#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব১৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
প্রতিটি নিউজ চ্যানেলে একই নিউজ। এমপি আশিয়ান সিকদার অর্ণবের গাড়ি ব্লাস্ট হয়ে আগুন ধরে গেছে। এটা কি দুর্ঘটনা নাকি চক্রান্ত? আবির বাড়ি এসেছে অনেক আগেই। বোনের অসুস্থতার কথা শুনে চলে এসেছে। সন্ধ্যায় ড্রয়িং রুমে বসে সবাই কথা বলছিলো। আবির হটাৎ নিউজ দেখার জন্য টিভি অন করল।আকস্নিক এরূপ নিউজ দেখে আবির কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। কখন হলো এসব? তখন অর্ণবের সাথে কথা বলল ও তো কিছুই জানালো না। আবিরের সাথে সাথে অবাক হলো বাড়ির সবাই। আবির পকেট থেকে ফোন বের করে অর্ণবের নাম্বার ডায়াল করলো। কিন্তু ফলাফল শুন্য কেউ ফোন তুলছে না। বাড়ির সবাই একে একে অনেক প্রশ্ন করতে লাগলো আবিরকে। আবির তাঁদের কি জবাব দিবে ও নিজেই তো কিছু জানে না। তাও কিছু একটা বুঝ দিয়ে সবাই কে শান্ত করল। হটাৎ মাথায় এলো আনায়ার কথা। তাহলে আনায়া কি কিছু জানে? আবির দৌড়ে আনায়ার রুমে গেল। আনায়া এখনো একই ভঙ্গিতে বসে আছে। কোনো নড়চড় নেই। মনে হচ্ছে রোবট বসে আছে। আবির আনায়কে অনেক প্রশ্ন করলো। কিন্তু আনায়ার কোনো হেলদোল নেই। ও আগের মতো একই ভঙ্গিতে বসে আছে। কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে না। আবির বুঝল এখন আনায়াকে কিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। আবির আনায়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
অর্ণব পার্টি অফিসে নিজের কেবিনে বসে আছে। ওর সামনে তাপস চিন্তিত হয়ে পায়চারি করছে। আকস্মিক টেবিলের ওপর রাখা অর্ণবের ফোন ঝংকার তুলে বেজে উঠল। অর্ণব স্ক্রিনে থাকা নাম্বার দেখে সাথে সাথে রিসিভ করল। ওপর পাশ থেকে কি বলছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অর্ণব হাত মুষ্ঠী বদ্ধ করল। ওর হাতের রগ গুলো ফুটে উঠেছে। মুখ ধীরে ধীরে রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে। তাপস হটাৎ অর্ণবের এমন পরিবর্তন দেখে ঘাবড়ে গেল। অর্ণব ফোন রেখে তাপস এর দিকে তাকাতেই তাপস আটকে উঠল। অর্ণবের চোখ গুলো লাল লাল হয়ে গেছে। অর্ণবকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ও প্রচন্ড রেগে আছে। কিন্তু হটাৎ অর্ণবের এভাবে রাগার কারণ খুঁজে পেল না। তাপস কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেল।
তাপস বেরিয়ে যেতেই অর্ণবের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি। এই হাসিতে মিশে আছে ভয়ংকর কিছু।
“তুই এখনো অর্ণবের ভয়ংকর রূপ দেখিসনি। এই ভদ্র মুখোশের আড়ালের অর্ণব ভয়ংকর, বড্ড ভয়ংকর। ধ্বংস খেলা তুই শুরু করেছিস তবে এর শেষ আমি করবো। অর্ণব ছাড় দেয় তবে ছেড়ে মোটেই দেয় না। তোর ধ্বংস আমার হাতে লেখা আছে, তুই শুধু বসে বসে তোর ধ্বংসের প্রহর গোনা শুরু কর। অর্ণব সিকদার খুব শীঘ্রই তোকে ধ্বংস করতে আসছে”
আবির হন্তদন্ত হয়ে অর্ণবের কেবিনে ঢুকল। অর্ণবকে সামনে পেয়ে সাথে সাথেই জড়িয়ে ধরল।
“দোস্ত তুই ঠিক আছিস ? তোর কিছু হয়নি তো? এতো কিছু ঘটে গেল আর তুই আমাকে বললি ও না। নিউজ না দেখলে তো আমি জানতেই পারতাম না এতো কিছু ঘটে গেছে”
অর্ণব আবিরকে নিজের থেকে সরিয়ে বসতে বলল। দুই বন্ধু মুখোমুখি বসে আছে। অর্ণব আবিরকে ভরসা দিয়ে বলল,
“আমার কিছুই হয়নি। আমি একদম ঠিক আছি। ওই মুহূর্তে আমি খুবই বিজি ছিলাম সাথে অনেক টেনশনও ছিলো তাই তোকে জানানোর সময় পাইনি। তুই যখন ফোন দিয়েছিলি তখন আমি ব্লাস্ট হয়েছে যেখানে সেখানে ছিলাম। ওখানে এতো বেশি ভীড় সাথে আরো কিছু সমস্যা ছিলো তাই তোর ফোন ধরতে পারিনি”
থেমে অর্ণব আবার জিজ্ঞেস করলো,
“আনায়ার কি অবস্থা? ও কেমন আছে? ওকে তখন ওভাবে রেখে আসার পর এদিকের ঝামেলায় ওর কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে”
“বনুর সেন্স ফিরার পর থেকে কারো সাথে কথা বলছে না। বাসার সবাই এতো কিছু জিজ্ঞেস করলো কিন্তু ও পুরোটা সময় নিরুত্তর ছিলো। আম্মু ওকে খাইয়ে দিয়েছে। আমি নিউজে তোর খবর দেখে ওর ঘরে গিয়েছিলাম ওকে জিজ্ঞেস করতে। যেয়ে দেখি ও একই ভঙ্গিতে বসে আছে। জানিনা আমার বোনটার হটাৎ করে কি হলো”
অর্ণব কিছুটা ইতস্তত করে বলল,
“আসলে যখন ব্লাস্ট হয়েছে তখন আনায়া আমার সাথেই ছিলো”
আবির চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“হোয়াট?”
অর্ণব আবিরকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। আবির শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
“আনায়া হয়তো বিষয়টা এখনো মেনে নিতে পারেনি তাই এমন ব্যবহার করছে। তুই ওর সাথে কথা বলে ওকে বোঝা দেখবি ও আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে”
আবির অর্ণবের কথায় শায় জানালো। আরো কিছু সময় দুই বন্ধু মিলে আড্ডা দিল।
সেই ঘটনার পরে পেরিয়ে গেছে আরো এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে আনায়া নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে। আগের মতো হওয়ার চেষ্টা করছে। তবুও না চাইতেই মাঝে মাঝে চোখের সামনে সেই ভয়ংকর দৃশ্য ভেসে উঠে। তখন আনায়ায় মাঝে ভীতি জেগে উঠে। এই কয়েকদিনে আনায়া বাসায়ই সময় কাটিয়ে। ওকে অফিসে যেতে দেওয়া হয়নি। আনায়া বলেছিলো কাজের মধ্যে থাকলে ওর ভালো লাগবে। তবে ওর মা জিননী সে কথা মানতে নারাজ। তিনি কিছুতেই আনায়াকে পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে বাড়ির বাহিরে যেতে দিবে না।
আনায়া বিকেলে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে আর পরিবেশটা উপভোগ করছে। এমন সময় পাশে রাখা আনায়ার ফোন বেজে উঠল। আনায়া ফোনটা হাতে নিয়ে সাইলেন্ট করে রেখে দিল। অর্ণব ফোন দিচ্ছে ওকে। সেদিনের পর অর্ণব আনায়াকে অনেক বার ফোন দিয়েছে। আনায়া এক বারও অর্ণবের ফোন তোলে নি। অর্ণব ওকে অনবরত ফোন দিলে ও ফোন সাইলেন্ট বা বন্ধ করে রাখে। আনায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠল,
“আমার এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে আমি কাউকে জড়াতে চাই না। আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক সেটা আমি সেটা একদমই চাই না। আপনি অনেক ভালো মানুষ এমপি সাহেব। আমি চাই আপনি আমাকে ভুলে অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধেন। তাকে নিয়ে সুখের রাজ্যে ভেসে যান। আমার ভাগ্যে আপনি নেই। আমার আঁধারে ঢাকা জীবন আঁধারেই রয়ে যাক”
আনায়ার বিরবির করার মাঝে নিচে হর্ণের শব্দ শোনা গেল। আনায়া নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল ওদের বাড়ির নিচে অর্ণবের পুড়ে যাওয়া গাড়ির মতো হুবহু দেখতে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আনায়া ভেবে পেল না গাড়িটা এখানে কি করছে? আর কারই বা গাড়িটা। ওর সকল ভাবনার অবসান ঘটিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল অর্ণব। নিত্য দিনের মতো সাদা পাঞ্জাবী পড়া। হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। অর্ণব চোখ থেকে চশমা সরিয়ে পাঞ্জাবীর বুঁকের কাছটায় ঝোলালো। আনায়া ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে অর্ণবের কাজকলাপ দেখছিলো। ও ভেবেছে অর্ণব হয়তো ওকে দেখবে না। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে অর্ণব ওর ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ‘হাই’ দিল। আনায়া প্রথমে ভেবেছিল অর্ণব হয়তো আবিরের সাথে দেখা করতে এসেছে। তবে এখন ও বুঝতে পারছে অর্ণব ওর সাথে দেখা করতেই এসেছে। আনায়াধূপধাপ পা ফেলে রুমে চলে গেল। খুব জোরে শব্দ করে ব্যালকনির থাই গ্লাস লাগিয়ে দিল।
অর্ণব নিচ থেকে আনায়ার সকল কার্যকলাপ দেখল। ও ভেবে পাচ্ছে না হটাৎ করে আনায়ার ওকে ইগনোর করার কারণ কি? অর্ণবভিতরে গেল। সবার সাথে দেখা করে কথা বলল। কিন্তু আনায়ার দেখা পেল না। নীলিমাকে আনায়ার কথা বলতেই নীলিমা অনায়াকে ডাকতে গিয়েছিল তবে ফিরে এসেছে একা। আনায়া কোনো ভাবেই অর্ণবের সামনে আসতে চাচ্ছে না। অর্ণব কে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হলো।
#চলবে?
( অসুস্থ শরীর নিয়েই আপনাদের জন্য লিখতে বসেছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ )