনটা কেটো দিল। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে রহস্যময় হাসি। বিড়বিড় করে বলল,
“পিপিলিকার পাখা গজায় ম*রিবার তরে”

#চলবে?

(দেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা আপনার কাছে কেমন লেগেছে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here